Thursday, August 15, 2019

বাংলাদেশে ইসলামের আগমন

0 comments
বাংলাদেশে ইসলামের সূচনার সময় নির্ধারণ করতে গিয়ে ইতিহাসবিদরা বিভিন্ন মত ব্যক্ত করে থাকেন। অনেকের মতে ১২০৩/১২০৪ খ্রিস্টাব্দে উপমহাদেশ দাপিয়ে বেড়ানো আফগানিস্তানের প্রতাপশালী মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজির শাসনকাল থেকে বাংলাদেশে ইসলামের সূচনা হয়। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন প্রত্মতাত্মিক নিদর্শন আমাদের নতুন করে ভাবাতে আরম্ভ করেছে। বহুসংখ্যক আলামতের ভিত্তিতে এ কথা প্রমাণিত হয়, সাহাবাদের সময় থেকেই আমাদের বাংলাদেশে ইসলামের আগমন শুরু হয়। আরবের দায়িরা দ্বীনের দাওয়াতের স্বার্থে ব্যবসার কাফেলা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তারা ছড়িয়ে পড়েছেন। সেই সময় থেকেই বাংলাদেশে ইসলামের সূচনা হয়।

‘জাতীয় অধ্যাপক’ দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফের মতে, হজরত ওমর রা. এর শাসনামলে মামুন, মুহাইমেন রা. নামক সাহাবিদ্বয় বাংলাদেশে আগমন করেন। বিশিষ্ট সাহাবি আবু ওয়াক্কাস রা. ৩য় হি. (৬২৬ খ্রি.) ইসলাম প্রচারের জন্য চীন যাওয়ার পথে কিছুকাল রংপুর এলাকায় অবস্থান করে ইসলাম প্রচার করেন, বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিষয়টির পক্ষে জোড়ালো প্রমাণ উপস্থান করা যায়। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম রংপুরের ৪৮ কিমি দূরে লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বড়বাড়িতে রামদাস মৌজার মসতার পাড় নামক স্থানে এক অভূতপূর্ব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা ৬৯ হিজরিতে (আনুমানিক ৬৯২ খ্রি.) নির্মিত একটি মসজিদ। এই মসতার পাড় স্থানটি বহুকাল ধরে ৭/৮টি উঁচু মাটির টিলা ও জঙ্গল দ্বারা আবৃত ছিল। যার স্থানীয় নাম ‘মজদের আড়া’। স্থানীয় ভাষায় ‘আড়া’ অর্থ জঙ্গলময় স্থান। এতোদিন কেউ হিংস্র জীবজন্তু, সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করার সাহস পেত না। ১৯৮৭ সালে জমির মালিক তা আবাদযোগ্য করার চিন্তা করে জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে প্রাচীনকালের তৈরি ইট, যাতে আঁকা ছিল ফুল। আর মাটি ও ইট সরাতে সরাতে আশ্চর্যজনকভাবে পূর্ণ একটি মসজিদের ভিত খুঁজে পাওয়া গেল।

এর মধ্যে ৬' ৬'' ২'' সাইজের একটি শিলালিপি পাওয়া যায়, যার মধ্যে স্পষ্টাক্ষারে আরবিতে লেখা আছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরি ৬৯ সাল। খননকাজে বিস্ময় বাড়তে থাকে। আরও খননের পর মসজিদের মেহরাব এবং মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ ও ইমাম সাহেব যে স্থানে খুৎবা পাঠ করতেন, তাও আবিষ্কৃত হয়। তখন থেকেই এলাকার লোকজন এ স্থানে টিন দিয়ে একটি সাধারণ ছোটোখাট মসজিদ তৈরি করে নামাজ পড়ে থাকেন। তারা মসজিদটির নাম দিয়েছেন ‘হারানো মসজিদ’। তাই এটা বলা যেতে পারে, আরব থেকে আগত মুসলমানÑ যারা ৬৯ হিজরিতে এ এলাকায় বসবাস করেছিলেন এবং নিজেদের ধর্মীয় প্রয়োজনে মসজিদও তৈরি করে ছিলেন। সেই থেকেই বাংলাদেশে ইসলামের প্রচারের কাজ আরম্ভ হয়।

এদিকে অষ্টম হিজরিতে ক্যান্টন থেকে চীনের রাজা তাইশাং হজরত আবু কাবশার রা. মারফত ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়ও সাহাবায়ে কেরাম ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন। গুজরাটের রাজা ভোজের কাছে সাহাবায়ে কেরাম এসেছিলেন। ক্যারালার রাজা চেরুমল-পেরুমলও সাহাবাদের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, একথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। কাজেই সেদিক থেকে বিচার করলে ৬৯ হিজরিতে বাংলাদেশে ইসলামের প্রসার শুরু হওয়া বিচিত্র ঘটনা নয়।

এই নিদর্শন পাওয়ার পূর্বে ধারণা করা হতো, শুধুমাত্র বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলেই প্রাচীনকালে আরবদের আগমন ঘটেছিল এবং তা খুব বেশি অতীত হলে খ্রিস্টিয় অষ্টম বা নবম শতকে। কিন্তু লালমনিরহাটে আবিষ্কৃত ৬৯ হিজরির (আনুমানিক ৬৯২ খ্রি.) ‘হারানো মসজিদ’ তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ নিয়ে সে ধারণাকে নতুনভাবে বিশ্লেষণের দাবি জানাচ্ছে।

বিচ্ছিন্নভাবে ৬৯ হিজরির আগেও বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ৬১৭ খ্রি. ১৪ রজব বৃহস্পতিবার প্রিয়নবী সা. আঙুলের ইশারায় চাঁদ দু’ভাগ হতে দেখে ‘রাজাভোজ’ মুসলমান হয়ে আবদুল্লাহ নাম ধারণ করেন এবং তিনিই ভারতীয় সর্বপ্রথম মুসলমান। এতে বোঝা যায় প্রিয়নবী সা. জীবদ্দশায় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। অন্যদিকে বিবি খাদিজার রা. বাণিজ্যিক জাহাজ চট্টগ্রামে নোঙর ফেলেছিল এবং দক্ষিণ আরবের ‘সাবা’ জাতি ঢাকার অদূরে বসতি গড়লে তার নাম হয়ে যায় সাভার। ঠিক তখন থেকেই বাংলাদেশে আরবদের আগমন শুরু হয় এবং তাদের মাধ্যমেই ইসলামের সূচনা হয়। তবে তখন ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার হয়নি। পরবর্তীতে ১২০৩-০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের পর থেকেই ব্যাপকভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসার আরম্ভ হয়। 
তথ্যসূত্র: ,

ছবিসূত্র:

0 comments:

Post a Comment