নব্বইয়ের দশকে বলিউডে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন বর্তমানের সুপারস্টার সালমান খান। এই অত্যন্ত রাগী ছিলেটারই প্রেমে পড়েছিলেন সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন আসা ঐশ্বরিয়া রাই। তাদের সেই প্রেমে একসময় সরগরম ছিল বলিউড। কিন্তু আজ সবই অতীত। অকারণ সন্দেহ, পরকীয়ার রেশ, গায়ে হাত তোলা- ইত্যাদি নানা কারণে দাড়ি পড়ে গিয়েছিল সালমান-ঐশ্বরিয়ার প্রেমকাহিনিতে। সেই থেকে তাদের কথা বলা, মুখ দেখাদেখি সবই বন্ধ। তবে ঠিক কী কারণে বিচ্ছেদ হয়েছিল তাদের?
তাদের প্রেম শুরু হয়েছিল সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত ‘হাম দিল দে চুকে সানম’ ছবির শুটিং সেট থেকে। সে সময় ঐশ্বরিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় নতুন। বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বলিউডে সেভাবে জায়গা পাকা করতে পারেননি। অন্যদিকে, সালমান বেশ প্রতিষ্ঠিত। সে সময় সালমানের সম্পর্ক ছিল সোমি আলির সঙ্গে। তিনি ঐশ্বরিয়া-সালমানের বার বার সাক্ষাৎ ও সময় কাটানো কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। ফলে তাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়। সোমি চলে যান বিদেশে।
এই সুযোগে সালমান খান ও ঐশ্বরিয়া একে অপরের আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়ে যান। সালমানের দুই বোন আলভিরা এবং অর্পিতার সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় অ্যাশের। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো তখন তাদের প্রেমের গুঞ্জনে ডগমগ করছে। সালমানও বলিউডে ঐশ্বরিয়ার পায়ের তলায় মাটি শক্ত করতে উঠে পড়ে লাগেন। ঐশ্বরিয়া কার সঙ্গে কাজ করবেন, কোন ছবি নেবেন এসব ব্যাপারেও পরামর্শ দিতে শুরু করেন।
ঠিক সেই সময়ে ঐশ্বরিয়ার কাছে সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘তাল’ ছবির অফার আসে। কিন্তু সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গে তার নায়িকাদের নানা গসিপ আগে থেকেই চালু থাকায় পরিচালকের এই ছবিতে ঐশ্বরিয়াকে কাজ করতে নিষেধ করেন সালমান। কিন্তু নায়িকা ছাড়ার পাত্রী নন। সালমানের বারণ সত্ত্বেও তিনি ওই ছবিতে অভিনয় করেন এবং সেটি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। কিন্তু ছবির এক প্রিমিয়ার পার্টিতে ঐশ্বরিয়াকে খারাপ কথা বলায় সুভাষকে চড় মেরে বসেন সালমান।
সে সময় বলতে গেলে ঐশ্বরিয়ার জীবন আবর্তিত হত সালমানের হাতেই। ভাইজান ভাবতেন, প্রেমিক হিসেবে এটা তো তার অধিকার। ঠিক এমন সময়েই হরিণ শিকার কাণ্ডে নাম জড়ায় সালমানের। শুধু তাই নয়, শোনা যায়, এ সময় নাকি তার সাবেক প্রেমিকা সোমি আলির সঙ্গেও তার আবার কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। সোমির বাবার চিকিৎসার জন্য টাকাও পাঠান সালমান। তাও আবার ঐশ্বরিয়াকে কিছু না জানিয়ে।
এদিকে পাল্লা দিয়ে চলছিল সালমানের মদের প্রতি আসক্তি আর ঐশ্বরিয়ার প্রতি অপরিসীম অধিকার ফলানো। একবার নাকি ঐশ্বরিয়ার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাইজান দরজা খোলার জন্য পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন। ঐশ্বরিয়া দরজা না খুললে তিনি নিজেকে শেষ করে দেয়ার হুমকিও দিতে থাকেন। পরদিনই সমস্ত পত্রিকায় এই খবর বেশ বড় করে ছাপা হয়। ঘটনা জেনে যায় গোটা ভারত।
ঐশ্বরিয়ার বাড়ি থেকেও কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নিতে চাইছিলেন না তার বাবা-মা। সে কথা পরবর্তীকালে নিজেই বলেছিলেন সালমান। এক বার এক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে চোখে সানগ্লাস পরে পুরস্কার নিতে ওঠেন ঐশ্বরিয়া। মনে খটকা লাগে উপস্থিত দর্শকদের। ঐশ্বরিয়া বলেছিলেন, তার চোখে ইনফেকশন হয়েছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্দর বলছিল অন্য কথা। সালমান নাকি তার গায়ে হাত তুলেছিলেন।
এই ঘটনা প্রথমে স্বীকার না করলেও পরবর্তীতে সে কথা মেনে নিয়েছিলেন মিস ওয়ার্ল্ড। তিনি বলেছিলেন, এক বার নয়, বহু বার তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে সালমানের কাছে। যদিও ভাইজান কখনোই এই অভিযোগ মানেননি। তার কথায়, ‘আমি ইমোশানাল, নিজেকে বহুবার আঘাত করেছি। কিন্তু সুভাষ ঘাই ছাড়া জীবনে কখনও কারও গায়ে হাত তুলিনি।’
এই সম্পর্ক থেকে অব্যাহতি চাইছিলেন ঐশ্বরিয়া রাই। ‘কুছ না কাহো’ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন অভিষেক বচ্চন। শোনা যায়, সালমান নাকি সেই ছবির শুটিং সেটে গিয়েও নানা পাগলামী করেছিলেন। ভেঙে দিয়েছিলেন ঐশ্বরিয়ার গাড়ি। অভিষেক থেকে শাহরুখ, প্রায় সব সহ অভিনেতাকে নিয়েই প্রবল সন্দেহ করতেন সালমান।
‘আত্মসম্মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছিল’, এই বলেই অবশেষে সম্পর্ক থেকে সরে আসেন ঐশ্বরিয়া। কিন্তু ব্রেক আপ পরবর্তী ট্রমা থেকে কিছুতেই বেরোতে পারছিলেন না সালমান। ব্রেক আপের পর বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে ঐশ্বরিয়া সম্পর্কে জড়ালে তাকেও হুমকি দিয়েছিলেন সল্লু মিয়া। বলিউডের অন্দরে কান পাতলে এমনটাই শোনা যায়।
তবে সে সবই এখন অতীত। মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। ঐশ্বরিয়া এখন বচ্চন পরিবারের বধূ। স্বামী অভিষেক এবং কন্যা আরাধ্যাকে নিয়ে তার সুখের সংসার। অন্যদিকে সালমানের নাম জড়িয়েছে বিভিন্ন অভিনেত্রীর সঙ্গে। কখনও ক্যাটরিনা, কখনও আবার তার জীবনে এসেছেন ইউলিয়া ভন্তুর। শোনা যায়, বর্তমানে ইউলিয়ার সঙ্গেই সম্পর্কে রয়েছেন তিনি। তবে বয়স ৫০ পেরিয়েও আজও তিনি অবিবাহিত।
বাকি প্রেমিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও আজও ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ তার। বহু বার বহু পরিচালক তাদের আবারও একসঙ্গে ছবি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু দুজনেই তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। সালমান খান এবং ঐশ্বরিয়ার প্রেম জায়গা পেয়েছে বলিউডের সব থেকে চর্চিত ব্যর্থ প্রেমের তালিকায়।
সূত্র: ঢাকাটাইমস থেকে নেয়া।
0 comments:
Post a Comment