নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপিত হয়। উত্তর আমেরিকাজুড়ে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' উৎসব।
থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই
একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য, দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। যদিও আমেরিকানদের অনেকেই জানেন না থ্যাঙ্কস গিভিং
কবে থেকে শুরু, কেনই বা উৎসবটির নাম থ্যাঙ্কস গিভিং ডে হলো, কাকেই বা এমন
ঘটা করে থ্যাঙ্কস জানান হচ্ছে! তারা জানেন, থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই পার্টি,
বিশাল ভোজ আয়োজন, পারিবারিক মিলনমেলা। ভূরিভোজনের তালিকায় থাকে টার্কি
রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং
ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। আর কিছু না হোক, অতি সাধারণ আয়োজনেও টার্কি রোস্ট
উইদ ক্র্যানবেরি সস এবং পামকিন পাই থাকবেই। অর্থাৎ থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই
টার্কি। [টার্কি : ময়ূরের মতো বড় সাইজের বনমোরগ মার্কিনমুলুকে আজ থ্যাঙ্কস
গিভিং ডে উদযাপিত হচ্ছে। থ্যাঙ্কস গিভিং প্যারেডে পিলগ্রিম [ব্রিটিশ
অরিজিন, যারা ধর্মযাজক হিসেবে অজানার উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রা করেছিল এবং
সপ্তদশ শতাব্দীতে আমেরিকার মেসাচুসেটসে প্লিমথ কলোনিতে তাদের সন্ধান পাওয়া
যায়], আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের [আদি আমেরিকান] ডিসপ্লে দেখানো হয়ে থাকে। এ দিন
আনন্দে কাটিয়ে সবাই প্রস্তুত হয় পরের দিন 'থ্যাঙ্কস গিভিং সেল'-এর জন্য।
প্রতি বছর, আমেরিকায় থ্যাঙ্কস গিভিং সেলের রমরমা ব্যবসা দেশটির অর্থনীতির
সূচক কাঁটা ঘুরিয়ে দেয়। ফলে থাঙ্কস গিভিং ডে'র ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য অপেক্ষা
বাণিজ্যিক দিকটাই বেশি প্রকাশিত হয়।
থ্যাঙ্ক গিভিং ডে উৎসবের সূচনা হয় ১৬২০ সালের আগস্টে। ওই সময় 'মে ফ্লাওয়ার'
নামের ১০৮ টনের একটি জাহাজ ১০২ জন যাত্রী নিয়ে ইংল্যান্ডের সাউথ হ্যাম্পটন
থেকে যাত্রা করে। যাদের ইংল্যান্ডে স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করায় বাধা ছিল।
তাই স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করার উদ্দেশ্যে 'মে ফ্লাওয়ারে' চেপে ইংল্যান্ড
ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়। দু-তিন মাস বাদে তারা আমেরিকার
মেসাচুসেটস বে-তে এসে পেঁৗছে। ততদিনে যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে
অসুস্থ হয়ে পড়ে, কিছু যাত্রীর মৃত্যু হয়। নতুন স্থানে পেঁৗছে অনেকেই শীতের
তীব্রতায় অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। শুরু হয় মুক্ত স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার
সংগ্রাম, স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার উদ্যোগ। তবে শুরুতেই তাদের অনেক কষ্টের
মুখোমুখি হতে হয়। নতুন দেশ, নতুন আবহাওয়া, শীতের তীব্রতায় প্রতিদিনই
দু-একজনের জীবন সংকট দেখা দিতে থাকে। শীত পেরিয়ে যখন বসন্তের আসে, তাদের
মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। তারা ধীরে ধীরে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করে,
আশপাশের স্থানীয় ইন্ডিয়ান উপজাতিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা, উপজাতিদের
সাহায্যে চাষবাস করাসহ বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে দেয়।
এভাবেই প্লিমথ কলোনি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে তারা। ১৬২১ সালের নভেম্বরে
প্লিমথবাসী প্রথমবারের মতো নিজেদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলে। ফসলের মধ্যে
ভুট্টার ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে তৎকালীন গভর্নর উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড এ
উপলক্ষে সব ইন্ডিয়ান উপজাতি এবং প্লিমথ কলোনিবাসীর সৌজন্যে 'ফিস্টি'
