আগে মেয়েরা ঋতু চলাকালে কাপড় ব্যবহার করত। এরপর এল স্যানিটারি ন্যাপকিন, তারপর ট্যাম্পন। তবে এগুলো একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক নয়। বর্তমানে এই প্রোডাক্টটি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হলেও অনেকেই মেন্সট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। আবার অনেকে এর সম্পর্কে জেনেও ব্যবহার করতে ভয় পান, দ্বিধায় ভোগেন।
মেন্সট্রুয়াল কাপ কী?
এটি মূলত ফানেলের মতো আকৃতির মেডিকেল গ্রেড সিলিকনের কাপ। এটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো রক্ত শুষে না নিয়ে কাপে জমা রাখে। ভাঁজ করে যোনিপথ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেটা ভেতরে গিয়ে প্রসারিত হয়ে জরায়ু মুখে আটকে যায়। ইকো ফ্রেন্ডলি হওয়ায় অন্যান্য সব পদ্ধতি থেকে এটি বেশি স্বাস্থ্যকর। ফ্লোর ওপর ভিত্তি করে এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্তও ব্যবহার করা যায়। তবে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর বের করে পরিষ্কার করা শ্রেয়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন মেন্সট্রুয়াল কাপ
* প্রথমেই আপনার হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। কাপের খোলা অংশটি ওপরে রেখে নিচের অংশ শক্ত করে ধরে যোনিপথে ঢোকাতে হবে।
* কাপটি সি শেপে ফোল্ড করে ভাঁজ করে নিতে পারেন। নানা ধরনের শেপে ভাজ করা যায় যেমন—সি ফোল্ড, পাঞ্চ ডাউন, সেভেন ফোল্ড, ট্রায়াঙ্গেল, ডায়মন্ড শেপ ইত্যাদি। ভেতরে ঢোকানোর পর কাপটি ছাতার মতো খুলে যাবে। তারপর সেটিকে ঘুরিয়ে মুখ আটকে দিতে হবে, যাতে রক্ত বাইরে বেরিয়ে না আসে। এভাবে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লিকেজের টেনশন ছাড়া এবং চেঞ্জ করা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে। ৮ ঘণ্টা পরে টান দিয়ে খুলে রক্ত পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ ছাড়া ইউটিউবে নানা ধরনের ভিডিও পেয়ে যাবেন।
* গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। আপনার বয়স, ফ্লোর পরিমাণ, কাপের ধারণক্ষমতা ছাড়াও সন্তান ধারণ করেছেন কি না এর ওপরও নির্ভর করে আপনার কাপের সাইজ। সন্তান জন্মের পর ভ্যাজাইনার পেশি শিথিল হয়ে যায়। তখন বড় সাইজের কাপ ব্যবহার করতে হয়। আবার কিশোরী বয়সে সেই মাপটা ছোট হয়। তা ছাড়া আপনার যদি ফাইব্রোয়েডস বা জরায়ুতে ইনফেকশন থাকে, তাহলে এটি না ব্যবহার করাই শ্রেয়।
* প্রতিবার পিরিয়ড শেষে কাপটি গরম পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর মুছে শুকনো জায়গায় রাখুন। পরে এটিকে পরিষ্কার হাতে ধরুন। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে একটি কাপ ৮-১০ বছর ব্যবহারের উপযোগী হবে।
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
পশ্চিমা দেশের নারীদের কাছে বর্তমানে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার সব থেকে নিরাপদ ও আরামদায়ক। একবার কিনে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। মাসিকের যন্ত্রণা থেকে অনেকখানি মুক্তি দেয়।
তুলনামূলকভাবে কম ঝামেলাহীন ও পরিবেশের ক্ষতি হয় না।
এমা কক্সের মেন্সট্রুয়াল কাপের কোম্পানি কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেননা নিম্নবিত্ত বা হোমলেস নারীরা এই কাপ নিয়ে বেশ কিছু ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনজনকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। কারণ, এই কাপ ব্যবহারে প্রয়োজন সঠিক স্যানিটেশন। বেশির ভাগ সময়ই ভালো জিনিসের মন্দ দিকগুলো আমরা গোপন রাখি কিংবা বলতে চাই না। তবে ভালো জিনিস বলেই যে তার খারাপ দিক থাকবে না, এমনটা নয়। মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারেও আপনার বেশ কিছু অসুবিধা হতে পারে।
এই কাপ ব্যবহারে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। কাপ ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে খুলে তা পরিষ্কার করতে হয়; যা ঘরের বাইরে থাকলে করা খুবই কষ্টসাধ্য। সব সময় ব্যবহারের পর ফুটন্ত পানিতে ফুটিয়ে তুলে রাখতে হবে। পরিষ্কার হাতে এই কাপ ধরতে হয়। তাই হুটহাট চাইলেই কাপ খুলে পরিষ্কার করা যায় না। হাত ভালো করে ধুয়ে কাপ ধরতে হয়।
মেন্সট্রুয়াল কাপ সম্পর্কিত কিছু কুসংস্কার
অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে যে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে হাইমেন পর্দা ছিঁড়ে যায়, ফলে ভার্জিনিটি নষ্ট হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, কাপটি যোনিপথের সামনের দিকেই থাকে, হাইমেন পর্দার কাছেও যায় না। তাই ছেঁড়ার প্রশ্নই ওঠে না। অনেকে ভাবেন যে ব্যথা পাবেন, এটিও ঠিক নয়।
এটিকে একটু ব্যয়বহুল মনে হলেও হিসাব মেলালে দেখা যাবে এটি একটি লাইফ টাইম
ইনভেস্টমেন্ট। কারণ, একটি কাপ সঠিকভাবে ব্যবহারে ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত
ব্যবহার উপযোগী; যা আপনার মাসে মাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার টাকার
তুলনায় খুবই নগণ্য।
সংগৃহীত: প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment