Monday, September 11, 2023

ডেঙ্গুতে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি কতটা?

0 comments

গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি তিন গুণ বেড়ে যায়। আর যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক হয়, সে ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু হার বেড়ে যায় ৪৫০ গুণ। সময়মতো রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা পেলে এই মৃত্যুহার ২৭ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। সুতরাং গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

সিভিয়ার বা জটিল ডেঙ্গু জ্বর:

এখানে রোগীর লক্ষণীয় মাত্রায় রক্তপাত থাকতে পারে, শকে অজ্ঞান হতে পারে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। এই গ্রুপের রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে সেবা দিতে হবে।

এ সময়ে রোগীর জ্বর হলে, এমনকি শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা না হলেও রক্তের কিছু পরীক্ষা করতে হবে। রক্তে হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ বেড়ে গেলে, পালস প্রেশার (সিস্টোলিক ও ডায়াস্টলিকের পার্থক্য) ১০-২০ শতাংশ কমে এলে, শ্বেত রক্তকণিকা পাঁচ হাজারের নিচে নেমে এলে, রক্তের অণুচক্রিকা এক লাখের নিচে নামলে ধরে নিতে হবে তার ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর হচ্ছে।

গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুর প্রভাব:

গর্ভধারণের প্রথম দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে (৩ থেকে ১৩ শতাংশ), জন্মগত ত্রুটি কম হলেও মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা হতে পারে। গর্ভের মধ্য বা শেষ দিকে হলে সময়ের আগে পানি ভাঙতে পারে, সময়ের আগে সন্তান প্রসব হতে পারে, বাচ্চার ওজন কম হতে পারে, এমনকি পেটে বাচ্চা মারা যেতে পারে। জন্মের সময় শিশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সন্তান প্রসবের আগে রক্তক্ষরণ বা প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণে শক এমনকি প্রসূতির মৃত্যু হতে পরে।

চিকিৎসাব্যবস্থা:

১) জ্বর ও ব্যথা প্রশমন করতে হবে। প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে। অ্যাসপিরিন বা কোনো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না।

২) বেশি করে তরলজাতীয় খাবার (স্যালাইন, শরবত, ফলের রস, ভাতের মাড়, ডাবের পানি ইত্যাদি) খেতে হবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

৩) অবশ্যই গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, মৃদু জ্বর/উপসর্গ দেখা না দিলেও।

৪) বিপজ্জনক সময়ে সচেতন থাকতে হবে। সাধারণত জ্বরের পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিন যখন জ্বর ছাড়তে শুরু করে, তখন কাপিলারি লিকেজ হয় এবং ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় শরীরে তরলের পরিমাণ যেন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে।

৫) সপ্তম দিনের পরপরই আবার কোষে পানি আসা শুরু হয়। তখন কিন্তু ফ্লুইড অতিরিক্ত দেওয়া যাবে না, তাহলে ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

৬) রক্ত বা তাজা রক্ত দরকার হলে সংগ্রহের পাঁচ দিনের মধ্যে দিতে হবে। নরমাল ডেলিভারির সময় প্লাটিলেট ৫০ হাজার আর অস্ত্রোপচারের সময় ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার, এমনকি ৫০ হাজার থাকলেও চলে। তবে মনে রাখতে হবে, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রোপচারে যাওয়া উচিত নয়।



লিখেছেনঃ 

ডা. আরিফা শারমিন মায়া, কনসালট্যান্ট

গাইনি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

0 comments:

Post a Comment