Friday, December 24, 2010

ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি

0 comments
শারীরিক সৌন্দর্যের বিচারে সুস্থ, আকর্ষণীয় ও যৌবনদীপ্ত ত্বক একটি অন্যতম প্রধান মাপকাঠি। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় এবং চলি্লশোধর্ে্বাদের মধ্যে তরুণ্যদীপ্ত ত্বক ধরে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা বা প্রবণতা দেখা যায়। এ প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতবিশ্বে বহু আগেই এ ধরনের সেবা প্রদানের ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক/বিশেষজ্ঞদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে 'মেডিক্যাল স্পা' একটি সফল শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের দেশেও ইদানীং ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধন (কসমেটিক) সেবা প্রদানের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনের বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ডার্মাব্রেশন/ মাইক্রোডার্মাব্রেশন, কেমিক্যাল পিলিং, ইনজেকশন/ফিলার পদ্ধতি, লাইট থেরাপি, সেলুলাইট পদ্ধতি এবং লেজার প্রয়োগ। এছাড়াও কসমেটিক সার্জারির মাধ্যমে নাক, মুখ, বক্ষদেশ, নিতম্ব, উরু ইত্যাদির গঠন পরিবর্তন করে সৌন্দর্যবর্ধন করা যায়।

এসব পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণত বয়স বৃদ্ধিজনিত বলিরেখা, গর্ভ-পরবর্তী দাগ, রোদে গোড়াজনিত দাগ, ব্রণ ও ত্বকের রোগজনিত ক্ষত, জন্মগত দাগ, মেছতাসহ বিভিন্ন বর্ণ পরিবর্তনজনিত রোগের দাগ ইত্যাদি সমস্যার দূর করা সম্ভব।

ডার্মাব্রেশন/ মাইক্রোডার্মাব্রেশন : এ পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ঘষে ত্বকের অনাকাক্সিক্ষত অংশ তুলে ফেলা হয়। পরবর্তীতে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাভাবিক আকার ধারণ করে। বলিরেখা, ব্রণজনিত ক্ষত, রোদে পোড়া ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

কেমিক্যাল পিলিং : চিকিৎসকরা এ পদ্ধতিতে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে ত্বকের অনাকাক্সিক্ষত অংশ তুলে ফেলেন অনেকটা ঝলসে ফেলার মতো। পরবর্তীতে নতুনভাবে সৃষ্ট কোষের মাধ্যমে স্থানটি স্বাভাবিক রূপ ফিরে পায়। বলিরেখা, মেছতা, ব্রণজনিত ক্ষত ইত্যাদিতে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

ইনজেকশন/ফিলার পদ্ধতি : বয়সজনিত বা অন্য কোনো কারণে বলিরেখা (ডৎরহশষব) দূর করতে বিশেষ ধরনের পদার্থ যেমন বটোক্স, কোলাজেন কিংবা চর্বিজাতীয় পদার্থ ইনজেক্শনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এমনকি সেবা গ্রহণকারীর শরীরের অন্যকোনো স্থান থেকে বিশেষ ধরনের চর্বি আহরণ করে তা আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা হয়।

লাইট থেরাপি : এই পদ্ধতিতে যন্ত্রনিঃসরিত আলোকের (খঊউ) মাধ্যমে ত্বকের কোলাজেনকে উজ্জ্বীবিত করা হয়, নতুন কোষ তৈরি করার জন্য। বলিরেখা দূর করার জন্য পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়।

সেলুলাইট চিকিৎসা : শরীরের চর্বি থেকে সেলুলাইট নামে এক ধরনের পদার্থ তৈরি হয়, যা ত্বকে জমে বিভিন্ন স্থানে ভাঁজ তৈরি করে। এ পদ্ধতিতে অনাকাক্সিক্ষত এসব সেলুলাইট দ্রবীভূত করার মাধ্যমে ত্বকের গাঁথুনি ও বিন্যাস ফিরিয়ে আনা হয়।

লেজার চিকিৎসা : চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো ত্বকের চিকিৎসায়ও লেজার ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন ধরনের লেজার ত্বকের টিউমার অপসারণ, জন্মগত দাগ দূর করা, ব্রণজনিত ক্ষত, রোদে পোড়া দাগ দূর করা, অনাকাক্সিক্ষত রোম তুলে ফেলা, বলিরেখা দূর করা ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। তবে সৌন্দর্যবর্ধক সেবা প্রদানেই ত্বকের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি সর্বাধিক ব্যবহৃত হচ্ছে।

লাইপোসাকশন ও কসমেটিক সার্জারি : লাইপোসাকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা অতিরিক্ত অনাকাক্সিক্ষত চর্বি বের করে আনা হয়। তাছাড়া কসমেটিক সার্জারির মাধ্যমে নাক, মুখ, বক্ষদেশ, উরু, নিতম্ব ইত্যাদির গঠন পরিবর্তন করে কাক্সিক্ষত আকার/আকৃতি প্রদান করা যায়।

এসব পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের বিন্যাস, গাঁথুনি, উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ধরে রাখা যায়। ত্বকের ভাঁজ ও দাগ দূর করে, এমনকি রং পরিবর্তনের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত সৌন্দর্যবর্ধনে সাহায্য করে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের আগে অবশ্যই কার্যকারিতা, চিকিৎসাকালীন সময়, চিকিৎসা-পরবর্তী স্থায়িত্ব, ব্যয় এবং সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে জানা জরুরি। চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কারও কাছ থেকে এসব সেবা গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে সৌন্দর্যবর্ধনের চেয়ে সৌন্দর্যহানির সম্ভাবনাই থাকে বেশি।

লেখক : ডা. এমআর করিম রেজা, কনসালটেন্ট

চর্ম, এলার্জি ও কসমেটিক বিভাগ, এশিয়ান জেনারেল হাসপাতাল লি. ঢাকা। ফোন : ০১৮১৯-২৩৭৩৫০

0 comments:

Post a Comment