Thursday, October 27, 2016

স্ক্রীপ্ট রাইটিং পর্ব-দুই

0 comments

{ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে কিছু লিখতে চাচ্ছি। ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্স এ আসলে লেখালেখির সবকিছু সম্পর্কেই ধারনা দেয়া হয়। সেটা হতে পারে ছোটগল্প, বা উপন্যাস কিবা নিছক ফিচার কিবা স্ক্রীপ্ট রাইটিং। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি লেখালেখির গুন আসলে ট্রেনিং এর মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কিন্তু তবুও ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর কোন কোর্স এ অংশ নিলে যেটা হয় তা হলে লেখালেখিটা এসাইনমেন্ট হিসেবে করতে হয় এবং তাতে করে অনেক উপকার হয়। আর যে লেখাগুলোতে কিছুটা কাঠামোগত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন যেমন স্ক্রীপ্ট রাইটিং, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন ট্রেনিং কোর্স বা গাইড আর্টিকেল কিছুটা কাজে লাগে। 

আমাদের দেশে তো এখন মনে হয় ছোটগল্প বা উপন্যাস লেখার চেয়ে নাটক লেখার দিকে লিখিয়েদের ঝোক বেশী থাকার কথা। কেননা সেইটার বাজারই ভাল। 


ফরম্যাট এবং হেডিং:

যেকোন একটা স্ক্রীপ্ট, ধরা যাক একটি টেলিফিল্মের স্ক্রীপ্ট যখন আমরা লিখব তখন আসলে আমাদের উদ্দেশ্য কি থাকবে? অবশ্যই যাকে তা পড়তে দেব যাতে তার পছন্দ হয় সেদিকেই আমাদের নজর থাকবে। সেই জন্যে স্ক্রীপ্টটি যাতে সত্যিকার স্ক্রীপ্টের বেসিক ফরম্যাটে যায় সেই ব্যাপারে আমাদের নজর দিতে হবে প্রথমে। তা না হলে স্ক্রীপ্ট পড়তে পাঠক উতসাহ হারাবে, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জন্ম নেবে এবং স্ক্রীপ্টটি আস্তাকুড়ে চলে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে যদিও বা তার্ মান খুব ভাল হউক। আবার আপনি যদি ফরমায়েসী স্ক্রীপ্ট রাইটারও বা হোন, মানে, আপনি যদি কোন একজন ডিরেক্টররের জন্য স্কীপ্ট লিখেন যিনি কিনা আপনি যাই লিখুন না কেন তাই নিয়ে ফিল্ম বানাবেন, তবুও ডিরেক্টররের নূন্যতম চাহিদা পুরনের জন্যেও আপনার স্ক্রীপ্টটিকে হতে হবে নিয়ম অনুযায়ী। 
অন্যান্য যেকোন লেখার মতই স্ক্রীপ্টকে হতে হবে টাইপড। হাতের লেখা নয়। হাতের লেখা পড়া একটা ঝামেলা ও ঝক্কি। 
এ ফোর সাইজের পৃষ্ঠায় বাম পাশে নুণ্যতম এক ইঞ্চি মার্জিন রেখে স্ক্রীপ্ট টাইপ করতে হবে। সম্পাদনার স্বার্থে কাগজের দুই পাশেই মার্জিন রাখলে আরও ভাল। টাইপ করার সময় নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টের ফন্ট ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে ১২ পয়েন্টের ফন্ট ব্যবহার। এটিই স্ট্যান্ডার্ড। এটি খুব ছোটও নয় খুব বড়ও নয় তাই সহজে পড়া যায়। 
এবং একই ফন্ট ব্যবহার করলে দৃশ্য সম্পর্কেও ধারনা করা যায়। প্রতিটা পেইজে ঠিক কত সময় দৃশ্যায়ন সময়। তাতে করে পেইজ গুনে দৈর্ঘ্য সম্পর্কে একটা অনুমেয় ধারনা করা যায়। 

স্ক্রীপ্ট ফরম্যাট কি? 

স্ক্রীপ্ট এর ফরম্যাট আহামরি কিছু নয়। স্ক্রীপ্ট ডায়লগ নির্ভর, কে কোন ডায়লগ বলছে সেটি নির্দিষ্ট করে দিতে হয়, চাহিদা অনুযায়ী দৃশ্যটি কোথায় কিভাবে হচ্ছে সেটি সংক্ষেপে বলে দিতে হয়, যদি নির্দিষ্ট কোন সাউন্ডের ব্যবহার করতে হয় তা বলে দিতে হয়, নির্দিষ্ট কোন ক্যামেরা এঙ্গেল যদি চান তাহলে তা বলে দিতে হয়। 
একটি দৃশ্যের প্রথমেই যা বলে দিতে হয় তা হচ্ছে দৃশ্যটি কোথায়, কথন কিভাবে ঘটছে। যাকে বলা যায় হেডিং। 
তারমানে হচ্ছে দৃশ্যটি ঠিক কোন জায়গায় হচ্ছে ইনডোরে নাকি আউটডোরে, কোন বাসায় নাকি মার্কেটে নাকি পার্কে। কখন হচ্ছে দিনে নাকি রাতে, পাত্রপাত্রী কি অবস্থায় আছে। তার পর চরিত্রগুলোর ডায়লগ বলে দেয়া যায়। একটি উদাহরন দেখুন টাইটানিক মুভি থেকে 

23 INT. ROSE'S STATEROOM / KELDYSH - DAY 

Lizzy is unpacking Rose's things in the small utilitarian room. Rose is 
placing a number of FRAMED PHOTOS on the bureau, arranging them carefully 
next to the fishbowl. Brock and Bodine are in the doorway. 
LOVETT 
Is your stateroom alright? 
ROSE 
Yes. Very nice. Have you met my granddaughter, Lizzy? She takes care of me. 
LIZZY 
Yes. We met just a few minutes ago, grandma. Remember, up on deck? 
ROSE 
Oh, yes. 

Brock glances at Bodine... oh oh. Bodine rolls his eyes. Rose finishes 
arranging her photographs. We get a general glimpse of them: the usual 
snapshots... children and grandchildren, her late husband. 

ROSE 
There, that's nice. I have to have my pictures when I travel. And Freddy of 
course. 
(to the Pomeranian) 
Isn't that right, sweetie. 
LOVETT 
Would you like anything? 
ROSE 
I should like to see my drawing. 
CUT TO: 

উপরের স্ক্রীপ্টের অংশটি দেখে সহজেই বোঝায় যাচ্ছে কিভাবে হেডিং দিতে হবে। 
INT. ROSE'S STATEROOM / KELDYSH - DAY 
প্রথমেই আছে দৃশ্য নাম্বার ২৩। তারপর ইন্টেরিয়র, মানে ইনডোর, ছাদের নিচের দৃশ্য। রোজের স্টাটাররুম, সময় হচ্ছে দিন। 
এই হেডিং দেখেই ডিরেক্টর কিভাবে দৃশ্য চিত্রায়ন করবেন তার স্পষ্ঠ ধারনা পেয়ে যাচ্ছেন। 
তো বাইরে আউটডোরে কোন দৃশ্য হলেই তা এক্সটেরিয়র। 

এখন ধরা যাক দৃশ্যটি হচ্ছে রাস্তায় কোন গাড়ির ভেতরে তখন কি হবে? 
সেই ক্ষেত্রে দৃশ্যটি হবে ইন্টেরিয়র। 
আবার ক্যমেরার পয়েন্ট অভ ভিউ নির্ভর করে দৃশ্যের হেডিং আরও একটু জটিল হতে পারে। ধরা যাক বাড়ির ভেতরে পাত্রপাত্রী কথা বলার দৃশ্য বাড়ির বাইরের ক্যামেরা থেকে ধরা হবে সেক্ষেত্রে এটি ইন্টেরিয়র/এক্সটেরিয়র দুইটাই। দুইটাই উল্লেখ করতে হবে। 

