Friday, June 20, 2025

টিন্ডার প্রতারণা: প্রেমের নামে লুট

0 comments

একটি আন্তর্জাতিক সত্য প্রতারণা ঘটনা

টিন্ডার স্বাইন্ডলার: যার প্রেমের ফাঁদে লাখ ডলার খোয়াতেন তরুনীরা

ভূমিকা: ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি “The Tinder Swindler” বাস্তব জীবনের একটি ঐকান্তিক প্রতারণার কাহিনী তুলে ধরেছিল। এতে দেখানো হয়েছিল ইসরায়েলি প্রতারক শিমোন হায়ুত (নাম পরিবর্তন করে সাইমন লেভিয়েভ) কিভাবে টিন্ডার অ্যাপে দামী যৌথবেশে ভুয়া পরিচয় দিয়ে নারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। নেটফ্লিক্সের বিবরণ অনুযায়ী, মুক্তির মাত্র ২৮ দিনে বিশ্বজুড়ে দর্শকরা এই ডকুমেন্টারি ১৬৬ মিলিয়ন ঘণ্টা দেখেছেন, যা এটিকে প্ল্যাটফর্মের সর্বাধিক দেখা ডকুমেন্টারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০১৯ সালে নরওয়ের সশরীরে অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকরা Verdens Gang পত্রিকায় “টিন্ডার স্বাইন্ডলার” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে ওঠে। এরপর জনমানসে কৌতূহল বেড়ে ওঠে এবং ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারিতে ঘটনাটি আরও আলোচিত হয়।

The Tinder Swindler

প্রতারকের প্রেক্ষাপট

প্রতারক সাইমন লেভিয়েভের আসল নাম শিমোন হায়ুত। তিনি ১৯৯০ সালে ইসরায়েলের বেনী ব্রাক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। কলেজ ছেড়ে দিয়ে তিনি ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, কিন্তু কয়েক বছরে পরে বিভিন্ন ছোটখাটো প্রতারণার অভিযোগে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১১ সালে জাল চেকের মাধ্যমে অপরিচিতদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাঁকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে সে সময় কোনও শাস্তি পাননি। পরে তিনি নাম পরিবর্তন করে সাইমন লেভিয়েভ হয়ে ওঠেন, যা প্রখ্যাত হিরে ব্যবসায়ী Lev Avnerovich Leviev-এর সম্মানীয় বংশধরের পরিচয় বোঝাতে ব্যবহার করেন।

২০১৫ সালে ফিনল্যান্ডে তিনি তিনজন নারীর সাথে প্রতারণার অভিযোগে ধরা পড়েন এবং দুই বছর কারাদণ্ড পান। ২০১৭ সালে ইসরায়েলে ফেরার সময় নতুন পরিচয় দিয়ে এসে আবারও পালিয়ে যান। অবশেষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে গ্রিসে ইন্টারপোল অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ইসরায়েলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি চারটি প্রতারণামূলক অভিযোগে ১৫ মাসের কারাদণ্ড লাভ করেন। তবে করোনার কারণে এই সাজা থেকে মাত্র পাঁচ মাস কারাদণ্ড জেলে কেটে তিনি মুক্তি পান, যা শিকার মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ইসরায়েলের পুলিশ ও অন্যান্য দেশের (নরওয়ে, সুইডেন, যুক্তরাজ্য) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও তাকে বিভিন্ন অপরাধের জন্য অনুসন্ধান করে চলছে।

প্রতারণার পদ্ধতি

লেভিয়েভের প্রতারণা ছিল একধরনের পনজি-স্কিমের মত ব্যবস্থা। প্রথমে সে টিন্ডার অ্যাপে নিজেকে সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করত। অনেক অর্থবহ ডেট ও ঘনিষ্ঠতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারীদের মন জয় করার পর তিনি তাদের ঘর-দরবারে যান এবং আকর্ষণীয় উপহার বণ্টন করেন। গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি শিকার মহিলাদের জন্য পাঁচতারা হোটেলে ডিনার করে, ব্যক্তিগত জেট ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতেন। পরবর্তীতে নিজেকে ‘শত্রুদের’ আক্রমণে আহত দেখিয়ে একটি নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতেন – যেমন ছবি এবং ভয়েস নোট পাঠিয়ে দেহরক্ষী কাতর হয়ে পড়েছে দেখানো। এরপর তিনি নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে অর্থ সাহায্য দাবি করতেন। ভুক্তভোগীরা প্রায়ই ঋণ নিয়ে বা নতুন ক্রেডিট কার্ড করে তার কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠান। সমস্ত টাকা পুরোনো ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ধার করা ছিল; এতে এক ধরণের পনজি চক্র গড়ে উঠতো। শেষ পর্যায়ে তিনি জাল ফান্ড ট্রান্সফারের রশিদ পাঠিয়ে ভুক্তভোগীদের বোঝাতেন যেন টাকা ফেরত দিয়েছেন, তারপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এটিকে সহজবোধ্যভাবে বুঝতে কিছু ধাপ বলে ফেলা যেতে পারে:

  • প্রথমে টিন্ডার বা অনলাইনে পরিচয় গড়ে তোলা, ভুয়া পরিচয়বাক্য (সাইমন লেভিয়েভ) ব্যবহার করা।

  • উপহার ও অতিরিক্ত আদর প্রদর্শন করে দ্রুত আন্তরিকতা গড়ে তোলা।

  • পরবর্তী পর্যায়ে বিপদসঙ্কেত দেখানো – নিজেকে অথবা ফালতু দেহরক্ষীকে আক্রমণ করা হয়েছে বলে ছবি/কথা পাঠিয়ে ভয় দেখানো।

  • সাহায্যের দাবিতে অগ্রিম ঋণ বা টাকা নেওয়া, যেখানে ভুক্তভোগীরা প্রায়ই বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসিতা দেখিয়ে টাকা পাঠায়।

  • পুরোনো শিকারীদের টাকা দিয়ে নতুন শিকারীদের ঝলমলে জীবন যাপনের নালিশ সৃষ্টি করে প্রতারণা চালিয়ে যাওয়া।

শিকারদের অভিজ্ঞতা

এই প্রতারণায় বহু নারী আর্থিক ও মানসিক ভাবে চরম দূর্যোগের শিকার হন। এর মধ্যে বিশেষ করে সেসিলি ফ্রেলহয় এবং পার্নিলা শ্যোলমের কাহিনী আলোচিত।

সেসিলি ফ্রেলহয় (নরওয়ে): তিনি প্রথম দিকের প্রধান ভুক্তভোগী। নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারিতে দেখা যায় শিমন তাকে অত্যন্ত বিলাসবহুল ডেটে নিয়ে যান: পাঁচতারা হোটেলে মধ্যাহ্নভোজনের পর প্রাইভেট জেটে করে ভ্রমণ পর্যন্ত করেন। তারা সম্পর্কের ধারায় বাড়ি ভাড়া করেন একসাথে থাকার পরিকল্পনায়। পরবর্তীতে শিমন নাটক দেখান যে তাকে শত্রুরা আক্রমণ করেছে, তার দেহরক্ষী আহত হয়েছে। এরপর সুরক্ষার অজুহাত দেখিয়ে তিনি সেসিলিকে ২৫০,০০০ মার্কিন ডলার ঋণে সহায়তার দাবি করেন। সেসিলি পরবর্তীতে গিয়ার লিভিয়েভকে ট্র্যাক করতে অন্য ভুক্তভোগীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ইন্টারপোলের সাহায্যে তাকে গ্রেপ্তার করাতে অবদান রাখেন। তিনি পরবর্তীতে LoveSaid নামের একটি সহায়তা গ্রুপ গঠন করে প্রতারণার শিকারদের সমর্থনে কাজ করে চলেছেন।

পার্নিলা শ্যোলম (সুইডেন): স্টকহোমের এক সাবেক বিক্রয়কর্মী পার্নিলা প্রথমদিকে ব্যক্তিগতভাবে প্রেমে পড়েননি; বরং শিমনের সঙ্গী হিসেবে ঘনিষ্ঠ হন। তারা একসাথে ইউরোপের বিলাসবহুল এলাকা ঘোরাফেরা করেন – পাঁচতারা হোটেল, রেস্তোরাঁ – তার সমস্ত বিল ভুক্তভোগীদের অর্থ থেকে জুড়ত। কয়েক মাস পর শিমন জানায় যে তার ‘শত্রুরা’ তার পিছু নিয়েছে এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে, ফলে এখন তার মুক্তির জন্য অর্থ দরকার। ঝুঁকির কারণে ভীত পার্নিলা শেষ পর্যন্ত বহু হাজার ইউরো ঋণ নিয়ে শিমনকে দেয়, যা তাকে দেউলিয়া করে দেয়। বিষয়টি প্রকাশের পর পার্নিলা IDfier নামের একটি পরিচয় যাচাই প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ অনলাইনে ছদ্মবেশ ধরে প্রতারণা করতে না পারে। প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের ঠকানোর ঘটনায় পার্নিলা শেষ পর্যন্ত ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লেও সমাজে ফ্রড সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন।

তদন্ত ও প্রকাশ

প্রথমদিকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে VG পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরই অনেক ভুক্তভোগী এগিয়ে আসতে শুরু করে। কিছুদিন পর গ্রিসে চলমান অনুসন্ধান অভিযান চলাকালীন ইন্টারপোল শিমনকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলে ফেরত পাঠায়। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে তাকে ইসরায়েলের টেল অবিভ ম্যাজিক্রেট আদালতে ১৫ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আদালতে শিমন ক্ষমা প্রার্থনা করলেও ভুক্তভোগীরা তার দ্রুত মুক্তি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন। আসলে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি প্রথায় (করোনা পরিস্থিতি) মাত্র ৫ মাস কারাদণ্ড হওয়ার পর মার্চ ২০২০-এ তিনি বেরিয়ে আসেন।

ডকুমেন্টারির মুক্তির পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি এই কেস আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। প্রধান তিনজন নারী (সেসিলি, পার্নিলা ও আয়লিন) একসাথে গিফট-ফান্ডের মাধ্যমে তাদের দেনা মেটাতে প্রায় ৮০ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহের জন্য একটি ফান্ডরাইজিং শুরু করেন। এদিকে শিমন লেভিয়েভ যে তার বিরুদ্ধে রাখা অভিযোগ মানতে অস্বীকার করেছেন, এবং সামাজিকমাধ্যমে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

আইনগত ফলাফল ও বর্তমান অবস্থা

শিমন হায়ুত ফিনল্যান্ডের কারাগার (২০১৫) এবং ইসরায়েলের আদালতে (২০১৯) সাজাপ্রাপ্ত হলেও এসব সাজা অনেকটাই পুরোনো কেসের জন্য ছিল; টিন্ডার কাণ্ডে তিনি কখনো আলাদা অপরাধে দণ্ডিত হননি। ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তমতে তাকে ১৫ মাসের সাজা দেয়া হয়েছিল, তবে উপরে বর্ণিত কারণে মাত্র পাঁচ মাস জেলে ছিলেন। Business Insider অনুসারে ২০২০ সালের মে মাসে তিনি মুক্তি পান। এরপর থেকে লেভিয়েভের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট টিন্ডার প্রতারণা সংক্রান্ত কোন আনুষ্ঠানিক মামলা হয়নি। আইনি উদ্যোগ হিসেবে ইসরায়েলের একটি আদালত ২০২২ সালে লেভিয়েভ পরিবারের কাছ থেকে শিমনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা গ্রহণে সহযোগিতা চেয়েছে, তবে এর ফলাফলের তথ্য এখনো অমীমাংসিত।

বর্তমানে সাইমন লেভিয়েভ টিন্ডার ও এর মাধ্যাকল অ্যাপগুলোতে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ। টিন্ডার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তার নামে কোন সক্রিয় প্রোফাইল নেই এবং তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ডেটিং অ্যাপেও (হিঞ্জ, ম্যাচ.কম ইত্যাদি) তাকে ব্লক করা হয়েছে। অপরদিকে স্ব স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে শিমন দাবি করেছেন যে তিনি ‘অপরাধী’ নন; মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ইনস্টাগ্রামে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে বলেছেন, “আমি তাদের কাছ থেকে এক পয়সাও নিইনি, নারীরা আমার সংস্পর্শে বিনোদিত হয়েছেন”।

বিস্তীর্ণ প্রভাব

টিন্ডার স্ইন্ডলারের কেস সারাবিশ্বে অনলাইন ডেটিং, প্রেম প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তার দুর্বলতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় উদাহরণ সরবরাহ করেছে। FBI ও অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে শুধুমাত্র আমেরিকায় প্রেম প্রতারণায় $১ বিলিয়ন হারিয়েছে। FBI রিপোর্টে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতারকরা কবিতা ও উপহার ছড়িয়ে শিকারীদের ভালবাসার আশ্বাস দিয়ে মনের ভরসা জাগিয়ে দেড়ান, পরে ভয়ঙ্কর কোনো ঘটনা বা বিপদ দেখিয়ে আর্থিক চাহিদা করেন। আমাদের কাহিনীতে ব্যবহৃত কৌশলগুলো (প্রতি-ফিরে এলোমেলো টাকা ধার করা, বিপদের নাটক) আন্তর্জাতিক মানব নিরাপত্তার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হয়েছে।

