Friday, December 3, 2010

দাস প্রথা

0 comments
দাস প্রথাএকদা মানব জাতিকে, মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। শাসকরা তাদের সুবিধা অর্জনের জন্য দাস রাখত। প্রাচীন ও মধ্যযুগ সব আমলেই মানুষ কেনা-বেচার প্রথা ছিল। প্রচলিত এই প্রথার নাম দাস প্রথা। বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলায়ও দাস প্রথার প্রচলন ছিল প্রাচীনকাল থেকেই। ছিল মানুষ বিক্রির নির্দিষ্ট হাট-বাজার। অন্যসব পণ্যের মতো দাস-দাসী আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৮৩০ সাল পর্যন্ত বাংলার বাজারে আফ্রিকান 'হাবশি' ও 'কাফ্রি' নামে পরিচিত দাস-দাসী আমদানি করা হতো। রপ্তানি হতো ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোতে। যেখানে বাগান ও কৃষিকার্যাধীন দাসের সংখ্যাই বেশি ছিল। দাস প্রথা মূলত দু'ধরনের ছিল গার্হস্থ্য ও কৃষিকার্যাধীন। উচ্চবিত্ত পরিবার মনে করত, গুটি কয়েক দাস-দাসী থাকবে এটাই সামাজিক মর্যাদা। কৃষিধনী পরিবার এদের দিয়ে মাটি খনন, পানি সেচ, গবাদিপশু পালন, নির্মাণ কাজ ইত্যাদি করাত। দাসীদের কেনা হতো মূলত যৌন ভোগ-লালসার জন্য। এদের উপ-পত্নী রূপে রাখা হতো ও তাদের ভূমিষ্ঠ সন্তানরাও দাস-দাসী হিসেবে গণ্য হতো। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য পরিবহন ও কারখানা পাহারার জন্য দাসদের নিয়োগ করত। স্যার উইলিয়ম জোন্সের মতো মানববাদী, আইনজ্ঞ, পণ্ডিত ব্যক্তিরও ৪ জন দাস ছিল। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি উচ্চবিত্ত মহাজনদের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করত। ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিশু ও বৃদ্ধ দাসের মূল্য ছিল ৫ থেকে ৭ টাকা। স্বাস্থ্যবান তরুণের দাম ছিল কুড়ি থেকে পঞ্চাশ টাকা। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন সরকার এ প্রথা নিরুৎসাহিত করে। ১৮৪৩ সালে দাস-প্রথা সমাপ্তির 'অ্যাক্ট ফাইভ' আইন হয়। আইনে দাস আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়।

-শাকিল হাসান

0 comments:

Post a Comment