Wednesday, June 30, 2010

ঢাকার ঐতিহাসিক মোগল ঈদগাহ

0 comments
মোগল সম্রাট আকবর বারো ভূঁইয়াদের দমন করে বাংলা দখল করেন ১৫৭৫ সালে। ভূইয়ারা বশ্যতা স্বীকার না করে মোগল শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সোনারগাঁয়ের ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ, যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য, বাকলার রাজা রামচন্দ্র রায়। পরবর্তী সময় শাসক সুবেদার ইসলাম খান ১৬১২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। শুরু হয় রাজধানী ঢাকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। মোগল আমলের একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্যের নিদর্শন হচ্ছে ধানমণ্ডির আবাসিক এলাকার সাতমসজিদ রোডের ৭/এ-তে অবস্থিত ঈদগাহটি। এটি বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম ১৬৪০ সালে নির্মাণ করেছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার রাজধানীতে পরিণত হওয়ার পর এর মর্যাদা পরবর্তী শতাব্দী পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল। এ সময় প্রশাসনিক সদর দপ্তর ছিল ঢাকায়। এখানে বিদ্যমান ছিল সুবেদারের বাসস্থান এবং অন্যান্য রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয়। এ সময়ের মধ্যে মোগলরা বিভিন্ন মসজিদ, ঈদগাহ এবং সরাইখানা নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের স্থাপত্যরীতি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। একটি দেশের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও কৌশল নির্ভর করে সেখানকার ভৌগলিক অবস্থান, পারিপাশ্বর্িক অবস্থা, সহজলভ্য উপকরণ, স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রভাব এবং বিশেষ করে পৃষ্ঠপোষকতার ওপর। পাথর ও মার্বেলের অভাব এবং প্রচুর পলিমাটি দ্বারা ইট তৈরির সুযোগ থাকায় এ অঞ্চলে ইটের সৃষ্টি স্থাপত্যরীতি বা 'ব্রিক স্টাইল'-এর উদ্ভব হয়। এই ঈদগাহটিতেও অন্যসব মোগল স্থাপত্যের মতো পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ধানমণ্ডির ঈদগাহটি মাটি থেকে চার ফুট উঁচু একটি সমতলভূমিতে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ২৪৫ ফুট প্রস্থ ১৩৭ ফুট। বিস্তৃতি তিন দিকে। পশ্চিমে ১৫ ফুট উঁচু প্রাচীর যেখানে রয়েছে মিহরাব ও মিম্বার। ওই সময় এর পাশ দিয়ে বয়ে যেত পাণ্ডু নদীর একটি শাখা। এই শাখা নদী জাফরাবাদে সাতগম্বুজ মসজিদের কাছে মিলিত হতো বুড়িগঙ্গার সঙ্গে। ওই আমলে ঈদের দিন এই ঈদগাহটিতে শুধু মোগলরাই যেতেন। সাধারণ মানুষের স্থান সেখানে ছিল না। সুবেদার, নাজিম ও অন্য মোগল কর্মকর্তারা ঈদের নামাজ পড়তেন এখানে। ইংরেজ আমলে জরাজীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় ছিল ঈদগাহটি। মুনশী তায়েশের বর্ণনা থেকে জানা যায়, উনিশ শতকের শেষের দিকে শহরের মুসলমানরা এখানে ঈদের নামাজ পড়তেন, সেই সঙ্গে আয়োজন করা হতো মেলার।

নকশি কাঁথা

0 comments
কাপড়ের উপর তৈরি নকশা করা কাঁথাই নকশি কাঁথা। এক সময় গ্রামীণ বধূ, ঝিরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে শৌখিন নকশি কাঁথা তৈরি করত। সুই-সুতা দিয়ে কাঁথা সেলাই করে সেখানে ধরে রাখত বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। মেয়ের বিয়ে হলে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর সময় মা, নানি, দাদিরা মেয়েকে উপহার দিত বাহারি রঙের নকশি কাঁথা। নতুন জামাইকে নকশি কাঁথা, বালিশ, দস্তরখানা, রুমাল উপহার দেয়া আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। এটি ছিল ধনী-দরিদ্র সব শ্রেণীর মানুষের ঐতিহ্য। এমনকি বাড়িতে নতুন কোনো মেহমান এলে তার থাকার বিছানা সাজান হতো বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ দিয়ে। জামালপুরের বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, যশোর, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা অঞ্চল নকশি কাঁথা তৈরির জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নকশি কাঁথা তৈরি হয় জামালপুরে। জামালপুরে নকশি কাঁথা শিল্পের নানাবিধ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

এখানকার নকশি কাঁথা গুণগতমানে উন্নত এবং দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লুপ্তপ্রায় এ শিল্পটি দুই দশক ধরে আবার আলোর মুখ দেখেছে। এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের আড়ং বাণিজ্যিকভাবে নকশি কাঁথা উৎপাদন করছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে কেবল জামালপুরেই গড়ে উঠেছে_ রংধনু হস্তশিল্প, সৃজন মহিলা সংস্থা, সুপ্তি, ক্যাম্প, কারু নিলয়, জোসনা হস্তশিল্প, প্রত্যয় ক্রাফট, রওজা কারুশিল্প, কারুপল্লী, কারু নীড়, দোলন চাঁপা, ঝিনুক, সূচিকা, তরঙ্গ, দিপ্ত কুটির, বুনন, অণিকা, মিম, মামিম, শতদলসহ প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাক গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছে। তাদের উৎপাদিত কাঁথা দেশীয় ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেটসহ বড় জেলা শহরগুলোতে নকশি কাঁথার বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব বাজারে নকশি কাঁথা রপ্তানি হচ্ছে। দেশে নকশি কাঁথা উৎপাদনকারীদের পণ্যগুলো অধিকাংশ মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। জামালপুর থেকে সরাসরি পণ্য বহন করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার শো-রুমে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এসএ পরিবহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অল্প সময়ে দ্রুত মালামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায়ও এখানকার ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন। এসব প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। দেশে নকশি কাঁথা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে_ নকশি কাঁথা, বেড কভার, থ্রি-পিস, ওয়ালমেট, কুশন কভার, শাড়ি, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফতুয়া, স্কার্ট, লেডিস পাঞ্জাবি, ইয়ক, পার্স, বালিশের কভার, টিভি কভার, শাড়ির পাড়, ওড়না, ফ্লোর কুশন, মাথার ব্যান্ড, মানি ব্যাগ, কলমদানি, মোবাইল ব্যাগ, শিকা, শাল চাদর ইত্যাদি।

নকশি কাঁথা পণ্যের মূল্য ২৫ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্ব পর্যন্ত। নকশি কাঁথাশিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করেন। তাদের মূল সমস্যা হলো- পুঁজি সংকট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রম মজুরি বৃদ্ধি, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, নিখুঁত পণ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়া, উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্দ্য, বকেয়া টাকা পরিশোধ না করা, ডিজাইনে বৈচিত্র্যের অভাব, সরকারি আনুকূল্য না পাওয়া ইত্যাদি।

পাঁচ বছর যাবৎ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। এ শিল্পের সমস্যাগুলো দূর করা হলে শিল্পটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগে গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন। তাহলে গ্রামীণ নারীদের দারিদ্র্য দূর হবে; সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। নারীর ক্ষমতায়নও বাড়বে। টিকে থাকবে নকশি কাঁথার মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ঐতিহ্য। এ শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যাদি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। শেখ মেহেদী হাসান

Tuesday, June 29, 2010

ডলুরা, সুনামগঞ্জ

0 comments
জায়গাটার নাম ডলুরা। সুনামগঞ্জের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা গারো আদিবাসী-অধ্যুষিত একটা গ্রাম। একাত্তরের দিনগুলো তো মেঘে-ঢাকা দিনের মতোই ছিল অন্ধকার, বিভীষিকাময়, বর্ষার বৃষ্টি ফোঁটার মতো লাখো-কোটি বাঙালির অশ্রুবিন্দুতে সিক্ত। একদিন মেঘ ফুঁড়ে হেসেছিল সূর্য, ছুটে গিয়েছিল অন্ধকার, বাদলের ধারা—আমাদের অশ্রুবিন্দুগুলো। স্বাধীনতার টকটকে লাল সূর্যে হেসেছিল নতুন দেশ বাংলাদেশ। বাদলে সিক্ত হয় মাটি, সিক্ত সেই বসুন্ধরার বুকে বাদল শেষে হেসে ওঠে ফসলের সম্ভার। লাখো-কোটি বাঙালির অশ্রুতে-রক্তে সিক্ত হয়েছিল যে মাটি, সেই মাটির বুকে জন্ম নিয়েছিল এক আশ্চর্য আনন্দপুত্র বাংলাদেশ। বিজয়ে আমরা উল্লাসে মেতেছিলাম। কিন্তু সেই বিজয়ের আনন্দের মধ্যেও ছিল চাপা কান্না, বলতে না-পারা স্বজন হারানোর বেদনা। সেসব বেদনা বুকে নিয়েই আমরা বেঁচে আছি, এখনো স্বপ্ন দেখি শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশের। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সুনামগঞ্জ শহর থেকে সুরমা নদীর হল্লারঘাট পার হয়ে পাকা রাস্তা দিয়ে চলতে লাগলাম ডলুরা সীমান্তে ঘুমিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সময় চিরনিদ্রায় শায়িত আটচল্লিশজন শহীদের সেই পবিত্রভূমিতে।
সুরমা পেরিয়ে হল্লারঘাট থেকে একজন গারো কৃষক আন্দ্রেয়াজ দান্দালী আমাকে একটা ভাড়ার মোটরসাইকেলে করে রওনা হলেন নারায়ণতলার দিকে। ও গ্রামেই তাঁর বাড়ি। সুন্দর পাকা পথ। যেতে যেতে বাঁ দিকের একটা মাঠ দেখিয়ে জানালেন, ওইখানে ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের ফাঁড়ি। লোকেরা বলত লালবাড়ি। ওখান থেকেই তারা সুরমার এপারে বিভিন্ন গ্রামে অপারেশন চালাত। পাকা রাস্তার দুই পাশে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, ফসলের মাঠ, সমতল ভূমি। দেখতে দেখতে আমরা নারায়ণতলা মিশনে পৌঁছে গেলাম। পথে পড়ল চৌমুহনী বাজার। এরপর যেতে যেতে ঘরবাড়ি একটু পাতলা হয়ে এল। দেখতে পেলাম নতুন গড়ে কিছু ওঠা হালকা কুঁড়েঘর, নতুন নতুন বসতি, রক্তরাঙা ফুল ফোটা শিমুলগাছ আর বাঁশঝাড়। আলগা বালুর পথ। তবে ডলুরা গণকবর পর্যন্ত রাস্তাটা পাকা। শহীদদের কবরের কয়েক হাত পেছনেই নোম্যানস-ল্যান্ড, এর কয়েক হাত দূরেই ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের কঠিন বেড়া। ওপারে মেঘালয়ের সুউচ্চ খাসিয়া পাহাড়। আন্দ্রেয়াজ জানালেন, গ্রামটাতে এখনো প্রায় আড়াই শ ঘরে গারো আদিবাসীর বাস রয়েছে। সেখানেই মেঘের পাহাড় মেঘালয়ের কোলঘেঁষে ডলুরা গণকবরে লালনুড়ির বালুর বুকে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন আটচল্লিশজন শহীদ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ডলুরা ছিল বালাট সাব-সেক্টরের অধীন। সেই সাব-সেক্টরে তখন যুদ্ধ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. লুৎফর রহমান ওরফে জজ মিয়া। তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেন, এখনো একাকী থাকলে গুলি আর বোমার শব্দ শুনি। সুনামগঞ্জে মার্চের পর থেকেই যুদ্ধ শুরু হয়। ২৫ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলে অনেক লোক তখন ঢাকা ত্যাগ করে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আসতে থাকে। কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে আরও নিরাপদ জায়গার খোঁজে চলে যায় রিফিউজি ক্যাম্পে। আবার কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে। ফিরে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ডলুরা সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় এবং মেঘালয়ে যাওয়ার জন্য যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় রোজই বিপুল লোক এ পথে আসতে থাকে। কমান্ডারের নির্দেশ ছিল, এসব লোককে যেন আমরা ঠিকমতো সেবা দিই, আশ্রয় দিই। প্রায় প্রতি রাতেই আমরা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে দু-চারজন লোকের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করতাম। মনে পড়ে ভালো লাগে যে তখন সিলেটের এম সি কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ, ভৈরব কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররা এ পথে সীমান্ত পার হওয়ার জন্য আসত মুক্তিযোদ্ধা হতে, যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে। তাই কৌশলগত কারণে এ জায়গাটা ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য তারা সুরমা নদীর এ পারে ক্যাম্প স্থাপন করে ভারতগামী লোকদের আসা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তবুও তারা বিভিন্ন ঘুরপথে ঝুঁকি নিয়ে আসতে থাকে। এরপর শুরু হয় ডলুরা ও তার আশপাশে আমাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ, কাউন্টার-অ্যাটাকে ওরাও যেমন মরতে থাকে, তেমনি আমাদেরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান। তাঁদের শবদেহগুলো গ্রামবাসী ও সহযোদ্ধারা এই ডলুরা সীমান্তে এনে সমাহিত করেন। মো. মন্তাজ মিয়া, মো. রহিম বখত, মো. ধনু মিয়া, মো. কেন্তু মিয়া, অধর দাস, কবীন্দ্র নাথ—এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে সমাহিত করা হয়। যাঁদের পরিচয় পাওয়া গেছে, নামফলকে শুধু সেই আটচল্লিশজনের নামই আছে। ফলকে নাম নেই, এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধাও এখানে সমাহিত আছেন বলে তিনি জানান। তাঁদের পরিচয় হয়তো কেউ কখনো জানবে না। কিন্তু তাঁদের আত্মত্যাগের মহিমা তো কখনো মুছে যাবে না। তিনি বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধা তো নিজের নামের জন্য যুদ্ধ করেননি, যুদ্ধ করেছিলেন একটা দেশের নামের জন্য। তাই ৫ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা সম্মিলনীর সৌজন্যে স্বাধীনতাসংগ্রামের শহীদদের স্মরণে সেখানে গড়ে উঠেছে ডলুরার সেই পবিত্রভূমি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা, ডলুরা সমাধিস্থলের পবিত্রভূমির মতো দেশটাও পবিত্র হোক।