সময় দেখিয়ে দেবার ক্ষেত্রে দিন বা রাতই সাধারনত উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে আরও ডিটেইল দেয়া যায়, যেমন ভোর, বিকেল, সন্ধা ইত্যাদি। 


ক্যামেরা ডিরেকশন :

স্ক্রীপ্টে প্রয়োজন পড়লে কিছু টেকনিকাল ডিরেকশন দিতে হয়। যদিও এর ব্যবহার খুবই সীমিত। কেননা সবসময় মনে রাখতে হবে যে আপনি একজন স্ক্রীপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর নন। তবুও কিছু ক্ষেত্রে স্ক্রীপ্টেও কিছু নির্দেশনা দেবার প্রয়োজন পড়ে। 
সাধারনত যেসব টেকনিকাল ডিরেকশন স্ক্রীপ্টে আসে সেগুলো হচ্ছে- 

ভি.ও বা ভয়েসওভার: সৃত্রধর বা এই জাতীয়। পর্দায় কিছু দেখানো হচ্ছে আর একটি কন্ঠ এর বর্ননা দিচ্ছে এমন। 

ও.এস বা অফস্ক্রীন: একটি দৃশ্যে একজনের কথা শোনা যাচ্ছে কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু দৃশ্যের অন্য চরিত্ররা তার কথা শুনছে। 

পি.ও.ভি. বা পয়েন্ট অফ ভিউ : ক্যামেরা একটি চরিত্রের চোখ দিয়ে দেখছে। ধরা যাক একটি দৃশ্যে দুই জন কথা বলছে আরেকজন লুকিয়ে তা দেখছে, এটি তার চোখ দিয়ে দেখানো, এরকম হলে সেটি পিওবি দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। 

এম.ও.এস বা উইথআউট সাউন্ড : দৃশ্যে চরিত্রগুলো কথা বলছে, তাদের ঠোট নড়ছে কিন্তু দর্শক কিছু শুনতে পাবে না। 


নানা রকম ক্যামেরা শট :

স্ক্রীপ্টে ক্যামরা এঙ্গেল বিষয়ে বলে দেয়াটা খুব ভাল চোখে দেখা হয় না। বলে দেয়া উচিত ও না। এটি ডিরেক্টরের বিষয়। তবু এটি জেনে রাখা ভাল। কেননা স্ক্রীপ্টরাইটারের সেক্ষেত্রে কল্পনা করতে সহজ হয়। কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্র অবশ্য ক্যামেরা শট স্ক্রীপ্টে বলে দেয়া যায়। তবে খুবই সীমিত সেক্ষেত্রে। 

কিছু কিছু ক্যামেরা শট হল - 

লঙ শট ( এল এস) : ক্যামেরা দুর থেকে ধরা হয়। 

মিডিয়াম শট ( মিডশট বা এমএস) : সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত শট। দৃশ্যে দুই তিনজন কথা বলছে এটি নির্দিষ্ট দুরত্ব থেকে ধরা হচ্ছে যাতে সবাইকে দেখা যাবে। 

ক্লোজশট (সিএস) : কাছ থেকে নেয়া। 

ক্লোজআপ শট ( সি/ইউ) : চরিত্রের মুখ কাছ থেকে ধরা। 

এছাড়াও আছে টাইট সি/ইউ বা চরিত্রের কান নাক গলা বা চোখ ধরা। 
টু শট মানে দুইটা চরিত্রের এমএস, থ্রি শট মানে তিনটা চরিত্রের এমএস। 


এইতো গেল নানা রকমের শট। মনে রাখতে হবে, কিভাবে শট নেয়া হবে তা দেখিয়ে দেয়া আপনার কাজ না। স্ক্রীপ্ট রাইটারের দায়িত্ব কাহিনী সাজানো চরিত্র নির্মান, ডায়লগ তৈরি। ক্যামেরার কাজ ডিরেক্টরের। 
তাই সেসব ক্ষেত্রে একান্তই ক্যামেরার কাজ বলে দেয়া দরকার। যেমন আপনি বলতে চান দুর থেকে দেখা যাচ্ছে অমুক আসছে। তাহলে লঙ শট উল্লেক না করে একদম সরাসরি বলতে পারেন দুর থেকে দেখা যাচ্ছে। তাতে ডিরেক্টরের সাথে ইগোর দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম


রন্টি চৌধুরী

স্ক্রীপ্ট রাইটিং পর্ব-এক

0 comments

ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে কিছু লিখতে চাচ্ছি। ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্স এ আসলে লেখালেখির সবকিছু সম্পর্কেই ধারনা দেয়া হয়। সেটা হতে পারে ছোটগল্প, বা উপন্যাস কিবা নিছক ফিচার কিবা স্ক্রীপ্ট রাইটিং। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি লেখালেখির গুন আসলে ট্রেনিং এর মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কিন্তু তবুও ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর কোন কোর্স এ অংশ নিলে যেটা হয় তা হলে লেখালেখিটা এসাইনমেন্ট হিসেবে করতে হয় এবং তাতে করে অনেক উপকার হয়। আর যে লেখাগুলোতে কিছুটা কাঠামোগত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন যেমন স্ক্রীপ্ট রাইটিং, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন ট্রেনিং কোর্স বা গাইড আর্টিকেল কিছুটা কাজে লাগে। 
আমাদের দেশে তো এখন মনে হয় ছোটগল্প বা উপন্যাস লেখার চেয়ে নাটক লেখার দিকে লিখিয়েদের ঝোক বেশী থাকার কথা। কেননা সেইটার বাজারই ভাল। 
যাহোক, আমার পড়াশোনা বিষয়ের মাঝে ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিশেষ করে স্ক্রীন রাইটিং (স্ক্রীপ্ট রাইটিং) টা বেশ গুরুত্বপুর্ন। আমারও ওইটার উপরে বিশেষ আগ্রহ, তাই নিয়মিত সিলেবাসের বাইরে আলাদা করে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এ নজর দিয়েছি। ব্লগে চেষ্টা করব সেই সম্পর্কে কিছু লিখতে, গুছিয়ে যদি লিখতে পারি তাতে আমার নিজেরও সুবিধে, একসাথে পুরো ব্যাপারটা চোখের সামনে পাওয়া যাবে। 

(আমি নিজে কোন জাতের লেখক নই, শুধু যা পড়েছি বা শিখেছি তা কপি পেষ্ট করব। দয়াকরে ভূল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি নিয়ে দেখবেন আশা করি।)

তো, নিচে যে লেখাটি শুরু হচ্ছে সেটি প্রধানত স্ক্রীপ্ট রাইটিং নিয়ে, কিন্তু তাতে গল্প বা উপন্যাসের ব্যাপারেও ধারনা পাবার কথা। লেখাটি প্রধানত ইউকে বা ইউএসএ'র টেলিভিশন বা ফিল্ম স্ক্রীপ্টিং এর উপরে বেইজড করে তৈরি তাই উদাহরন ও সেই প্রেক্ষাপটেই হবে, তবে আমাদের দেশের টেলিভিশন বা ফিল্মের সাথে খুব বেশী তফাত থাকার কথা না। 

শুরু করা যাক তাহলে। 

কোন স্ক্রীনপ্লে লেখার আগে যা প্রথমেই মনে রাখা উচিত :

