আটক রাজাকার-দালালেরা তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে সবাই খালাস হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট জিয়া কোনো নির্বাহী আদেশে আটক রাজাকার-দালালদের মুক্তি দেননি। লিখেছেনঃ আশেক আহমেদ
গত ২৫ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১০ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় ২২ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছিল, ১১ হাজারেরও বেশি আটক ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাদের ছেড়ে দেন। যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত অধ্যাদেশও তিনি বাতিল করেন।
শেখ হাসিনা ১১ হাজার রাজাকার দালালকে ছেড়ে দেয়ার জন্য জিয়ার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু ৯৩ হাজার পাক সেনাকে কে ছেড়ে দিয়েছিল, সে কথা তিনি বলতে মনে হয় শরম পেয়েছেন। তার পিতা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণকারী ৯৩ হাজার পাক সেনাকে ‘সসম্মানে’ বিনা শর্তে পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে ছিলেন! তার মরহুম পিতার এই ঐতিহাসিক ‘অবদানটির’ কথা তিনি কখনও বলেন না। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে পাক বাহিনীর সহায়তাকারী দালাল- রাজাকারদের বিরুদ্ধে তিনি এখন সোচ্চার হয়েছেন। জনগণের সঙ্গে এর চেয়ে বড় ধোঁকাবাজি আর কি হতে পারে!
মরহুম শেখ মুজিব নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে, হানাদার পাক বাহিনীর সেনারা এদেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ৩ লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। অথচ তিনি ৯৩ হাজার পাক সেনার মধ্যে মাত্র ১৯৫ জন পাক সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছিলেন। আরো দুভার্গ্যরে বিষয় যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিব এই ১৯৫ জন পাক সেনারও বিচার করেননি। তাদেরকেও তিনি ছেড়ে দিয়েছেলেন। অথচ শেখ মুজিব লন্ডন হতে ভায়া দিল্লি দেশে ফেরার পর রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখ লাখ মানুষের সামনে ঘোষণা করেছিলেন এই বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পাক হানাদার বাহিনীর সেনাদের বিচার করা হবে। যে জনগণের সামনে তিনি ৯৩ হাজার পাক সেন্যর বিচার করার ওয়াদা করেছিলেন, ৯৩ হাজার পাক সেনাকে বেকসুর খালাস দেয়ার সময় তিনি সেই জনগণের কোনো মতামত নেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননিÑ এমনকি এ বিষয়ে তিনি জাতীয় সংসদেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেননি। ৩০ লাখ মানুষ হত্যাকারী, ৩ লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী ৯৩ হাজার পাক সেনাকে তিনি সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তে বিনা বিচারে ছেড়ে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা যদি একজন সত্যিকার রাজনীতিক হতেন এবং তিনি যদি সত্যি-সত্যিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতেন, তবে তিনি ৯৩ হাজার পাক সেনাকে বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়ার জন্য তার পিতা শেখ মুজিবের কঠোর সমালোচনা করতেন। কিন্তু তার পিতৃভক্তি এতো প্রবল যে প্রশংসা ছাড়া তার পিতার কোনো দোষত্রুটি তিনি খুঁজে পান না। শেখ মুজিব শুধু ৯৩ হাজার পাক সেনাকে মুক্তি দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি পাক বাহিনীর সহযোগী দালাল, রাজাকার, আল-বদরদের প্রতিও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী ৯৩ হাজার পাক সেনাকে ছেড়ে দেয়ার পর দালাল, রাজাকারদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর তাদের আটক রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তাই আটক রাজাকার-দালালেরা তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে সবাই খালাস হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট জিয়া কোনো নির্বাহী আদেশে আটক রাজাকার-দালালদের মুক্তি দেননি।
প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী ৯৩ হাজার পাক সেনাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে, দালাল-রাজাকারদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর পাক বাহিনীর সহযোগী দালাল-রাজাকারদের ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার পেছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছেÑ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে আগে ৯৩ হাজার পাক সেনার বিচার করতে হবে। ইয়াহিয়া, টিক্কা, নিয়াজী, রাও ফরমান আলী, ভুট্টোর বিচার করতে হবে। এসব প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে নিজামী, মুজাহিদ, দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা আইন প্রতিমন্ত্রীর একটি মন্তব্য হতেই প্রকাশ পেয়েছে। ৩১ মার্চ আইন প্রতিমন্ত্রী এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে এদেশে থেকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিরতরে উচ্ছেদ করা হবে। বলাই বাহুল্য, ইসলামপন্থী রাজনীতিই আওয়ামীদের নিকট সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হিসেবে পরিচিত হয়। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আসল গোমর ফাঁস হয়েছে। ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করাই আসল উদ্দেশ্য।
মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। বরং পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের তারা পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়েছে আর রাজাকার-দালালদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহবান জানিয়েছে। পরবর্তীতে জনগণও এটা মেনে নিয়েছে। এই মীমাংসিত বিষয়কে স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ইস্যু বানানো যে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, জাতি যদি বিভক্তও হয় তবু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। কি ভয়ংকর কথা! আশরাফ সাহেবের কাছে প্রশ্ন-জাতি বিভক্ত হয়ে দুর্বল হলে কারা লাভবান হবে? তাই সরকারের নিকট অনুরোধ শেখ মুজিব কর্তৃক ক্ষমাপ্রাপ্ত সজাতি রাজাকার-দালালদের বিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত না করে যদি মুরোদ থাকে তবে তৎকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। মূল অপরাধীদের (পাক সেনাদের) ছেড়ে দিয়ে তাদের দোসরদের (দালাল-রাজাকারদের) বিচার করার কোনো যুক্তি নেই। যুদ্ধাপরাধীদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশের সাহায্য চাওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, সরকার পাক সেনা নয়, দালাল রাজাকারদের বিচার করার কথা ঘোষণা করেছে, দালাল রাজাকাররা ’৭১ সালে এদেশে অপরাধ সংঘটিত করেছিল বিদেশে নয়। তাহলে বিদেশীদের কাছে তথ্য-প্রমাণ চাওয়া কি অর্থ হতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। দালাল-রাজাকারদের যুদ্ধাপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজন হলে সেটা এদেশের জনগণের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা প্রয়োজন, বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে তথ্য-প্রমাণ চাওয়ার উদ্দেশ্য কি?
সরকার যে বিচার নিয়ে একটি রাজনৈতিক খেলা খেলছে ও জনগণের সঙ্গে মহাপ্রতারণা করছে তা দালাল-রাজাকারদের যুদ্ধাপরাধের তথ্য-প্রমাণের জন্য বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে ধরনা দেয়া হতেই স্পষ্ট হয়েছে। আরো লক্ষণীয়, আইনমন্ত্রী বলেছেন, সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক যুদ্ধাপরাধীর প্রতীকী বিচার করা হবে। এর থেকেই সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়েছে। প্রশ্ন হলোÑ সকল অপরাধীর বিচার করা হবে না কেন? যারা অন্যায় করেছে তাদের সবারই তো বিচার করা প্রয়োজন। একই অপরাধ করে কেউ শাস্তি পাবে আর কেউ পার পেয়ে যাবে এটা কেমন আইনের শাসন? আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কেবলমাত্র কিছু রাজনৈতিক নেতার বিচার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান। সুতরাং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে ৯৩ হাজার পাক সেনা, ৩ লাখ বিহারীসহ প্রতিটি রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের বিচার করতে হবে। এক যাত্রায় দুই ফল ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2010
(616)
-
▼
April
(23)
- অটিজম
- চড়ক পূজা
- চুলের যত্ন
- ঘরোয়া রূপচর্চায় হারবাল পরিচর্যা
- লক্ষ্ণৌ
- ম্যানেজার'এর দ্বায়িত্ব
- ক্লান্তি দূর করতে স্পা
- ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষের ত্বক-চুলের যত্ন
- বাবুনাই
- চোখগেলো
- স্কার্ট
- হিপ হোপ জাতি
- মাঘী পূর্ণিমা
- মাইজভাণ্ডারী মেলা
- পড়া মনে রাখার কৌশল
- ডিজিটাল
- লালনে দোল
- পুণ্যস্নান
- হোলি উত্সব
- শাড়ি
- লালনের দর্শন
- শেখ মুজিব ৯৩ হাজার পাক সেনাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন
- গবেষণা : বাংলাদেশে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি চর্চা
-
▼
April
(23)
Monday, April 5, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ !