মণ্ডা বললেই মনে আসে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মণ্ডা।
১৯৬ বছর ধরে একটি পরিবারের হাতেই তৈরি হয়ে আসছে মুক্তাগাছার এই মণ্ডা। ওই পরিবারের বাইরের আর কেউ ওই মণ্ডা প্রস্তুতের প্রণালি জানেন না বলে দাবি মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকানটির মালিকপক্ষের।
বর্তমান ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌর শহরে গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকানটি ১৮২৪ সালে স্থাপিত হয়। তখন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। গোপাল পালের মণ্ডা তাঁকে মুগ্ধ করে। এরপর জমিদারবাড়ির খাবারের তালিকায় জায়গা করে নেয় মণ্ডা। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে উপহার হিসেবে পাঠাতে মণ্ডাকেই বেছে নিয়েছেন জমিদারেরা। জমিদার পরিবারটির মাধ্যমেই মণ্ডার দেশব্যাপী সুনাম ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা যায়।
গোপাল পাল মারা যান ১৯০৭ সালে। এরপর পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে এ মণ্ডা তৈরি করেন গোপাল পালের বংশধরেরা। এখন পর্যন্ত গোপাল পালের উত্তরসূরিরাই কেবল এই মণ্ডা তৈরি করে থাকেন। মণ্ডার ইতিহাস নিয়ে গোপাল পালের বংশধরদের বের করা পুস্তিকায় বলা হয়েছে, মণ্ডা এক প্রকারের সন্দেশ। শুধু ছানা ও চিনি দিয়ে এটি বানানো হয়। তবে স্বাদের রহস্যটা পাকের (রান্নার) মধ্যে লুকিয়ে আছে, যা বছরের পর বছর ধরে গোপন রাখা হয়েছে।
ওই মণ্ডা তৈরির কৌশল নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যেও রয়েছে অপার কৌতূহল। মণ্ডার দোকানের মালিকেরা নিজেদের দোকানের কর্মচারীদেরও মণ্ডা তৈরির স্থানে যেতে দেন না।
মণ্ডার দোকানটির মালিকদের একজন বলেন, বিভিন্ন সময় দোকানে বসেই এই মণ্ডার স্বাদ নিয়েছেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানসহ অনেক জাতীয় ব্যক্তিত্ব। ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেলে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁদের তৈরি মণ্ডার স্বাদ নিতে চান। ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেলে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁদের তৈরি মণ্ডার স্বাদ নিতে চান। গত বছর একজন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য মণ্ডা বানানো হয়। তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার সামনেই তাঁদের মণ্ডা বানাতে হয়েছিল। নিরাপত্তার কারণে এ রকম আরও কয়েকবার মণ্ডার গোপনীয়তার ব্যত্যয় হয়েছে।
মণ্ডার কৌশল গোপন রাখার ফলে ঐতিহ্যবাহী এ সুস্বাদু খাবার হারিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা মুক্তাগাছার অনেক মানুষের। সে প্রসঙ্গে শিশির পাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যেও কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে। যে কারণে সারা দেশেই মুক্তাগাছার মণ্ডার দোকানের শাখা করার কথা ভাবছেন তাঁরা।
এখন অনেকেই মণ্ডার জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল আইডেনটিফিকেশন) স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি তুলেছেন। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানাচ্ছে, ২০১৭ সালেই সে দেশের ব্যবসায়ী মহল থেকে মণ্ডার জিআই স্বীকৃতি নেওয়ার দাবি উঠেছে।
লেখা: কামরান পারভেজ, প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment