মশার ইতিহাস ও মানবজাতির সংকট নিয়ে টিমথি ওয়াইনগার্ডের বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্য মসকুইটো: আ হিউম্যান হিস্টরি অব আওয়ার ডেডলিয়েস্ট প্রিডেটর'-এর শুরুটাই যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আহ্বান—'উই আর অ্যাট ওয়ার উইথ মসকুইটো' (আমরা মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি)। এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে। কিন্তু বিজয়ের লক্ষণ যে দেখা যাচ্ছে না। ২২ আগস্ট ২০২৩ বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মশার ভয় তার বক্তব্যের একাংশ ভুলিয়ে দিয়েছে বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গী একজন মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন, তবুও ভুলে যাওয়া কথা আর স্মৃতিতে জেগে ওঠেনি। মশা মারতে কামান দাগা—এ নিয়ে বিস্তর হাসিঠাট্টা হলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কামানই যথেষ্ট নয়। ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইলও মশার বিরুদ্ধে তুচ্ছ অস্ত্র।
অবিশ্বাস্য মনে হওয়ারই কথা, কিন্তু গবেষকেরা হিসাব করেই দেখিয়েছেন, গত ২ লক্ষ বছরে পৃথিবীতে যত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, তার অর্ধেকের মৃত্যু ঘটেছে মশার আক্রমণে, মশার কামড়জনিত ব্যাধিতে।
২.৫ মিলিগ্রাম ওজনের মশার কামড়ে পৃথিবীতে গড়পড়তা এক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা অন্তত ৭ লক্ষ মৃত্যুর প্রত্যয়ন তো করছেনই। বাকি ৩ লক্ষ দরিদ্র দেশগুলোতে, যা সম্ভবত শনাক্তই হয়নি।
মশকসৃষ্ট যে রোগগুলো মানুষের পাইকারি হারে মৃত্যু ঘটাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে ম্যালেরিয়া, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস (আফ্রিকাতে নীলনদ অঞ্চলে এর প্রকোপ), ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাস, ইয়েলো ফিভার এবং চিকুনগুনিয়া।
টিমথি ওয়াইনগার্ড বলছেন, অ্যান্টার্কটিকা, আইসল্যান্ড, সিসিলিজ ও ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ান কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ বাদ দিয়ে গোটা পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছে ১১০ ট্রিলিয়ন মশকবাহিনীর অবিশ্বাস্য রকম বৃহৎ একটি দল, তাদের দৃষ্টি পৃথিবীর ৮ বিলিয়ন মানুষের ওপর।
গত ২ লক্ষ বছরে পৃথিবীতে বিরাজ করেছে ১০৮ বিলিয়ন মানুষ আর মশা হরণ করেছে তাদের মধ্যে ৫২ বিলিয়ন মানুষের জীবন। এর চেয়ে বড় ঘাতক দুর্বৃত্তের দেখা মেলেনি, দুই মহাযুদ্ধের মোট মৃত্যু মশকমৃত্যুর তুলনায় নস্যিমাত্র।
মশকমৃত্যু: সেলিব্রিটি
২০ মে ১৪৯৮ পর্তুগিজ অভিযাত্রী নির্মম নাবিক ভাস্কো দা গামা সদম্ভে ভারতবর্ষের কালিকটে পা রাখলেন। মরিচ আর দারুচিনির ঘ্রাণে উতলা এই অভিযাত্রী যদি কেবল লুণ্ঠনমূলক মসলা-বাণিজ্যে নিবেদিত না হয়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিতেন, দক্ষিণ এশীয় এই পুরো অঞ্চলটিই হতো পর্তুগিজ উপনিবেশ। আমাদের পড়তে হতো ভিন্ন এক ঔপনিবেশিক ইতিহাস। ভাস্কো দা গামার হত্যাযজ্ঞ আর লুণ্ঠনের প্রতিশোধ নেওয়ার সক্ষমতা ভারতবর্ষের ছিল না। ১৫২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে পর্তুগিজ রাজকীয় নির্দেশে ভারতের ভাইসরয় হয়ে ১৪টি জাহাজের বহর নিয়ে হিজ এক্সিলেন্সি ভাস্কো দা গামা এপ্রিল মাসে তার তৃতীয় ভারতবর্ষ অভিযানে সমুদ্রযাত্রা করলেন। সেপ্টেম্বরে এসে পৌঁছলেন, নতজানু ভারতীয়দের তাকে স্বাগত জানানো ছাড়া ভিন্ন কোনো কিছু করার ক্ষমতা ছিল না। ভাইসরয় পৌঁছেই টের পাইয়ে দিলেন তিনি কত প্রতাপশালী। কিন্তু তার প্রতাপকে মোটেও পাত্তা দেয়নি একটি ক্ষীণদেহী ভারতীয় এনোফিলিশ মশা। কখন যে হুল ফুটিয়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণুু ঢুকিয়ে দিল পর্তুগিজ বীরপুরুষ, নবনিযুক্ত ভাইসরয় ভাস্কো দা গামা বুঝতেও পারেননি। বুঝলেন যখন প্রচণ্ড জ¦রে তাকে শয্যা নিতে হলো। ওদিকে বড়দিন উদ্যাপনের আয়োজনও চলছিল। ঠিক তার আগের দিন ২৪ ডিসেম্বর ১৫২৪ ক্রিসমাস ইভে ভারতবর্ষেই প্রাণ হারালেন ভাস্কো দা গামা। ফোর্ট কোচির সেইন্ট ফ্রান্সেস চার্চ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৫ বছর পর ১৫৩৯ সালে জাতীয় বীর খেতাব দিয়ে ভাস্কো দা গামার দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে সোনার কাসকেটে ভরে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন শহরে এনে জেরিনোমোস চার্চে পুনরায় সমাহিত করা হলো।
মশাটা জানলও না ভারতীয়দের পক্ষে তার কাজ বড় প্রতিশোধ নিয়েছে। জানলেও এনোফিলিস ও তার স্বজাতির মশাদের বীরের মর্যাদা দেওয়া দূরে থাক, তাদের চিহ্নিত করা হলো ঘাতক হিসেবে দ্য ডেডলিয়েস্ট অ্যানিমেল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। টিমথি ওয়াইনগার্ড এই মশাকে বলেছেন জেনারেল এনোফিলিস। এই জেনারেল মানে সাধারণ নয়, সামরিক পদবি জেনারেল।
বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর ৩২ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ এখনো সুনিশ্চিতভাবে অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। তবে ম্যালেরিয়া কিংবা টাইফয়েড—এ দুটোকে সন্দেহ করা হচ্ছে, টাইফয়েডের পক্ষে সমর্থন বেশি।
২১ সেপ্টেম্বর ১৫৫৮ স্পেন ও হলি রোমান এম্পায়ারের রাজা পঞ্চম চার্লস যে ৫৮ বছর বয়সে ম্যালেরিয়ায় মারা গেছেন—এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। রাজপ্রাসাদের দেয়াল বাঘ আর সিংহের জন্য দুর্ভেদ্য হতে পারে, কিন্তু মশার জন্য নয়। মশাদের প্রবেশাধিকার সেকালেও ছিল, একালেও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের কন্যা এবং পরবর্তী একজন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী সারাহ নক্স টেয়লর মাত্র ২১ বছর বয়সে ম্যালেরিয়ায় প্রাণ হারান ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৩৫। বিখ্যাত স্কটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিডিংস্টোন মশার কামড় খেয়েই ম্যালেরিয়ায় ভুগে মারা গেছেন। সেকালের ক্ষমতাবান চেঙ্গিস খান এবং একালের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়নি সত্য কিন্তু দুজনেই বেশ ভুগেছেন।
হলিউড স্বর্ণযুগের নায়ক এরোল ফ্লিন (১৯০৯-১৯৫৯) কুড়ি বছর বয়সে নিউ গিনিতে তামাক চাষের খামারে গিয়ে মশার দংশনে ম্যালেরিয়ায় শয্যা নিয়েছিলেন। উঠে দাঁড়িয়েছেন, হলিউডে রাজত্ব করেছেন, কিন্তু শরীরের ভাঙন ঠেকাতে পারেননি। পঞ্চাশ বছর বয়সেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
১২২৭-এ রণাঙ্গনের ক্ষত সারাতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন চেঙ্গিস খান, সে সময় দুর্বৃত্ত মশক তার মধ্যে ম্যালেরিয়া সংক্রমিত করে। বেশ কয়েক মাস তিনি শয্যাশায়ী থাকেন। শয্যা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেও এরপর আর বেশি দিন বাঁচেননি।
ট্রাফালগার যুদ্ধের বিজয়ী বীর হোরাশিও নেলসন (১৭৫৮-১৮৫৫) তার নৌসেনা জীবনের শুরুতে ম্যালেরিয়ায় খুব ভুগেছেন। একালের পরিবেশবিদ ডেভিড অ্যাটেনবরা (জন্ম ১৯২৬) তার বিশ্ব-পর্যটনের কোনো একপর্যায়ে মশক দংশনে কাবু হয়ে শয্যা নেন এবং দীর্ঘদিন ভোগেন। মাইকেল কেইন (১৯৩৩) সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের (১৪৫১-১৫০৬) চতুর্থ সমুদ্রযাত্রায় ১৫০৩ সালে এশীয় সামুদ্রিক রুটে আসার কথা ছিল। কিন্তু ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল।
মশার আক্রমণ ও ম্যালেরিয়ায় বিপুলসংখ্যক সৈন্যের মৃত্যু বহু যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করে দিয়েছে।
মশক বিচিত্রা
আপনার আশপাশে কোথাও মিষ্টি চকোলেট, ক্যারামেল কিংবা অন্য চকোলেটজাতীয় কোনো খাবার রেখে দেখুন কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাকে টার্গেট করে এগিয়ে আসা মশাগুলোর মাথা গুলিয়ে গেছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। এই খাবারের ঘ্রাণ এবং মানুষের নিশ্বাস নিঃসৃত কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘ্রাণের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য করতে না পারাই মশার এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণ। মশা তার টার্গেট ঠিক করে ঘ্রাণ দিয়ে। মশা কি জন্মান্ধ? মোটেও না; মশা দেখতে পায় এবং অত্যন্ত কম আলোতে মানুষ যেখানে দেখতে ব্যর্থ, মশা সাফল্যের সাথে তার কাছে যা দর্শনীয় তা দেখে থাকে। তবে মানুষের মতো করে বস্তুর স্পষ্ট ইমেজ দেখতে পায় না। মশার টার্গেট শনাক্তকরণ পদ্ধতিটি বেশ জটিল; এতে দৃষ্টির ভূমিকা সামান্যই। যদি মানুষকে টার্গেট করে থাকে, তাহলে প্রধান আকৃষ্টকারী উপাদান হচ্ছে মানুষের নিশ্বাস, আরও সুনির্দিষ্টভাবে নিঃসৃত কার্বন ডাই-অক্সাইড। গুরুত্বপূর্ণ হলেও শনাক্তকরণের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইডের পাশাপাশি মানুষের শরীরের উত্তাপ, ঘাম ও ত্বকের ঘ্রাণ উল্লেখযোগ্য আকর্ষক হিসেবে কাজ করে থাকে। ৫০ গজ দূর থেকে মশা কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে। মশার কার্বন ডাই-অক্সাইড আসক্তির প্রমাণ মশা মানুষের মুখমণ্ডলের চারপাশে ঘুরঘুর করতে ভালোবাসে। কারণ, এই অঞ্চলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি ও ঘনীভবনের মাত্রা বেশি।
মানুষের অজ্ঞতার কারণে মশার চৌদ্দগুষ্টি আমাদের গালমন্দের শিকার। বাস্তবে ৩০০০ প্রজাতির মশা থাকলেও ১০০ প্রজাতি কামড়ে থাকে। আর মানুষের সামনে এসে কামড়ানো সাধারণ মশা ৮-১০ প্রজাতির বেশি নয়। আবার স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে সকল মশার মুণ্ডুপাত কতটা সমীচীন, ভেবে দেখা দরকার। পুরুষ মশা আপনার আমার ধারেকাছেও আসে না। তাদের আহার্য মানবরক্ত নয়, অন্য কোনো প্রাণীর রক্তও নয়। পুরুষ মশা ফুলের মধু আহরণ করে এবং তা খেয়ে একজীবন (প্রায় ছয় মাস) বেঁচে থাকে। মানবজাতির সাথে মশকজাতির পূর্বে শত্রুতার একটি মিথ আমাজন অঞ্চলে প্রচলিত থাকলেও বাস্তবে শত্রুতার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। স্ত্রী মশাকে ডিম পাড়তে হয়, শারীরিক চাহিদার কারণে তাকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। আর মশার জন্য তা সহজলভ্য মানুষের শরীরে। মানুষের নিশ্বাস ও শরীরের ঘ্রাণ সহজেই স্ত্রী মশাকে আকৃষ্ট করে, তার রক্ত সেবন করতে প্রলুব্ধ করে। স্ত্রী মশা সাধারণভাবে আগ্রাসী আচরণের হয়ে থাকে। স্ত্রী মশা মানুষের ঘামে আকৃষ্ট। ঘাম ও ব্যাকটেরিয়া মিলে শরীরে লেপ্টে থাকা শুকনো ঘাম মানুষের অজান্তে মশাকে আমন্ত্রণ জানায়।
মশা কামড়ায় বেশ তো; কিন্তু আপনি চুলকান কেন?
মশা প্রাকৃতিকভাবে বুদ্ধিমান প্রাণী। মানুষের শরীর থেকে যে রক্ত টেনে নেয়, অল্পক্ষণের মধ্যেই তো সেই রক্ত জমাট বেঁধে মশার মরে যাবার কথা। কিন্তু তা তো ঘটছে না। মশার থুতু ও স্যালাইভায় রয়েছে অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট অর্থাৎ রক্ত জমাটবিরোধী উপাদান। প্রথমেই এই তরল ঢেলে দিয়ে রক্তের জমাট বাঁধা ঠেকাবার আয়োজন করে। সুতরাং রক্ত সেবনের পরপরই জমাট রক্তে তার পেট কঠিন পদার্থে পরিণত হয় না। স্যালাইভার আর একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে অ্যানেসথেটিক শরীরের নির্দিষ্ট জায়গা কিছু সময়ের জন্য অসাড় করে রাখে, আপনি তাৎক্ষণিকভাবে টের পান না আপনার শরীর 'ব্লাড সাকার' আক্রান্ত হয়েছে। এটি লোকাল অ্যানেসথেশিয়া। ভরপেট লাঞ্চ কিংবা ডিনার করে মশা উড়ে গেল। অ্যানেসথেশিয়ার প্রভাবও কেটে গেল, অমনি আপনি চুলকাতে শুরু করলেন। অর্থাৎ মশা থুতু-স্যালাইভার সাথে কিছুটা চুলকানির উপাদানও ঢেলে দিয়ে যায়। যতক্ষণ না তা শেষ হচ্ছে, চুলকানোর তাড়না দূর হচ্ছে না। পাখাওয়ালা প্রাণীদের মধ্যে কম গতিশীল একটি হচ্ছে মশা। যেখানে একটি মৌমাছি ঘণ্টায় ১৫ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে, একই সময়ে মশা যেতে পারে সর্বোচ্চ ১.৫ মাইল। সে কারণেই মানুষের হাতে মশা সহজে মারা পড়ে।