কাপড়ের দাগ তুলতে

0 comments
সাবধানেই তো চলাফেরা করা হয়। তবু কোন ফাঁকে যে কাপড়ে দাগ লেগে গেল বুঝতেই পারলেন না। কীভাবে তুলবেন এ দাগ জানেন না। তবে আগে দেখেন, কোন উৎস থেকে দাগ লেগেছে। পরনের পোশাকটি কোন তন্তুর কোন রঙের, সেটাও দেখতে হবে। এরপর বেছে নেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা হকের দেওয়া টিপস।
 যেকোনো দাগ লাগলেই সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর সাবান, ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।
 যদি এক কাপড়ের রং আরেক কাপড়ে লেগে যায়, তাহলে প্রথমে শুধু পানিতে চার-পাঁচ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর দাগটা হালকা হয়ে এলে সাবান, ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।
 সুতি কাপড়ের দাগ তুলতে কাপড় কাচার সোডা, ক্লোরিন ব্যবহার করতে পারেন।
 কাপড়ে তেলজাতীয় দাগ লাগলে সেখানে পাউডার দিয়ে রাখুন। পরে ধুয়ে ফেলুন।
 বর্ষায় প্রায়ই কাপড়ে দাগ লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করা হয় না। খুব স্থায়ী হওয়ার আগে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এরপর সাবান দিয়ে ঘষে নিন। এতেও না উঠলে লেবু বা ভিনেগার দিয়ে ঘষে রোদে মেলে দিন। দেখবেন রং উঠে গেছে।
 রক্তের দাগ লাগলে আমরা অনেক সময় গরম পানি ব্যবহার করি। এতে দাগ স্থায়ী হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
 কাপড়ে চায়ের দাগ বা অন্য কোনো দাগ লাগলে তরল দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেললেও দাগ উঠে যাবে।
 সুতি কাপড়ে কলমের কালির দাগ তুলতে লঘু অক্সালিক এসিড দিয়ে অ্যামোনিয়া দ্রবণে ধুয়ে নিতে হবে। অ্যামোনিয়ার পরিবর্তে দুধও ব্যবহার করতে পারেন।
 রেশম, পশম, সিল্ক কাপড়ে কালির দাগ লাগলে অ্যাসিটিক এসিডের দিয়ে অক্সালিক এসিডে ধুয়ে নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন যদি সাবান পানি দিয়ে দাগ না ওঠে, তবেই এটি ব্যবহার করবেন।
 এ ছাড়া মেথিলেটেড স্পিরিট তুলায় নিয়ে দাগের জায়গায় ঘষলে দাগ উঠে যাবে।
 দাগ কখনোই এলোমেলোভাবে ঘষে তোলা উচিত নয়। তুলা বা স্পঞ্জে দাগ তোলার উপাদান নিয়ে বৃত্তাকারে ঘষবেন। তাহলে দাগ চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে না।
 বাড়িতে বিপত্তি মনে হলে ভালো কোনো লন্ড্রির শরণাপন্ন হতে পারেন।

