ভারতের নয়াদিল্লিতে আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে বিদেশি অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দেশের নাম 'ইন্ডিয়া'র পরিবর্তে সংস্কৃত শব্দ 'ভারত' লিখেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। আর এতে করে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। অনেকেই ধারণা করছেন, হয়তো 'ইন্ডিয়া' নামটির পরিবর্তে 'ভারত' নামটিই এখন থেকে ব্যবহার করবে মোদি সরকার।
দেশটির সংবিধানে নাম হিসেবে 'ইন্ডিয়া' ও 'ভারত' উভয় নামেরই উল্লেখ রয়েছে। একইসাথে হিন্দুস্তান (উর্দুতে হিন্দুদের ভূমি) নামেও দেশটিকে ডাকা হয়। অর্থাৎ এই তিনটি নামের যেকোনো একটিই ভারত সরকার অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করতে পারে। তবে পৃথিবীজুড়ে 'ইন্ডিয়া' নামটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।ইন্ডিয়া না ভারত
'ভারত' মূলত একটি সংস্কৃত শব্দ যেটি ধর্মগ্রন্থে প্রায় ২ হাজার বছর আগেও লিখিত পাওয়া যায়। এটি মূলত ভারতবর্ষ হিসেবে একটি অস্পষ্ট অঞ্চলকে বোঝায়, যা বর্তমানের ভারতের সীমানা ছাড়িয়েও ইন্দোনেশিয়াকে পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
বিজেপির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই যেসব শহর ও জায়গার নামের পেছনে মুঘল কিংবা উপনিবেশবাদের সম্পর্ক ছিল, সেগুলোর নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। যেমন, গত বছর দিল্লিতে অবস্থিত প্রেসিডেন্টসিয়াল প্যালেসের মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করে অমৃত উদ্যান রাখা হয়েছে।
মোদির দলের নেতাদের প্রতিবাদের পর ২০১৫ সালে নয়াদিল্লির বিখ্যাত আওরঙ্গজেব রোডের নাম বদলে ড. এপিজে আব্দুল কালাম রোড রাখা হয়। নয়াদিল্লির কেন্দ্রে অবস্থিত, ঔপনিবেশিক আমলের একটি এভিনিউ যা আনুষ্ঠানিক সামরিক কুচকাওয়াজের জন্য ব্যবহৃত হতো, গতবছর সেটিরও নতুন নামকরণ করে সরকার। মোদি সরকারের ভাষ্যমতে, ভারতের হিন্দু অতীতকে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা হিসেবে নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে।
বহু সমালোচকের মতে, এমন সব উদ্যোগ মূলত ভারত থেকে মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টারই অংশ। অথচ মুসলিম এ শাসকগোষ্ঠী প্রায় ৩০০ বছর ভারতবর্ষে শাসন করেছে।
লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও দর্শনের অধ্যাপক রুপ রেখা ভার্মা মনে করেন, নাম নিয়ে বিতর্কের মূলে রয়েছে মোদি সরকারের অসহিষ্ণু আচরণ। তিনি বলেন, "আমরা দেখেছি সংবিধান ও আইনের প্রতি ক্রমাগত অবজ্ঞা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট কোনো আদেশ দিলে এবং সরকার তা পছন্দ না করলে সেটাও পরিবর্তনও করা হচ্ছে।"
রুপ রেখা ভার্মা আরও বলেন, "এরপর ঠিক কী হবে সেটা বলতে পারছি না। তবে আমার মনে হয়, বিরোধীরা 'ইন্ডিয়া' নামে জোট গঠন করায় তারা এখন নামটি মুছে ফেলতে শুরু করেছে।"
তবে 'ইন্ডিয়া' নামটি ঘিরে বিতর্কে বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলটির অন্যতম আইনপ্রণেতা শশী থারুর মনে করেন, ভারতীয়দের উচিত "ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, এমন একটি নাম পরিবর্তনের বদলে দুটি নামই (ইন্ডিয়া ও ভারত) ব্যবহার করা।"
"যদিও সাংবিধানিকভাবে ইন্ডিয়াকে 'ভারত' বলতে কোনো আপত্তি নেই, কারণ দেশের দুটি সরকারিভাবে প্রচলিত নামের মধ্যে 'ভারত' একটি। তবে আমি আশা করি, সরকার এতটাও বোকা নয় যে বহু শতাব্দী ধরে যেই 'ইন্ডিয়া' নামটির গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে, সেটিকে পুরোপুরি বাতিল করে দেবে।"
গত জুলাইয়ে দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরে কংগ্রেস-সহ দেশের ২৬টি বিরোধী দলের নেতারা মিলে 'ইন্ডিয়া' নামে একটি নতুন জোট ঘোষণা করেছেন। এই 'ইন্ডিয়া'র পূর্ণ রূপ হলো ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স।
0 comments:
Post a Comment