ডিরেক্টর, প্রডিউসার বা প্রডাকশন হাউজের কাছে স্ক্রীপ্ট দেবার আগে কয়েকটা কথা ভেবে নেয়া দরকার। নামী প্রডাকশন হাউজ সাধারন নামী স্ক্রীপ্ট রাইটারদের স্ক্রীপ্ট নিয়েই কাজ করেন, তারা নতুনদের নিয়ে কোন ঝুকিতে সচরাচর যেতে চান না। তাই নতুনদের সুযোগ পেতে হলে অনেক বেশী ভাল হতে হয়। কেননা পান থেকে চুল খসা ধরনের দুর্বলতা পেলেই বেশীরভাগ স্ক্রীপ্ট ডাস্টবিনে চলে যায়। কথাগুলো খারাপ শোনালেও সত্য হলিউডে বিভিন্ন ডিরেক্টর, প্রডাকশন হাউজে বা ইউকের টেলিভিশন বা ইউএসএ'র টেলিপ্লে'র জন্য জমা দেয়া নতুনদের স্ক্রীপ্টের মাধে ৯০ ভাগই অখ্যাদ্য হিসেবে গন্য করা হয় না পড়েই। শতকরা মোটে টেনেটুনে ১০ ভাগ স্ক্রীপ্ট শেষপর্যন্ত পড়া হয়, তাদের থেকে ২ ভাগের লেখককে কথা বলার জন্য ডাকা হয়, তার থেকে ১ ভাগকে নিয়ে ফিল্ম বানানো হয়। স্ক্রীপ্ট লেখার সময় আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত সেই ২ শতাংশের মধ্যে পড়া। আর সে জন্যে যেটা নিশ্চিত করা দরকার যাতে আমাদের স্ক্রীপ্ট যথেষ্ট আঠসাঠ হয়। ঝুলে পড়া স্ক্রীপ্ট বা ছোট্ট কাহিনী অতি বিশাল করে বলা গল্প তেমন কারও নজর কারে না। আপনার স্ক্রীপ্টের সামারী পড়ে কাহিনী সম্পর্কে ধারনা নিয়ে যদি দেখা যায় আপনার স্ক্রীপ্ট ১২ ফন্টে ১৪০ পৃষ্ঠারও বেশী তাহলে সে স্ক্রীপ্টের স্থান হবে বিন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই স্ক্রীপ্ট লেখার সময় জানা থাকতে হবে কি লিখছি। নিয়ন্ত্রন থাকতে হবে। কাহিনী বিস্তারে স্যাকরিফাইস করা যাবে না আকার বাড়ানোর স্বার্থে। 
দ্যা নাইটমেয়ার বিফোর ক্রিসমাস , দ্যা সিক্রেট গার্ডেন , সিটি অফ এম্বার সহ বিখ্যাত কিছু মুভির স্ক্রীনপ্লে রাইটার ক্যারোলিন থমসন স্ক্রীপ্টকে সনেট কবিতার সাথে তুলনা করেন। তার মতে স্ক্রীপ্টেরও সনেটের মত নির্দিষ্ট সীমারেখা আর কাঠামো আছে যার বাইরে গেলে তা অসফল হবার সম্ভাবনাই বেশী। 

সেজন্যে এই জিনিসটা মাথায় রেখে স্ক্রীপ্ট লেখার কাজ শুরু করা উচিত। 
স্ক্রীপ্ট লেখা আর গল্প উপন্যাস লেখার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে, এই ব্যাপারটাও এখানে মনে করিয়ে দিতে চাই। গল্প বা উপন্যাস লেখায় লেখক হন স্বাধীন, তিনি তার কল্পনার রঙ দিয়ে সবকিছু রাঙিয়ে দিতে পারেন। স্ক্রীনপ্লে'র ক্ষেত্রে সেটি একটি কমপ্লিট টিমওয়ার্ক। আপনাকে স্ক্রীপ্টের নমনীয়তার ব্যাপারে মাথায় রাখতে হবে। ডিরেক্টরের সাথে কথা বলে স্ক্রীপ্টে চাহিদা মত পরিবর্তনও আনতে হতে পারে তা মাথায় রাখতে বেহবে এবং স্ক্রীপ্ট লেখার সময় সে সুযোগ রাখতে হবে। যদিও স্ক্রীপ্ট লেখকের কিন্তু সেটা দিয়ে যা তৈরি হবে তা কিন্তু ডিরেক্টরের। তাই আসলে এটি একটি টিমওয়ার্ক। এই ব্যাপারটা লেখকদের জন্য বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর। কিন্তু এটি এড়ানোর উপায় নেই। 

সঠিক দৃশ্য ও আকার একটা বড় ব্যাপার:

একটা নাটক বা ফিল্মে আসলে ঠিক কত সময়ের হয়? এক ঘন্টা বা দুই বা বড়জোর তিনঘন্টা? কিন্তু সেখানে যে কাহিনীটা দেখানো হয় সেটি কি সবসময় দুই ঘন্টার হয়? 
একটা ফিল্মে আপনি কাহিনী বলতে পারেন সাতদিন বা সাতমাসের, কিন্তু তা আপনাকে বলতে হবে দুই ঘন্টায়। সাতমাসের কাহিনী দুই ঘন্টায় দেখিয়ে ফেলা সহজ কাজ নয় নিশ্চই? এটা যে শুধু স্ক্রীপ্ট লেখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাই নয় গল্প বা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও। সবখানেই নির্বাচন করতে হয় যে কোন বিষয়টা বলা হবে, কি বলা হবে না, কিভাবে দৃশ্য সাজানো হবে। দৃশ্য সাজানোর মধ্যে কুশলতা দেখাত হবে। সফলতার সাথে দৃশ্য সাজাতে পারলে পারফেক্ট আকারের স্ক্রীপ্ট পাওয়া যায়। 

কিন্তু কিভাবে নির্বাচন করবেন আপনি কিভাবে একটি দৃশ্য সাজাবেন? 
ধরা যাক, আকবর নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার দোকানে দুপুরে বলল ক্ষুধার্ত এবং সে এখন সিঙ্গারা আর চা খেতে যাবে। এই দৃশ্যটি আসলে কেমন হতে পারে স্ক্রীপ্ট এ? 
১. দোকানের ভেতর, আকবর তার কর্মচারীকে বলল সে ক্ষুধার্ত তাই সিঙ্গারা, চা থেকে বাইরে যাচ্ছে। 
২. দোকানের ভেতর, আকবর চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল এবং যাবার উপক্রম হল। 
৩. দোকানের বাইরে, আকবর দোকান ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে রাস্তা ক্রস করছে। 
৪. রেস্টুরেন্টের সামনে, আকবর রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে সিঙ্গারার তাক এর দিকে তাকাল 
৫. রেষ্টুরেন্ট এর ভেতর, আকবর একটি টেবিলের সামনে চেয়ারে বসল। 
৬. রেস্টুরেন্ট, আকবর ওয়েটারকে ডেকে সিঙ্গারা আর চা অর্ডার দিল। 
৭. রেস্টুরেন্ট, আকবর টেবিলের সামনে বসা, ওয়েটার সিঙ্গারা আর চা এনে রাখল। 
৮. রেস্টুরেন্ট, আকবর সামনে রাখা সিঙ্গারা মুখে দিল, তার মুখে পরিতৃপ্তির ছায়া 
৯. রেস্টুরেন্ট, আকবর খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছে 
১০. রেস্টুরেন্ট, আকবর খেয়ে কাউন্টারে বিল পরিশোধ করছে। 

এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা দৃশ্যটিকে কিভাবে দেখাব। উপরের দশরকম থেকে একরকম হতে পারে, আবার এরচেয়েও ভাল করে ভিন্নরকম হতে পারে। আবার দৃশ্যটি রাখব কিনা, এটা ওত জরুরী কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে। 


