অটিজম হলো শারীরিক অথবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মতো জৈবিক সমস্যা বা ইমোশনাল বেস্ট ডিজঅর্ডার। এটা একটা স্নায়ুবিক সমস্যা, যেখানে সামাজিক কথা আদানপ্রদান, আচরণ এবং বুদ্ধি সম্পর্কিত সমস্যা থাকে। অনেক সময় তারা দেখা, শোনা এবং শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়াতে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। অটিজম ব্যক্তির সেনসরি রেজিস্ট্রেশন, মডুলেশন এবং ইনটিগ্রেশন-এ সমস্যা থাকে এবং অনেক ব্যক্তিগত পরীক্ষায় পাওয়া গেছে যে, অটিজম শিশুর সেরিবেলাম এবং লিমবিক অঞ্চলে বুদ্ধিগত সমস্যা থাকে।
অটিজমের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কিছু কারণ চিহ্নিত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জৈবিক এবং জিনগত কারণ, ক্রোমজমাল কারণ, অস্বাভাবিকগত ব্রেনের গঠন, রক্তের সম্পর্ক, গর্ভবতী মা বিভিন্ন কারণে বিষণœতায় বা উদ্বিগ্ন থাকলে, জন্মের পর শিশু বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ, পরিবেশ ও অনুভূতি না পেলে, কিছু টিকাদান ইত্যাদি।
অটিজম এমন একটি কন্ডিশন যা কখনো ভালো হবার নয়। এটাকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হয়। বাচ্চা কতটুকু ভালো হবে তা নির্ভর করে বাচ্চার সমস্যার ওপর। সমস্যা কম হলে উন্নতি বেশি হবে। বাংলাদেশে প্রতি ৫০০ জনে একজন অটিস্টিক শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে ২.৫ লাখ শিশু অটিস্টিক। ইন্ডিয়াতেও ৫০০ জনে একজন, আমেরিকায় প্রতি ১০,০০০ জন শিশুর মধ্যে ৪.৫ জন শিশু অটিস্টিক। অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে ১৯৯০-২০০০ সালের মধ্যে। ছেলেরা বেশি ঝুঁকি সম্পন্ন মেয়েদের তুলনায়। এর অনুপাত ৪:৩:১। বয়স্ক পিতা অটিজম হওয়ার জন্য বেশি দায়ী বয়স্ক মায়ের তুলনায়। কারণ বেশি বয়স্ক স্পার্ম দিয়ে মিউটেশন কঠিন হয়। অটিজম সাধারণত সকল জাতি, বর্ণ, গোত্র ও দেশে দেখা যায়।
অটিজমকে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি:
জন্মের আগে গর্ভবতী মায়েদের অটিজম বিষয়ে একটি ধারণা থাকা প্রয়োজন। একজন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া প্রয়োজন যে, বাচ্চা ধারণ করার সকল সামর্থ্য (শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক) তার আছে। গর্ভাবস্থায় পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত উদ্দীপনামূলক নাটক এবং অন্যান্য টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখা উচিত। গর্ভাবস্থায় কোনো অবস্থাতেই বিষণœ বা উদ্বিগ্ন হওয়া বা প্রচণ্ড ভয় পাওয়া এবং রাগ করা যাবে না। বেশি পরিশ্রম করা যাবে না। অধিক দূরত্ব এবং ঝাঁকুনি সম্পন্ন রাস্তা পরিভ্রমণ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল টিকা সময়মতো নিতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। গাড়ির ও কলকারখানা কালো ধোঁয়া এবং রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে। বাচ্চা প্রসবের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা (প্রশিক্ষিত দাই, অ্যাম্বুলেন্স, অর্থ, জায়গা) আগে থেকেই করে রাখতে হবে। বাচ্চা প্রসবের সময় কোনো রকমের জটিলটা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জন্মের পর বাচ্চাকে অবশ্যই মায়ের শাল দুধ পান করাতে হবে। মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে না পাওয়া গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণমূলক খাদ্য দিতে হবে। বাচ্চা জন্মের পর থেকেই যেন প্রাতঃউদ্দীপনামূলক পরিবেশ পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণ কার্যকরি সময় দিতে হবে গল্প, খেলা বা বেড়ানোর মাধ্যমে। শুধু মায়ের বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গেই নয়, প্রতিবেশীর সঙ্গেও বাচ্চার একটি সুসম্পর্ক এবং যোগাযোগ থাকতে হবে। বাচ্চা জন্মের পরের সকল টিকা সময়মতো নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ভালো করে দেখে নিতে হবে। বাচ্চা যেন কোনো অবস্থাতেই মাথায় বা শরীরের কোনো জায়গায় কোনো রকমের আঘাত না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বছরে অন্তত একবার বাচ্চাকে তার স্বাস্থ্য এবং বিকাশগত পরীক্ষা করাতে হবে। জন্মের পর থেকেই বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণ খেলার উপকরণ ও খেলার সাথি দিতে হবে। বাসায় একটি করে খেলার কর্নার রাখতে হবে। তিন বছর বয়স থেকেই বাচ্চাকে প্রাক প্রাথমিক প্রোগ্রামের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাচ্চার যদি কোনোরকম অটিজম বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত বা সন্দেহ হয় তাহলে পিতামাতাকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার মহল, পিতামাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের অটিজম বিষয়ে একটি সমূহ ধারণা দিতে হবে, যাতে করে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাতে পারেন। একজন অটিজম শিশুরও রয়েছে সাধারণ শিশুর মতো অফুরন্ত সম্ভাবনা, যদি তাকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ দেয়া হয়। আমাদের সরকার এবং সুধিসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং সকলের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে পারি এক নতুন অধ্যায়। যেখানে অটিজম শিশুরা হাসবে খেলবে এবং উপভোগ করবে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশের পূর্ণ অধিকার। আমাদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যেখানে অটিজম শিশুর বিকাশের জন্য বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা হবে, প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং অটিজম বিষয়ক রিসার্স করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
