ব্রিটিশ আমলে বর্তমান ঢাকার (জাহাঙ্গীর নগর) মোকিমাবাদ পরগনার জমিদার ছিলেন হাজী মুন্সি লাল মিয়া সাহেব। তিনি ঢাকার মিরপুরের মাজার রোড এলাকাতে বসবাস করতেন। তিনি একজন সমাজ সেবক, ধার্মিক ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন।
১৯১৭ সালে তিনি মাজার রোডে দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম-সাময়িক সময়েই তিনি এখানে একটি হাট বসিয়েছিলেন। তখন সপ্তাহে একদিন হাট বসতো এবং এই এলাকা সহ আশ-পাশের এলাকার লোকজন পায়ে হেঁটে, নৌকায় চড়ে এই হাটে এসে বেচাকেনা করতো। তখন এই হাটটি ছিল তুরাগ নদীর পাড়ে বর্তমান মাজার রোডে অবস্থিত। তৎকালীন সময়েও তুরাগ নদী ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীকে কেন্দ্র করে নদীর পাড় ধরে একটু উঁচু এলাকাতে মানুষের বসবাস বেশি ছিল। আর তুরাগ নদীর পাড়ে এই হাটটি অবস্থিত হওয়ার কারণে দিন দিন এটি বেশ জম-জমাট হয়ে উঠতে শুরু করে। সে সময়ে এখানে জমিদারের একটি বাগান ছিল, আর এই বাগানে বিশাল-বিশাল আকারের আম,কাঁঠাল ও গাবগাছ ছিল। বিশেষ করে, হাটের ভেতরে ও হাটের পাশে বিশাল আকারের বিপুল সংখ্যক গাবগাছ থাকার কারণে এটি গাবতলীর হাট নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৩১ সালে জমিদার মুন্সি লাল মিয়া মাজার রোডে এখানকার মোট ৩১ একর জমি ওয়াকফ করে দিয়ে যান। এই ওয়াকফ এস্টেটের মধ্যে গাবতলীহাট, দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয়,তিনটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাইমারি স্কুল (মুন্সি লাল মিয়া প্রাইমারি স্কুল), একটি ঈদগাহ মাঠ, একটি বড় কবর স্থান (সাধারন মানুষের জন্য) এবং একটি পারিবারিক কবর স্থান প্রতিষ্ঠা করে যান।
কালের পরিক্রমায় এই হাটটি দিন দিন আরো বেশি পরিচিতি লাভ করতে থাকে। এমনকি গাবতলী গরুর হাট হিসেবে এর পরিচিতি আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। তুরাগ নদীর পাড়ে এ হাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় গরু/মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ী চলার প্রচলন ছিল।
এখানে নৌকা ঘাট ছিল এবং পরবর্তী সময়ে এখানে বাস স্টেশন তৈরি হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ রুটের এই সড়ক নির্মিত হয়েছিল। গাবতলী হাটকে কেন্দ্র করে তখন এখানে (মাজার রোডে) একটি বাস স্টেশন/টার্মিনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর ১৯৫৪ সালে এটি গাবতলী হাট এর পাশাপাশি গাবতলী বাস স্টেশন হিসেবেও পরিচিতি পায়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন টেন্ডারের মাধ্যমে গাবতলী পশুর হাটকে
বাৎসরিক ইজারা দিয়ে থাকে। এই পশুর হাট থেকে প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব খাতে কোটি টাকা জমা হয়। রাত দিন ২৪ ঘন্টা এই হাটে গবাদি পশু বেচাকেনা হয়ে থাকে।
একটি সাধারন দিনে গড়ে ২০০০-৩০০০ গবাদি পশু এই হাটে বেচাকেনা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হাটে গবাদি পশুকে বেচাকেনার
জন্য আনা হয়। এই হাট থেকে একজন ক্রেতা কোন পশু ক্রয় করলে তাকে ক্রয় মূল্যের
উপর প্রতি হাজারে ৩৫ টাকা হারে হাসিল দিতে হয়।
গাবতলীর ইতিহাস: মুহাম্মাদ আখতারুজজ্জামান ও মুহম্মদ হেদায়েত হুসাইন
0 comments:
Post a Comment