লেখা শুরু করা কিন্তু অনেক কঠিন :

যারা জীবনে কিছু হলেও লেখালেখি করেছেন তারা নিশ্চই জানেন একটা লেখা শুরু করা কতটা কঠিন। আপনার মাথায় হয়ত পুরোটা কাহিনী এসে বসে আছে, অথচ প্রথম লাইনটা কলমের আগায় আসছেই না। এবং এতে করে দেখা যায়, সময় যায়, দিন মাস যায় ওটা আর লেখাই হয় না। 
আসলে লিখতে শুরু না করে লিখব, লিখব চিন্তা করে বা বলে বলে সময় কাটানো অনেক সহজ। লিখার উদ্দ্যেশ নিয়ে লেখার খাতা বা ল্যাপটপ সামনে নিয়েও লিখা না শুরু করার হাজারটা কারন আছে, যেমন এক কাপ চা খেয়ে লিখি, ব্লগে একটু ঢু মেরে দেখি কি চলছে তারপর মন ফ্রেস করে লিখব, ফেইসবুকে একটু দেখি কোন নোটিফিকেশন আসল কিনা, ভাল একটু মুভি ডাউনলোড করা আছে ওটার কিছুটা অংশ দেখে নেই অন্তত, খেলার খবরটা অন্তত দেখে নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কোনটাই খারাপ কিছু না, কিন্তু তাতে করে অন্তত লেখাটা হবে না। তাই এই কথাটা মনে রাখতে হবে 
WRITE/ Or Be Written Off
এটা ছাড়া উপায় নেই। ঠাটবাটে চলার জন্যে মাসলম্যান হতে গেলে যেমন প্রতিদিন অন্তত আধা ঘন্টা হলেও ব্যায়াম করতে হয়, কটা বুকডন দিতে হয়, পুশব্যাক, পুশআপ করতে হয়, লেখালেখির ব্যাপারটাকেও তেমনি ভাবতে হবে। শরীরকে সুন্দর শেপে নিয়ে আসার জন্যে যেমন দরকার নিয়মিত ব্যায়াম, দশপনের দিন পর পর একবার নয়, তেমনি লেখাকে সাবলীল করতেও দরকার নিয়মিত লেখা, তা সে যত ছাইপাশই হোক। 

প্রতিদিন অন্তত পাচশ শব্দও লিখতে চেষ্টা করতে হবে। সেগুলো হতে পারে অখাদ্য কুখাদ্য। লিখলেই যে সব নোবেল প্রাইজ উইনিং বা অস্কার উইনিং লেখা আসবে সে চিন্তা বাদ দিতে হবে। লিখতে হবে অবিরত। কোন কাহিনী মাথায় না থাকলে যা খুশি লিখা যেতে পারে, পাশের বাসার মেয়েটা সম্পর্কে, শহরের নতুন শপিং মলটা নিয়ে কিবা মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানটা নিয়েও। রাবিশ লিখতে লিখতে একসময় লেখার হাত ভাল হয়ে যাবে। তৈরি হবে নিজস্ব সতন্ত্রতা। এসময়ে পড়তেও হবে অনেকের লেখা। লিখার সময় হয়ত তাদের ছাপ আসবে, কিন্তু তাতে কোন চিন্তা নেই, লিখতে লিখতে একসময় নিজস্বতা আসবেই।  

মোটকথা প্রতিদিন নিয়ম করে লিখতে হবে। এবং সেটা যেমন মানেরই হোক। কথা হচ্ছে 
Don't Get it Right - Get it Written


স্ক্রীপ্ট লিখার সময় দৃশ্যকে তুলে আনতে হবে। তাই একজন লেখকে সবসময় সাধারন মানুষের চেয়ে অন্যরকম ভাবে দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করতে হবে। যখন চলাফেরা করবেন তখন আশপাশ দেখবেন সেগুলোকে চিত্রায়ন করলে কিভাবে করা হবে, কিভাবে বর্ননা করা হবে, স্ক্রীপ্ট কিভাবে লিখা হবে। তাই চিন্তা করুন সবসময় একটি ভিডিও ক্যামেরার মত। যখন কাহিনী বা দৃশ্য নিয়ে ভাববেন তখন ক্যামেরা মত চিন্তা করবেন এবং সেটাকে কাগজে তুলে আনবেন। এবং সেটা এমন ভাবে আনতে হবে যাতে কেউ পড়লে যন্ত্রনা না হয়ে সহজে ওই দৃশ্যগুলো রিডারের চোখে ভাসে। মনে রাখতে হবে আপনার স্ক্রীপ্টে ফিল্ম বা নাটক তৈরি হয়ে দর্শক দেখার আগেই কিন্তু এটি পরিচালক বা প্রযোজক পড়বেন, তাই স্ক্রীপ্টরিডার, সে যেই হোক আপনার স্ক্রীপ্ট তার মনে ইমেইজ তৈরি করতে পারছে কিনা সেটা জরুরী। সেটা যত সহজ হবে, স্ক্রীপ্টকে ফিল্মিং করাও ততই সহজ হবে। 



রন্টি চৌধুরী

শর্ট ফিল্মের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখবেন কিভাবে

5 comments
আমি যখন লিখি তখন মনে করি আমি কারও সাথে কথা বলছি বা কারও প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিআমার লেখায় অনেক সময়ই দুষ্টুমির রেশ থাকে যেটা একটা সিরিয়াস লেখায় থাকা উচিত নয়কিন্তু আমার লেখায় ঠিক তেমনটি উঠে আসে, যেমনটি আমি বাস্তবে

আমি নিজে কোন ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার নইআমার নিজের লেখা স্ক্রিপ্ট আমার পছন্দ হয়নানিয়ম কানুন জানলেও লিখার সময় মনে থাকেনাদেশে অনেক স্ক্রিপ্ট রাইটার আছে যারা বেশ ভালো স্ক্রিপ্ট লিখেকিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা যখন কোন টিপস বা লেখা পাইনা, তখন আমাদের হাতে সম্বল থাকে শুধুই গুগলআমরা অনলাইনে দেখি যে হাজার হাজার লিঙ্কে হাজার পোস্টসবাই সবাইকে হেল্প করছেকিন্তু আমাদের দেশের বোকচো* ফিল্মমেকার রা নিজেদের ভাত মরে যাওয়ার ভয়ে দু'তিনটে লাইন লিখে আমাদের মত উঠতি ফিল্মমেকার দের কোন সাহায্য করেনাকিছু আবাল আবার বলে যে তথাকথিত ছবির হাট বা আজীজ সুপার মার্কেটে গিয়ে আড্ডা মারতেঅইখানে গিয়ে আড্ডা না মারলে নাকি ফিল্মমেকার হওয়া যাবেনাওরে পাপীষ্ট, সিনেমা বানাইতে হইলে কি আমারে গঞ্জিকা সেবন করতে হবে নাকি রে!! গাঞ্জা খাইলেই যদি বড় কিছু হওয়া যাইতো তাইলে গাঞ্জা খাওয়া বৈধ হইয়া যাইতো কবেইবারাক ওবামাও টেলিভেশনে বক্তৃতা দেয়ার সময় কাগজের ভিতর ঠেসে ঠেসে পুরিয়া ভরতোযত্তসব!!!

