Monday, March 1, 2021

বড়ি'র কথা

0 comments

 ডাল বা কুমড়োর বড়ি মূলত সংরক্ষণযোগ্য খাদ্য উপাদান। বড়ি বানিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে কাচের বয়ামে পুরে বছরভর খাওয়া যায়।

আশি বা নব্বইয়ের দশকে গ্রামে গ্রামে বড়ি দেওয়ার দৃশ্য ছিল নিয়মিত। শীত এলেই মাষকলাইয়ের বড়ি বানিয়ে সে বড়িকে খোলা জায়গায় নরম রোদে শুকাতে দেওয়ার দৃশ্য খুব একটা ধূসর হয়নি এখনো। কিন্তু বড়ি দেওয়ার সে চলই এখন সীমিত হয়ে গেছে।  


 

নাম যেহেতু ডালের বড়ি, তাই এর মূল উপাদান যে ডাল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মাষকলাই, মসুর এবং মটর ডাল ব্যবহার করা হয় এটি তৈরি করতে। সারা রাত ডাল ভিজিয়ে রেখে পরদিন পানি ঝরিয়ে সকালবেলা পাথরের জাঁতায় পিষে লেই তৈরি করে তারপর দেওয়া হয় বড়ি। তবে ব্যাপারটি সহজ নয়। পাটায় বা জাঁতায় মিহি করে বেটে নিয়ে খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হয় ডালের লেই। দীর্ঘ সময় ধরে ভালোভাবে ফেটানোর ওপরই নির্ভর করে বড়ির গুণগত মান। বলা হয়ে থাকে যে ডালের লেই ফেটানোর পর তাতে বাতাস থাকা যাবে না কোনোভাবেই। বাতাসহীন লেই হলেই কেবল সুস্বাদু বড়ি পাওয়া যাবে। কোনোভাবে লেইয়ে বাতাস থেকে গেলে বড়ি কিছুটা তিতা হবে। মটর ডালের চাষ আমাদের দেশে এখন একেবারেই কম। তাই বড়ি বানাতে এখন ব্যবহার করা হয় মাষকলাই ও মসুর ডাল। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মাষকলাইয়ের ডাল দিয়েই বহুলভাবে তৈরি করা হয় বড়ি।

আমাদের দেশের সব অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানো হয় না। ঢাকার বিক্রমপুর-মানিকগঞ্জ অঞ্চল, যশোর-খুলনা অঞ্চল, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং উত্তরবঙ্গের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানোর প্রচলন আছে, যদিও তার পরিমাণ এখন কমে এসেছে। এগুলো ছাড়াও কিছু অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানো হয় বটে। কিন্তু সেটা উল্লেখযোগ্য নয়। তবে প্রায় পুরো দেশেই এখন কমবেশি খাওয়া হয় ডালের বড়ি।

শুধু ডাল দিয়ে বানানো বড়ি ডালের বড়ি এবং ডালের লেইয়ের সঙ্গে চালকুমড়ার মিহি কুচি মিশিয়ে বানানো বড়ি কুমড়ো বড়ি নামে পরিচিত। উত্তরবঙ্গে এই বড়ি বানানোর চল বেশি। এই খাবারগুলো আবহমানকাল ধরে আমাদের রসনাবিলাসী মনকে তৃপ্ত করে আসছে।

ছোট ও বড়—এ দুই আকৃতির হয়ে থাকে ডালের বড়ি। আকারভেদে এর রান্নাও ভিন্ন ভিন্ন। ছোট আকারের ডালের বড়ি সাধারণত ভর্তা বা ভাজা খাওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয়। এটা যে অন্য তরকারিতে দিয়ে খাওয়া হয় না, তা নয়। তবে বড় আকৃতির বড়ি দিয়েই তরকারি খাওয়াটা সাধারণভাবে প্রচলিত।

মূলত নিরামিষ তরকারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে বড়ি। এটি কোনো একক উপাদান হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করা হয় না। সুক্তো, সবজির ঘন্ট, ভাজা, ঝোল এবং অম্বল বা টক—এ ধরনের খাবারে অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় বড়ি, তা সেটা কুমড়ো বড়ি হোক অথবা ডালের বড়ি।

 

 লেখা: রজত কান্তি রায়, প্রথম আলো

0 comments:

Post a Comment