১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান নামে খ্যাত জেলখানায় ঢুকে একদল সন্ত্রাসী সেদিন বাংলাদেশের ক্ষণজন্মা ৪ মহান পুরুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ইতিহাস কলঙ্কিত এমন বিরল ঘটনা পৃথিবীর আর কোন দেশে ঘটেনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ১৯৭৫ সালের এদিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোর রাতে রিসালদার মোসলেমের নেতৃত্বে ঘাতকরা জেল খানায় প্রবেশ করে। কারারক্ষীরা প্রথমে তাদেরকে অস্ত্র নিয়ে জেলখানায় ঢুকতে বাধা দিলে মোশতাক তখন তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিআইজি (প্রিজন)কে ফোনে বলেন, ওদের কাজে বাধা না দিয়ে ওরা যা করতে চায় তা করতে দিন।
ঘাতকরা জেলখানায় ঢুকেই চার নেতাকে টার্গেট করে ব্রাশফায়ার করতে থাকে। তাদের একটানা ব্রাশফায়ারে একমাত্র তাজউদ্দিন ছাড়া বাকি তিন জন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এসময় তাজউদ্দিন পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকেন। ঘাতকরা তাজউদ্দিনের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ফিরে এসে পানির পরিবর্তে তাকে ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। যা আজও জাতিকে ব্যাথিত করে।
ঐদিন মোশতাকের আরেকটি ঘাতক দল কুর্মিটোলা কারাগারে হত্যাকান্ড চালাতে গিয়েছিল। কিন্তু কারারক্ষীদের বাধার মুখে তারা ভিতরে ঢুকতে পারেনি। মোশতাক তার পরাজয় নিশ্চিত জেনে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। পরে খালেদ মোশাররফের সাথে চুক্তি অনুসারে ঘাতক চক্র ওইদিন রাতে দেশ থেকে পালিয়ে যায়।
জাতীয় চার নেতাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তখনই লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জেল হত্যা মামলার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করে। দীর্ঘ ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচার কাজ চলার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর ৫ জনকে খালাস দেয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদন্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়।
0 comments:
Post a Comment