Sunday, June 27, 2010

পলাশী-পরিক্রমা

0 comments
বিখ্যাত পর্তুগিজ ঐতিহাসিক বাকসার পলাশীর যুদ্ধকে গুরুত্বের দিক থেকে পৃথিবীর সেরা যুদ্ধগুলোর অন্যতম মনে করেন। তাঁর এ মতের সঙ্গে কারও দ্বিমত পোষণের অবকাশ খুব কম। তবে বিশ্বখ্যাত এ যুদ্ধটি রণাঙ্গনে দেখি এক ভিন্নরূপ। পলাশীতে যুদ্ধ হয়নি বললেই চলে। ২৩ জুন ১৭৫৭। সুবা-বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের অদূরে পলাশী নামক গ্রামের প্রান্তরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল রবার্ট ক্লাইভের সেনাবাহিনী ও বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরাজদৌল্লার বাহিনী একে অন্যের মুখোমুখি অবস্থান। সকাল নয়টায় যুদ্ধ শুরু, বিকেল চারটার মধ্যেই যুদ্ধ শেষ। এ সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের আপাতত ফলাফল ক্লাইভের জয়, সিরাজদ্দৌলার পরাজয়। পলাশী যুদ্ধসংক্রান্ত দলিলপত্র এত ব্যাপক যে, এর ভিত্তিতে এ যুদ্ধের একটি ঘণ্টাওয়ারী বিবরণ দেওয়া সম্ভব। এ সংক্ষিপ্ত পরিক্রমায় পলাশী যুদ্ধের একটি মাঠভিত্তিক বিবরণ আর সমকালীন বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পলাশী যুদ্ধের প্রভাব দেখানো হলো।
১৭৫৭ সালের ২২ জুন মধ্যরাতে রবার্ট ক্লাইভ কলকাতা থেকে তাঁর বাহিনী নিয়ে পলাশী মৌজার লক্ষ্মবাগ নামে আম্রকাননে এসে তাঁবু গাড়েন। বাগানের উত্তর-পশ্চিম দিকে গঙ্গা নদী। এর উত্তর-পূর্ব দিকে দুই বর্গমাইলব্যাপী আম্রকানন। গভীর নালা দিয়ে ঘেরা। সুন্দর প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। নবাবের বিশাল বাহিনীর বিভিন্ন শাখার নেতৃত্বে মীরমদন (গোলন্দাজ প্রধান), মোহনলাল কাশ্মিরী, ইয়ার লতিফ খান, মীরজাফর। ইংরেজ বাহিনীর চেয়ে পাঁচগুণ বড় নবাবের বাহিনী। বহু গুণ বেশি নিকট ও দূরপাল্লার কামান এবং গোলাবারুদ দিয়ে সজ্জিত। দূরপাল্লার কামান-আশ্রিত বিশাল অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে সিরাজদ্দৌলা নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁবু গেড়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার অশ্বারোহী, পদাতিক বাহিনী ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ গোটা বাহিনী লম্বাকারে দুই মাইলেরও বেশি জায়গা নিয়ে চক্রাকারে এমনভাবে ক্লাইভের ক্ষুদ্র বাহিনীকে ঘিরে অবস্থান নিলেন যে ক্লাইভ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তৈরি হচ্ছেন গঙ্গার পথে পিছু হটার জন্য। একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে নবাবের বিশাল ও সুসজ্জিত বাহিনীর মোকাবিলা করা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করলেন তিনি। পিছু হটার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেবেন এমন সময় ক্লাইভের সামরিক গুপ্তচর খবর নিয়ে আসেন যে, গোপন চুক্তি মোতাবেক মীরজাফর তাঁর নিজের অধীনে থাকা বাহিনীকে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেবেন না। পরিস্থিতির সবদিক যোগ-বিয়োগ করে ক্লাইভ সিদ্ধান্ত নিলেন সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য।
২৩ জুন বৃহস্পতিবার সকাল আটটা। প্রথম গোলা ছোড়ে নবাবের বাহিনী। প্রথম তিন ঘণ্টা কাটে উভয়পক্ষ দূর থেকে গোলন্দাজি গোলাগুলির মাধ্যমে সুবিধামতো অবস্থান তৈরিতে। সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হওয়ার নির্দেশ দেন নবাব। কয়েকটি গোলা ছোড়ার পরই শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি। বৃষ্টির ফলে নবাবের বারুদ-ভাটা সম্পূর্ণ সিক্ত হয়ে যায় এবং চালনার অযোগ্য হয়ে পড়ে কামান। অন্যপক্ষে ব্রিটিশ বাহিনীর বারুদ সময়মতো আবৃত করার ফলে অক্ষত থাকে। কামানের গোলা উপেক্ষা করে নবাবের অশ্বারোহী বাহিনী সামনে অগ্রসর হতে থাকে। একপর্যায়ে নবাবের সেনাপতি মীরমদন নিহত হন।
গোলান্দাজ বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর সিরাজদ্দৌলা মীরজাফর ও রায় দুর্লভকে তাঁদের অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীব্র বেগে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু উভয় সেনাপতি তাঁর নির্দেশ অমান্য করলেন। তাঁদের যুক্তি হলো গোলন্দাজ বাহিনীর আশ্রয় ছাড়া অগ্রসর হওয়া আত্মঘাতী ব্যাপার। কিন্তু কোম্পানি ও নবাবের বাহিনীর মধ্যে তখন দূরত্ব মাত্র কয়েক শ গজ। সিরাজদ্দৌলা বুঝতে পারলেন, যুদ্ধ আর তাঁর পক্ষে নেই। মীরজাফর ক্লাইভকে খবর দিলেন, তিনি যুদ্ধ করবেন না এবং ইংরেজের পক্ষ থেকে আঘাত বন্ধ করে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে চান। কিন্তু ক্লাইভ যুদ্ধ চালিয়ে যান। বিকেল পাঁচটায় সিরাজদ্দৌলা বাহিনী নির্দেশনার অভাবে এবং ইংরেজ বাহিনীর গোলন্দাজি অগ্রসরতার মুখে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেন অর্থাৎ পরাজয় স্বীকার করেন।
মীরজাফর ও ক্লাইভের মধ্যে গোপন চুক্তি সফল হলো। হতভম্ব নবাব নিজেকে ও রাজ্য রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রের তাঁবু থেকে আত্মগোপন করে সাধারণ বেশে বেরিয়ে গেলেন পাটনার পথে। পাটনা থেকে নতুন সাজে রাজ্য রক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মুর্শিদাবাদে ফিরবেন—এই ছিল তাঁর তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা। একটি দ্রুতগামী উটে চড়ে নদীপথে পাটনায় পৌঁছাবার লক্ষ্যে তিনি পদ্মার তীরে ভগবানগোলা বন্দর থেকে রাজমহলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। রাজমহলে এসে তিনি নৌকা থেকে নেমেছেন খাবারের ব্যবস্থার জন্য। কিন্তু দীনহীন মলিন বস্ত্রধারী হলেও তিনি দানা শাহ নামে এক ফকিরের চোখে পড়ে গেলেন। এই দানা শাহ নানা ধর্মীয় ভণ্ডামির অপরাধে সিরাজদ্দৌলার হাতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। ফকিরি করে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অপরাধে দানা শাহর এক কান কেটে তাঁকে মুর্শিদাবাদ থেকে সিরাজদ্দৌলার নির্দেশে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কান কাটা দানা শাহ পরে রাজমহলে গিয়ে আশ্রয় নেন। দানা শাহ সিরাজদ্দৌলাকে ধরিয়ে দিলেন তাঁর শত্রুর হাতে। বন্দী নবাবকে ফিরিয়ে আনা হলো মুর্শিদাবাদে। তাঁকে হস্তান্তর করা হলো মীরজাফরের পুত্র মীরনের হাতে। মীরন সে রাতেই (২ জুলাই) মোহম্মদী বেগকে নির্দেশ দেন নবাবকে হত্যা করার জন্য। মোহম্মদী বেগ মীরনের উপস্থিতিতেই হত্যা করে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরজদ্দৌলাকে। এই সেই মোহম্মদী বেগ, যাঁকে ছোটবেলা থেকে সিরাজদ্দৌলার পিতা নিজের ছেলের মতো সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে লালন-পালন করে বড় করে তুলেছেন এবং সিরাজদ্দৌলার মা তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করে একটি তালুকও দান করেছিলেন।
গুরুত্বের দিক থেকে পলাশী যুদ্ধকে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। পলাশীর যুদ্ধ রাজায় রাজায় সংঘটিত হয়নি। যুদ্ধ হয়েছে নবাব এবং একটি বিশ্ব পুঁজিবাদী বাণিজ্যিক কোম্পানির মধ্যে। এক রাজার পতন হলে আরেক রাজার আবির্ভাব ঘটে। জীবন চলতে থাকে সনাতনভাবেই। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে নবাবের পতন হয়েছে একটি কোম্পানির হাতে; সাত সমুদ্রের ওপার থেকে আসা একটি বিদেশি বাণিজ্যিক কোম্পানি দেশের শাসকে পরিণত হলো। সনাতন রাজনীতিতে রাজার শাসনে থাকে প্রজাকুলের নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজনীয়তা, যা একটি বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের থাকতে পারে না। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিবেচনা মুনাফা। মুনাফাকে মোক্ষ করেই শাসিত হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলা রাষ্ট্র, অন্তত কোম্পানির প্রথম ৫০ বছর। ফলে আমরা দেখতে পাই, দ্বৈতশাসন, নিলামি বন্দোবস্ত, দশ সালা বন্দোবস্ত, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, পত্তনী ব্যবস্থা, সূর্যাস্ত আইন, ঘন ঘন দুর্ভিক্ষ, সংক্ষিপ্ত আদালতের মাধ্যমে মানবাধিকারের পতন ইত্যাদি। আঠারো শতকের প্রথম ভাগে নবাবি শাসনামলে আমরা কোনো দুর্ভিক্ষ দেখি না, দেখি না কোন প্রজাবিদ্রোহ। কিন্তু দ্বিতীয় ভাগে অর্থাৎ কোম্পানি আমলে দেখি অভাবনীয় অভাব, দুর্ভিক্ষ ও প্রজাবিদ্রোহ। জমিদার সমাজেও অসন্তোষ। সূর্যাস্ত আইনের ফলে দেখতে পাই, নিলামে জমিদারি বিক্রয়, নতুন জমিদারের আবির্ভাব, প্রজাদের ওপর খাজনা বৃদ্ধির প্রবণতা। সরকার জনসাধারণের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেনি কারণ তা মুনাফার হিসাবে মেলে না। ফলে নবাবি আমলের মাদ্রাসা, পাঠশালা, টোল প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোম্পানি আমলে বিলীন হলো। বিলীন হলো গ্রামপর্যায়ে মানুষের নিরাপত্তাও।
পলাশী যুদ্ধ বিশ্বঅর্থনীতি ও রাজনীতিতে প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছে। উপনিবেশবাদ আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে প্রথম ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলায়। জানা উচিত যে, বঙ্গদেশই হলো বিশ্বের প্রথম আধুনিক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র। এর আগে ইউরোপের অনেক দেশ মহাসাগরীয় অঞ্চলের জনশূন্য জায়গায় কলোনি বা উপনিবেশ স্থাপন করেছে বা কোনো জনবহুল জায়গায় বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেছে, কিন্তু এশিয়া-আফ্রিকার কোথাও জনবহুল রাজ্য দখল করে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ইতিহাসে বাংলাই প্রথম ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র, যার উৎপত্তি পলাশীর পরাজয় থেকে।
বাংলায় ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে আন্তমহাসাগরীয় বাণিজ্যে ব্রিটেন অভাবনীয় সুবিধা অর্জন করল। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ব্রিটিশ শিল্প-বিপ্লবে ও সামরিক ক্ষমতায়। বঙ্গদেশ পরিণত হলো ব্রিটিশ শিল্প-পণ্যের একটি বন্দী বাজারে এবং ব্রিটিশ শিল্পের জন্য কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে। মুনাফার লোভে ব্রিটেনের অনুকরণে ইউরোপের অধিকাংশ সাগর উপকূলীয় রাষ্ট্রই ব্রিটেনের অনুরূপ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হয়। উপনিবেশবাদ থেকে সূত্রপাত আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের।
আমাদের যুক্তি এমন নয় যে, পলাশী যুদ্ধের জন্যই কেবল এসব ঘটেছে। আমাদের বক্তব্য হলো, পলাশী যুদ্ধের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা থেকে শুরু করে ক্রমেই সমগ্র ভারতে এবং আরও পরে সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থাপন করে বাণিজ্যিক বলয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্রিটিশ শিল্প-বিপ্লবে এবং পরবর্তী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায়। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউরোপীয় দেশগুলো ব্রিটেনের আদলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ করে।
পলাশীর আগে বহুবার বাংলায় শাসকগোষ্ঠীর পালাবদল হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে, শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হলেও শাসন ব্যবস্থা তথা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এর প্রভাব দেখা যায় নগণ্য। মৌর্য শাসন, গুপ্ত শাসন, পাল শাসন, সেন শাসন, তুর্কি শাসন, মোগল শাসন যতটা ছিল শাসক শ্রেণীর পরিবর্তন, নিম্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ততটা ছিল না। শাসন ব্যবস্থায় ও আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন ছিল মোটামুটি অপরিবর্তনের ঐতিহ্যে প্রবাহিত। দেখা যায় যে, প্রাগ ব্রিটিশ যুগে প্রতিটি নতুন শাসকগোষ্ঠী শাসন করেছে স্থানীয় সামাজিক শাসকগোষ্ঠীকে অংশী করে। হিন্দু আমলে তো এ ঐতিহ্য ছিলই, এমনকি তুর্কি ও মোগল আমলেও এ ধারা ছিল অব্যাহত। নবাবি আমলে প্রশাসনে স্থানীয় নেতাদের অংশগ্রহণ ছিল সর্বজনীন।
স্থানীয় শাসকশ্রেণীকে সহযোগী করে শাসন করার ঐতিহ্য বাতিল হয়ে গেল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করা হলো শ্বেতাঙ্গ উপাদানে। কোম্পানি রাষ্ট্রব্যবস্থা হলো এমন যে, দেশের শাসকশ্রেণী সব বিদেশি আর শাসিত দেশি। এমনটি বাংলার ইতিহাসে কোনো পর্বে ঘটেনি। এর সামগ্রিক ফল হলো সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে নেমে এল চরম হতাশা।
পলাশীর পরাজয়, ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অনুপস্থিতি থেকে বাঙালির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে একটি বিশেষ মানসিকতা: হীনম্মন্যতা। ইংরেজের অনুকরণে অচিরেই বাঙালিদের অনেকে নিজেদের নানা দিক দিয়ে হীন গণ্য করতে শুরু করল। ইয়ং বেঙ্গলরা যেমন, যা কিছু বঙ্গ সংস্কৃতির সেসব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভরে বর্জন করাই তাদের আধুনিকতা। যা কিছু বিদেশি তা উত্তম, আর যা কিছু দেশি অপাঙেতয়—এমনটিই হয়ে উঠল অনেকের মনোভঙ্গি। পোশাক, সাজসজ্জা (ফ্যাশন), ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা ও শাসন পদ্ধতি, শিল্প-স্থাপত্য প্রভৃতিতে বিদেশি প্রভাব এমনই স্পষ্ট ও স্থায়ী যে, অনেককেই বলতে শুনি, আধুনিকতার জন্য এ দেশে ইউরোপীয় শাসন প্রতিষ্ঠা ছিল একটি বড় আশীর্বাদ। অথচ প্রাগ ব্রিটিশ যুগের বিদেশি পর্যটকদের বর্ণনায় দেখি, স্থানীয় শাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বৈদেশিক বাণিজ্য, ধর্ম-দর্শন-সাহিত্য, শিল্প-চর্চা, সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য প্রভৃতিতে এ দেশের অবস্থা ছিল রীতিমতো ঈর্ষা করার মতো।
যাহোক, পলাশী যুদ্ধ ছিল কয়েক ঘণ্টাব্যাপী একটি নামেমাত্র যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলাফল যে বিশ্বাসঘাতকতার দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে এ ব্যাপারে কারও মতভেদ নেই। তবে ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা এক সাধারণ ব্যাপার। যুদ্ধে যে পক্ষ যত বিশ্বাসঘাতকদের কাছে টানতে পারে, ব্যবহার করতে পারে, তারা দারুণ সুবিধা লাভ করে। যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে তারাও জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই তা করে। সিরাজদ্দৌলা যুদ্ধে জয়ী হলে মীরজাফর, জগৎশেঠদের শিরচ্ছেদ হতো। তবে কথা ওঠে, মীরজাফর, জগৎশেঠরা কেন বিশ্বাসঘাতকতা করলেন? সিরাজদ্দৌলা ইংরেজদের নানা কারণে অপছন্দ করতেন। তিনি পছন্দ করতেন ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে। তাঁর সেনাবাহিনীতে সাত শ ভাড়াটে ফরাসি সৈন্য ছিল। মূলত তাঁরাই যুদ্ধ করেছেন। জগৎশেঠের সব ব্যবসা ছিল ব্রিটিশদের সঙ্গে। ব্রিটিশরা যুদ্ধে হেরে গেলে জগৎশেঠের বাণিজ্যিক আধিপত্য নস্যাৎ হতে বাধ্য, আর জিতলে তাঁর মুনাফা তুঙ্গে উঠবে বলে ছিল তাঁর ধারণা। মীরজাফর আসলে ষড়যন্ত্রে ততটুকু সক্রিয় ছিলেন না, যতটুকু ধারণা করা হয়। ষড়যন্ত্রটি পাকিয়েছে জগৎশেঠের নেতৃত্বে কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়ে জড়িত কলকাতা, কাশিমবাজার ও মুর্শিদাবাদের বণিকগোষ্ঠী। ঐতিহাসিক সুশীল চৌধুরীর মতে, জগৎশেঠই প্রায় অশিক্ষিত ও ব্যক্তিত্বহীন মীরজাফরকে উচ্চাভিলাষী করে তোলেন। অতএব ঘটে গেল নামেমাত্র পলাশী যুদ্ধ।
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, মীরজাফর ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি, পারেননি জগৎশেঠও তাঁর সম্পদ ধরে রাখতে। যে জগৎশেঠ পরিবার ছিল ১৭৫৭ সালে বিশ্বের অন্যতম ধনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাংকার, শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই সে পরিবার সমূলে ধ্বংস হয়ে কোম্পানি সরকারের কৃপায় একটি পেনশনে জীবনযাপন করতে হয়। অমনিভাবে দেশের সেরা ধনী ও প্রভাবশালী জমিদার পরিবারগুলোও নিঃস্ব হলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাবে। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখার জন্য যেসব ব্যক্তি ও পরিবার কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে পারে তাদের সবাইকে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে নিয়ে আসা হলো। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখার এটাই ছিল সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা।

Friday, June 25, 2010

স্প্রাটলি দীপপুঞ্জ

0 comments
দক্ষিণ চীন সাগরে কতকগুলো প্রবাল প্রাচীর এবং দ্বীপপুঞ্জের সমন¦য়ে গঠিত স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ একটি বিরোধপূর্ণ স্থান। প্রায় ৫ বর্গ কিলোমিটারেরও কিছু কম আয়তনের এই দ্বীপপুঞ্জটির মালিকানা চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্র“নাই দাবি করে। দ্বীপপুঞ্জটির মালিকানা নিয়ে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা বিরাজ করে। ১৯৮৮ সালে চীনের সাথে ভিয়েতনামের এক সামরিক সংঘাত ঘটে। দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপ চীনের ও ভিয়েতনামের দখলে রয়েছে। সামরিক কৌশলগত ও অর্থনৈতিকÑ উভয় দিক থেকে দ্বীপপুঞ্জটি অত্যš- গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি প্রশাš- মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের নৌ চলাচলের পথে অবস্থিত। এছাড়া এখানে প্রচুর পরিমাণে তেল ও গ্যাস মজুদ রয়েছে।

নাটোর

1 comments
০০ এস এম রাজু ০০

‘বিল চলন গ্রাম কলম কাঁচাগোল্লার খ্যাতি
অর্ধ বালেশ্বরী রানী ভবানীর স্মৃতি
উত্তরা গণভবন রাজ-রাজন্যের ধাম
কাব্যে ইতিহাসে আছে নাটোরের নাম’।
ঐতিহ্যের জৌলুস, অতীতের রাজ-রাজন্যের স্মৃতি, প্রাচীনত্ব আর ইতিহাসের সোনালি দিনগুলোর নীরব সাক্ষী বরেন্দ্র অঞ্চলে বিখ্যাত জেলা নাটোর। জেলাটি রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত।

