সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে মানুষ একা একা অনবরত কথা বলতে থাকেন।
আমরা স্মার্টফোনে সেলফির সঙ্গে সবাই পরিচিত। কিন্তু সেলফ টক বা একা একা কথা বলার সঙ্গে হয়তো আমরা অনেকেই তেমন পরিচিত নই। একা একা কথা বলা বা নিজে নিজে কথা বলা মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া বা মুড ডিসওর্ডারের লক্ষণ। ওই রোগীরা অনবরত একা একা কথা বলতে থাকেন। তাদের কথাগুলোর মধ্যে তেমন একটা সামঞ্জস্যতা নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের রোগজনিত অক্ষমতার প্রথম ১০টি কারণের একটি সিজোফ্রেনিয়া। এতে আক্রান্তরা সম্মানহীন, বন্ধুহীন, আত্মীয়হীন অবস্থায় জীবনযাপন করে। শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট সিজোফ্রেনিয়া ডটকমের তথ্য মতে, চীনে এই রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ থেকে এক কোটি ২০ লাখ। ভারতে এই রোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৮০ লাখ ৭০ হাজার। বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ।
সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অডিটরি হ্যালুসিনেশন সবচেয়ে বেশি হয়। অডিটরি হ্যালুসিনেশন মানে হলো অবাস্তব কিছু শুনতে পাওয়া। অর্থাৎ অস্তিত্ব নেই এমন কিছুর আওয়াজ শোনা। ব্যাপারটা স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে এই হ্যালুসিনেশন অনবরত হতে থাকে। তারা অনবরত শুনতে থাকেন, তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলছে, কিংবা তাদের নিয়ে কেউ কথা বলছে। তাই তারা এসব কথার উত্তরও দিতে থাকেন। অগোছালো অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিংবা সামঞ্জস্যতাপূর্ণ। যারা মদপান করেন বা যারা মাদকসেবী তাদেরও অনেক সময় হ্যালুসিনেশন হয়।
সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের আচরণ স্বাভাবিক থাকে না। কখনো একেবারে চুপচাপ, আবার কখনো অতিরিক্ত নড়াচড়া করেন বা কখনো কখনো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। পোশাক-আশাক এবং নিজেরাও অপরিষ্কার থাকেন। কোনো কাজেই উৎসাহ পান না। অনেকে অন্য কারো সাথে, বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গ এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে পারেন না। একা একা থাকতে চান।
মানসিক রোগ বা সিজোফ্রেনিয়াতে অনবরত হ্যালুসিনেশন হয় ব্রেইনের ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার মাত্রাতিরিক্ত হওয়াতে। এজন্যে ডোপামিন রিসেপ্টর ব্লকার ঔষধ দেওয়া হয়। এতে অবিশ্বাস্য রকমভাবে হ্যালুসিনেশন বন্ধ হয়ে যায়। রোগীদের একা একা কথা বলা কমে আসে। এক সময় সে সাধারণ মানুষের মতই সুস্থ হয়ে উঠে।
সিজোফ্রেনিয়া রোগীর চিকিৎসা সফল হতে হলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটিকে শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক মনোভাব পরিবর্তন ও রোগীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সিজোফ্রেনিয়া রোগের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা; মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগ ও পাবনা মানসিক হাসপাতালে।
সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং আপনজনের সান্নিধ্যে রোগী অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ হয়ে যান।
ঢাকা টাইমস২৪ থেকে সংগৃহীত
0 comments:
Post a Comment