Wednesday, October 17, 2012

অর্কিড পর্যটন প্রকল্প, শেরপুর

0 comments
প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করতে ক্লান্ত মন কখনো কখনো শান্তির জন্য অধীর হয়ে ওঠে। তখন মনে হয় একটু প্রশান্তি প্রয়োজন। সকল ব্যস্ততা ফেলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছে হয়। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী এবং মনের প্রশান্তির এক অপূর্ব সুযোগ শেরপুরের অর্কিড পর্যটন প্রকল্প।

শেরপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজহার আলী। মনের মাধুরী মিশিয়ে অর্থ, মেধা আর শ্রম দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন অর্কিড পর্যটন প্রকল্প। এর ফলে অর্কিড ঘিরে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পুরো অর্কিড পর্যটন কেন্দ্রটি যেন শিল্পীর তুলির ছোয়ায় আঁকা গভীর চিন্তার এক শিল্পকর্ম।

নয়নাভিরাম এ পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরি করতে সময় লেগেছে দুই যুগ। কত টাকা লেগেছে তার হিসাব নেই আজাহার আলীর কাছে।

অর্কিট পর্যটন প্রকল্পের শোভা বর্ধণে  চারিদিকে লাগানো হয়েছে সারি সারি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, মাঠ জুড়ে রয়েছে মেশিনে কাঁটা একই মাপের বিশেষ সবুজ ঘাস, চোখ ধাঁধানো নির্মল স্বচ্ছ পানির পুকুর আর শান বাঁধানো জমিদারি পুকুর ঘাট। পুকুরের চারপাশে মাছ শিকারে আসে সাদা বক। সবুজের ওই অর্কিডের খাঁচা থেকে আনন্দ দেয় বানর, টার্কিস, খরগোশসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং জীবজন্তু। সারা অর্কিড জুড়ে নানা প্রজাতির বাহারি থোকা থোকা ফুল অপেক্ষায় আছে দর্শনার্থীদের নির্মল আনন্দ বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

অর্কিডে হাটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সরু রাস্তা। আর রাস্তাগুলোতে ইটের উপর মনের মাধুরি মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে রং। সব মিলিয়ে এ যেন এক স্বপ্নপুরী!

প্রিয়জন অথবা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় ছাতা এবং বসার জন্য চেয়ার। চা, কফি ও কোমল পানীয় পানের জন্য রয়েছে ছনের তৈরি ব্যতিক্রমী সুদৃশ্য ক্যান্টিন এবং রেস্ট হাউজ। এ যেন ইট বালুর যান্ত্রিক শহরের মধ্যে মন খুলে আনন্দ করার এক লীলাভূমি। পরিবার-পরিজন বা  প্রিয়জন নিয়ে বেড়ানো ও প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করার বা শহুরে জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র।

শেরপুর পৌর এলাকার শেরপুর-ঝিনাইগাতী ফিডার রোড সংলগ্ন কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯৮৮ সাল থেকে আজাহার আলী তার ধানের ক্ষেতের পাশেই প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানা জাতের দেশি-বিদেশি বনজ ও ফলজ গাছ রোপন করে গড়ে তোলেন ‘অর্কিড’ বাগান। সে সময় ওই স্থানটি ‘কলা বাগান’ হিসেবে বেশ পরিচিত লাভ করেছিল।

এরপর নানা প্রতিকূলতায় ওই বাগানের সৌন্দর্য হারায়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে তিনি আবার তার স্বপ্নের অর্কিড বাগান সংস্কারে মনোযোগ দেন। ব্যয় করেন প্রচুর অর্থ। নানা অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে নতুন করে গড়ে তোলেন ‘অর্কিড পর্যটন প্রকল্প’।

এই পর্যটন প্রকল্পে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২০ টাকা। প্রতিদিন বহু পর্যটক, প্রেমিক যুগল এবং  বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসে শহরবাসী। জেলার বাইরে থেকেও প্রতিদিন প্রচুর লোক আসে এ অর্কিড প্রকল্পে। বিশেষ করে ছুটির দিনে বেড়াতে আসা লোকজনের ভীড় থাকে বেশি।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো অনুষ্ঠান করতে দিনব্যাপী ভাড়া নিতে চাইলে বুকিং দিতে পারবে ৫ হাজার টাকায়। আপাতত রাত যাপনের কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও ভবিষ্যতে এখানে বাংলোসহ ভ্রমণবিলাসী ও বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নানা সুযোগ-সবিধা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান অর্কিড মালিক আজাহার আলী।

বর্তমানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্কিডে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সন্ধ্যার পর কোনো দর্শনার্থীকে ভেতরে থাকতে দেওয়া হয় না। অর্কিডে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আজহার আলী জানান, ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে অর্কিড প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। আমার বাবা ছিলেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ। বাবার স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই আমি এটি করেছি। এখানে সাধারণ মানুষ ছাড়াও উচ্চ পর্যায়ের সরকারি আমলা, প্রতিরক্ষা ও বিচার বিভাগের লোকজন বেড়াতে আসে। মানুষকে শুধু আনন্দ দেওয়ার জন্যই আমি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে অর্কিড প্রতিষ্ঠা করেছি। অর্কিডের পাশে আমার আরও ৪ একর জায়গা রয়েছে। ইচ্ছা ছিল পুরো জমিতেই আমার স্বপ্নের অর্কিড নির্মাণ করবো। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় সেটা সম্ভব হয়নি। আমি জীবিত থাকতেই অর্কিডে অসহায় মানুষের জন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করবো, আমার  ডাক্তার মেয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে। সেই সাথে একটি ব্যতিক্রমধর্মী লাইব্রেরী করারও ইচ্ছা আছে।

অর্কিডের অদূরেই রয়েছে মধুটিলা ও গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। শেরপুরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের জন্য আবাসনের জন্য রিসোর্ট করার চিন্তাও রয়েছে । আমার অবর্তমানে অর্কিডের আয় থেকে একটি অংশ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হবে এমন একটি দলিল করা যাবো বলে প্রকৃতি প্রেমিক আজহার আলী জানান।

আজহার আলী আক্ষেপ করে বলেন, অর্কিড নির্মাণ করতে গিয়ে পারিবারিকভাবে অনেক অশান্তি এবং প্রশাসনিকভাবে অযথা নির্যাতনেরও শিকার হয়েছি। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যবসায় মন না থাকার কারণে লোকসানও হয়েছে বেশ। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাকে দমাতে পারে নি।

তিনি আরো বলেন, বারবার অকৃত্রিম টানে ছুটে গেছি অর্কিডে। অর্কিডের প্রতিটি উপকরণের সঙ্গে গড়ে উঠেছে নিবিড় বন্ধুত্ব। কোথাও সমস্যা হলে খাওয়াদাওয়া, ঘুম কিছুই হয় না, সেটা সমাধান না করা পর্যন্ত।

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

0 comments:

Post a Comment