Saturday, November 3, 2012

মেয়েদের দাড়ি-গোঁফ : হার্সুটিজম

0 comments
মাথাভর্তি চুল নারী-পুরুষ উভয়ের ব্যক্তিত্ব ও শোভা বাড়ায়, আর দাড়ি-গোঁফ পুরুষালি বৈশিষ্ট্য হলেও কখনও কখনও এটা নারীদের জন্য একটা বিব্রতকর সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ পরিস্থিতিকে হার্সুটিজম (Hirsutism) বলে, যাতে মেয়েদের ঠোঁটের উপরি ভাগে, গালে, চিবুকে, বুকে, স্তনে, তলপেটে, নিতম্বে অথবা কুঁচকিতে শক্ত-কালো চুল (terminal hair) গজায়। এ রোগে বাড়তি চুলের পাশাপাশি মাথায় টাক, পুরুষালি পেশি গঠন, গভীর কণ্ঠস্বর, ব্রণ, মাসিক বন্ধ, স্থূলতা, বন্ধ্যত্ব, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকতে পারে। কারণ : কিছু কিছু জাতিগোষ্ঠীতে স্বাভাবিকভাবেই নারীদের দাড়ি-গোঁফের মতো পুরুষালি চুল থাকে। যেমন_ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অঞ্চল, অন্যদিকে এশিয়ান এবং ভারতীয়দের শরীরের এসব স্থানে চুল কম গজায়। তবে ৪.৭% ক্ষেত্রে কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই হার্সুটিজম হতে পারে। হার্সুটিজম সাধারণত মেয়েদের শরীরে ডিম্বাশয় (ovary) বা এড্রেনাল (adrenal) গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন (যেসব হরমোন পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী) নিঃসরণের কারণে হয়ে থাকে। ৭০-৮০% ক্ষেত্রে হার্সুটিজম আক্রান্ত নারীদের রক্তে এন্ড্রোজেন হরমোন বেশি থাকে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ই এ অতিরিক্ত এন্ড্রোজেনের উৎস। ডিম্বাশয়ের কিছু রোগ, যেমন- পলিসিস্টিক ওভারী সিন্ড্রোম, হাইপার ইন্সুলিনিজমিক হাইপার এন্ড্রোজেনিজম উইথ এন অভুলশন, ওভারি বা এড্রেনাল গ্রন্থির কিছু টিউমার বা ক্যান্সারের কারণেও এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে হার্সুটিজম হয়। এড্রেনাল গ্রন্থির রোগের মধ্যে কঞ্জেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া, এড্রেনাল এডেনোমা, কার্সিনোমা ইত্যাদি। এছাড়া পিটিউইটরি গ্রন্থির রোগ যেমন- কুশিং ডিজিজ, এক্রোমেগালি ইত্যাদি। কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলেও এমন সমস্যা হতে পারে, যেমন- মিনক্সিডিল, কর্টিকোস্টেরয়েড, ফিনাইটইন,ডায়াজক্সাইড ইত্যাদি। শরীরে অতিরিক্ত চুলের অন্য একটি কারণ হচ্ছে হাইপারট্রাইকোসিস (Hypertrichosis), যাতে এন্ড্রোজেনের প্রভাববিহীন দাড়ি-গোঁফ ছাড়াও সব শরীরেই পাতলা চুল বা লোম (vellus hair) গজায়। এটা কিছু রোগের কারণে হয়, যেমন- জন্মগত কিছু রোগ, পরফাইরিয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম, এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা, ডার্মাটোমাইয়োসাইটিস, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি। হার্সুটিজম রোগের সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য এর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব ক্ষেত্রে হার্সুটিজম স্থির থাকে অর্থাৎ নতুন করে দাড়ি-গোঁফ গজায় না সেক্ষেত্রে কোন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার দরকার নেই। যাদের হার্সুটিজমের সঙ্গে পুরুষালি লক্ষণ (Virilization) থাকে এবং তা দ্রুত বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে হার্সুটিজমের কারণ টিউমার বা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কারণ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসার জন্য তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রফি, গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ডায়াবেটিসের পরীক্ষা), লিপিড প্রোফাইল (রক্তে স্নেহ পদার্থের মাত্রা), টোটাল টেস্টোস্টেরন, ১৭-হাইড্রক্সিটেস্টোস্টেরন, ডিহাইড্রোইপিএন্ড্রোওস্টেরোন, টিএসএইচ, এসিটিএইচ, সিরাম প্রলেকটিন এবং তলপেট ও মাথার এমআরআই অথবা সিটিস্কেন ইত্যাদি করতে হতে পারে। সুতরাং হার্সুটিজম ও হাইপারট্রাইকোসিসে শুধু অতিরিক্ত চুলের সমস্যা বিবেচনা না করে সামগ্রিকভাবে এ রোগের কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি।

ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম ভূঞা
সহকারী অধ্যাপকচর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

0 comments:

Post a Comment