১১ নভেম্বর সোমবার ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারায় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্য মো. সিরাজুম মুনীর জাহাঙ্গীর, বশিরুল ইসলাম মাস্টার, নিজাম উদ্দিন আজাদ, শহীদুল্লাহ সাউদ, আওলাদ হোসেন, দুদু মিয়া, আবদুল কাইয়ুম, আবদুল কাদের ও মোহাম্মদ শফিউল্লাহসহ নয়জন তরুণ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালী জাতির ইতিহাসে একটি ঐতিহ্যবাহী গৌরবোজ্জ্বল দিন। সেদিন দেশপ্রেম ও সাহসের রক্তিম আল্পনায় আত্মদানের এক অমর অধ্যায় রচিত হয়েছিল কুমিল্লার বেতিয়ারায়।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে আসা ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ৭৮জনের একটি বীর গেরিলা যোদ্ধার দল আগরতলা হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
ওই দলটির ট্রেনিংক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন, তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ও বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য মঞ্জুরুল আহসান খান। ১০নভেম্বর রাতে দুই নং সেক্টরের অধীনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের বেতিয়ারা নামক স্থানে এসে জমায়েত হয়েছিলেন।
সেদিন যুদ্ধ চলাকালে সোর্স’র ভুল সিগন্যাল থাকায় শত্রুদের পাতা চতুর ফাঁদে পড়ে ৭৮জনের মধ্যে ৯জন শহীদ হয়েছিলেন, বাকি ৬৯জন সাহসী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন। সেই থেকে বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এই ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে প্রতি বছর ১১নভেম্বর ‘বেতিয়ারা শহীদ দিবস হিসাবে দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
১১ নভেম্বরের শহীদ গেরিলারা বেতিয়ারার ধান খেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলেন। ঘটনার সাত দিন পর স্থানীয় লোকজন ধান ক্ষেত থেকে শহীদদের গলিত লাশ উদ্ধার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি গর্ত খুড়ে মাটি চাঁপা দিয়ে রেখেছিলেন। ২৮ নভেম্বর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত চৌদ্দগ্রামের এ জগন্নাথদীঘি অঞ্চল শত্রুমুক্ত হওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হোসেন জিবুর উদ্যোগে ডাঃ সবুর চৌধুরী, মাষ্টার মুজিবুর রহমান, মাষ্টার আলী আকবর, মো. ফরাজী, আব্দুল মালেক, মতি মিয়া ও আতা খানের সার্বিক সহযোগীতায়, চাঁদা তুলে এবং ইসলামী শরিয়ামতে মাওলানা আবেদ আলী সাহেবের মাধ্যমে নামাজে জানাযা শেষে পুনরায় মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে দ্বিতীয়বার দাফন করা হয়। শহীদদের গণকবরের ওপর স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করে পাশেই নির্মাণ করা হয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।
১৯৭২ সালে ওই গণকবরের পাশে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘বেতিয়ারা’ শহীদ দিবস পালন করেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি প্রয়াত কমরেড মনিসিংহ। যার ধারাবাহিকতায় ‘বেতিয়ারা শহীদ দিবস পালন আজও অব্যাত রয়েছে ।
তবে বেতিয়ারার শহীদদের গণকবরের পাশে যে বেদীটি নির্মান করা হয়েছিল তা রক্ষার বিষয়টি ‘ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক সংস্কারের মূখে অনিশ্চয়তার বেড়া জালে আটকে আছে। সরকারের উদ্যোগে জমি অধিগ্রহন পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে বেতিয়ারার শহীদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ নির্মানে উদ্যোগ নেয়া এখন সকলের দাবী।
কিন্তু শহীদদের জন্য নিষ্কন্টক পরিবেশে স্মৃতিসৌধ নির্মান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
0 comments:
Post a Comment