Thursday, November 19, 2009

উলি নেকড স্টর্ক পাখি কি বাংলায় ফিরেছে!

0 comments
বাংলাদেশে স্টর্ক গোত্রের পাখি মদনটাক। এ পাখি সুন্দরবনসহ দেশের বড় নদীগুলোর চড়ায় সীমিত সংখ্যায় দেখা যায়। স্টর্ক গোত্রের আরেক সদস্য এশিয়ান ওপেন বিল বা শামুকখোল পাখি। মাঝেমধ্যে শীতকালে এদের বাংলাদেশের বিলঝিলে দেখা যায়। কখনো কখনো দেখা যায় পেইন্টেড স্টর্কও। ব্যস, এই হলো বাংলাদেশে স্টর্ক গোত্রের পাখির হাল অবস্থা।
তবে বাংলাদেশের মতো বিলঝিলের দেশে এমন হওয়ার কথা নয়। যেমন—ব্ল্যাক নেকড স্টর্ক, হাড়গিলা বা অ্যাডজুট্যান্ট স্টর্ক, হোয়াইট স্টর্ক, উলি নেকড স্টর্ক একসময় এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিল। এখন এদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্টর্ক সাধারণত অত্যন্ত বড় ও ভারী পাখি। প্রজাতিভেদে এক একটি পাখির ওজন চার থেকে সাত কেজি। বক বা সারসের তুলনায় এই পাখিগুলো অনেকটা নীরব-শান্ত। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি উঁচু গাছে। অনেক সময় বক, পানকৌড়ির মিশ্র দলে বাসা বাঁধে।
স্টর্ক-জাতীয় পাখি মাছ, গেঁড়ি গুগলী, ব্যাঙ, ইঁদুর, সাপসহ যা কিছু ঠোঁটের আওতায় আনতে পারে, সবই খেয়ে থাকে। শামুকখোল অনেক সময় চষা জমিতে শামুক খুঁজে বেড়ায়। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে ব্যাপক হারে গাছ কাটা হলে এই পাখিদের বাসা বানানোর জায়গার সংকট দেখা দেয়। সেই সঙ্গে জলাভূমি ভরাট করে কৃষিজমি বা আবাসন গড়ে তোলায় এদের খাদ্যসংকটও চরম আকার ধারণ করে। ফলে এই পাখিগুলো বাংলা ছেড়ে আশপাশের দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
চল্লিশের দশকেই হাড়গিলা বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। এদের মধ্যে সবার আগে বাংলা ছেড়েছে হোয়াইট নেকড স্টর্ক, যার বর্তমান নাম উলি নেকড স্টর্ক। এ পাখিটি বাংলাদেশে শেষ দেখা গেছে ১৮৮৮ সালে। পাখিটি দাঁড়ালে ১০৬ সেন্টিমিটার উঁচু। সাধারণত ঘাসওয়ালা বিলঝিলে চরতে পছন্দ করে। তবে জঙ্গলের ধারের জলাভূমিই বেশি পছন্দের। পাখিটির পাখা দুটো কালচে, শরীরও নীলাভ কালচে। লেজ সাদা-কালোয় মেশানো, গলার রং সাদা, মাথা কালো। পা লালচে, ঠোঁট লালচে কালো। গলার পালকগুলো দেখলে মনে হয় উল দিয়ে বোনা। তাই এর নতুন নামকরণ উলি নেকড স্টর্ক।
সুখের খবর হলো—প্রায় ১২১ বছর পর সম্প্রতি একটি উলি নেকড স্টর্ক পাখিকে বাংলার আকাশে উড়তে দেখলেন একদল পাখিবিদ। পাখিবিদদের দলে ছিলেন ড. রোনাল্ড হালদার, ড. মনিরুল খান, সিরাজুল হোসেন, ড. হেলমুট, গারট্রুড, মার্টিন উইলিয়াম, সায়েম চৌধুরী, জমিরুদ্দিন ফয়সাল। সুন্দরবনের কটকায় ঘটেছিল ওই বিরল দর্শন।
তবে এ পাখি দেখাটা যেমন আশার, তেমনি নিরাশারও। কারণ বিক্ষিপ্ত দু-একটি পাখি প্রমাণ করে না যে এরা আবার এ দেশে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে। তবে আগ্রহীরা হতাশ হবেন না। যাঁদের এখনো এই পাখি দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তাঁরা কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে যেতে পারেন। সেখানে দু-তিনটি উলি নেকড স্টর্ক আছে দর্শনার্থীদের জন্য।

0 comments:

Post a Comment