যাইহোক, এখন রাগের সময় নাপড়ালেখার সময়কাউরে যখন তেমন ভাবে পাইলাম না তখন মনে হইলো আমি একটু ঘাটাঘাটি করে কাট-কপি-পেস্ট করে সোজা বাংলায় কিছু লিখে দেইনিজেরো নাম হইলো, দশেরো উপকারে আসলোআমরা এই পর্বে আলোচনা করবো স্ক্রিপ্ট রাইটিং কি, স্ক্রিপ্ট লিখতে গেলে কি কি লাগে এবং একটা ভালো স্ক্রিপ্ট এ কি কি থাকা প্রয়োজন


=> প্রথমেই হালকা ভাবে জেনে নেই স্ক্রিপ্ট জিনিসটা কিআর স্ক্রিপ্ট রাইটিং কিভাবে একটি ভালো সিনেমা নির্মানে সাহায্য করে থাকে

সিনেমায় স্ক্রিপ্ট হলো একটি খাঁচাএমন একটি খাঁচা যেটায় বলার চেয়ে দেখানর ব্যাপারটা বেশী থাকবেএমন একটি খাঁচা যেখানে সবই থাকবে কিন্তু শর্ট-হ্যান্ড এর মত করেএমন একটি খাঁচা যেটা আপনার পুরো সিনেমাকে একজনের চোখের সামনে দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখতে সাহায্য করবে

মনে রাখবেন, আপনার স্ক্রিপ্ট হলো আপনার সিনেমার ৫০%, স্ক্রিপ্ট অসাধারন তো আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে গেলোএমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আপনাকে আপনার সিনেমাটোগ্রাফার বা এডিটর কে বলতেও হবো না কি করা লাগবেআপনি যদি শুধুই স্ক্রিপ্ট রাইটার হোন, তাহলে আপনার ডিরেক্টর আপনার স্ক্রিপ্ট পরেই ধরে ফেলতে পারবে আপনার গল্পএবং অবশ্যই একটি ভালো স্ক্রিপ্ট কে কখনোই মনে হবেনা overwrittenবেশী বেশী সব কিছুই খারাপআপনার স্ক্রিপ্ট এ প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ডায়ালগ বা বর্ননা থাকলেও খারাপ

অনেকে স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে শুধু মাত্র গল্প লিখে বসে থাকেনএটা হয় কারন তারা হয় কখনো স্ক্রিপ্ট লিখেননি বা তারা স্ক্রিপ্ট লিখার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননিধরুন, আপনাকে একটা বাড়ি বানাতে দেয়া হলোআপনি মাথার মধ্যে বাড়ির ডিজাইন করে স্পটে থেকে সবাইকে বলে দিচ্ছে কি করতে হবেকেউ কোথাও কোন মিস্টেক করলে আপনাকে দৌড়ে যেতে হচ্ছেবা, কেউ তার টাস্ক শেষ করে কি করবে বুঝতে পারছেনাবা, কোথাও কোন ছোটখাটো প্রব্লেম হলো, সেখানেও আপনাকে দৌড়ে যেতে হচ্ছেআলটিমেটলি, আপনার বাড়ি হয়তো সম্পন্ন হবেআপনার অমানুষিক পরিশ্রমে বাড়ির কাজটাও হয়তো ভালো হবেকিন্তু আপনি কয়টা বাড়ি বানাতে পারবেন এভাবে? আর কয়টা বাড়িই বা ভালো হবে?

অথচ, আপনার হাতে যদি বাড়ির একটা ব্লু প্রিন্ট থাকতো যেটা আপনি এক মাস কষ্ট করে বাসায় বসে বসে বানিয়েছেন, তাহলে আপনার অনেক কষ্ট কমে যেতোআপনার ইঞ্জিনিয়ার বা শ্রমিকরা নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে দিতোতারা জানতো তাদের টাস্ক কিছোটখাটো সমস্যায় পড়লে তারা নিজেরাই সেগুলোর সমধান করতোচিন্তা করে দেখুন, মাইক্রসফট এর যাবতীয় সকল সমস্যার সমাধান যদি বিল গেটস কে দিতে হতো তাহলে কি হতো?

স্ক্রিপ্ট হলো আপনার সিনেমার ব্লু প্রিন্টআপনার ব্লু প্রিন্ট যত ভালো হবে, আপনার সিনেমাও তত ভালো হবেএটা সেমি-গ্যারান্টেড - কারন একটা সিনেমায় স্ক্রিপ্ট ই সব নয়, অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে


=>স্ক্রিপ্ট লিখতে গেলে কি কি লাগে?

স্ক্রিপ্ট লিখতে গেলে আসলে প্রথমেই লাগে একটা ভালো গল্পতবে, সব সময় যে ভালো গল্প হতেই হবে এমন কোন কথা নেইঅনেক সিনেমার মুল গল্প টা অত আহামরি না হলেও শুধুমাত্র অভিনয় বা গল্পকারের বলার ঢঙ্গের কারনে অসাধারন হয়ে গিয়েছেকিন্তু, আপনার গল্প ছাড়াও যেটা লাগবে সেটা হলো দিস্তা দিস্তা কাগজ আর চালু কলম

দিস্তা দিস্তা কাগজ হয়তো আপনার খরচ হবেনা যদি আপনি পিসি তে লিখে থাকেনপিসিতে অবশ্য আপনি ফাইনাল স্ক্রিপ্ট টা লিখতেই পারেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, প্রাথমিক অবস্থায় খাতা-কলম এই ডিজিটাল যুগেও আপনার ব্রেইন স্টর্মিং এ সাহায্য করে থাকে প্রবল ভাবে যেটা পিসির সামনে বসে সম্ভব নয়ফাইন্যালি যেটা লাগে সেটা হলো 'চিন্তা'


=> একটা ভালো স্ক্রিপ্ট এ কি কি থাকা প্রয়োজন?


সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিচের পয়েন্ট গুলো থাকা প্রয়োজন

ক) স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট - যেনো আপনার লেখা যে কেউ পড়ে বুঝতে পারে

খ) ক্যাচি ডায়ালগ - ভালো একটা স্ক্রিপ্টে ডায়ালগ খুব ইম্পরট্যান্ট একটা বিষয়ডায়ালগ ভালো না হলে স্ক্রিপ্ট মার খেয়ে যায়এই জন্য চালাক স্ক্রিপ্ট রাইটার রা ডায়ালগ কম রাখার চেষ্টা করে কারন মোশন পিকচার দেখানোর মাধ্যম, বলার নয়

গ) দুর্দান্ত শুরু - শুরুটা যেনো দুর্দান্ত হয়শুরু যদি খুব পানসে হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনার সিনেমা অনেকেই স্কিপ করে চলে যাবেআর যদি এই দুর্দান্ত টা পুর সিনেমা জুরে ধরে রাখতে পারেন তাহলে আপনাকে আর পায় কে!

