বাংলা ভাষায় নৃতত্ত্বের বই লিখে যারা খ্যাত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. অতুল সুর। অতুল সুর তার লেখা একটি বইতে বিবাহ প্রথার ইতিহাস সম্পর্কে বলতে যেয়ে লিখেছেন : ‘‘প্রাণিজগতে মানুষই বোধহয় একমাত্র জীব, যার যৌনক্ষুধা সীমিত নয়। অধিকাংশ প্রাণীর ক্ষেত্রেই সন্তান উৎপাদনের জন্য যৌন মিলনের একটা বিশেষ ঋতু আছে। মাত্র সেই ঋতুতেই তাদের মধ্যে যৌন মিলনের আকাক্সা জাগে এবং স্ত্রী-পুরুষ একত্রে মিলিত হয়ে সন্তান উৎপাদনে প্রবৃত্ত হয়। একমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই এরূপ কোনো নির্দিষ্ট ঋতু নেই। মানুষের মধ্যে যৌন মিলনের বাসনা সব ঋতুতেই জাগ্রত থাকে। এ জন্য মানুষের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষকে পরস্পরের সান্নিধ্যে থাকতে দেখা যায়। বস্তুত মানুষের মধ্যে পরস্পরের সান্নিধ্যে থাকা স্ত্রী-পুরুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি। এই সহজাত প্রবৃত্তি থেকেই মানুষের মধ্যে পরিবারের উদ্ভব হয়েছে। পরিবার গঠন করে স্ত্রী-পুরুষের একত্র থাকার অবশ্য আরো কারণ আছে। সেটা হচ্ছে বায়োলজিক্যাল জীববিজ্ঞানজনিত কারণ। শিশুকে লালন-পালন করে স্বাবলম্বী করে তুলতে অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের অনেক বেশি সময় লাগে। এ সময় প্রতিপালন ও প্রতিরক্ষণের জন্য নারীকে পুরুষের আশ্রয়ে থাকতে হয়। মনে করুন অন্য প্রাণীর মতো যৌন মিলনের অব্যবহিত পরেই স্ত্রী-পুরুষ যদি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতো, তাহলে মা ও সন্তানকে নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হতো।…. সন্তানকে লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য মানুষের যে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়, একমাত্র এই জীবনজনিত কারণেই এ কথা প্রমাণ করার পক্ষে যথেষ্ট।’’
মানুষের মধ্যে সেই আদিম যুগ থেকেই গড়ে উঠেছে বিশেষ শ্রমবিভাজন, সন্তান প্রতিপালনকে নির্ভর করে। মেয়েরা সন্তান প্রতিপালনের জন্য করেছে ঘরের কাজ। অন্য দিকে পুরুষেরা করেছে বাইরের কাজ। এই শ্রমবিভাজনকে এখন আমাদের দেশে বিশেষভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলেছে নারী স্বাধীনতার নামে। মেয়েদের বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে ঘরের কাজ ছোট আর বাইরের কাজ সম্মানজনক। কিন্তু সন্তান প্রতিপালনে অবহেলা হলে মানব অস্তিত্ব হয়ে উঠবে বিপন্ন। যে সম্বন্ধে বলা হচ্ছে না কিছু। আর এখান থেকে সৃষ্টি হতে পারছে নারী স্বাধীনতার ভুল ব্যাখ্যা। ঘরের কাজ পুরুষের ইচ্ছায় চলে না। ঘরের কাজ মেয়েরা করে আপন ইচ্ছায়, সন্তান প্রতিপালনের অভিলাষ নিয়ে। মানুষ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানবশিশু বাঁচে মাতৃদুগ্ধ পান করে। কিন্তু অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে মানুষের মতো বিবাহ প্রথা গড়ে ওঠেনি। মানুষের ক্ষেত্রে সন্তান প্রতিপালনে পিতাকে নিতে দেখা যায় বিশেষ দায়িত্ব। জনক-জননীর যুগ্ম প্রচেষ্টার মাধ্যমে সন্তানের প্রাণ ধারণ অনেক বেশি নিশ্চয়তা পেয়ে থাকে। কিন্তু এখন আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী বোঝাতে চাচ্ছেন, সন্তান প্রতিপালন যেন একটা হেয় কর্ম। নারীকে স্বাধীন হতে হলে সন্তান প্রতিপালন পরিত্যাগ করে তাকে কাজে নিযুক্ত হতে হবে গৃহের বাইরে। এই দৃষ্টিকোণ নারী স্বাধীনতার ধারণাকে করে তুলছে বিভ্রান্তিকর। যেটার অপনয়ন প্রয়োজন।
স্ত্রী-পুরুষের শারীরিক পার্থক্যকে নির্ভর করে সৃষ্টি হতে পেরেছে আদিম শ্রমবিভাজন। পুরুষ বাইরে কাজ করে আর নারী নিযুক্ত থেকেছে গৃহকর্মে। ক’দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম ৪০ হাজার নারী শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে হংকংয়ে। এই নারী শ্রমিকেরা আসলে সে দেশে যেয়ে করবে ঝিয়ের কাজ। নিযুক্ত হবে অন্য দেশের মানুষের গৃহকর্মে। কিন্তু এদের ভবিষ্যৎ কী হবে? কারণ, এসব মেয়ে নিজেদের ঘর-সংসার পাবে না। দেশে ফিরে তারা যাপন করবে কেমন জীবন, সেটা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এভাবে নারী শ্রমিক বাইরে পাঠাতে থাকলে আমাদের সমাজ জীবন কি টিকবে? বাইরের বিশ্বে নারী শ্রমিকেরা জড়িয়ে পড়তে পারে যৌন বিশৃঙ্খলায়। দেশে ফিরে তাদের পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না সুখী পরিবার। মানুষের জীবনের লক্ষ্য যদি হয় সুখী হওয়া, তবে এদের জীবন ভরে উঠবে শূন্যতায়। আপাতত কিছু টাকা হয়তো এদের জুটবে। কিন্তু সেই অর্থের বিনিময়ে কতটা সুখী হতে পারবে এসব মেয়ে, সে প্রশ্ন না উঠেই পারে না।
সংসারটা শেষ পর্যন্ত মেয়েরাই ধরে রাখে। সুমাতা ও সুগৃহিণী পারিবারিক জীবনে রচনা করে সুখী জীবনের ভিত্তি। কিন্তু সেই বুনিয়াদকে নারী স্বাধীনতার নামে যেন দেয়া হচ্ছে বিশেষভাবে অনিশ্চিত করে। নারীকে স্বাধীন করতে হলে তাকে বাইরের কাজে টেনে আনতে হবে, এ কথা বিশেষভাবে বলেন কমিউনিস্ট দর্শনের অন্যতম স্থপতি ফ্রেডরিক অ্যাঙ্গেলস। প্রায় সব বাম চিন্তার ব্যক্তি হয়েছেন তার দ্বারা প্রভাবিত। আমাদের দেশে বামপন্থীরাও এর ব্যতিক্রম নন। কুরআন শরিফে মেয়েদের ওপর পুরুষকে স্থান প্রদান করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পুরুষ নারীর তুলনায় কায়িক শক্তির দিক থেকে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন। পরিবারকে রক্ষার ভার নিতে হবে তাকে। নারীকে তাই মেনে নিতে হবে পুরুষের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণকে ইসলামে সেভাবে বাড়িয়ে তোলার কথা বলা হয়নি (আল-কুরআন, সূরা ৪ : ৩৪)। কুরআন শরিফে এ ক্ষেত্রে একটা বাস্তব সত্যকেই বিশেষভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই বলা হয়নি, নারীকে পুরুষের দ্বারা সর্ববিষয়ে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। গৃহকর্মে থেকেছে নারীর যথেষ্ট স্বাধীনতা। কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, নারীসন্তানকে হেয় না করতে ( সূরা-১৬ : ৫৮-৫৯)। হাদিসে বলা হয়েছে, জননীর পদতলে সন্তানের বেহেশত। অর্থাৎ ইসলাম মেয়েদের মাতৃরূপে দিয়েছে বিশেষ প্রাধান্য। একটি হাদিসে আরো বলা হয়েছে, আল্লাহ সবচেয়ে বেশি খুশি হন, ক্রীতদাসদের মুক্ত করে দিলে। আর তীব্রভাবে দুঃখিত হন, স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে। তালাক প্রদান আইনসম্মত হলেও তাকে উত্তমকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি ইসলামে।
