খড়ের আগুনে বাঁশের ভেতর আতপ চালের গুঁড়ি সেদ্ধ হয়ে তৈরি হয় লম্বাটে সাদা পিঠা। চুঙ্গার ভেতরে তৈরি বলে এর নাম চুঙ্গাপিঠা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে শীত মৌসুমে ভাপা, পুলি আর মালপোয়া পিঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিঠা উৎসব মাতালেও এর দেখা পাওয়া এখন দুষ্কর।
একসময় বাড়িতে জামাই এলে এই চুঙ্গাপিঠার সঙ্গে হালকা মসলায় ভাজা মাছ, নারকেল, কুমড়ার মিঠা বা রিসা পরিবেশন করা ছিল রেওয়াজ। রাতভর চলত চুঙ্গাপুড়ার কাজ। গিট্টু (ভাঁজ) মেপে ছোট ছোট করে কাটা বাঁশের ওপর জ্বলত খড়ের আগুন। কালের পরিক্রমায় সেই পিঠা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
পৌষ ও মাঘের শীতের রাতে বৃহত্তর সিলেটের গ্রামে গ্রামে চুঙ্গাপিঠা তৈরির ধুম পড়ে। আগে চুঙ্গাপিঠা তৈরির সময় সঙ্গে থাকত গান, পুথিপাঠ, কবিতা আবৃত্তি, কৌতুকসহ বিভিন্ন পরিবেশনা। এখন এসব পরিবেশনা না থাকলেও রয়েছে শীতের রাতে খড়ের আগুনে চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রচলন।
ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা বানাতে ঢলু নামে যে বিশেষ প্রজাতির বাঁশ দরকার হয়, তা বিলুপ্ত হতে বসেছে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন আর পাহাড় উজাড়ের কারণে ঢলু বাঁশ এখন সহজে পাওয়াই মুশকিল। শীতকালে কালেভদ্রে দেখা মেলে ঢলু বাঁশের। এ বাঁশে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে বলে সহজে আগুনে পোড়ে না। ক্রমাগত তৈলাক্ত তরল নিঃসরণ করে টিকে থাকে সরু বাঁশের সবুজ শরীর। এমনকি কয়েক ঘণ্টা আগুনে পোড়ার পরও সবুজই থাকে ঢলু বাঁশ। কিন্তু আগুনের ভাপে চোঙ্গার ভেতরে ঠিকই তৈরি হয়ে যায় চুঙ্গাপিঠা।
0 comments:
Post a Comment