হাড ফোঁপরা হওয়ার কারণ সম্বন্ধে ইদানী অনেক কিছু জানা গেছে। মানব কংকালের গঠন বজায় রাখার জন্য দেহের অন্ত:ক্ষ বা গ্রন্থির রস হরমোনের নানান খেলার খবর জানা গেছে। এখন বোঝা যাচ্ছে হাড ভাঙ্গে কেন-এর প্রধান কারণ হাড় ফোঁপরা হওয়া। চিকিত্সার ভাষায় “অস্টিওপরোসিস”। হাড়গুলো দুর্বল হয়ে ফোঁপরা ও ভঙ্গুর হয়ে গেলে এর প্রতিটি ধরনের জন্য আছে নির্দিষ্ট চিকিত্সা।
অস্টিওপরোসিসকে বার্ধক্যের একটি স্বাভাবিক অংশ বলেই ধরি আমরা, বেশির ভাগ মহিলার দৈহিক উচ্চতাও কম হয় এজন্য আবার পিঠ একটু কুজোও হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বুঝতে পেরেছেন, এটি আসলে ঘটে দুর্বল আস্থিকোষের সমতা নষ্ট হওয়ার জন্য। এক ধরনের অস্থিকোষ হলো অস্টিওক্লাস্টস্ যা ভেঙ্গে ফেলে পুরোনো হাড়, এবং অস্টিওব্লাস্ট যা গড়েতোলে নতুন হাড়। এই দ’ধরনের কোষ সমন্বিত ভাবে কাজ করে, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাড়গুলো মজবুত ও সুস্থ থাকে সারাজীবন। এই সমতা যখন চূর্ন হয় তখন ঘটে ‘অস্টিওপরোসিস।’
গত ১৫ বছর, বিজ্ঞানীরা সেসব ওষুধ নজরে রেখেছেন যেগুলো হাড়ের
ক্ষয় ধীর করে। বিসফসকোনেট ধরণের ওষুধ। এমনকি ফোসাসেন্সের মত ওষুধ। আবার নতুন ওষুধও আছে যেগুলো হাড় গঠনে সহায়ক। এসব ওষুধ, বিসফসকোনেট বা অন্য ওষুধ যা অস্থিক্ষয় ধীর করে, এদের সঙ্গে কাজ করে একত্রে এবং সুস্থ সতেজ হাড়ের বাড়বাড়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমতা পুনরায় সৃষ্টি করে।অন্যান্য গবেষকরা নতুন হাড় সৃজনের জন্য স্টেমকোষ প্রযুক্তি ব্যবহারের উপায় খুঁজে দেখছেন। অস্টিওপরোসিস চিকিত্সা বড় জরুরী। পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য মানুষ অস্টিওপরোসিসের কারণে ফ্রাকচার হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। এদের মধ্যে অনেকেই আগে থেকে জানতে পারেন না যে, তাদের এমন হতে যাচ্ছে, কারণ বেশিরভাগ সময় অস্টিওপরোসিসের কোন উপসর্গ থাকে না। যখন জানান দেয় তখন হয়ত বা কবিজ ভেঙ্গেছে। বুড়োদের জন্য হাড় এভাবে আহত হলে তা মারাত্মক হতে পারে। ন্যাশনাল অস্টিওপরোসিস ফাউন্ডেশনের মতে, বয়স্ক লোক যাদের কোমরের হাড় ভেঙ্গেছে এদের ২০% মৃত্যু হয় এক বছরের মধ্যে। আর যারা বাঁচেন এদের বেশিরভাগ জীবন কাটান নার্সিং হোমে। তবে তরুণদের ও অস্থিফোপরা হলে অক্ষম করে দেয় জীবন। গত ২০ বছরে বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করেছেন যাদের ঝুঁকি আছে, হাড় ফোঁপরা হওয়ার- ৬৫ বছর উর্দ্ধ মহিলা, ৭০ উর্দ্ধ পুরুষ, তরুণ যাদের ওজন ১২৭ পাউন্ডের নিচে, পাঁড় মাতাল ও ধূমপায়ী, আর এমন যারা গ্রহণ করেন কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, স্তন ক্যান্সারের ওষুধ ও খিচুনির ওষুধ।
হাড়ের ভাঙ্গন ও গড়ার কাজ
শুরু হয় শৈশব থেকে, যখন অস্থির গঠন থাকে তুঙ্গে। বয়স ২০ হতে হতে, দুটোই চলে সমানতালে। ইতিমধ্যে হাড় যা গঠিত হবার হয়ে যায়। যারা খুব ব্যায়াম করেন, শৈশব থেকে ঠিকমত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম পান, এদের হাড় হয় সগঠিত, বুড়ো হলে হাড়ের কষ্ট
থাকে না। পুরুষদের হাড় গঠন ধীর হয়ে যাওয়া ঘটে ক্রমে ক্রমে,
কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে, ঋতুবন্ধের পর এ প্রক্রিয়া ঘটে হঠাত্, নারীদের তখন ইস্টোজেন নেই, যা অস্থিক্ষয়
রাখতো ঠেকিয়ে। এমন ক্ষতি-ক্ষয় প্রতিরোধ করতে হলে, যেসব
রোগীর ঝুঁকি, এদের বোন্ ও মাস্ পরীক্ষা করানো উচিত। ২০০৭
সালে ফেব্রুয়ারী মাসে জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ঋতুবন্ধ উত্তর নারীদের মধ্যে কোমরের অস্থি ভঙ্গের ঝুঁকি নির্ণয়ে নতুন এক স্কোরিং ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
ছোটখাট অস্থিক্ষয় ক্যালসিয়াম (৫০ উর্দ্ধ লোকের জন্য ১২০০ মিলি গ্রাম দৈনিক) ও ভিটামিন ডি (বয়স্কদের জন্য ৮০০-১০০০ আন্তর্জাতিক একক) দিয়ে চিকিত্সা করা যায়। ওয়েট-বেয়ারিং ব্যায়ামও হতে পারে। বুডোদের হাড় গঠনের জন্য। এসবে কাজ না হলে ওষুধ। বিস্ফসকোনেট অস্থিক্ষয় রোধের জন্য। আছে নতুন ওষুধ টেরিপেরিটাইড, অস্থিগঠনের,
তবে অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শে,সতর্কতার সঙ্গে। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা অস্থিকোষগুলো খুটিয়ে দেখছেন যাদের গঠন, সংযুতি এবং গুণাগুণ ভালো ভাবে জেনে অস্টিওপরোসিস নিমূর্ল করা যাবে। জর্জিয়ায় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার-এর অধ্যাপক বাবরারা বয়ান বলেন, ‘এমন ধরনের গবেষণার শুরুতেরয়েছে আমরা।’ চিকিত্সার ব্যাপারে জেন্ডার পার্থক্য একটি বিষয় হতে পারে ভবির্ষতে।
লেখক: অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
0 comments:
Post a Comment