পপি মাদকের অন্যতম প্রাকৃতিক উপাদান সচরাচর অনেকেই একটা ভুল ধারনা নেই যে সব পপি ফুল থেকেই মাদক দ্রব্য তৈরী হয়। আসলে তা নয়। এই পপি ফুলেরই আবার অনেক নিরীহ প্রজাতি রয়েছে আমাদের বাগানে শোভা পায়। জীবন বিনাশী এই গাছ আমাদের কাছে বর্জনীয় হোক।
এই পপি থেক আফিম বা অপিয়াম তৈরী হয়। যা মরফিন ডেরেভেটিভ।
বৈজ্ঞানিক নামঃ Papaver somniferum যা Papaveraceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ আফিম/ Opium poppy নামে সবার কাছে পরিচিত।
ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে চারা ........
ফুল এবং ফল আস্তে আস্তে পরিপক্ক হচ্ছে
পরিপক্ক ফলের মধ্যে ব্লেডের আচর ব্যাস ৪-৫ ঘন্টা অপেক্ষা বেরিয়ে আসে Raw Opium চাষী তা সংগ্রহ করে।
এর পর বিভিন্ন রাসয়নিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য ডেরেভেটিভ বানানো হয়।
বুঁদ হয়ে যাওয়া আফিমের নেশায়।
এর আরেক খালাতো ভাই হলো হিরোইন হিরোইন- সাধারনত সাদা দানাদার (স্ফোটিক)পদার্থ, অবস্থাভেদে সাদা পাউডারের মতও হয়ে থাকে। হিরোইন সম্পর্কে বলতে গেলে সবার আগে
যে বিষয়টা বলা দরকার তা হল “মরফিন” ও “কোডেইন”। হিরোইনের সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয় হল মরফিন।
সাধারনত হিরোইন ব্যাথার ও রিক্রেয়েশিনাল ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হিরোইন সাধারনত ডাইএসিটাইল মরফিন হিসাবে রাসায়নিক ভাবে পরিচিত। আর সেকারনেই হিরোইনের যাবতীয় রসায়ন মরফিনের ভিতরেই।
হিরোইনের ইতিহাস অনেক পুরাতন। ওপিয়াম পপি খৃষ্টপূর্ব ৩৪০০ তে মেসোপটেমিয়াতে চাষ শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। ঊনিশ শতকে ওপিয়াম থেকে মরফিন ও কোডেইনের রসায়ন সম্পর্কে মানুষ জানতে শুরু করে।
১৮৭৪ সালে বৃটিশ ডাক্তার এলডার রাইট সেন্ট ম্যারি হাসপাতালে মরফিনের সাথে এসিটিক এনহাইড্রাইড গরম করতে গিয়ে প্রথম হিরোইন আবিষ্কার করেন। সাথে আরও দেখাতে সক্ষম হন যে মরফিনের থেকে হিরোইনের কার্যক্ষমতা অনেক বেশী। রাইটের আবিষ্কার এরপরে প্রায় ২৩ বছর ঐ টুকুর ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরপরে জার্মান রসায়নবিদ হফম্যান ল্যাবরেটরীতে স্বতন্ত্রভাবে হিরোইন প্রস্তুত করেন। মূলত জার্মান রসায়নবিদের আবিষ্কারের পর থেকেই হিরোইন নামটি পরিচিতি পেতে শুরু করে। জার্মান শব্দ heroisch (heroic) থেকে হিরোইন নামের উৎপত্তি। হফম্যান গবেষনায় আরও দেখান যে হিরোইন মরফিনের থেকে ২-২.৫ গুন বেশি শক্তিশালী।
ওপিয়ামের অন্যতম উপাদান হল মরফিন। দেখতে ছবির মত। মরফিন সরাসরি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিসটেমে (CNS) কাজ করে তাই ব্যাথা কমাতে এর জুড়ি নাই।
১৮০৪ সালে জার্মান রসায়নবিদ ফ্রেডরিক এডাম জার্মানির পিডারবর্নে প্রথম মরফিন আলাদা করেন। আলাদা করার পরে তিনি এর নাম দেন Morpheus (মানে the Greek god of dreams) তারপরে morphium। ১৯৫২ সালে ইউনিভারসিটি অব রচষ্টারের প্রফেসর মার্শাল প্রথম ল্যাবরেটরীতে মরফিন তৈরি করেন। মরফিন এখনও চেতনানাশক হিসাবে হসপিটালে ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
Morphine
Heroine
ছবিতে ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখবেন মরফিনের আর হিরোইনের মধ্যে সামন্য (কালো অংশ = এসিটাইল গ্রুপ) একটু পার্থক্য। এই সামন্য অংশের জন্যই মরফিনের থেকে হিরোইন বেশি শক্তিশালী। এই এসিটাইল অংশটিই হিরোইনকে লিপিডে খুব দ্রুত দ্রবীভুত হতে সাহায্য করে ফলে হিরোইন খুব দ্রুত ব্লাড ব্রেইন বেরিয়ার ক্রস করে এবং দ্রুত ব্রেইনে ঢুকে পরে। আর ব্রেইনে ঢুকামাত্রই হিরোইন ভেঙ্গে মরফিন হয়ে যায়, এবং মরফিনের যাদুকরী কর্মদক্ষতা প্রদর্শন শুরু করে। বিষয়টা অনেকটা ঝাল আর দুধের মত। অনেকই হয়ত জানেন ঝাল লাগলে মানুষ দুধ পান করে কারন দুধে, মরিচের যে উপকরনটি ঝালের জন্য দায়ী তা খুব দ্রুতই দ্রবীভুত হয়. যা পানিতে দ্রবীভুত হয় না। ফলে ঝাল মুখের ঝাল কমাতে দুধ সব চাইতে বেশি কার্যকর।
ছবিতে মাঝে নাইট্রোজেনের সাথে যে মিথাইল গ্রুপ আছে তা যদি একটা ফিনাইল গ্রুপ দিয়ে পতিস্থাপিত করা হয় তাহলে যে যৌগ হয় তা মরফিনের থেকে ১৮ গুন বেশি শক্তিশালী।
মরফিনকে আর একটু পরিবর্তন করলে যে যৌগ পাওয়া যায় তা মরফিনের থেকে প্রায় ১০,০০০ গুন বেশি শক্তিশালী। এই ভয়ংকর শক্তিশালী রাসায়নিক যৌগের নাম “ইটোরফিন”।
ইটোরফিনের মানুষের চামড়ার উপরে একফোটা পরলেই মানুষ মারা যায় কয়েক মিনিটের মধ্যে। খুবই সামন্য পরিমানে ব্যবহৃত হয় হাতি বা অন্যান্য বড় প্রাণীকে আয়ত্তে আনার জন্য।
মরফিন থেকে খুব সামন্য পরিবর্তন করে হিরোইন, ইটোরফিন বানানো যায় আর এইকাজে এসিটাইল এনহাইড্রাইড, এসিটাইল ক্লোরাইড ব্যবহৃত হয় বলে আজকাল আর এই সহজলোভ্য জিনিষগুলো বাজারে আর কিনতে পাওয়া যায় না।
writer: পাঙ্খা
0 comments:
Post a Comment