ইন্টারনেট ব্যবহার ও ডিজিটাল দক্ষতা কম থাকা মানুষজন এই ধরনের ফ্রডের সবচেয়ে বড় শিকার হতে পারে। ঘটনাক্রমে এই কেস প্রকাশের পর বিশ্বের অনেক ডেটিং অ্যাপ নিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে – টিন্ডার অ্যাপে পরিপ্রেক্ষিত পরীক্ষার (photo verification) মতো ফিচার চালু হয়েছে এবং “সেফটি সেন্টার” চালু করার ঘোষণা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই কাহিনী ব্রেকিং নিউজে পরিণত হওয়ায় ভবিষ্যতে ভুক্তভোগী নারীদের কাহিনি সামনে আসার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন।

প্রতারণা থেকে রক্ষা: করণীয় পরামর্শ

অনলাইন ডেটিংয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রত্যেকের প্রয়োজন। বিশেষ করে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে:

  • পরিচয় যাচাই করুন: অচেনা কারো ছবি বা প্রোফাইল তথ্য গুগল-রিভার্স ইমেজ সার্চে যাচাই করুন। একই ছবি বা তথ্য অন্য কোথাও ব্যবহৃত হচ্ছে কি না দেখুন।

  • অর্থ বা ঋণ পাঠাবেন না: অপরিচিত কাউকে কোনওভাবে টাকা বা ঋণ দিতে যাবেন না। তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক ট্রান্সফারে টাকা পাঠানোর আগে সতর্কতার সব সংকেত দেখুন। কখনও কারও জন্য ব্যাংক লোন বা কার্ড অফার করবেন না বা ভারসাম্য রক্ষার জন্য টাকা পাঠাবেন না।

  • ব্যক্তিগত তথ্য সীমিত করুন: আপনার ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য (ব্যাংক-কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি) শেয়ার করার আগে খুঁটিয়ে ভাবুন। একেবারেই অপরিচিতদের ব্যক্তিগত ডেটা (প্রয়োজন ছাড়া) দেবেন না।

  • সতর্ক থাকুন: অত্যধিক দ্রুত ভালোবাসা বা অতিরিক্ত বিলাসিতা প্রদর্শন করলে সাবধান হোন। উৎসব-উপহার, অত্যন্ত রোমান্টিক কথাবার্তা যদি খুব স্বাভাবিকের অতিরিক্ত মনে হয়, তবে সেটিও প্রতারণার অংশ হতে পারে।

  • আর্থিক লেনদেন এড়িয়ে চলুন: বিশেষ করে পারস্পরিক পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত, কাউকে নগদ বা ভার্চুয়াল কার্ডে টাকা দেবেন না। সন্দেহ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন বাতিল করে দিন। কখনও অপরিচিত কাউকে টাকা ট্রান্সফার করবেন না যাতে করে আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে অপরাধের অংশ হয়ে না পড়েন।

  • সহায়তা ও প্রতিবেদন: সন্দেহজনক কিছু দেখলে ডেটিং অ্যাপের নিরাপত্তা টিম অথবা স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করুন। প্রয়োজনে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে পরিচয় শেয়ার করে রাখুন এবং যেকোনো জরুরি বার্তার স্ক্রিনশট করে রাখুন।

অতএব, বিশ্বব্যাপী টিন্ডার স্ইন্ডলার কেসটি গমগমে করে দিয়েছে যে ডিজিটাল যুগেও প্রেম ও অর্থ লেনদেনে সতর্ক থাকা অপরিহার্য। আপনার পরিচয় যাচাই করে প্রতারণামূলক সংকেতগুলো চিনে ফেললে এবং উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ধরনের অনলাইন প্রতারণা থেকে নিজেকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব।

উদ্ধৃতি: উপরোক্ত তথ্যের উৎস হিসেবে বিভিন্ন সংবাদপত্র, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও আইনি নথি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত (gijn.org timesofisrael.com theguardian.com thenextweb.com theguardian.com) পরিসংখ্যান ও বিবরণগুলি উল্লিখিত উত্স থেকে সংগৃহীত।

0 comments:

Post a Comment