Friday, December 24, 2010

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

0 comments
সাভারের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে। আর এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৮৮ সালের জুনে। তিন পর্যায়ে সম্পন্ন হওয়া এই নির্মাণ কাজে ব্যয় হয় মোট ১৩ কোটি টাকা।
ত্রিশ লাখ প্রাণের দামে এসেছে বাংলাদেশ। পতপত করে উড়তে শুরু হয়েছিল একটা নতুন পতাকা। লাল আর সবুজে ভরা সেই পতাকার জন্য রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে শহীদদের স্মরণে দেশজুড়ে নির্মিত অসংখ্য ভাস্কর্য আর স্মৃতিসৌধের মধ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রধান।

সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ বরাবরই সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে সবাই এসে দেশপ্রেম আর জাতিসত্তার অস্তিত্ব অনুভবের সুযোগ পায়। স্মরণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধ। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লাল ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা চারদিক। মাঝখানে প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই সরাসরি চোখ চলে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের উঁচু মিনারের দিকে আর মনে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। এরপরই চোখে পড়ে শ্বেতপাথরে উৎকীর্ণ একটি লেখা। 'বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা/এর যত মূল্য সে কি ধরার ধূলোয় হবে হারা'। এর একটু সামনেই শ্বেতপাথরের ভিত্তিপ্রস্তর। ডানদিকে রয়েছে নজরকাড়া উন্মুক্ত মঞ্চ। সোজা হেঁটে গেলে মূল স্মৃতিসৌধ। ১৫০ ফুট বা ৪৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট স্মৃতিসৌধটিতে রয়েছে ৭টি ফলক। প্রতিটি ফলকের রয়েছে পৃথক অর্থ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রমের ৭টি পর্যায়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে বাঙালি জাতির অভ্যুদয়ের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোকে। এই সাতটি পর্যায়ের প্রথমটি সূচিত হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য যে সংগ্রামের সূচনা হয়, সেটিই পরবর্তীকালে মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে। আর এর মাঝখানের সময়টুকু অর্থাৎ চুয়ান্ন, আটান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর পর্যন্ত ৭টি অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে স্মৃতিসৌধের ৭টি ফলক।

সাভারের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে। আর এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৮৮ সালের জুনে। তিন পর্যায়ে সম্পন্ন হওয়া এই নির্মাণ কাজে ব্যয় হয় মোট ১৩ কোটি টাকা। প্রতি বছর এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরাও অরূপ সুন্দর এই স্থাপত্যের সৌন্দর্যদর্শনে ছুটে আসেন। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই বীর শহীদদের স্মরণে এখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান কিংবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন এবং সফরের স্মৃতিস্বরূপ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রোপণ করেন বিভিন্ন গাছের চারা। জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন। এছাড়া আশপাশের অন্য সব নির্মাণ কাজের স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদফতর। মূল স্মৃতিসৌধের বাম দিকে রয়েছে সৌধ চত্বর। এখানে মুক্তিযুদ্ধের নাম না জানা দশজন শহীদের সমাধিসৌধ রয়েছে। অন্যদিকে ডান পাশে রয়েছে একটি পুষ্পবেদী। যেখানে এক সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হতো। এর তিন দিক ঘিরে আছে একটি নয়নাভিরাম কৃত্রিম লেক। স্মৃতিসৌধের চারদিকের পুরো জায়গাটি সবুজ গাছপালায় পরিপূর্ণ । চারদিককার সবুজের সমারোহ একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। উল্লেখ্য, শুধু স্মৃতিসৌধ এবং এর প্রাঙ্গণের আয়তন ৮৪ একর এবং সৌধ ঘিরে আছে আরও ২৪ একর জায়গা। এসব ছাড়াও স্মৃতিসৌধে রয়েছে হেলিপ্যাড, মসজিদ, অভ্যর্থনা কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া। সবমিলিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ সব সময়ই সঙ্গ দেয় দর্শকদের। আর জাতির কাছে বীর শহীদদের যে ঋণ, তাও জানান দেয় মাথা উঁচু করে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

0 comments:

Post a Comment