বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতিতে পুরান ঢাকার খাবারের আলাদা একটি স্থান আছে। মোগলাই খাবারের সঙ্গে দেশি খাবারের সংমিশ্রণ কিংবা মোগলাই খাবারের দেশি সংস্করণের জন্য পুরান ঢাকা বিখ্যাত। ডালরুটি পুরান ঢাকার সে রকম ঐতিহ্যবাহী একটি খাবারের নাম। তবে এখন বিভিন্ন কারণে ঢাকার আদি খাবারগুলোর মধ্যে এটি টিকে আছে কোনোভাবে।
পুরান ঢাকার মানুষ মনে করেন, বিকেলের নাশতায় নানা রকম তেলে ভাজা খাবারের চেয়ে এটি ভালো এবং মুখরোচক। তাই এটি ছিল ঢাকাবাসীর জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি। লোকমুখে জানা যায়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকে পুরান ঢাকায় এই ডালরুটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটি তেল ছাড়া তৈরি বিশেষ একধরনের রুটি। একসময় এ রুটির এতটাই কদর ছিল যে পুরান ঢাকার মানুষ বিকেলের নাশতা হিসেবে এটি খেতে পছন্দ করতেন। তবে এখন কালের বিবর্তনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকা থেকে স্বাস্থ্যকর এই খাবার হারাতে বসেছে।
এ খাবারের আদি উৎস কোথায়, সেটা জানা যায় না। অনেকেই মনে করেন, এটি ভারতীয় খাবার। আবার কেউ মনে করেন এটির জন্ম বাংলাদেশেই, বিশেষ করে ঢাকায়। অবশ্য সাতক্ষীরা-বাগেরহাট অঞ্চলে এ রকম খাবার এখনো খাওয়ার চল আছে বলে জানা যায়। খুবই অল্প খরচে সহজলভ্য উপাদানে তৈরি এই খাবার তৈরি করা যায়। খাবারটি শরীরে প্রয়োজনীয় শর্করা ও আমিষের অভাব পূরণ করে এবং দ্রুত শক্তি জোগাতে পারে বলে জানা যায়। এ কারণে শ্রমজীবী মানুষের কাছে ডালের রুটির কদর ছিল এবং আছে। মুখরোচক এ খাবার পুরান ঢাকার অভিজাত শ্রেণির মধ্যে গরুর, মুরগি কিংবা হাঁসের মাংসের সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন ছিল বলে জানা যায় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে।
পুরান ঢাকায় দোকানিরা মূলত ঘরে বসেই ডালরুটি তৈরি করেন। এরপর বাড়ির সামনে বা রাস্তার পাশে ডালরুটির পসরা সাজিয়ে বসেন। ক্রেতাদের সামনে দোকানিরা তাওয়ায় সেঁকে বিক্রি করেন এ রুটি। আকারে কিছুটা ছোট, বড় হলেও প্রতিটি রুটি এখন বিক্রি হয় ১০ টাকা করে। শীতকালে এ রুটির চাহিদা বেড়ে যায়। যাঁদের জন্য তৈলাক্ত খাবার খাওয়া একেবারে নিষেধ, তাঁদের জন্য ডালরুটি খুব ভালো খাবার হিসেবে পরিচিত দীর্ঘদিন ধরে।
কয়েক বছর আগেও পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় এ রুটির দেখা মিলত। তবে এখন মাত্র অল্প কিছু জায়গায় ডালরুটির দোকান বসে। নগরীর রায়সাহেবের বাজার, জিন্দাবাহার, নয়াবাজার, কসাইটুলি, বংশাল, আগামসি লেন, নারিন্দা, সূত্রাপুরসহ কয়েকটি এলাকায় পাওয়া যায় ডালরুটি। এসব এলাকায় পিঠা ব্যবসায়ীরা কয়েক পুরুষ ধরে এটি তৈরি করে আসছেন। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পিঠা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলো ডালরুটি বানানো ছেড়ে দিচ্ছেন। এসব পরিবার থেকে আর নতুন করে ছেলেমেয়েরা চাইছে না রাস্তায় বসে এই ডালরুটি বিক্রির ব্যবসায় আসতে।
লেখা: হাসান রাজা, প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment