পানিচক্র (Water cycle) হলো প্রাকৃতিক প্রভাবে ক্রমাগত রূপান্তরের মাধ্যমে পানির চক্রাকারে সঞ্চারণশীলতা। এই চক্রকে জলচক্র, হাইড্রোলজিক্যালচক্র বা H2O চক্রও বলে।
পানিচক্র সংঘটিত করে সৌরশক্তি। সূর্যের তাপে পুকুর, খাল-বিল, নদী ও সমুদ্রের পানি গরম হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এটি পানিচক্রের প্রথম ধাপ। এই জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে ঠাণ্ডা হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণায় পরিণত হয়। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণা যখন নানা রকম গ্যাস আর ধুলাবালির সংমিশ্রণে আসে, তখন মেঘের সৃষ্টি হয়। আকাশে মেঘ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে বলে ঘনীভবন। এটি পানিচক্রের দ্বিতীয় ধাপ। এই মেঘ যখন পরিমাণে অনেক ভারী হয়ে যায়, তখন মেঘে মেঘে ঘর্ষণে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। মেঘের পানিকণাগুলো একত্র হয়ে আকারে বড় হয়ে বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে। এই কণাগুলো খুব বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তা বরফে পরিণত হয় এবং শিলাবৃষ্টি হিসেবে পৃথিবীতে নেমে আসে। মেঘ থেকে এভাবে পানি আবার বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি, তুষার বৃষ্টি এরূপ বিভিন্নভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে বলে অধঃক্ষেপণ। এটি পানিচক্রের তৃতীয় ধাপ। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গড়িয়ে নদীর পানির সঙ্গে মেশে। নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে সাগরের পানির সঙ্গে মেশে। আর মাটিতে যে পানিকণাগুলো পড়ে, সেগুলো মাটি চুয়ে চুয়ে একেবারে মাটির অনেক গভীরে যেখানে পানি থাকে, সেখানে গিয়ে জমা হয়। পৃথিবীতে পানি তার এক উৎস থেকে অন্য উৎসে এভাবে চক্রাকারে ঘোরে। এভাবেই পানিচক্র বিষয়টি সম্পন্ন হয়। পানিচক্রের জন্য পৃথিবীতে পানির সামঞ্জস্য ঠিক থাকে।
পানিচক্রের সঙ্গে শক্তি বিনিময় জড়িত, যা তাপমাত্রা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। পানি তার চারপাশের পরিবেশকে শীতল করে নিজে বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে ওড়ে যায়। একইভাবে জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বাড়লে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে বাষ্পীভূত হওয়া পানির ৮৬ শতাংশই সমুদ্রের, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা শীতল রাখতে অবদান রাখে।
0 comments:
Post a Comment