কিছু দিন আগে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল যে, সে দেশের হিন্দু মায়েরা কন্যাসন্তান গর্ভে এলে ঘটাচ্ছে গর্ভপাত। এর ফলে ভারতে কন্যাসন্তান কমে যাওয়ার ক্ষতিকর সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভারতের অনেক অঞ্চলে অদূর ভবিষ্যতে দেখা দেবে বিয়ের জন্য কন্যার বিশেষ অভাব। আর এর ফলে থাকছে সমাজ জীবনে গুরুতর অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু মুসলমান নারীরা কন্যাসন্তানকে এভাবে হত্যা করছেন না। কারণ তাদের ধর্মে বলে, কন্যাসন্তান অবাঞ্ছিত নয়। তবে হিন্দু সমাজের প্রভাব তাদের ওপরেও অচিরেই এসে পড়তে পারে।
হিন্দু সমাজের প্রভাব এই উপমহাদেশে নানাভাবেই পড়তে আরম্ভ করেছে। এক সময় বাঙালি মুসলমান সমাজে কন্যার কাছ থেকে পণ নেয়া হতো না। কিন্তু এখন বহু ক্ষেত্রেই পণ ছাড়া মুসলমান মেয়েদেরও বিয়ে হতে পারছে না। পণপ্রথা সমাজ জীবনে বিষময় হয়ে উঠেছে। ইসলামের প্রভাব কমে যাওয়ার কারণে এটা ঘটা সম্ভবপর হচ্ছে। সনাতনী ইসলামি মূল্যবোধ টিকে থাকলে এটা হতে পারত না। সমাজ জীবন হতে পারত যৌতুকের দায়ভারমুক্ত।
ইসলামে পর্দাপ্রথার উদ্ভব হয়েছিল বিশেষ পরিস্থিতিতে। যুদ্ধের সময় মেয়েদের পর্দা করতে বলা হয়েছে, শত্রুর নজর থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য (সূরা-৩৩ : ৫৯)। কিন্তু তাই বলে সব সময় সব ক্ষেত্রে যে পর্দা করতে বলা হয়েছে এমন নয়। হজব্রত পালনের সময় মেয়েদের মুখমণ্ডল রাখতে হয় অনাবৃত। নারীকে পুরুষের সাথেই একত্র হয়ে কাবাগৃহ সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়। তিনবার দ্রুত পদক্ষেপে আর চারবার মৃদু পদক্ষেপে হজের সময় নারী-পুরুষ একত্রেই করেন কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ। অর্থাৎ ইসলামে সব ক্ষেত্রে সব সময়ই পর্দা করতে বলা হয়নি। হজের পদ্ধতি থেকে এটা উপলব্দি করা চলে। এসব কথা বলতে হচ্ছে কারণ, এ দেশে ইসলাম নিয়ে তোলা হচ্ছে নানা প্রশ্ন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা হচ্ছে, ইসলাম সম্পর্কে যথাযথভাবে না জানার কারণে। ক’দিন আগে শুনলাম হেফাজতে ইসলাম যা দাবি করছে, তা বাংলাদেশকে ঠেলে দেবে মধ্যযুগে। কিছু অধ্যাপককেও একই রকম কথা বলতে শোনা গেল। ইউরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগ বলতে বোঝায় ৪০০ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ সময়কে। এ সময় ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্বে খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা পায় বিশেষ প্রাধান্য। ইউরোপের মধ্যযুগ আর ইসলামের মধ্যযুগকে কোনোভাবেই সমার্থক করে তোলা যায় না। কিন্তু ইউরোপের ইতিহাসের ছকে ফেলে আমরা যেন এখন চর্চা করতে চাচ্ছি মুসলিম সভ্যতার ইতিহাসকে। যেটা হয়ে উঠছে খুবই বিভ্রান্তিকর।