নামকরণের ইতিহাস
জনশ্রুতি আছে এখানকার কোনো এক স্থান ব্যাঙ সাপকে গ্রাস করেছিল এবং তা দেখে কয়েকজন বালিকা নৃত্য করেছিল। এ নৃত্যকে উপলক্ষ করে ওই স্থানের নাম হয় নাট্যপুর। পর্যায়ক্রমে নাট্যপুর, নাটাপুর, নাট্টর ও নাটোর হয়েছে। অন্য তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমান জেলা সদরের অবস্থান এত নিচু ছিল যে, এখানে পায়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব। তাই স্থানটিকে বলা হতো ‘নাতর’ (না-অসম্ভব এবং তর-গমন); যা থেকে কালক্রমে নাটোর নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য অভিমত হচ্ছে জেলা সদরের পাশ দিয়ে প্রবহমান নারদ নদীর নাম থেকে কালক্রমে নাটোর জেলার নামকরণ হয়েছে।

আয়তন ও অবস্থান

আয়তনের ভিত্তিতে নাটোর জেলা বাংলাদেশের ৩৬তম বৃহত্তম জেলা। এই জেলার মোট আয়তন ১৮৯৬.০৫ বর্গ কিমি, যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১.২৮%। ভৌগলিকভাবে নাটোর জেলা ২৪০২৫ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪০৫র্৮ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮০০র্১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৮০৩০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। নাটোর জেলার উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা। দক্ষিণে পাবনা ও বগুড়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা।

প্রশাসনিক পটভূমি

প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি পুণ্ড্র রাজ্যের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে মুঘল আমলে শাসনব্যবস্থা জমিদারিতে পরিণত হয়। নাটোর জমিদারির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রঘুনন্দন পুঠিয়া রাজার উকিল হিসেবে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর দরবারে কাজ করতেন। রঘুনন্দনের অগ্রজ রামজীবন জমিদারির প্রশাসনে সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং এর জন্য নবাব ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে অনেক জমিদারি পুরস্কার হিসেবে প্রদান করেন। ১৭৩০ সাল পর্যন্ত- রামজীবন এ জমিদারি পরিচালনা করেন। তার মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র রামকান্ত- জমিদারি লাভ করে। ১৭৪৮ সালে রাজকাণ্ডের মৃত্যুর পর তার পত্নী রানী ভবানী জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব পান। তার রাজধানী ছিল রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ জেলায়। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশে তাদের শাসন কার্যকর করতে চাইলেও রানী ভবানী ইংরেজদের সম¯- আধিপত্য অস্বীকার করে স্বাধীনভাবে তার জমিদারি পরিচালনা করে। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে শাসনভার ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর নাটোরসহ এতদঞ্চল পূর্ব পাকিস্থানের অংশ হিসেবে শাসিত হতে থাকে। দেশ স্বাধীন হলে রাজশাহী বিভাগের মহকুমা হিসেবে শাসিত হয় এবং সবশেষে ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় পরিণত হয়। বর্তমানে নাটোর জেলায় ৬টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা, ৫২টি ইউনিয়ন, ৩৬টি ওয়ার্ড, ৯৩টি মহল্লা, ১২৭২টি মৌজা ও ১৩৭৭টি গ্রাম আছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে নাটোর সদর, গুরুদাসপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া।

নদ-নদী: আত্রাই, বড়াল, নারদ, নন্দকুঁজা ইত্যাদি।

চলনবিল জেলার প্রধান বিল।

জলবায়ু: সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৭.৮০ সে. এবং সর্বনিম্ন ১১.২০ সে.। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৮৫২ মিমি।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

উত্তরা গণভবন (সাবেক দীঘাপাতিয়া রাজপ্রাসাদ) চলনবিল, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল, বাংলাদেশের উষ্ণতম স্থান লালপুর, দয়ারামপুর, রাজবাড়ি, লালপুরের বুধপাড়া কালীমন্দির, হুরুম চৌধুরীর বাগান, গুরুদাসপুরের চলবনবিল জাদুঘর ইত্যাদি।

যোগাযোগ: ঢাকা থেকে সড়ক পথে হানিফ, এনপি এলিগেন্স, মডার্ন প্রভৃতি পরিবহনে নাটোর যাওয়া যায়। ঢাকা-নাটোরের দুরুত্ব ২২৩ কিমি এবং বাসে যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ

নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় রয়েছে রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ। তোরণ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে রাজবাড়ির কামান। রাজবাড়িটির ভেতরে রয়েছে ৬টি দিঘি। আর পুরো রাজবাড়িটি বাইরের দিক থেকে লেক আকৃতির দিঘি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে রয়েছে বড় তরফ ভবন নামে পরিচিত রানী ভবানীর রাজপ্রাসাদ। সপ্তদশ শতাব্দিতে নির্মিত সুরম্য এ ভবনটি আজও সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। জানা যায়, রাজা রামজীবন ১৭০৬-১৭১০ সালের কোনো এক সময় পুঠিয়ার রাজার নিকট থেকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে এই রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলেন। রাজা রামজীবনের একমাত্র ছেলে কলিকা প্রসাদ মারা গেলে তার দত্তক ছেলের সঙ্গে রানী ভবানীর বিয়ে দেন।

চলনবিল

দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলের একটি অংশ পড়েছে নাটোরে। জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের ওপর দিয়েই। শীতে এসব বিলের পানি শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় থাকে পরিপূর্ণ। সড়কের দু’পাশে এ সময় যেদিকে চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। নিজস্ব গাড়িতে গেলে যাত্রাপথেই চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।

চলনবিল জাদুঘর

জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে আছে চলনবিল জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন বিচিত্র এ জাদুঘর। চলনবিলে প্রাপ্ত নানা নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এ জাদুঘরে। শনিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।

হাইতি বিল

জেলাশহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা উপজেলায় আছে হাইতি বিল। প্রায় ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ বিলটি দেশের সবচেয়ে গভীর বিল। প্রায় বারো মিটার গভীর এ বিলে সারা বছরই পানি থাকে। তবে বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি।

উগান্ডা

0 comments
পূর্ব আফ্রিকায় নিরক্ষীয় রেখার ওপর অবস্থিত Part of Africa নামে পরিচিত একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র হলো উগান্ডা। গভীর বন ঝোঁপঝাড় দেশটির অধিকাংশ স্থানজুড়ে রয়েছে। বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড় ইত্যাদির উপদ্রব এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক অসুবিধা এ দেশটি পর্যটকদের দুঃসাহসিক ভ্রমণের আনন্দ এনে দেয়। রুডলফ হ্রদ এখানে অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান।

নামকরণের ইতিহাস: উগান্ডা নামটির উৎপত্তি হয়েছে বুগান্ডা রাজত্ব থেকে। বুগান্ডার অর্থ বাগান্ডার ভূমি। বাগান্ডা (Baganda) শব্দটি এসেছে ‘বাগান্ডা বা কাটোন্ডা’, (Baganda Ba র্টিমভঢট), যার অর্থ ঈশ্বরের ভাই ও বোন।

ঐতিহাসিক পটভূমি: ১৯ শতকে উগান্ডার চারপাশে বেশ কয়েকটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এখানে বাস করত নানা জাতির মানুষ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাল্টু ও নিলোটিকভাষী উপজাতি গোষ্ঠী। ১৮৪০ সালে এখানে আরব বণিকেরা প্রবেশ করে। ইউরোপীয় অনুসন্ধানকারী দল ১৮৬২ সালে বুগান্ডা নামে পরিচিত এই রাজ্য পরিদর্শন করে। প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক মিশনারিরা বুগান্ডায় প্রবেশ করে ১৮৭০ সালে। দেশটি ১৯৯৪ সালে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৯৬২ সালে উগান্ডা নাম নিয়ে দেশটি যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। বেসামরিক সরকার উৎখাত করে ইদি আমিনের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে এখানে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮-এর শেষ দিকে ইদি আমিন তানজানিয়া আক্রমণ করে। এরই পথ ধরে ইদি আমিনের শাসনের অবসান ঘটে। উগান্ডাতে কিছুকাল বেসামরিক শাসন পরিচালিত হলেও ১৯৮৫ সালে আবার এক বছরের জন্য সামরিক শাসকদের হাতে চলে যায় দেশটি। নানা রাজনৈতিক চড়াই-উৎরাইয়ের পর ১৯৯৫ সালে উগান্ডায় একটি সংবিধান প্রণীত হয়।

অবস্থান ও আয়তন: এটি ১.২৮০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৩২.৩৯০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। দেশটির পূর্বে কেনিয়া, উত্তরে সুদান, পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণে তানজানিয়া দ্বারা বেষ্টিত।

দেশটির আয়তন প্রায় ২৪১০৩৮ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ৮১ তম বৃহত্তম দেশ।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা: দেশটিতে ৯৭টি জেলা রয়েছে।

উচ্চতম ও নিম্নতম স্থান: দেশটির উচ্চতম স্থান হচ্ছে মার্গারিটা শৃঙ্গ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬,৭৬২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এবং নিম্নতম স্থান হচ্ছে লেক আলবার্ট, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০৩৬ ফুট উঁচু।

জলবায়ু: এখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। ডিসেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারি এবং জুন থেকে আগস্টÑ এই দুই শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। উত্তর-পূর্বাংশ প্রায় শুষ্ক।

প্রধান নদী: ভিক্টোরিয়া নাইল, আলবার্ট নাইল

প্রাকৃতিক সম্পদ: তামা, কোবাল্ট, জল শক্তি, চুনাপাথর, লবণ।

রাষ্ট্রীয় নাম: রিপাবলিক অব উগান্ডা।

রাজধানী: কাম্পালা

জাতীয়তা: উগান্ডানিয়ান

আয়তন: ২,৪১,০৬৮ বর্গ কিমি

আš-র্জাতিক সীমাš-: মোট স্থল সীমাš- ২,৬৯৮ কিমি। এর মধ্যে কেনিয়া ৯৩৩ কিমি, কঙ্গো ৭৬৫ কিমি, রুয়ান্ডা ১৬৯ কিমি, সুদান ৪৩৫ কিমি তানজানিয়া ৩৯৬ কিমি।

জনসংখ্যা: ৩ কোটি ২৭ লাখ।

ধর্ম: মুসলমান ১৬%, রোমান ক্যাথলিক ৩৩%, প্রটেস্ট্যান্ট ৩৩%, স্থানীয় ধর্মে বিশ্বাসী ১৮%

মুদ্রা: উগান্ডান শিলিং, (VGX)

স্বাধীনতা লাভ: ৯ অক্টোবর ১৯৬২ (যুক্তরাজ্য থেকে)।

জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ: ২৫ অক্টোবর ১৯৬২।

জাতীয় দিবস: ৯ অক্টোবর

ভাষা: ইংরেজি

সরকার পদ্ধতি: রাষ্ট্রপতি শাসিত

সরকার প্রধান: রাষ্ট্রপতি।

Wednesday, June 23, 2010

ঢাল নৃত্য

0 comments
ঢালী নাচ বা ঢালনৃত্য একপ্রকার যুদ্ধনৃত্য। আক্রমণ ও প্রতিরোধের ভঙ্গিতে এবং উন্মাদময়তায় পরিপূর্ণ। এগিয়ে ও পিছিয়ে যাওয়া, পাশে যাওয়ার রীতি সবই কল্পিত জ্যামিতিক রেখা সংবলিত প্রতিঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য হাতে থাকে ঢাল। ঢাল কাঠ বেত কিংবা চামড়ার হয়ে থাকে ঢালী বলতে বাংলার হাড়ী বাগদী ডোমদের নিয়ে মধ্যযুগের জমিদারদের সৃষ্টি ঢালী যোদ্ধাদেরই বোঝায়। তাদের ডান হাতে বর্শা, বাম হাতে ঢাল থাকত। ঢালী নাচে শুদ্ধ আঙ্গিক ও উৎপ্লাবন অধিক। কখনো মূল যোদ্ধার দু’পাশে থাকে দুজন দেহরক্ষী ঢালী। তাদেরও হাতে থাকে লাঠি বা বর্শা। নাচের সময় তিনজনের নাচ একসঙ্গে হয়ে থাকে। কখনো দুই দলে কৃত্রিম যুদ্ধেও অভিনয় হয়ে থাকে।
নাচের ভঙ্গির দুটি ভাগ- আক্রমণাত্মক ও আতœরক্ষাতœক। আক্রমনের সময় সজাগ ও সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে হয়। সড়কি নিক্ষেপের ভঙ্গিতে শক্তি প্রয়োগ করে। কখনো চপল হরিনীর মতো। কখনোবা উদ্ধত ভুজঙ্গের মতো এগোতে থাকে। পরনে থাকে মালকোঁচা। মাথায় লাল ফেট্টি, হাতের মণিবন্ধে কাপড় জড়ানো হাতে বর্শা ও ঢাল থাকে।
বাংলাদেশে নদীনালা বেশি থাকায় অশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধা বিবেচনা করে প্রতাপাদিত্য ঢালী সেনা গঠন করেন। তার বায়ান্ন হাজার ঢালী সৈন্যের কথা বাংলা সাহিত্যে সুপরিচিত। ঢাল তরবারি কিংবা সড়কি ঢালী সৈন্যের প্রধান অস্ত্র ছিল। বর্তমানে ব্রতচারীতে লুপ্ত এই ঢালী নৃত্যের চর্চা হয়ে থাকে। গুরুসদয় দত্ত খুলনা যশোরের কয়েকজন ঢালী সৈন্যের কাছ থেকে নাচের ভঙ্গি, ঢোলের বোল সংগ্রহ করেন তিরিশের দশকে। ঢোল বাদকই নৃত্যটির পরিচালনা করে থাকেন। বাংলার এই যুদ্ধনৃত্যটির মোট পাঁচটি পর্যায় আছে-

১. আসর বন্দনা, ২. কসরত, ৩. বীরনৃত্য বা বীরচন্দন, ৪. যুদ্ধ প্রস্তুতি ও যুদ্ধ, ৫. যুদ্ধ শেষ বা তাণ্ডব নৃত্য

পূর্বে পুরুষরাই এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমানে মেয়েরাও এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। ঢালী সৈন্যদের শরীরকে সুদ্ধ উপযোগী রাখার এবং যুদ্ধের ভাবভঙ্গীর ছন্দোবদ্ধ অনুশীলনই ঢালী নাচে রূপাতরিত হয়। বাংলার বীর সৈন্যদের বা যোদ্ধাদের প্রাচীন পরিচয় বহন করে এই নৃত্য।

ছৌ নৃত্য

0 comments
মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের মানদণ্ড হিসেবে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে ভাষা একটি অন্যতম উপাদান। মানুষের ভাব প্রকাশের আদি মাধ্যম হলো নৃত্য, যাকে ভাষার আদি রূপত্ত বলা যেতে পারে। আর এই বিষয়টি যখন একটি শিল্প রূপে পরিচিতি লাভ করে তখন সকল মানুষের অনুভূতিতে একই ধরনের রস আস্বাদিত হয়। আর তাকেই বলা হয় নৃত্যভাষার সার্বজনীনতা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতবর্ষের প্রাচীন এবং প্রথম শিল্পই হচ্ছে নৃত্য। এদেশে বর্তমানে নৃত্যচর্চা চলছে ব্যাপকভাবে। আজ বিষয়টি গবেষণারও অংশ। এক সময়ের অবহেলিত নৃত্য আর নৃত্যশিল্পীরা আজ দেশের বিরাট সম্পদ। প্রতিদিনই সংযোজন হচ্ছে এই বিষয়টিতে নতুন নতুন শাখা। তারই একটি ছৌ-নৃত্য। এই নৃত্যকে বাংলার এক প্রকার লোকনৃত্যই বলা যায়। পৌরাণিক কাহিনীর ভিত্তিতে এই ছৌ নাচ। উপমহাদেশের হাজারো লোকনৃত্য থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নৃত্য পর্যায়ে উন্নীত হতে বিভিন্ন কাল পরিক্রমায় এক একটি নৃত্যশৈলীতে যে পর্যায়ক্রমিক বিবর্তন ধারা পরিলক্ষিত হয় তারই একটি পর্যায় অতিক্রম করে আজ আবির্ভূত ছৌ-নৃত্য ধারাটি। এই নৃত্যধারাগুলোর আঙ্গিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিকে যেমন আদিবাসী নৃত্যের বিষয় ও বৈশিষ্ট্যের এক অনবদ্য প্রকাশ অন্যদিকে এই নৃত্যের প্রয়োগশৈলীতে লোকজীবনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপূর্ব ছন্দোময় প্রকাশ। বর্তমান যুগের নৃত্য রীতিতে বিমূর্ত বা বর্ষণমূলক যেসমস্ত নিরীক্ষাধর্মী নৃত্য সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলোর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই নৃত্য ধারাটি একটি বলিষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে নৃত্য শিল্পী ও দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।

ঘোড়ার দুধ

3 comments
                                                                 আজিজুর রহীম পিউ
এবার ঘোড়ার দুধ বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়। দামও চড়া। কেজিপ্রতি ৪শ টাকা। এ দুধ শিশুদের জ্বর ও চুলকানী, বাত-ব্যথাসহ অনেক রোগের উপশম করে বলে জানান ঘোড়ার কোচওয়ান রাসেল। ৬ মাস আগে ঘোড়াটির বাচ্চা হয়েছে। এ সময়ে প্রতিদিন সে দুধ বিক্রি করে ভালো আয় করছে। দিনে দুবেলা ১ কেজির মত দুধ দেয় ঘোড়াটি। বাচ্চা খাওয়ার পর যা বেঁচে যায় তাই সে বিক্রি করে। পুরনো ঢাকায় এখনও ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন রয়েছে

শ্রীমঙ্গল

0 comments
চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল। পাহাড়, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা-বাগান ঘেরা শ্রীমঙ্গল। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যাওয়ার এখনি সময়। প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে চা-বাগানের পর চা-বাগান, চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, লাউয়াছড়া রেইনফরেস্ট, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, চা গবেষণা কেন্দ্র, লাউয়াছড়া ইন্সপেকশন বাংলো, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরীপাড়া, হাইল-হাওর, ডিনস্টন সিমেট্রি, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি, টি-রিসোর্ট, ভাড়াউড়া লেক, হাজার প্রজাতির গাছ-গাছালি, দিগন্তজোড়া হাওর প্রভৃতি।
চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শ্রীমঙ্গলের অবস্থান। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জনপদের সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে সারা দেশের। ভ্রমণবিলাসীদের কাছে এ এলাকাটি যেন তীর্থস্থান।
কী কী দেখবেন
চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) : চারদিকে সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, চা-বাগান আর চা-বাগান। এরই মাঝে দাঁড়িয়ে আছে দেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ ক্যাম্পাসে আছে সারিবদ্ধ পাম, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি বৃক্ষের শোভা। লেকের জলে ফুটন্ত লাল জলপদ্ম। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র। পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে চা কারখানাসহ পুরো এলাকাটি আপনি দেখে নিতে পারেন। টি রিসোর্ট : শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে ভাড়াউড়া চা-বাগান সংলগ্ন ২৫.৮৩ একর জায়গার ওপর টি রিসোর্টের অবস্থান। অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য সুইমিংপুলসহ একটি অত্যাধুনিক টেনিস কোর্ট ও একটি ব্যাডমিন্টন কোর্টও রয়েছে এখানে। ২ রুম বিশিস্ট কটেজের ভাড়া ৩ হাজার টাকা এবং ৩ রুমবিশিষ্ট কটেজের ভাড়া ৪ হাজার টাকা। ভিআইপি রুম ২ হাজার টাকা এবং আইপি রুম দেড় হাজার টাকা।
সিতেশবাবুর চিড়িয়াখানা : দুর্দান্ত সাহসী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ সিতেশরঞ্জন দেব। এ মানুষটির সখ্য বনের পশু-পাখিদের সঙ্গে। সেই সখ্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ শহরের মিশন রোড এলাকায় তার নিজ বাসভবনে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা মিনি-চিড়িয়াখানাটি।
লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক : শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ন্যাশনাল পার্ক লাউয়াছড়ার অবস্থান। শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা বাসে চড়ে আপনি আসতে পারেন এই বনে। এখানে একটি পিকনিক স্পট আছে। এর নাম শ্যামলী। শ্যামলী থেকে আর কিছুদূর পথ গেলে লাউয়াছড়া বন বিট অফিস ও ইন্সপেকশন বাংলো চোখে পড়বে। বন বিট কার্যালয়ের সামনে দেখতে পাবেন দক্ষিণ এশিয়ার বিরল প্রজাতির ‘আফ্রিকান টিক ওক’ বৃক্ষ যা দীর্ঘকাল থেকে ক্লোরোফর্ম বৃক্ষ নামে পরিচিত। এখানে পৌঁছার পর আপনি ইচ্ছে করলে হারিয়ে যেতে পারেন ঘন সবুজ অরণ্যে। দেখতে পাবেন উল্লুক, বনমোরগ, খরগোশ, বানর, হনুমান, হরিণ, ভল্লুক, চিতাবাঘসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। এসব প্রাণী দেখতে বনের একটু গভীরে যেতে হবে। ভেতরে যেতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ইকো-ট্যুর গাইডের সাহায্য নিতে পারেন।
ভাড়াউড়া লেক : শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে জেমস ফিনলে কোম্পানির চা-বাগান ভাড়াউড়ায় রয়েছে একটি লেক। লেকে রয়েছে জলপদ্মের মেলা। চা -বাগানের বুকে এই লেকটির আকর্ষণ কম নয়। এখানে আছে বানর আর হনুমানের বিচরণ। শীতে দলবেঁধে আসে অতিথি পাখি। পাহাড়ের কাছাকাছি গেলেই দেখতে পাবেন একসঙ্গে অনেক বানর। চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। দেখবেন বানরগুলো আপনাকে ভেংচি কাটছে।
নির্মাই শিববাড়ি : আজ থেকে প্রায় ৫৫২ বছর আগে ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগণার শঙ্করসেনা গ্রামে নির্মাই শিববাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে বালিশিরা অঞ্চলে ত্রিপুরার মহারাজা রাজত্ব করতেন। প্রবল শক্তিশালী এ রাজার বিরুদ্ধে ‘কুকি’ সামন্তরাজা প্রায়ই বিদ্রোহ ঘোষণা করতেন। এরকম কোনো একদিন কুকিরাজার বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে মহারাজা একদল সৈন্য পাঠান বিদ্রোহ দমন করতে। তুমুল এ যুদ্ধে কুকিরা পরাজিত হলেও মহারাজার প্রধান সেনাপতি রণক্ষেত্রে নিহত হন। বিয়ের অল্প ক’বছরের মধ্যেই স্বামীহারা হন মহারাজা কন্যা নির্মাই। তখনকার দিনে ভারতবর্ষে সহমরণ প্রথা চালু ছিল। কিন্তু রাজকন্যা সহমরণে রাজি না হয়ে স্বামী নিহত হওয়ার স্থানে এসে শিবের আরাধনা শুরু করেন এবং সিদ্ধিও লাভ করেন। তার নামেই শিববাড়ির নামকরণ করা হয় নির্মাই শিববাড়ি। ঐতিহাসিক এই স্থানটি ধর্মীয় পৌরাণিক কাহিনী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচার-আচরণে একটি অন্যতম তীর্থস্থানের মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে লাইটেস, কার ও টেম্পোযোগে ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই এখানে পৌঁছা যায়।
হাইল-হাওর : শ্রীমঙ্গল শহরের পশ্চিম প্রান্তে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আছে এককালে বৃহত্তর সিলেটের মত্স্যভাণ্ডার বলে খ্যাত বিখ্যাত হাইল-হাওর। এই হাওরে শীত মৌসুমে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আসে অতিথি পাখিরা। তারা দল বেঁধে হাওরে সাঁতার কেটে বেড়ায়। নৌকায় চড়ে অতিথি পাখিদের সাঁতার কাটা, জলকেলি ও জেলেদের মা ছধরার দৃশ্য দেখতে পারেন। হাওরের বাইক্কা বিলে নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে অতিথি পাখিদের দেখতে পারবেন। শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলে হাজার হাজার পাখির অবাধ বিচরণের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি : বনবাদাড় আর গাছপালার সবুজ সমুদ্রের বুক চিরে চলে যাওয়া সড়ক আর রেলপথ পেরুলেই রয়েছে খাসিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি পুঞ্জি। এ পুঞ্জির নাম মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি। মাটির সিঁড়ি বেয়ে আপনি উঠে যেতে পারেন টিলা-পাহাড়ের মাথায়। ছোট ছোট অনেক টিলার উপর তারা গড়ে তুলেছেন নিজ নিজ বসতবাড়ি। তাদের ভাষায় একে বলে পুঞ্জি। খাসিয়া সম্প্রদায় গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করে এখানে। প্রতিটি পুঞ্জিতে একজন করে মন্ত্রী (খাসিয়াদের প্রধান) থাকেন। পুঞ্জির মানুষের জীবনযাত্রাকে জানতে হলে মন্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন। খাসিয়ারা থাকে শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মেজাজে, ভিন্ন পরিবেশে। একটু চোখ ফেরালেই দেখতে পাবেন পানের বরজ। খাসিয়া পুঞ্জি ঘুরে আপনি সহজেই খাসিয়াদের স্বতন্ত্র এবং বিচিত্র জীবনধারা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ : ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন গভীর রাতে এ গ্যাসকূপে ড্রিলিংয়ের সময় অগ্নিবিস্ফোরণে আশপাশের খাসিয়া পুঞ্জি, চা-বাগান, রেললাইন, সবুজ বনাঞ্চল সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই গ্যাসকূপটি এখন পরিত্যক্ত এবং সংরক্ষিত এলাকা। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। গত ৮ বছর ধরে এ এলাকাটিতে আবার সজীবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বন বিভাগ। আগুনে পোড়া গাছগুলো এখনও কালের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মাগুরছড়ায়। দর্শনার্থীরা এ এলাকায় বেড়াতে এসে অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করে মাগুরছড়ার দৃশ্যাবলি। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিলুপ্ত জীববৈচিত্র্য অচিরেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়েও রয়েছে সংশয়। মাগুরছড়ার এ এলাকাকে এখন অনুপম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে সড়কপথে এখানে আসতে নয়ন ভোলানো প্রাকৃতিক দৃশ্য এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন প্রয়োজন কেবল উদ্যোগ আর আন্তরিকতার।
ডিনস্টন সিমেট্রি : শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ডিনস্টন চা-বাগানে এর অবস্থান। শতাধিক বছর আগে শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন চা-বাগানে ডিনস্টন সিমেট্রি’র গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮০ সালে শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে ব্রিটিশদের দ্বারা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হওয়ার পর সুদূর ব্রিটেন থেকে এখানে টি প্ল্যান্টারদের আগমন ঘটতে থাকে। সেই যুগে যেসব বিদেশি এই অঞ্চলে মারা যান, সেসব বিদেশিকে সমাহিত করা হয় শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রিতে। উঁচু-নিচু পাহাড় টিলায় ঘেরা চিরসবুজ চা-বাগানের মাঝে অবস্থিত এই সিমেট্রিতে বিদেশিদের কবর রয়েছে ৪৬টি।
কীভাবে আসবেন : প্রতিদিন ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের পথে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রা করে। ৫ ঘণ্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন শ্রীমঙ্গল। পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬টায়, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ২টায় এবং উপবন রাত সাড়ে ১০টায়। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের চেয়ারকোচের ভাড়া ১৩৫ টাকা, ১ম চেয়ার ২০০ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে ৩০০ টাকা এবং স্লিপিং কোচে ৩৬০ টাকা। টিকিট সংগ্রহ করা যাবে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। বাসে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। বাস ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এসি বাসে খরচ পড়বে ২৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন : শ্রীমঙ্গল শহরে ২০টিরও বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভালো দেখে যে কোনো একটিতে উঠতে পারেন। ভাড়া মোটামুটি কম। শ্রীমঙ্গল শহরের উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলো হলো—টি টাউন রেস্ট হাউস, হোটেল সন্ধ্যা, এলাহী প্লাজা, হোটেল বিরতি, আল-রহমান, হোটেল মুক্তা ও হোটেল নীলিমা। এছাড়াও সরকারি ও আধা-সরকারি সংস্থাগুলোর বেশকিছু বাংলো রয়েছে এখানে। কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এখানে উঠতে পারেন। শ্রীমঙ্গলের সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে হলে অন্তত ৩-৪ দিন সময় নিয়ে এলেই ভালো হয়। সপরিবারে যেতে পারেন আবার বন্ধু-বান্ধব মিলে একত্রেও যেতে পারেন। শহরে খাওয়া-দাওয়ার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। নূর ফুডস, শাহ হোটেল, নোয়াখালী হোটেলের যে কোনো একটিতে আপনি স্বল্প খরচে খাওয়ার কাজ সেরে
নিতে পারেন।