ঘ) অসাধারন ফিনিশিং - শেষ ভালো যার সব ভালো তার (পুরোনো প্রবাদ)-- ফিনিশিং যদি সাদামাটা হয় তাহলে আপনার সিনেমা কেউ মনেও রাখবেনাঅসাধারণ ফিনিশিং কয়েকভাবে দেয়া যায় - অবিশ্বাস্য কোন টুইস্ট, যেটা দেখে মানুষ এর ধারনাই পালটে যাবেঅথবা, ইমোশন্যাল অ্যাটাক যেটা দেখে দর্শকের মনে হবে 'আহারে', অথবা কোন গুরুত্বপুর্ন মেসেজ

ঙ) গ্রেট ক্যারেক্টার - কিছু গ্রেট ক্যারেক্টারের জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুনএকজন গ্রেট নায়ক বা নায়িকা আমাদের সিনেমার সাথে যেমন মানুষিক ভাবে জড়িয়ে ফেলে, তেমনি আমাদের কে প্যাশনেট করে তোলেআবার একজন গ্রেট ভিলেইন কে দেখে আমাদের মনে হয় লাফ দিয়ে উঠে স্ক্রিন এর ভেতর দিয়েই হারামজাদার গলা চেপে ধরি

চ) ইমোশন ইমোশন ইমোশন - এর উপরে কিছু নাইপারলে দর্শকদের কাঁদানঅথবা, পারলে তাদের হাসানপারলে রাগান্বিত, পারলে তাদের মন ভালো করে দিন - এসব কাজই মেলা কষ্টের

ছ) অল্প ভাষায় বর্ননা - অনেকেই স্ক্রিপ্ট লিখতে বসে মেলা বর্ননা দেনমনে রাখবেন, যত বেশী বর্নন তত বেশী ঝামেলাআর আপনাকে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে সব কিছু বলে দিতে হবেনাগল্পটা ধরতে পারলে ডিরেক্টর নিজেই বর্ননা বর্নিয়ে নিবেআর আপনি নিজেও যদি আপনার স্ক্রিপ্টে ডিরেকশন দেন তাহলে আপনার বর্ননা করার জন্য শুটিং স্ক্রিপ্ট তো রইলোই

আসুন খুব দ্রুত ফরম্যাট নিয়ে কিছু কথা বলে নেইফরম্যাট হলো এমন একটা জিনিস যেটা স্ট্যান্ডার্ড রাখলে সবার বুঝতে সুবিধা হবেকিন্তু তার মানে এই না যে আপনাকে সব নিয়ম কানুন মানতেই হবেকিন্তু কিছু নিয়ম মানাটা জরুরীকোনটা কেনো জরুরী সেটা সিরিজের শেষেই বুঝতে পারবেন

আমি সহজ সাবলীল ভাষায় ফরমেশন টা বর্ননা করার পাশাপাশি কিছু স্ক্রিপ্ট এর স্ক্রিনশট দিয়ে বুঝিয়ে দিবোকিন্তু, মনে রাখা জরুরী যে আমি কোন বই লেখক ও নই আর বই থেকে কপি পেস্ট ও করতেছিনাতাই হয়তো কিছু কিছু ব্যাপার মিস হয়ে যাবেআমার পোস্ট কে কুরআ'ন বা বাইবেল না ধরে নেট খুজে খুজে আরও একটু পড়াশুনা করা উচিত হবে আপনাদের

যাইহোক, স্ক্রিপ্ট আসলে দুই রকম হয় সাধারনতএক, সাবমিশন স্ক্রিপ্ট- যেটা বিক্রির জন্য প্রস্তুতকৃতদুই, শুটিং স্ক্রিপ্ট - যেটা শুটিং এর জন্য প্রস্তুতকৃতএই দুটোর পার্থক্য হলো - সাবমিশন স্ক্রিপ্ট লিখা হয় কোন স্টুডিও তে সাবমিশন ও পরবর্তীতে বিক্রীর ধান্দায়অথবা, আপনি হয়তো কোন ডিরেক্টর কে দিলেন যেন সে ওই স্ক্রিপ্ট টাকে শুট করেআর শুটিং স্ক্রিপ্ট হলো শুটিং যে স্ক্রিপ্ট এর উপর বেইজড করে করা হয়সেটা অনেক সময় শুধু ডিরেক্টর এর কাছেই থাকেশুটিং সাবমিশন স্ক্রিপ্ট থেকে শুটিং স্ক্রিপ্ট এ যাওয়ার পথে সাধারনত স্ক্রিপ্ট টাকে আরো কয়েকবার লিখা হয়আমরা এখন কিভাবে সাবমিশন স্ক্রিপ্ট লিখা উচিত সে ব্যাপারেই ধারনা নিবো

তার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেই কিছু স্ক্রিপ্ট এর উপরফরেস্ট গাম্প সিনেমাটার শেষ দৃশ্যের কথা মনে আছে? সে যে ফরেস্ট গাম্প তার ছেলে জুনিয়র কে স্কুল বাসে তুলে দেয় যেভাবে তার মা তাকে বাসে তুলে দিত?
অথবা টাইটানিক ছবির কথা মনে আছে যখন রোজ কে একটা কাঠের তক্তার উপর উঠিয়ে জ্যাক তক্তাটা ধরে পানিতে ভাসতেছিলো?

ফরেস্ট গাম্প সিনেমার শেষ দৃশ্য - ৩টা স্ক্রিনশট








টাইটানিক এর চারটা স্ক্রিনশট









এটা আমার লেখা একটি আর্ট ফিল্ম এর কিছু অংশবিশেষ - বানানো হয়নি এখনো










স্ক্রিপ্ট গুলো দেখে কি কোন কিছু মাথায় ঢুকেছে? যাদের কিছু আইডিয়া আছে তারা নিশ্চয়ই বুঝেছেনকিন্তু যারা আগে কখনো স্ক্রিপ্ট দেখেননি তারা নিশ্চয়ই মাথা চুল্কাচ্ছেনকোন সমস্যা নেই, আমিও একসময় এইভাবে মাথা চুলকাতামএখনো মাঝে মাঝে চুলকাই

একটা স্ক্রিপ্ট এর কয়েকটা পার্ট আছেএই পার্ট গুলো ধরতে পারলে আপনার কাছে স্ক্রিপ্ট বুঝা কোন ব্যাপার না



এবার আসুন একটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলি


গল্পাংশবিশেষঃ একজন সেলসম্যান তারিকের দরজায় নক করবেতারিক দরজা খোলার পর তাদের মধ্যে কথা হবেতারিক কিনতে রাজী না হওয়ায় সেলসম্যান বিদায় নিবে

১) পৃষ্ঠার সাইজ ও স্ক্রিপ্ট এর দৈর্ঘ্যঃ সাধারন A4 কাগজে স্ক্রিপ্ট লিখা হয়আর প্রথম পেজ বাদে বাকী সব পেজের উপরে ডান কোনায় পেজ নাম্বার দেয়া থাকেপেজের উপরে আর নীচে আধা ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি পর্যন্ত জায়গা খালি থাকে, বাম পাশে থাকে ১.২ ইঞ্চি থেকে ১.৬ ইঞ্চি এবং ডান পাশে থাকে আধা ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চিইংলিশে লিখলে কুরিয়ার ফন্ট ১২ সাইজে রেখে ব্যাবহার করবেন
আপনি যদি পিসি তে লিখেন তাহলে এটা মেনে চলার চেষ্টা করবেনআর হাতে লিখলে কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করবেন


বায়ে - ১.২ থেকে ১.৬ ইঞ্চি
ডানে - ০.৫ থেকে ১.০ ইঞ্ছি পর্যন্ত
উপরে ও নীচে -০.৫ থেকে ১.০ ইঞ্ছি পর্যন্ত


স্ক্রিপ্ট এর দৈর্ঘ্য সিনেমার দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে থাকেসাধারনত হলিউড এর সিনেমার স্ক্রিপ্ট এ পৃষ্ঠা থাকে ৯৫ থেকে ১২৫ পৃষ্ঠাআপনার স্ক্রিপ্ট এর কোন বর্ননা হয়তো পড়তে ১০ সেকেন্ড লাগবে কিন্তু শুট করার পর দেখবেন সেটা ৪৫ সেকেন্ড হয়ে গিয়েছেতাই, সাধারনত এক পৃষ্ঠা স্ক্রিপ্ট এর শুটিং টাইম ধরা হয়ে থাকে ১ মিনিট