রোমান সভ্যতার ইতিহাসে অবক্ষয় নেমে আসার একটা কারণ ছিল, পর্নোক্র্যাসি (Pornocracy)। পর্নোক্র্যাসি বলতে বোঝায়, রাজনীতিতে গণিকাদের বিশেষ প্রভাব। খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দী থেকে রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্র পরিচালকদের ওপর পড়ে গণিকাদের বিশেষ প্রভাব, যা হয়ে ওঠে রোমান সাম্র্রাজ্যের অবক্ষয়ের একটা উল্লেখযোগ্য কারণ। আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা চাচ্ছেন না রাজনীতিতে ঘটুক পর্নোক্র্যাসির উদ্ভব। আমরা আলোচনা করছিলাম নারী স্বাধীনতা নিয়ে। ইসলাম নারী স্বাধীনতার পরিপন্থী কোনো ধর্ম নয়। কিন্তু ইসলাম চায় না সমাজ জীবনে নেমে আসুক যৌন বিশৃঙ্খলা। আমাদের দেশের বামচিন্তকেরা ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞাত নন। অথবা জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বিশেষ স্বার্থপ্রণোদিত হয়ে করছেন ইসলামের অপব্যাখ্যা। যদিও ইসলামে বলা হয়েছে, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগে তার ন্যায্য মজুরি শোধ করে দিতে। কুরআন শরিফে ধন বণ্টন করতে বলা হয়েছে অনেক সুষমভাবে (সূরা-৫৯ : ৭)। কুরআন শরিফে অভাগা অভাজনদের সাহায্য করার কথা একাধিকবার বলা হয়েছে। ইসলামি রাষ্ট্র এক অর্থে আসলে হলো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কারণ ইসলামে বলা হয়েছে, ধর্মের নামে কোনো জবরদস্তি নেই (সূরা-২ : ২৫৬)। ইসলাম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যে ধরনের পাণ্ডিত্য থাকা প্রয়োজন, বর্তমান লেখকের তা নেই। কিন্তু বর্তমান লেখকের কাছে মনে হচ্ছে যে, ইসলামকে দেখানো হচ্ছে খুবই বিভ্রান্তিকরভাবে। তাই ইসলাম নিয়ে এই আলোচনা করা। ইসলামে কোনো ক্ষেত্রেই বলা হয়নি, মেয়েদের জ্ঞান চর্চা করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কথা। নবীজীর স্ত্রী হাফসা লিখতে, পড়তে ও গুনতে জানতেন। কুরআন শরিফ তার কাছে সংরক্ষিত ছিল, কোনো পুরুষ মানুষের কাছে নয়। বিবি হাফসাকে দেয়া হয়েছিল কুরআন সংরক্ষণের ভার। হিন্দুধর্মে ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ বেদ পড়তে পারে না। ব্রাহ্মণদের মধ্যে আবার কেবল পুরুষেরাই হলেন বেদ পড়ার অধিকারী। কিন্তু ইসলামে কুরআন শরিফ হলো খোলা কিতাব। সবাই কুরআন শরিফ পড়ার অধিকারী। মুসলমান মেয়েদের কুরআন শরিফ পড়তে কোনো বাধা নেই। বাধা নেই মেয়েদের জ্ঞানচর্চার অধিকারে। কিন্তু এখন অনেকেই যেন প্রচার করতে চাচ্ছেন, মুসলমান মেয়েদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কোনো অধিকার ইসলামে স্বীকার করা হয় না। কিন্তু এই ধারণা সর্বৈব মিথ্যা। আমরা আলোচনা করছিলাম নারীর স্বাধীনতা নিয়ে। ইসলামে নারীকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মের দায়িত্বকে অস্বীকার করতে বলা হয়নি। ইসলামে মেয়েদের উৎসাহিত করা হয়েছে সুমাতা ও সুগৃহিণী হতে।
লেখক : এবনে গোলাম সামাদ; প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
0 comments:
Post a Comment