Tuesday, June 22, 2010

হার্ডডিস্ক

0 comments
সিগেট টেকনোলজি নামক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ১৯৮০ সালে মাইক্রোকম্পিউটারের জন্য প্রথম হার্ডডিস্ক ড্রাইভ তৈরি করে। যা এসটি ৫০৬ নামে পরিচিত ছিল। এই ডিস্ক পাঁচ মেগাবাইট ডাটা ধারণ করতে সক্ষম ছিল। একটি আদর্শ ফ্লপি ডিস্কের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল এসটি ৫০৬। অ্যালান সুগার্ট এবং ফিনিশ কোনার নামক দুজন প্রযুক্তিবিদ এটি তৈরি করেন। আবিষ্কারের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এটির প্রায় চার মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়েছিল।

নওগাঁ

0 comments
                                                     ০০ আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন ০০
নানা ঐতিহাসিক স্থানসমৃদ্ধ রাজশাহী বিভাগের জেলা নওগাঁ। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নাটোর ও রাজশাহী জেলা, পূর্বে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা এবং পশ্চিমে নবাবগঞ্জ জেলা। আত্রাই, ছোট যমুনা, নাগর, চিরি, তুলসীগঙ্গা, পুনর্ভবা এ জেলার প্রধান নদী। কড়চার এবারের বেড়ানো নওগাঁ জেলায়।
দুবলহাটি জমিদারবাড়িঃ নওগাঁ সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জমিদার জগৎরাম রাজ পরিবারের আবাসস্থল। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত এ জমিদার বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন বেহাল দশা। ইট-সুরকিতে নির্মিত এ বাড়িতে আছে সুরম্য প্রাসাদ, দুর্গা মন্দির, রঙ্গমঞ্চ। বাড়ির মূল ভবনটিতে কমপক্ষে একশটি কক্ষ আছে। এছাড়া কারুকাজময় বারান্দা, রঙিন কাচের অলংকরণ, নানা ধরনের ভাস্কর্য এ জমিদার বাড়ির প্রধান আকর্ষণ।
বলিহার রাজবাড়িঃ জেলা সদর থেকে প্রায় সতেরো কিলোমিটার দূরে বলিহার গ্রামে অবস্থিত। জানা যায় সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক জায়গির লাভ করে বলিহারের জমিদারগণ এ এলাকায় নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন। বলিহার রাজবাড়ি এর মধ্যে অন্যতম।
কুসুম্বা মসজিদঃ নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মান্দা জেলার কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত দেশের উল্লেখযোগ্য প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন কুসুম্বা মসজিদ। এর আরেক নাম কালা পাহাড়। মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের উপরে স্থাপিত আরবি শিলালিপি অনুসারে মসজিদটি ৯৬৬ হিজরি তথা ১৫৫৮-৫৯ সালে নির্মিত। শেরশাহ শুরির শাসনামলের শেষ দিকে সুলতান গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহর রাজত্বকালে জনৈক সুলাইমান মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটের তৈরি এ মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়াল পাথরের আস্তরণ দিয়ে আবৃত। মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি ও উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে আছে দুটি মিহরাব। উত্তর-পশ্চিম কোণে আছে একটি উঁচু প্লাটফর্ম। ধারণা করা হয় সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এখানে নামাজ আদায় করতেন। মসজিদের মিহরাবগুলো খোদাই করা পাথরের নকশায় পরিপূর্ণ। নওগাঁ থেকে বাসে আসা যায় কুসুম্বা মসজিদে।
পাহাড়পুরঃ নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। এ বিহারের আরেক নাম সোমপুর বিহার। নওগাঁ শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। বহুকাল ধরে মাটি চাপা পড়ে থাকা এই বৌদ্ধ বিহারটি বেশ কয়েকবার প্রতœতাত্ত্বিক খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল আনুমানিক ৭৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮২১ খ্রিস্টাব্দে এই বিহার ও মন্দির নির্মাণ করেন। যুগ যুগ ধরে এর ধ্বংসাবশেষের উপরে মাটি চাপা পড়ে বিশাল আকৃতির পাহাড়ে রূপ নেয়। আর এ কারণেই এর নাম হয় পাহাড়পুর। হিমালয়ের দক্ষিণের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব ও পশ্চিমে ৯১৯ ফুট বিস্তৃত এই বিহারের চার পাশে ১৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৩ ফুট প্রস্থের ১৭৭টি কক্ষ আছে। ধারণা করা হয়, এসব কক্ষে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। বিহারের উত্তর দিকে এক সারিতে ৪৫ টি এবং অপর তিন সারিতে ৪৪টি করে কক্ষ ছিল।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরের উন্মুক্ত স্থানের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির। প্রায় ২৭ বর্গ মিটার জায়গার ওপরে এ মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষের উচ্চতা প্রায় ২১ মিটার। মন্দিরটি ক্রসাকৃতির এবং তিন ধাপে ক্রমহ্রাসমান ঊর্ধ্বগামী। মন্দিরের দেয়ালে রয়েছে নানা রকম পোড়ামাটির ফলকচিত্র। পাহাড়পুর খননের সময় প্রাপ্ত নানা নিদর্শন নিয়ে একটি জাদুঘর আছে পাহাড়পুর কমপ্লেক্সে ঢুকতেই। এর শীতকালীন সময়সূচি হলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং অন্যান্য ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ইউনেস্কো ঘোষিত ৩২২ তম বিশ্ব ঐতিহ্য। ১৯৮৫ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য’র অন্তর্ভুক্ত হয়। নওগাঁ থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার প্রায়। শহরের বালুডাঙ্গা বাস স্টেশন থেকে বাস যায় পাহাড়পুর। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা।
হলুদ বিহারঃ জেলা সদর থেকে আঠারো কিলোমিটার উত্তরে বদলগাছি থানার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত প্রাচীন প্রতœস্থল হলুদ বিহার। স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামে পরিচিত এ গ্রামটিতে নানা প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। ১৯৭৬ সালে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণার পর প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ ও ১৯৯৩ সালে এখানে খনন কাজ করে। ফলে প্রতি পাশে ৫.৮ মিটার দীর্ঘ বর্গাকার একটি ভিত্তি উন্মোচিত হয়। খননের ফলে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে হলুদ বিহারকে পাহাড়পুর ও সীতাকোট বিহারের সমসাময়িক কালের বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
জগদ্দল মহবিহারঃ জেলার ধামুইরহাট উপজেলায় অবস্থিত প্রতœস্থল জগদ্দল মহাবিহার। পাল রাজাদের আমলে নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। জানা যায়, রামপালের রাজত্বকালে (১০৭৭-১১২০) জগদ্দল মহাবিহার নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে প্রতœতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে এই প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের অংশবিশেষ আবিষ্কৃত হয়। এছাড়াও খননের সময় এখান থেকে দেড়শটিরও বেশি প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। নওগার বালুডাঙ্গা বাস স্টেশন থেকে বাসে ধামুইরহাট উপজেলা সদরে সেখান ধেকে আবার বাস কিংবা টেম্পুতে জগদ্দল মহাবিহার আসা যায়।
ভিমের পান্টিঃ জেলার ধামুইরহাট উপজেলায় আরেকটি প্রাচীন নিদর্শন গরুড়স্তম্ভ, স্থানীয়ভাবে যা ভিমের পান্টি নামে পরিচিত। পাল রাজা নারায়ণ পালের শাসনামলে খ্রিস্টীয় দশম শতকে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে এ স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। কালো পাথরে নির্মিত এ স্তম্ভটির উপরের অংশ ভাঙা, যেখানে আগে একটি গরুড় মূর্তি ছিল। জানা যায় বজ্রপাতের ফলে কোনো এক সময়ে মূর্তিটি ভেঙে যায় এবং স্তম্ভটি একদিকে কিছুটা হেলে পড়ে।
মাহিসন্তোষঃ জেলার পতœীতলা উপজেলায় অবস্থিত প্রতœস্থল। জনশ্রুতি আছে এক দরবেশ মাছের পিঠে চড়ে এ স্থানে এসেছিলেন। মানুষের কাছে তিনি মাহিসওয়ার নামে পরিচিতি লাভ করেন। তার নামানুসারে এ জায়গার নাম মাহিসন্তোষ। আর অন্যমতে প্রথম মহীপালের নামানুসারে এ জায়গার নামকরণ হয়। এখানে একটি প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র ও একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আছে। এছাড়া দুটি প্রাচীন বড় পুকুর আছে এ এলাকায়।
ধীবর দিঘিঃ জেলার পতœীতলা উপজেলার আরেকটি দর্শনীয় জায়গা ধীবর দিঘি। এ দিঘির মাঝখানে আছে দিব্যক বিজয়স্তম্ভ। দ্বাদশ শতকে পাল শাসক দ্বিতীয় মহীপালকে যুদ্ধে পরাজিত করে কৈবত রাজা দিব্যক বিজয়ের নিদর্শন হিসেবে এ দিঘি খনন করে এর মাঝখনে বিজয়স্তম্ভটি স্থাপন করেন। পাথরের তৈরি স্তম্ভটির উচ্চতা ৩১ ফুট ৮ ইঞ্চি। পানির নিচের অংশ ২৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাস স্টেশন থেকে বাসে পতœীতলার নজিপুরের ধীবর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে রিকশায় ধীবর দিঘি যাওয়া যায়।
পতিসর কুঠিবাড়িঃ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসরে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাচারি ছিল এখানে। রবীন্দ্র কাচারিবাড়িতে বর্তমানে সংরক্ষিত আছে কবির অনেক স্মৃতিময় নিদর্শন। প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ কবির জন্মদিনে এখানে নানা অনুষ্ঠান এবং লোকজ মেলা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।নওগাঁ সদর থেকে পতিসর আসা যায় বাসে। ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা।
কীভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি নওগাঁ যাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকার গাবতলী থেকে এ পথের বাসগুলো ছাড়ে এ পথের বাসগুলো। শ্যামলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর পরিবহন, কেয়া পরবিহন, বাবলু পরিবহন, টি আর পরিবহন ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার নন এসি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ২২০-২৪০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে নওগাঁ যায় শ্যামলি পরিবহন। ভাড়া ৪৫০ টাকা। রাজশাহী থেকেও বাসে নওগাঁ আসা যায়। ভাড়া ৭০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীল সাগর এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে বরেন্দ্র ও তিতুমীর এক্সপ্রেস, খুলনা থেকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ও রূপসা এক্সপ্রেসে সান্তাহার এসে সহজেই নওগাঁ আসা যায়।
কোথায় থাকবেনঃ নওগাঁ শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এরকম কয়েকটি হোটেল হলো- শহরের সান্তাহার রোডে হোটেল অবকাশ (০৭৪১-৬২৩৫৬), সান্তাহার রোডে হোটেল ফারিয়াল (০৭৪১-৬২৭৬৫), মুক্তির মোড়ে হোটেল আগমনী (০৭৪১-৬৩৩৫১), শহরের পাড়-নওগাঁ এলাকায় হোটেল যমুনা (০৭৪১-৬২৬৭৪), পুরনো বাস স্টেশনে হোটেল সরণী (০৭৪১-৬১৬৮৫)। এসব হোটেলে ৮০-৪০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।