২) একশন বা বর্ননাঃ বর্ননা আপনার স্ক্রিপ্ট এর নির্দিষ্ট সিকোয়েন্সের সেটিংস ও ক্যারেক্টার এর ব্যাপারে ধারনা দিয়ে থাকেসবসময় এটা বাম থেকে ডানে যায়আর সবসময় ই এটা বর্তমান সময়ে সময়ে (প্রেজেন্ট টেন্স) এ হয়ে থাকেবর্ননায় কখনো এঙ্গেল বা শটের ধরন লিখবেন নাওটা ডিরেক্টর এর কাজ


ফেড ইনঃ

ইন্টঃ তারিকের দরজার সামনে - সকাল

হাতে ব্যাগ নিয়ে একজন সেলসম্যান এসে দরজায় নক করেদরজা না খোলায় সেলস্ম্যান দ্বিতীয়বার দরজায় নক করলে তারিক খালিগায়ে দরজা খুলে বের হয়ে আসে


- উপরে দেখুন, বর্ননাটুকু আমাদের ধারন দিচ্ছে যে আমরা তারিকের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিসেলস্ম্যান দরজায় দু'বার নক করেছে আর তারপর তারিক বের হয়ে আসলে দেখা যায় তারিকের গায়ে জামা নেইসেলস্ম্যানের হাতে ব্যাগএখন শুটিং স্ক্রিপ্ট এ গিয়ে দেখা যাবে ডিরেক্ট্র হয়তো এভাবে লিখেছে -

ফেড ইনঃ

ইন্টঃ তারিকের দরজার সামেন (মোতালিবের বাসা) - সকাল (৭টায়)

[মিড শট] বাম হাতে ব্যাগ নিয়ে এসে সেলস্ম্যান (তন্ময়) ডান হাতে দরজার কড়া নাড়বে - দুবার
[ক্লোজ] সেলসম্যানের মুখ
[টোপ শট] সেলসম্যান এক পা এগিয়ে এসে আবার কড়া নাড়বে - তারিক (আন্দালিব) বের হয়ে আসবে - সেলস্ম্যান পিছিয়ে যাবে
[ক্লোজ] সেলস্ম্যান বিব্রত মুখে পিছিয়ে যাবে



৩)ক্যারেক্টারের নামঃ কোন একট ডায়ালগ দেয়ার সময় ক্যারেক্টার এর নাম দিতে হয়ক্যারেক্টার এর নাম হতে পারে আসল নাম বা মোটা মাথা, ভোদাই পোলা বা পুলিশ ১ অথবা জাদুকর টাইপের কিছুক্যারেক্টার এর নাম হবে ডায়ালগ এর ঠিক উপরে বাম থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি ডানে চাপায়া


ফেড ইনঃ

ইন্টঃ তারিকের দরজার সামনে - সকাল

হাতে ব্যাগ নিয়ে একজন সেলসম্যান এসে দরজায় নক করেদরজা না খোলায় সেলস্ম্যান দ্বিতীয়বার দরজায় নক করলে তারিক খালিগায়ে দরজা খুলে বের হয়ে আসে


তারিক

কি চাই?




৪) [b]ডায়ালগঃ [/b]মারাত্মক একটা জিনিসতবে আশার কথা হলো - এখন আর ডায়ালগ কে কাব্যিক করে বানাতে হয়নাডায়ালগ হতে পারে মর্মস্পর্শী, হতে পারে সরাসরি আঘাত করে বলা, হতে পারে কাটখোট্টাডায়ালগের কোন নিজস্ব দৈর্ঘ্য নেইআপনার ক্যারক্টার আর সিকোয়েন্সের উপর নির্ভর করবে আপনার ডায়ালগের দৈর্ঘ্য কেমন হবেডায়ালগ লিখার সময় মাথায় রাখবেন - আমরা সাধারনত কিভাবে কথা বলিসেটার কাগজিক রুপ কত সুন্দর করে বলা যায়যদি গল্প ডিমান্ড করে তাহলে অবশ্যই লোকাল ভাষা ব্যাবহার করা যায়কিন্তু সিনেমা একটি শিল্প, আর একটি শিল্পের নিজস্ব ভাষা রয়েছেক্রমাগত লোকাল ও বাজে ল্যাঙ্গুয়াজের ব্যাবহারে সেটা প্রায় ধ্বংসের মুখেই পড়বেকয়টা অসাধারন সিনেমার নাম জানেন যেখানে লোকাল ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে? আর কয়টা অসাধারন সিনেমার নাম জানে যেখানে শুদ্ধ ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে?

আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তা করুনথিঙ্ক ইন্টারন্যাশনালিআপনার সিনেমায় সেভাবে চিন্তা করে ভাষার ব্যাবহার করুন

যাইহোক, পৃষ্ঠায় ডায়ালগ লেখার নিয়ম হলো - বাম পাশে আড়াই ইঞ্চি ফাকা আর ডান পাশে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি ফাঁকা যায়গা রাখবেন


ফেড ইনঃ

ইন্টঃ তারিকের দরজার সামনে - সকাল

হাতে ব্যাগ নিয়ে একজন সেলসম্যান এসে দরজায় নক করেদরজা না খোলায় সেলস্ম্যান দ্বিতীয়বার দরজায় নক করলে তারিক খালিগায়ে দরজা খুলে বের হয়ে আসে


তারিক

কি চাই?


সেলসম্যান

স্লামালিকুমআমার নাম মোতালিবআমি সিনেমা পিপলস থেকে এসেছিআপনার সাথে কি কিছুক্ষন কথা বলা যাবে?

তারিক

কথা বলতে চাইলে বলতে পারেন কিন্তু কিছু বিক্রি করতে চাইলে হাতে হাড়িকেন ধরিয়ে দিবো



৫) প্যারেইনথেটিক্যাল বা ডায়ালগের সময়কার এক্সপ্রেশনঃ ডায়ালগ দেয়ার সময় হয়তো আপনার ক্যারেক্টার একটি এক্সপ্রেশন দিলেনসেটা লিখার নিয়ম হলো ক্যারেক্টারের নাম আর ডায়ালগের মাঝে লিখাসাধারনতঃ ফার্স্ট ব্র্যাকেট () ব্যাবহার করা হয় প্যারেইনথেটিক্যাল এর দুইপাশে
প্যারেইনথেটিক্যাল এর বাম পাশে ৩ ইঞ্চি জায়গা ফাকা রাখতে হয়তার মানে ক্যারেক্টার এর এক্সপ্রেশন এক্সাটলি ক্যারেক্টারের নামের নীচে আসেনাযদি এক্সপ্রেশন বড় করে লেখা লাগে তাহলে হয়ত আসেযেমন-

তারেক
(রুক্ষ স্বরে)

- এটায় তারেকের ঠিক নিচে যদিও এক্সপ্রেশন দেখা যাচ্ছে, কারন পুরোটাই লেফট মার্জিনে আছে, আসলে এক্সপ্রেশন টা ক্যারেক্টার এর ঠিক নিচে একটু বায়ে থাকবে

তারেক
(রুক্ষ স্বরে হাত নেড়ে)
- এই জায়গায় আবার এক্সপ্রেশন বড় করে লেখায় সেটা ডায়ালগ এর নীচে প্রায় মাঝামাঝি থাকবে


একটা স্ক্রিনশট দিলে বুঝতে পারতেনতবে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটাতবে মনে রাখবেন - এটা হতে হবে শর্ট এবং নির্দিষ্টআর না দিয়ে পার পাওয়া গেলে দিবেন না


৬) এক্সটেনশনঃ নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটা কোন কিছুর বর্ধিত কিছু একটাহ্যাঁ, এক্সটেনশন ব্যাবহার করা হয় ক্যারেক্টারের নামের ঠিক ডান পাশে ফার্স্ট ব্র্যাকেটের মধ্যেএটা দিয়ে বুঝানো হয় কিভাবে ক্যারেক্টারের ভয়েস দর্শক এর কাছে পৌছুবে? যদি আমরা ক্যারক্টার কে দেখি স্ক্রীনে আর তার গলাও শুনি, তাহলে তো কিছু লেখার দরকার নেইকিন্তু যদি এমন কারো গলা শুনি যে কিনা স্ক্রীনে নেই, তখন?

