Monday, November 5, 2012

আর্নিস, জার্মান

0 comments
যদি বলা হয়, একটি শহরে মাত্র ২৮০ জন বাস করে, তাহলে নিশ্চয় অবাক হবেন। ভাববেন, এটাকে কি শহর বলা যায়? অবাক হলেও সত্যি, জার্মানির স্লেসভিগ হলস্টাইন রাজ্যের স্লাই নদীর তীরে আছে এমনই এক শহর। নাম 'আর্নিস'। এটি জার্মানির সবচেয়ে ছোট শহর। তবে বেশ গোছানো। শহরে ঢোকার আগেই চোখে পড়বে 'বাড আর্নিস' লেখা একটি সাইনবোর্ড। এর অর্থ 'একটি স্পা এলাকা।' এখানে আছে ঝরনা আর প্রস্রবণ। জার্মানির উত্তরে এ রাজ্যটির অবস্থান। স্লাই নদীর আশপাশে আরও শহর থাকলেও আর্নিসই সবচেয়ে ছোট শহর। শহরের আয়তন মাত্র আধা বর্গকিলোমিটার। কাগজে-কলমে 'আর্নিস' শহর হলেও এটিকে গ্রাম বলাই ভালো। এখানে কোনো স্কুল নেই, কোনো দোকানপাট নেই। সরকারি কোনো দফতরও নেই। তবে এখানে যে কেউ এলে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি সময় কাটাতে পারবে। নিশ্চিন্ত মনে সবুজ প্রকৃতি আর নদীর সঙ্গে মিশে যেতে পারবে তারা।
শহরটির গোড়াপত্তন হয় ১৬৬৭ সালে। মাত্র ৬৪টি পরিবার সবচেয়ে কাছের শহর কাপেল্কম্ন থেকে আর্নিসে এসে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩৪ সালে আর্নিসকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে আর্নিস এবং কাপেল্কেম্ন সরকারের একটি আঞ্চলিক অফিস আছে। তবে শহরের এখনও কোনো মেয়র নেই। নেই কোনো টাউন হল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, পুরো শহরটি হেঁটে ঘুরতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। পুরো শহরে রয়েছে সাতটি রাস্তা। দীর্ঘতম রাস্তাটির নাম 'লাঙে স্ট্রাসে।' অর্থাৎ লম্বা রাস্তা। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৬শ' মিটার। শহরের বাড়িগুলো কাঠ দিয়ে নির্মিত, গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা। বাড়িগুলোতে রয়েছে ছোট ছোট জানালা। গ্রীষ্মকালে আর্নিস শহরের সৌন্দর্য দেখার মতো। সবুজে সবুজে এবং রঙবেরঙের ফুলে ভরে ওঠে পুরো শহর। বিশেষ করে প্রতিটি বাড়ির সামনের গোলাপ বাগান ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। সব রাস্তা তখন ঢেকে থাকে সবুজ লাইম ট্রিতে। অবসর গ্রহণকারীদের অনেকেই এসে দীর্ঘ সময় কাটান এ শহরটিতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন স্লাই নদীর তীরে। এখানকার সবকিছু খুবই শান্ত, কোনো হৈচৈ নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অপূর্ব। নদীর ওপর ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে গাঙচিল, আবার কিছুক্ষণ পর ঘুরে ঘুরে ফিরে আসছে। নদীতে অনেক নৌকা বাঁধা থাকে। অনেকেই আসেন সাইকেল নিয়ে। কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু হাঁটেন, কেউ আবার নৌকা নিয়ে নেমে যান নদীতে। সবাই মিশে যান শান্ত, সবুজ আর নির্মল প্রকৃতির সঙ্গে। শহরটিতে কোনো হোটেল নেই। কিন্তু অনেক অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া পাওয়া যায়। এগুলো পর্যটকদের জন্য সবসময় খালি থাকে। বেড়াতে এলে যে কেউ এসব অ্যাপার্টমেন্টে উঠতে পারেন। অনেকে আসেন মাছ ধরার জন্য ছিপ হাতে। মাছ ধরতে সারাদিন তারা নদীর তীরে বসে থাকেন। স্লাই নদীতীর ঘেঁষে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট। নাম 'স্লাই পার্ল' বা স্লাইয়ের মুক্তা। পারিবারিকভাবে এ ব্যবসাটি শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে। হান্স ভের্নার ব্রডেরিউস নামে এক বাসিন্দা ১৯৭৭ সালে থেকে রেস্টুরেন্টটি চালাচ্ছেন। তিনি জানান, রান্নার কাজ করে আমি খুবই আনন্দ পাই এবং কাজকে দারুণভাবে উপভোগ করি। রেস্টুরেন্ট থেকে যে দৃশ্য দেখা যায়, তা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যাবে না_ এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

প্রদীপ সাহা

0 comments:

Post a Comment