আয়োজন করেন। ফিস্টির দিনটিকে সবাই ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করেন। সবাই
কৃতজ্ঞচিত্তে ঈশ্বরকে স্মরণ করে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায়, কারণ ঈশ্বরের
কৃপায় তারা বেঁচে আছে। ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন শেষে নিজেদের মধ্যে
ধন্যবাদ বিনিময় হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়, সবাই মিলে আনন্দ-ফুর্তিতে কাটিয়ে দেয়
একটি দিন। সেই থেকে অনুষ্ঠানটি আমেরিকার সর্বপ্রথম 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'
হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্লিমথ কলোনিবাসীর দেখাদেখি থ্যাঙ্কস গিভিং ডে
উদযাপনের এই রীতি অন্যান্য কলোনিবাসীর মাঝে প্রচলিত হতে থাকে। সরকারিভাবে
সর্ব প্রথম 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' উদযাপিত হয়েছিল নিউইয়র্কে, ১৮১৭ সালে। এরপর
থেকে প্রতি বছর অন্যান্য স্টেটেও উৎসবটি পালিত হয়। এক সময় 'থ্যাঙ্কস গিভিং
ডে'কে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করার পক্ষে জোর দাবি উঠতে থাকে। ১৮২৭ সালে
বিখ্যাত নার্সারি রাইম 'মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব' রচয়িতা সারাহ যোসেফা
উদ্যোগ নেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি একটানা এ আবেদনের সপক্ষে প্রচুর লেখালেখি
করেন। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, সারাহ
যোসেফের আবেদন খুব গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন এবং 'সিভিল ওয়ার' চলাকালীনই
জনগণের উদ্দেশ্যে আবেদনমূলক ঘোষণা দেন_ 'হে ঈশ্বর! তোমার স্নেহের পরশ, অপার
করুণা তুমি তাদের ওপর বর্ষণ কর, যারা সিভিল ওয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে
নারী স্বামী হারিয়েছে, যে সন্তান পিতৃহারা হয়েছে, যা ক্ষতি সমস্ত জাতির
হয়েছে, সমস্ত ক্ষতি যেন দ্রুত সারিয়ে তোলা যায়। জীবিত সবার যেন মঙ্গল হয়।'
একই বছর প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন নভেম্বরে মাসের শেষ বৃহস্পতিবার 'থ্যাঙ্কস
গিভিং ডে' হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে
আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। 'গ্রেট ডিপ্রেশন' হিসেবে পরিচিত
অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে ১৯৩৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট
ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট রিটেল সেল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এ ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে
আনার ঘোষণা দেন এবং সেই থেকে শেষ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে নভেম্বরের চতুর্থ
বৃহস্পতিবার 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' পালিত হয়।
'মে ফ্লাওয়ার' থেকে নেমে আসা পিলগ্রিমদের মতোই পরিশ্রম করে ফসল ফলানোর কথা,
যুদ্ধ-বিগ্রহ ভুলে গিয়ে, প্রতিবেশী দেশ তথা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে
বন্ধুত্ব স্থাপনই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের করুণা লাভের মাধ্যমে জীবন আরও
উন্নত করার জন্য এ উৎসব। বছরের এই দিনটিতে যেন ঈশ্বরের জয়গান করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পেরিয়ে আজ রক্তের গন্ধ মিশে গেছে বাংলার আকাশে-বাতাসে। বারুদের উত্তাপ সয়ে গেছে বাংলার মাটি।
ঠোঁটের উপর লেগে যাওয়া অমানবিক-পাশবিক দাগ আজো আছে সাক্ষ্য দেয় আমার মায়ের, আমার বোনের সম্ভ্রম যন্ত্রণা কতটা ছিল।
আমি অনুভব করতে পারি, অত্যাচারীর দানবীয় সেই থাবার জ্বালা কতটা তীব্র ছিল।
তোমারদের ঠোঁটে দানবের থুথু,
স্তনে নখের দাগ, সর্বাঙ্গে দাঁতালের ক্ষতচিহ্ন প্রাণান্ত গ্লানিকর।
লুট হয়ে গেছে তোমাদের নারীত্বের মহার্ঘ মসজিদ।
উচ্ছিষ্টের দগদগে লাঞ্ছনা তোমার
পরিত্যাক্ত পড়ে আছে জীবনের ধিক্কৃত অলিন্দে নাচক তাড়িত।