Sunday, June 20, 2010

বেলারুশ

0 comments
জনসংখ্যা : ৯৬ লাখ
রাজধানী : মিনস্ক
আয়তন : ২০৭,৫৯৫ বর্গকিলোমিটার
ভাষা : রাশিয়ান, বেলারুশিয়ান (উভয় সরকারি)
ধর্ম : খ্রিস্টান
গড় আয়ু : পুরুষ ৬৩ বছর, নারী ৭৫ বছর
মুদ্রা : রুবল
রপ্তানি পণ্য : মেশিনারি, রাসায়নিক ও পেট্রোলিয়াম পণ্য
মাথাপিছু আয় : ৫,৩৮০ মার্কিন ডলার
ইন্টারনেট ডোমেইন : .নু
আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড : +৩৭৫
প্রেসিডেন্ট : আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো
সংবাদ সংস্থা : বেলটা (রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত), বেলাপান (বেসরকারি), Charter 97 Ges Belarusnews.de।

আঁচিল ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ

2 comments
আঁচিল একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। যারা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বয়সে তরুণ। বড়দের এ রোগ কম হয়। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির আঁচিল স্পর্শ করলে এ রোগ হতে পারে। প্রথমে একটি দিয়ে শুরু হলেও বাড়তে বাড়তে তা একসময় অসংখ্যটিতে পরিণত হতে পারে। তাই প্রাথমিক অবস্থায়ই এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

কী দিয়ে হয় : এটিও একটি জীবাণুজনিত রোগ। Papilloma Group-এর ভাইরাস দ্বারা এই রোগটি হয়ে থাকে।
আঁচিলের ধরন : এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- *Common wart *Plane wart * Filiform wart * Planter wart * Venereal Wart.
Common wart : এটি ব্যথাবিহীন, শক্ত এবং উঁচু গোলাকৃতির দানা বা গোটার আকারে দেখা দেয়, যার (দানার) বাইরের দিক অস্বচ্ছ এবং ছোট ছোট কাঁটার মতো দেখতে পাওয়া যায়। কখনো কখনো একাধিক হতে পারে। বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের বেশি হতে দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে সাধারণত একটি অথবা ২টির বেশি হয় না। নখের কোণ, নখের নিচে এবং হাঁটু অথবা কনুই অস্থিসন্ধিতে হতে দেখা যায়।

Filiform warts : এটা সরু লম্বা আকৃতির, যা ১-২ মি. মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এই প্রকৃতির আঁচিল মূলত ঘাড়, মুখমণ্ডল ও মাথায় বেশি হতে দেখা যায়। লম্বা ধরনের হওয়ার কারণে সাধারণত এদের আঁচিল মনে হয় না।

Plan Wart : আকারে ছোট, ত্বক থেকে খুবই সামান্য উঁচুতে উঠে থাকে। উপরের অংশ চ্যাপটা, ত্বকের রঙ ধারণ করে ছোট্ট গুটির আকারে দেখা যায়, যা মুখে এবং হাতে হয় এবং সাধারণত বাচ্চাদের হয়ে থাকে। সাধারণত এ ধরনের আঁচিল একত্রে একস্থানে অনেক থাকে।

Planter Wart : যা সাধারণত পায়ের পাতায় হতে দেখা যায় এবং তালুর অনেক গভীর থেকে শুরু হয়, গোলাকার, তালুর বাইরের অংশ অস্বচ্ছ ও শক্ত। তাই অনেকেই এ রকম আঁচিল নিয়ে চলাফেরার সময় ব্যথা পেয়ে থাকেন বলে ব্লেড দিয়ে কেটে পাতলা করে ফেলেন। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো আবার একাধিক হতে দেখা যায় এবং একটির সঙ্গে আরেকটি মিশে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মাঝখানে একটি বড় এবং তার আশপাশজুড়ে ছোট ছোট অনেক। এগুলোকে দেখতে মোজাইকের মতো মনে হয় বলে এর নাম মোজাইক আঁচিল।

Venereal Wart : একে Condyloma accuminata-ও বলা হয়। অন্য আঁচিলের মতো এগুলো শক্ত নয়। এগুলো নরম থলের মতো ঝুলে থাকে। এ ধরনের আঁচিল সাধারণত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তাই এগুলো পায়ু এবং যৌনাঙ্গ অথবা এর আশপাশে হয়ে থাকে। এ ধরনের আঁচিল অত্যন্ত সংক্রামক এবং যেহেতু যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এগুলো ছড়িয়ে থাকে তাই এ ধরনের আঁচিলে যারা আক্রান্ত হয় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুবক-যুবতী। আঁচিলের সঙ্গে গোলমাল বেধে যায় এমন একটি রোগের নাম মোলাস্কাম কনটাজিওসাম। এটি দেখলে সাধারণত আঁচিল বলে মনে হয়। এটিও একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ এবং এটিও আঁচিলের মতো ছোঁয়াচে। তবে এই ভাইরাস আর আঁচিলের ভাইরাস এক নয়। এই রোগটি সাধারণত পঙ্ গ্রুপের ভাইরাস দিয়ে হয়। এটি দেখতে গোলাকার এবং ২-৫ মিটার ব্যাসার্ধযুক্ত। সাদা এবং গোলাপি রঙবিশিষ্ট শক্ত এবং মোমের মতো স্বচ্ছ আবরণযুক্ত, যার মাঝখানে একটি গর্ত দেখতে পাওয়া যায়। এর দ্বারাও সাধারণত বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। মুখ, হাত, তলপেট এবং যৌনাঙ্গ আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

পায়ের তলার Planter আঁচিলের সঙ্গে Corn-এর গভীর মিল দেখতে পাওয়া যায়। তবে অনেককেই দেখা যায় পায়ের নিচে শক্ত হয়ে যাওয়া Corn-এর কারণে হাঁটতে পারে না। হাঁটলে ব্যথ্যা পায়। এটা কিন্তু আঁচিল নয়, আবার এটা কিন্তু ভাইরাস দিয়েও হয় না। এটা শুধু পায়ে খাওয়া Pressure-এর কারণেই হয়। কাজেই Corn-এর ক্ষেত্রে Pressure যেন না খায় তার ব্যবস্থা করতে পারলেই উপসর্গ কমে যেতে থাকে। আবার আঁচিল বা মোলাস্কাম দুটোই কিন্তু এমনিতেই চলে যেতে পারে। তবে মোলাস্কাম ছড়িয়ে পড়ার আগেই কিউরেট বা চেঁছে ভেতরের জীবাণুসহ তুলে ফেললে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়।

আবার অনেকের ঘাড়ে কিংবা বগলের ভাঁজে ছোট ছোট আঁচিলের মতো হতে দেখা যায়। এটা কিন্তু আঁচিল নয়। এটা ভাইরাসজনিত কোনো রোগ নয়। এটা বড় এবং মোটা মানুষেরই বেশি হয়। একে বলে Skin tag। দেখতে মনে হয় যেন আঁচিল। আঁচিল নিজের থেকেই ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসার প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়ে। তবে কোন ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হবে তা কেবল একজন বিশেষজ্ঞের সিদ্ধান্তই নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে Trichloroacetic acid, Phenol, Salicyslic acid, electro cauteri“ation, curretage, cryotherapy, liquid nitrogam ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ডা. দিদারুল আহসান