অকুপেশনালথেরাপিস্ট, শিশু প্রতিবন্ধী চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ, শ্যামলী, ঢাকা
মো. জহির উদ্দিন আকন্দ
অটিজমের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কিছু কারণ চিহ্নিত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জৈবিক এবং জিনগত কারণ, ক্রোমজমাল কারণ, অস্বাভাবিকগত ব্রেনের গঠন, রক্তের সম্পর্ক, গর্ভবতী মা বিভিন্ন কারণে বিষণœতায় বা উদ্বিগ্ন থাকলে, জন্মের পর শিশু বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ, পরিবেশ ও অনুভূতি না পেলে, কিছু টিকাদান ইত্যাদি।
অটিজম এমন একটি কন্ডিশন যা কখনো ভালো হবার নয়। এটাকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হয়। বাচ্চা কতটুকু ভালো হবে তা নির্ভর করে বাচ্চার সমস্যার ওপর। সমস্যা কম হলে উন্নতি বেশি হবে। বাংলাদেশে প্রতি ৫০০ জনে একজন অটিস্টিক শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে ২.৫ লাখ শিশু অটিস্টিক। ইন্ডিয়াতেও ৫০০ জনে একজন, আমেরিকায় প্রতি ১০,০০০ জন শিশুর মধ্যে ৪.৫ জন শিশু অটিস্টিক। অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে ১৯৯০-২০০০ সালের মধ্যে। ছেলেরা বেশি ঝুঁকি সম্পন্ন মেয়েদের তুলনায়। এর অনুপাত ৪:৩:১। বয়স্ক পিতা অটিজম হওয়ার জন্য বেশি দায়ী বয়স্ক মায়ের তুলনায়। কারণ বেশি বয়স্ক স্পার্ম দিয়ে মিউটেশন কঠিন হয়। অটিজম সাধারণত সকল জাতি, বর্ণ, গোত্র ও দেশে দেখা যায়।
অটিজমকে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি:
জন্মের আগে গর্ভবতী মায়েদের অটিজম বিষয়ে একটি ধারণা থাকা প্রয়োজন। একজন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া প্রয়োজন যে, বাচ্চা ধারণ করার সকল সামর্থ্য (শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক) তার আছে। গর্ভাবস্থায় পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত উদ্দীপনামূলক নাটক এবং অন্যান্য টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখা উচিত। গর্ভাবস্থায় কোনো অবস্থাতেই বিষণœ বা উদ্বিগ্ন হওয়া বা প্রচণ্ড ভয় পাওয়া এবং রাগ করা যাবে না। বেশি পরিশ্রম করা যাবে না। অধিক দূরত্ব এবং ঝাঁকুনি সম্পন্ন রাস্তা পরিভ্রমণ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল টিকা সময়মতো নিতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। গাড়ির ও কলকারখানা কালো ধোঁয়া এবং রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে। বাচ্চা প্রসবের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা (প্রশিক্ষিত দাই, অ্যাম্বুলেন্স, অর্থ, জায়গা) আগে থেকেই করে রাখতে হবে। বাচ্চা প্রসবের সময় কোনো রকমের জটিলটা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জন্মের পর বাচ্চাকে অবশ্যই মায়ের শাল দুধ পান করাতে হবে। মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে না পাওয়া গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণমূলক খাদ্য দিতে হবে। বাচ্চা জন্মের পর থেকেই যেন প্রাতঃউদ্দীপনামূলক পরিবেশ পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণ কার্যকরি সময় দিতে হবে গল্প, খেলা বা বেড়ানোর মাধ্যমে। শুধু মায়ের বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গেই নয়, প্রতিবেশীর সঙ্গেও বাচ্চার একটি সুসম্পর্ক এবং যোগাযোগ থাকতে হবে। বাচ্চা জন্মের পরের সকল টিকা সময়মতো নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ভালো করে দেখে নিতে হবে। বাচ্চা যেন কোনো অবস্থাতেই মাথায় বা শরীরের কোনো জায়গায় কোনো রকমের আঘাত না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বছরে অন্তত একবার বাচ্চাকে তার স্বাস্থ্য এবং বিকাশগত পরীক্ষা করাতে হবে। জন্মের পর থেকেই বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণ খেলার উপকরণ ও খেলার সাথি দিতে হবে। বাসায় একটি করে খেলার কর্নার রাখতে হবে। তিন বছর বয়স থেকেই বাচ্চাকে প্রাক প্রাথমিক প্রোগ্রামের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাচ্চার যদি কোনোরকম অটিজম বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত বা সন্দেহ হয় তাহলে পিতামাতাকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার মহল, পিতামাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের অটিজম বিষয়ে একটি সমূহ ধারণা দিতে হবে, যাতে করে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাতে পারেন। একজন অটিজম শিশুরও রয়েছে সাধারণ শিশুর মতো অফুরন্ত সম্ভাবনা, যদি তাকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ দেয়া হয়। আমাদের সরকার এবং সুধিসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং সকলের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে পারি এক নতুন অধ্যায়। যেখানে অটিজম শিশুরা হাসবে খেলবে এবং উপভোগ করবে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশের পূর্ণ অধিকার। আমাদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যেখানে অটিজম শিশুর বিকাশের জন্য বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা হবে, প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং অটিজম বিষয়ক রিসার্স করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
অকুপেশনালথেরাপিস্ট, শিশু প্রতিবন্ধী চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ, শ্যামলী, ঢাকা
মো. জহির উদ্দিন আকন্দ