গুনগুন গুন গান গাহিয়া কোন ভ্রমরা এল—ভ্রমরা ভাগ্যবান। রোমান্টিক একটি পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু একই কায়দায় ডানার সঞ্চরণে মশাও গান গেয়ে থাকে—সে গান শুনে মানুষের রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের কথা মনে পড়ে। মানুষ আকৃষ্ট না হোক, যখন স্ত্রী মশার গান শুরু হয়, ফুলবনে ঘুরে বেড়ানো পুরুষ মশার আকাক্সক্ষা জাগ্রত হয়। রোমান্টিক আবহে মশক জোড়ের মিলন ঘটে।
মশা লাল ও কমলা রঙে আকৃষ্ট, কালোতেও। তবে মশার অপ্রিয় চারটি রং হচ্ছে—সাদা, বেগুনি, সবুজ আর নীল।
মানুষ তার নিজের ওজনের কত শতাংশের সমপরিমাণ খাবার খেতে পারে? স্ত্রী মশার সক্ষমতা স্মরণ রাখুন: নিজের ওজনের তিন গুণ রক্ত শুষে সঞ্চয় করে সানন্দে উড়ে যেতে পারে।
বোমারু বিমান মসকুইটো
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৩ নাৎসিদের ক্ষমতায় আরোহণ ও হিটলারের জার্মান চ্যান্সেলর হবার দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রপাগান্ডা মন্ত্রী হারমান গোয়েরিং বার্লিনে জার্মানির প্রধান বেতারকেন্দ্রে এসেছেন। তিনি এই দিনটিকে স্মরণ করে বেতার ভাষণ দিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই বেতারকেন্দ্র মসকুইটোর (মশা!) আক্রমণের শিকার হলো। গোয়েরিং প্রাণে বাঁচলেও অনেক কিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেল।
এই মসকুইটো আসলে দুই ইঞ্জিনের বোমারু বিমান। জাহাজের পুরো পরিচিতি ভি হ্যাভিল্যান্ড ডিএইচ ৯৮ মসকুইটো। জিওফ্রে ডি হ্যাভিল্যান্ডের বোমারু বিমান বানাবার প্রকল্পটি বাতিল হয়েই যাচ্ছিল, কিন্তু বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল স্যার উইলফ্রিড ফ্রিম্যান কড়াভাবে এই মশা প্রকল্প সমর্থন করেন। এ জন্য তখনকার বিমান উৎপাদন ও পরিবহনমন্ত্রী লর্ড বিভারব্রুক এই মশার ভিন্ন একটি নাম দিলেন 'ফ্রিম্যানস ফোলি'। এই বোমারু মশার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দিনের বেলায় নিচু ও মাঝারি উচ্চতায় উড্ডয়ন করে বোমা ফেলতে পারে, রাতে হাই অলটিচিউড বোম্বার: এটি পাথফাইন্ডার, ফাইটার বোম্বার, চোরাগোপ্তা আক্রমণে দক্ষ, গোয়েন্দাবৃত্তির উপযোগী এবং শত্রুপক্ষের আকাশসীমা দিয়ে দ্রুতগামী কার্গো পরিবহনের কাজ করতে পারে। একজন পাইলট ও একজন নেভিগেটর সামনে পাশাপাশি বসেন এবং পেছনে বোম্বার বেতে থাকেন একজন। ১৯৫০-এর দশকে রয়াল এয়ারফোর্স থেকে মসকুইটি অপসারণ করে জেট ইঞ্জিনের আধুনিক যুদ্ধবিমান বহরে সংযুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এই যান্ত্রিক মশা অক্ষশক্তির অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল।
লেখক: এম এ মোমেন, দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ড
0 comments:
Post a Comment