এখানে একটি এক্সটেনশন দেখুন




এক্সটেনশন সাধারনত দুই রকমঃ ভয়েস ওভার এবং অফ স্ক্রীনঅনেকেই দুটো ব্যাপার গুলিয়ে ফেলেন

ভয়েস অভার (V.O.): যখন ক্যারেক্টার ওই সিকোয়েন্সে থাকেন না বা থাকেন কিন্তু কোন কিছুর বর্ননা দিচ্ছেন যেটা সিকোয়েন্সে দেখাচ্ছে নাযেমন ধরুন, গুডফেলাস সিনেমায় নায়ক ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্রমাগত বলে যেতে ওর জীবনের ঘটনাঅথবা কিক-অ্যাস মুভিতে নায়ক ব্যাকগ্রাউন্ডে যা বলে - এসব হলো ভয়েস ওভারঅথবা, মুভির শুরুতেই মোটা একটা গলা কিছু কথা বলে গেলো, সে কিন্তু ওই মুভি তে অভিনয় করে নাইএটাও ভয়েস ওভার

অফ স্ক্রীন (O.S.): অফ স্ক্রীন হলো যখন কেউ সিকোয়েন্সে আছেন কিন্তু স্ক্রীনে নেইযেমন ধরুন আগের লিঙ্কটায়মা ও বাবা দুজনেই সিকোয়েন্সে আছেন, কিন্তু স্ক্রীনে ওই মুহুর্তে দুজনের কেউ নেই



৭) ট্রাঞ্জিশনঃ আমি নিজে ট্রাঞ্জিশন স্ক্রিপ্টে ব্যাবহার করার পক্ষপাতি নই কারন ডিরেক্টর এর হাতে যাওয়ার পর স্ক্রিপ্ট নিয়ে যে ধোলাই চলে আর তারপর এডিটিং এর সময় এসব ট্রাঞ্জিশন সাধারনত পরিবর্তন হয়ে যায়তারপরেও এটা একট স্ট্যান্ডার্ড রুল তাই সবাই ব্যাবহার করে থাকেতবে বলা হয়ে থাকে, যদি খুব বেশী প্রয়োজন না পরে তাহলে ট্রাঞ্জিশন না দিতে স্ক্রিপ্টেট্র্যাঞ্জিশন গুলো আসলে আপনাদের চেনা

ফেড টূ, ফেড আউট, কাট টু, ডিসলভ টু, কুইক কাটএগুলা দিতে হয় স্ক্রিপ্ট এর বাম থেকে সারে ৬ ইঞ্চি ফাকা রেখেমানে প্রায় ডান পাশে আর কি


[b]এখানে দেখেন কাট টু [/b]





৮) শটঃ একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে আপনার শট এর ব্যাপারে ধারনা থাকা উচিতঅনেক ধরনের শট আছে, কিন্তু আপনার অত বেশী শট না জানলেও দিব্যি চলে যাবেতবে আগেও যেমন বলেছি, এখনো বলছি - শট জিনিসটা ডিরেক্টরের বাপের সম্পত্তিআপনার লেখা শট ডিরেক্টর পছন্দ নাও হতে পারেআপনি যদি স্ক্রিপ্ট বিক্রির চিন্তা করেন তাহলে পরামর্শ হলো আগেই শট না লিখে, বিক্রির পর আপনি ডিরেক্টর এর সাথে নেগশিয়েশন করুন

যাইহোক, যদি একান্তই লিখতে চান তাহলে নেট ঘেটে সিনেমাটোগ্রাফী শট নিয়ে পড়াশুনা করুন

৯) কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা উচিতআমি পয়েন্ট বাই পয়েন্ট লিখে দিচ্ছি

- কখনো কোন ট্রঞ্জিশন দিয়ে পেইজ শুরু করবেন না
- যদি কোন বর্ননা বা ডায়ালগে মাঝে অন্য পৃষ্ঠায় যেতে হয় তাহলে নীচে লিখুন - 'কন্টিনিউ' বা 'চলছে'
- খেয়াল রাখবেন যেনো ক্যারেক্টার এর নাম পেইজের শেষ লাইন না হয়ক্যারেক্টার এর নাম লিখে অন্তত এক লাইন ডায়ালগ ও লিখুন
- প্যারেনথেটিক্যাল দিয়েও পেইজ শেষ যেনো না হয়অন্ততঃ এক লাইন ডায়ালগ দিয়ে বাকিটুকু না হয় অন্য পেইজে লিখুন
- ডুয়েল সাইডেড বা একি সাথে দুই জন কথা বলছে ( যেরকম ঝগড়ায় হয় আর কি) - এমন শটের ডায়ালগ লিখার সময় পাশাপাশি লিখুন।। এখানে একটা উদাহরন দিচ্ছি



যেসব কাজ গুলো অবশ্যই করবেনঃ


- বানান ভুল যেনো না হয়বানান ভুল চোখে পড়লে আপনাদের ও কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়
- কাউরে দিয়া স্ক্রিপ্ট পড়ানজোড়ে জোড়ে পরাইতে পারলে আরো ভালোনা পারলে, তাকে বলুন এমনি পড়তেতখনো কিছু ভুল বের হয়ে আসতে পারে
- অভিজ্ঞ কাউকে যদি পা তাহলে খুব ভালোস্ক্রিপ্ট এর ভুল ত্রুটি ধরায়া দিতে পারবে
- লেখা কম্পিউটারে কম্পোজ করুন
- যেসব রুলস গুলা বললাম সেগুলা মানার চেষ্টা করুন, যদি না আপনার কাছে এই রুল না মানার পিছনে কোন শক্ত কারন থাকেমনে রাখবেন, এই রুলস আমি বানাই নাই


যেসব কাজ গুলো অবশ্যই করবেন নাঃ

-টাইটেলে পেইজে আবার হেভী একটা ফন্ট দিয়া নাম ধাম লেইখেন নাযত সাধারন রাখবেন তত ভালো
- টাইটেল পেইজে কোন কোটেশন ব্যাবহার কইরেন নাআপনি ছাড়া আর কেউ এটা নিয়ে মাথা ঘামাবেনা
- স্ক্রিপ্ট এর কোথাও তারিখ দিয়েন না
- স্ক্রিপ্ট এর মাঝে শুধু শুধু খালি কাগজ দিবেন না
- ক্যারেক্টারের বর্নানা বা কোন পুর্ব-গল্প লিখবেন না স্ক্রিপ্ট এযদি আপনার স্ক্রিপ্ট স্বয়ং কোন গল্প না বলে তাহলে আপনার স্ক্রিপ্ট লিখা হয়নি
- রঙ্গীন কাগজ বা রঙ্গীন কালো কোনটাই ব্যাবহার করবেন না






অনেক কথাই তো বললামএবার বলুনতো স্ক্রিপ্ট লিখা কি সোজা নাকী কঠিন? এবার বলনতো বিদেশের সাথে দেশের ফিল্ম এর এতো পার্থক্য কোথায়? একেবারে বটম লাইনে পার্থক্য দিয়া শুরু হয়বলবেন না দেশের স্টোরি বাজেএই বাজে স্টোরি কে মারাত্তক করে দিতে পারে বেশ কিছু ব্যাপার - তার মধ্যে একটা হলো স্ক্রিপ্ট

লিখেছেন :: মাহদী হাসান [শামীম]
ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেকার