হঠাৎ কারও মনে হতে পারে ভীষণ দুর্বল লাগছে, চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে। এতই
দুর্বল মনে হচ্ছে যে, সামনে আর পা বাড়ানো যাচ্ছে না। হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে
মাটিতে পড়ে যেতে পারেন। জনাকীর্ণ স্থানে, বাসে, ট্রেনে কিংবা সিনেমা হলে
গরম ভ্যাপসা পরিবেশে হঠাৎ এ অবস্থা হতে পারে। এ অবস্থাকে অনেকে ফেইনটিং বা
মূর্ছা যাওয়া বলে থাকেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে সিনকোপ বলা হয়।
হৃৎপিণ্ড পাম্পের ফলে ধমনীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত হয়। সাময়িক রক্ত প্রবাহ কমে গেলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ অনেকাংশেই বন্ধ হয়ে যায়। রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
হঠাৎ শোয়া থেকে বা বসা থেকে দাঁড়ানো, অত্যধিক মানসিক উত্তেজনা, ভয়ভীতি, আতঙ্ক, দুঃসংবাদ, গরম আবহাওয়া, আঁটসাঁট জামা-কাপড় পরা, খুব ক্ষুধা লাগা, রক্তশূন্যতা, রক্তক্ষরণ, তীব্র ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া, হার্ট-বাল্বের সমস্যা যেমন এয়োর্টিক স্টেনোসিস, হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটে ব্লক, হার্টের গতি কমে যাওয়া, হাইপারটপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি, হার্টে টিউমার যেমন এট্রিয়াল মিক্সোমা, জন্মগত হার্টের ক্রটি ইত্যাদি কারণে সিনকোপ বা ফেইনটিং হতে পারে। এ অবস্থায় নাড়ির গতি দুর্বল এবং ক্ষীণ হয়। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। চামড়া শীতল ও ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। চোখের মণি বড় হয়ে যায়। ঠোঁট ফ্যাকাশে নীল হতে পারে। ঘুম ঘুম ভাব হয়, অনেক সময় ডাকলে সাড়া দেয়; কিন্তু পরক্ষণেই আবার আগের অবস্থায় চলে যায়। কখনও রোগী বেসামাল থাকতে পারে। প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তর দিতে পারে না। মাঝেমধ্যে মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার জন্য খিঁচুনিও হতে পারে। সিনকোপের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগীর জ্ঞান ফিরে আসবে। গরম আবহাওয়ায় শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য মাথাব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া এমনকি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন । একে হিট সিনকোপ বলা হয় । সিনকোপের রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হয়। জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ না পেলে শান্ত করুন, সাহস দিন। আর আঁটসাঁট কাপড়-চোপড় থাকলে তা ঢিলে করে দিতে হবে, বিশেষ করে গলা, বুক, কোমড়ের কাপড়। পায়ের দিকটা উঁচু করে দিলে মাথায় রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সিনকোপ হলে প্রথমে রোগীকে যেখানে যে অবস্থায় থাকুক সঙ্গে সঙ্গে শুইয়ে দিতে হবে, অন্যথায় রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার জন্য মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। তবে সাবধান, একটু সুস্থ হওয়ার পর হঠাৎ দাঁড় করালে বা বসালে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। জনাকীর্ণ ভ্যাপসা পরিবেশ থেকে রোগীকে খোলামেলা স্থানে সরিয়ে আনতে হবে ।
রাস্তায় চলাফেরা বা কাজ করার সময় বা দুর্ঘটনা দেখলে বা রক্ত প্রবাহ দেখলে যদি মনে হয় নিজেই এরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি, সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন। এতে মস্কিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, সুস্থ বোধ করবেন। ভয়ে দিশেহারা না হয়ে সাহস রাখবেন। ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেবেন। হিট সিনকোপের রোগীকে ঠাণ্ডা পরিবেশে নিতে হবে। পানি খেতে চাইলে পানি দেবেন।
বারবার সিনকোপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে ইসিজি, বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিওগ্রাম, হল্টার মনিটরিং, টিল্ট টেস্ট, কেরটিড আল্ট্রাসাউন্ড করে কারণ নির্ণয় করা যায়। হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটে ব্লকের জন্য সিনকোপ হলে পেসমেকার লাগাতে হয়, যার সাহায্যে হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে চালানো হয়ে থাকে। পেসমেকার হলো একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র, যার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। একে আর্টিফিসিয়াল পেসমেকারও বলা হয়। রোগী বেশি সময় অজ্ঞান থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন অথবা হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে। অজ্ঞান হওয়ার অন্যান্য কারণ খুঁজতে হতে পারে ।
ড. মোহাম্মদ শফিকুর রহমান পাটওয়ারী
সহকারী অধ্যাপক
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ঢাকা
হৃৎপিণ্ড পাম্পের ফলে ধমনীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত হয়। সাময়িক রক্ত প্রবাহ কমে গেলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ অনেকাংশেই বন্ধ হয়ে যায়। রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
হঠাৎ শোয়া থেকে বা বসা থেকে দাঁড়ানো, অত্যধিক মানসিক উত্তেজনা, ভয়ভীতি, আতঙ্ক, দুঃসংবাদ, গরম আবহাওয়া, আঁটসাঁট জামা-কাপড় পরা, খুব ক্ষুধা লাগা, রক্তশূন্যতা, রক্তক্ষরণ, তীব্র ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া, হার্ট-বাল্বের সমস্যা যেমন এয়োর্টিক স্টেনোসিস, হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটে ব্লক, হার্টের গতি কমে যাওয়া, হাইপারটপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি, হার্টে টিউমার যেমন এট্রিয়াল মিক্সোমা, জন্মগত হার্টের ক্রটি ইত্যাদি কারণে সিনকোপ বা ফেইনটিং হতে পারে। এ অবস্থায় নাড়ির গতি দুর্বল এবং ক্ষীণ হয়। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। চামড়া শীতল ও ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। চোখের মণি বড় হয়ে যায়। ঠোঁট ফ্যাকাশে নীল হতে পারে। ঘুম ঘুম ভাব হয়, অনেক সময় ডাকলে সাড়া দেয়; কিন্তু পরক্ষণেই আবার আগের অবস্থায় চলে যায়। কখনও রোগী বেসামাল থাকতে পারে। প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তর দিতে পারে না। মাঝেমধ্যে মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার জন্য খিঁচুনিও হতে পারে। সিনকোপের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগীর জ্ঞান ফিরে আসবে। গরম আবহাওয়ায় শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য মাথাব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া এমনকি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন । একে হিট সিনকোপ বলা হয় । সিনকোপের রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হয়। জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ না পেলে শান্ত করুন, সাহস দিন। আর আঁটসাঁট কাপড়-চোপড় থাকলে তা ঢিলে করে দিতে হবে, বিশেষ করে গলা, বুক, কোমড়ের কাপড়। পায়ের দিকটা উঁচু করে দিলে মাথায় রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সিনকোপ হলে প্রথমে রোগীকে যেখানে যে অবস্থায় থাকুক সঙ্গে সঙ্গে শুইয়ে দিতে হবে, অন্যথায় রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার জন্য মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। তবে সাবধান, একটু সুস্থ হওয়ার পর হঠাৎ দাঁড় করালে বা বসালে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। জনাকীর্ণ ভ্যাপসা পরিবেশ থেকে রোগীকে খোলামেলা স্থানে সরিয়ে আনতে হবে ।
রাস্তায় চলাফেরা বা কাজ করার সময় বা দুর্ঘটনা দেখলে বা রক্ত প্রবাহ দেখলে যদি মনে হয় নিজেই এরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি, সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন। এতে মস্কিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, সুস্থ বোধ করবেন। ভয়ে দিশেহারা না হয়ে সাহস রাখবেন। ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেবেন। হিট সিনকোপের রোগীকে ঠাণ্ডা পরিবেশে নিতে হবে। পানি খেতে চাইলে পানি দেবেন।
বারবার সিনকোপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে ইসিজি, বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিওগ্রাম, হল্টার মনিটরিং, টিল্ট টেস্ট, কেরটিড আল্ট্রাসাউন্ড করে কারণ নির্ণয় করা যায়। হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটে ব্লকের জন্য সিনকোপ হলে পেসমেকার লাগাতে হয়, যার সাহায্যে হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে চালানো হয়ে থাকে। পেসমেকার হলো একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র, যার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। একে আর্টিফিসিয়াল পেসমেকারও বলা হয়। রোগী বেশি সময় অজ্ঞান থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন অথবা হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে। অজ্ঞান হওয়ার অন্যান্য কারণ খুঁজতে হতে পারে ।
ড. মোহাম্মদ শফিকুর রহমান পাটওয়ারী
সহকারী অধ্যাপক
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ঢাকা
0 comments:
Post a Comment