এমবিবিএস ডিডিভি, অস্ট্রিয়া

ফেলো, আর.এস.এইচ, এম.ডি, লন্ডন

আল-রাজী হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

সাম্বা নাচ এর ইতিকথা

0 comments
সাম্বা নাচ; বিশ্বকাপের জমকালো আসরে প্রতিবছর বিশ্বকাঁপানো গানের তালে তালে জমে উঠে এই নৃত্য। কেননা, সাম্বা নৃত্য মানেই একেবারে উন্মুক্ত আঁটসাঁট পোশাক। অনেক ক্ষেত্রে নারীর শরীরে থাকে গহনার পোশাক। যেখানে কাপড়ের কোনো ছোঁয়া থাকে না। আদিকাল থেকেই নাচের প্রতি মানুষের দুর্বলতা রয়েছে। তাই সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন দেশ আর ভিন্ন রুচির মতো নৃত্যেরও নতুন অবতারণা হয়েছে। সাম্বা নাচের জন্ম ব্রাজিলে হলেও এখন এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে এর বিকাশ।
গান আর নৃত্যের সঙ্গে সেই আদিকাল থেকেই মানুষের মিতালী। নাচের প্রতি দুর্বলতা মানুষের স্বভাবজাত। দৃষ্টিনন্দন মনহরিণী নারীদের শরীরবৃত্তিয় শৈল্পিক ভাঁজে ভাঁজে দোল খেয়ে যাওয়া নাচই হলো সাম্বা নাচ। গানের তালে তালে শরীরকে নানাভাবে দোলা দেয়া। এর মূল উৎস হলো ম্যাঙ্িিজ নাচ। উনবিংশ শতকে ব্রাজিলে এই নৃত্যের জন্ম। শুরুতে যে সাম্বা নাচ ছিল তা এখন বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। মূল সাম্বা নাচের নাম বলরুম সাম্বা। বর্তমানে প্রচলিত যেসব সাম্বা নাচ রয়েছে সেগুলো হলো-
-সাম্বা নো পায়ে
খুব হালকা পোশাকে আবৃত হবে নারী-পুরুষ। এটি একটি সলো নাচ। শরীর সোজা রেখে সাম্বা গানের সঙ্গে মিল রেখে তালে তালে পা ফেলতে হয়। সামনে এক পা আবার হিসাব কষে পেছনে এক পা। তালে তালে নাচ। কোমরের ঝাঁকুনি হতে হবে সমান সমান। এই নাচে পুরুষের মুখোমুখি নারীরা অংশ নেয়। নাচের ফাঁকেই নারী কখনো কখনো পুরুষের কোলে হেলে পড়বে। ব্রাজিলে এই নাচ অত্যন্ত জনপ্রিয়।
-সাম্বা ডি গ্যাফিএইরা
রিওডি জেনেরিও নাইট ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকে এই নাচের শুরু। মূলধারার সাম্বা নাচ আন্তর্জাতিক বলরুম সাম্বা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী বটে। গ্যাফিএইরা হলো রিওডি জেনেরিওর একটি জনপ্রিয় নাইট ক্লাব। এখানে ১৯৪০ সালে এ নাচের জন্ম। আর্জেন্টিনা ট্যাঙ্গোর মতো সামনের পা উঠিয়ে ম্যাক্সিজি অথবা সরো (অন্য একটি সাম্বা গানের রাগ) গানের তালে নাচতে হয়। পা সমান তালে চালিয়ে নিতে হবে। ড্রেসআপ হবে হালকা। কোমর যাতে বেঁকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। এর দুটি পদ্ধতি রয়েছে_ আগে বাড়া ও পিছু হটা।
-শাম্বা প্যাগোডি
সাউ পাউলা শহর থেকে এই নাচের জন্ম। শাম্বা ডি গ্যাফিএইরার মতো নয় এটি। এখানে নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলাটাই মুখ্য। অন্য নাচের তুলনায় এখানে নারীকে মনে হবে অনেকটাই আবেদনময়ী। কোমরের ভাঁজে ভাজে এই নাচে ফুটে উঠবে আদিম শিল্পকলা।
-শাম্বা অক্সি
নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণে এটি একটি সলো নাচ। প্রতিবছর ব্রাজিলে বাহিও ঋতু এলে এই নাচের উৎসব জমে ওঠে। কিছুটা লাম্বাডা নাচের মতো এই নাচের শুরুটা ১৯৯২ সালে। শুরুর কয়েক বছরের মাথায় ছুটির দিনগুলোতে এই নাচ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উত্তর-পশ্চিম ব্রাজিলে। এ মূলত কোরিওগ্রাফি ভিত্তিক নাচ। যার পুরো সময়জুড়ে থাকে গানের তালে তালে শরীরকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরতে নানা প্রয়াস। এই নাচের জন্য নারী-পুরুষকে পোশাকটা টাইট ফিট করে পরতে হয়। সেই সঙ্গে চাই আবেদনময়ী মেকাপ।
-শাম্বা রিগাই
বহুগোত্রীয় নারীদের নিয়ে ব্রাজিলে প্রতিবছর বাহিওর সময় শাম্বা ড্রামের তালে তালে জমে ওঠে এই নৃত্য। ডানিয়েলা মার্কারি নামের এক জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীর গানের সঙ্গে এই নাচ চলে। ব্রাজিলে শুধু এই নাচের জন্যই নারীদের মুখে মুখে প্রায়ই শোনা যায় বেশ কয়েকটি গান। সেগুলো হলো-'সল দ্যা লিবারদাদি'...'ও রিগাগি ইও মার'...অথবা 'পেরলা নেগরার'.. মতো জনপ্রিয় গানগুলো।
-শাম্বা রক
লাতিন নাইটক্লাবগুলোতে তুমুল জনপ্রিয় এই নৃত্য। সাউ পাউলায় এর জন্ম। কিউবান সালসা নাচের মতো এই নাচে আরো কয়েকটি নাচের প্রভাব রয়েছে। যেমন-শাম্বা ডি গ্যাফিএইরা, ফাররু, জাউক লামবাডার মতো এই নাচে থাকে তুমুল রক গানের ব্যবহার। দর্শকমাত্রই যে কারো দেহ উন্মাতাল করে দেয় এই নাচ। কারণ এখানে নৃত্যের তালে তালে থাকে নারীর শরীরকে আবেদনময়ী করে তোলার একটি প্রয়াস। কে কত আবেদনময়ী করতে পারে।
-শাম্বা ডি রোডা
অনেক জুটির সংমিশ্রণে এই নাচ। এটি ঐতিহ্যগতভাবে আফ্র-ব্রাজিলিয়ান । দীর্ঘ দিন ধরে বহু বর্ণিল সংস্কৃতিময় এসব অঞ্চলে চর্চা হয়ে আসছিল। এই নাচের মডেলরা নাচের তালে তালে একই সঙ্গে নিজেরাই গান গাইতে থাকে। দর্শকরা নাচ দেখে তাদের সঙ্গে সঙ্গে সুর মেলাবে।

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস

0 comments
Trill example ornaments২১ জুন বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ১৯৮২ সালে ফরাসি মন্ত্রী জ্যাক ল্যা‍‍‍ঙ সর্বপ্রথম বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালের ২১ জুন থেকে প্রথমে গোটা ইউরোপে এবং পরে পৃথিবীজুড়ে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালন করা হচ্ছে।

নিমতলী মার্কেট

0 comments
ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত নিমতলী সিটি করপোরেশন মার্কেট ৮০টি দোকান নিয়ে ১৯৭৯ সালে নির্মিত হয়। এখানে বেশির ভাগই পোলট্রি সামগ্রীর দোকানসহ ট্রান্সপোর্টের ছোট ছোট দোকান রয়েছে। এই মার্কেট থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চরে পোলট্রি সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এই পোলট্রি সামগ্রীর মধ্যে ভ্যাকসিনও এই মার্কেট থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ-এর লোডশেডিংসহ ডেসার লাইন কাটার কারণে লাখ লাখ টাকার ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। তাই, তারা কোনো উপায় না দেখে অন্য জায়গায় ভ্যাকসিন রেখে লস দিয়ে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে কথা হয় ফুলবাড়িয়া পোল্ট্রি সামগ্রী বিক্রেতা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এ্যাগ্রোভেটা ভ্যাকসিন এখান থেকে পুরো দেশে সরবরাহ করা হয়। অথচ বিদ্যুৎতের কারণে লাখ লাখ টাকার ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে। এতে দেশ, জনগণ এবং ব্যবসার দারুন ক্ষতি হচ্ছে। মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন বিদ্যুৎ ডেসা থেকে ক্রয় করে বেশি দামে আমাদের নিমতলী মার্কেটে সরবরাহ করে। অথচ আমরা বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন ডেসার বিল নিয়মিত পরিশোধ না করার কারণে ডেসা ডিসিসি’র লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কারণ ডিসিসি ডেসাকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার কারণে আমরা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ডেসা সময়-অসময় এসে মার্কেটের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়ে যায়। এ অবস্থায় আমরা ডেসাকে কিছুই বলতে পারি না। কারণ ডেসার কথা হলো বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে ডিসিসিকে আর ডিসিসি বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, পোলট্রি সামগ্রীর মধ্যে ভ্যাকসিনগুলো ফ্রিজে রাখা হয়। এদিকে বিদ্যুৎ নিয়মিত না থাকার কারণে দামি দামি ভ্যাকসিনগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া মার্কেটের ওয়ারিং লাইন নষ্ট থাকায় মাঝে মাঝে শর্ট সার্কিট হয়ে মার্কেটে বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দেয়। এ ব্যাপারে ডিসিসি’কে বহুবার অবগত করা সত্ত্বেও কোনো কর্ণপাত করেনি। নিমতলী মার্কেট সংলগ্ন আনন্দ বাজার বস্তিতে মাদকের রমরমা ব্যবসাও হয় বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। এখানে খামারিরা মালামাল ক্রয় করতে এসে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে।

বাহাদুর শাহ্ পার্ক

0 comments
একসময় পুরনো ঢাকাই ছিল রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ঢাকায় ইংরেজদের কাচারি স্থাপিত হয় বাহাদুর শাহ পার্ককে ঘিরে। তারও প্রায় একশ’ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গদি বা ফ্যাক্টর ছিল বাহাদুর শাহ পার্কের পশ্চিম পাশের একটি বিরাট অট্টালিকায়। বাহাদুর শাহ পার্কের পূর্ব নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। তারও পূর্বে ছিল আন্টাঘরের ময়দান, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আর্মেনীয়দের একটি ছোট দল নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে পুরনো ঢাকায় স্থিত হয়েছিল। তারা এখানে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করত। বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় আর্মেনীয়দের ছিল একটা ক্লাবঘর। সারাদিনের কর্মক্লান্তি ভুলে সন্ধ্যা নাগাদ সেখানে তারা বিলিয়ার্ড খেলত। ডিম্বাকৃতির এই বিলিয়ার্ডকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলতেন আন্টা বা আন্ডা। এভাবে ক্লাবঘরটি আন্টাঘর নামে পরিচিতি পায়। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর্মেনীয়দের কাছ থেকে ক্লাবঘরটি কিনে নেন। পরে জীর্ণ ক্লাবঘরটিকে ভেঙে বানানো হয় ময়দান। ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ভারত শাসনের ভার গ্রহণ করেন ১৮৫৮ সালে। পূর্ববঙ্গের এ অঞ্চলে প্রশাসন হাত বদলের সেই ঘোষণাপত্র পড়া হয়েছিল ঢাকার আন্টাঘর ময়দানে। সেই থেকে আন্টাঘর ময়দানের নতুন নামকরণ করা হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে। আর এ আন্টাঘরের ময়দানকে (বর্তমান ভিক্টোরিয়া পার্ক) ঘিরে আছে আমাদের দু’শ’ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক নির্মম শোকাবহ ঘটনা। ১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর দেশীয় পদাতিক বাহিনীর হাবিলদার রজব আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হলে ক্রমেই তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ইংরেজ নৌ-সেনাপতি লে. লজ-এর নেতৃত্বে ইংরেজ সেনাবাহিনী লালবাগ সেনানিবাস ঘেরাও করে দেশি সিপাহিদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। ফলে শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ। এক ঘণ্টার এ যুদ্ধে ৪১ জন দেশীয় সিপাহি নিহত হন। আর বন্দি হন বেশ কয়েকজন। বন্দি দেশ সিপাহিদের আন্টাঘরের ময়দানে (বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্কে) সবার সামনে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হয়। দেশি প্রজারা যাতে ভয় পায় সে জন্য ফাঁসির ব্যবস্থা করা হয়েছিল জনসমক্ষে। তবে সেদিন অকুতভয় এ বীরসেনানিরা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছিলেন ফাঁসির রজ্জু। শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত এ অঞ্চলের পরাধীন মানুষের আস্থার প্রতীক জাতীয় বীর সিপাহিদের এ বীরত্বে সেদিন নিরবে অশ্রু ফেলেছিল ঢাকাবাসীরা। সে সময় অনেক ভৌতিক কাহিনী গড়ে উঠেছিল আন্টাঘরের ময়দানকে ঘিরে। রাতের বেলা মানুষ এর আশপাশ দিয়ে চলাফেরা করতে ভয় পেত। তারও অনেক পরে (১৯৪৭ সাল) এদেশ থেকে ব্রিটিশ বেনিয়ারা বিতাড়িত হয়। জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র, পাকিস্তান আমলে শোকাবহ সিপাহি বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে মুঘল বাদশাহ সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের স্মৃতিতে ভিক্টোরিয়া পার্ক নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক, এখনও মুক্তিকামী মানুষের শৌর্য-বির্যের প্রতীক হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্ক। পুরনো ঢাকার আনন্দ বিনোদনের একমাত্র এ স্থানটিতে বিকাল হতেই ভিড় জমান নানা বয়সী দর্শনার্থী। পার্কের মাঝখানে রয়েছে শরীরচর্চার বিভিন্ন সরঞ্জাম। তবে এগুলোর মান খুব নাজুক। পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও নেই লাইট। শরীরচর্চা করতে আসা নয়াবাজার এলাকার টুটুল বলেন, ব্যায়ামের ইনস্ট্রুমেন্ট অনেকটাই দুর্বল। কোনটা উঁচু কোনটা নিচু। এগুলো নতুন হওয়া দরকার, ব্যায়াম করতে প্রবলেম হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত দুই বন্ধু রবিন ও জেননি বলেন, আমরা মাঝে-মধ্যে আসি। জগন্নাথের ক্যাম্পাস ছোট ও হল না থাকায় জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের জন্য এটাই (বাহাদুর শাহ পার্ক) একমাত্র আড্ডা দেয়ার জায়গা। ঘুরতে আসা চার বন্ধু মনির, বাদশা, কমল ও শাহিন বলেন, এই পার্কটা আছে তাই অন্তত আড্ডা দেয়া যায়। জিমের জিনিসগুলো নতুন কইরা দিলে ভালো অইত। এগুলোর অবস্থা খারাপ।’ প্রায় প্রতিদিনই হাঁটতে আসেন সেলিনা সুলতানা (পেশায় শিক্ষিত), তিনি বলেন, এ পার্কটা আমাদের হাঁটার একমাত্র জায়গা। এখানে তেমন সমস্যা নেই। তবে আলোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। সন্ধ্যার পর পার্কের দক্ষিণ পাশটায় থাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাছাড়া ছোট এ পার্কটির উত্তর পাশে একটু খালি জায়গা থাকলেও বসার কোনো জায়গা নেই। তাই পার্কে আসা দর্শনার্থীদের বসে বিশ্রাম নিতে অসুবিধা হয়।

Monday, June 14, 2010

নেত্রকোনা

1 comments
০০ আলোকচিত্র ও লেখা: মুস্তাফিজ মামুন ০০
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে ১৫৯ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা লাগোয়া জেলা নেত্রকোনা। এর উত্তরে মেঘালয়ের গারো পাহাড়, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা। কংস, সোমেশ্বরী, মগরা, ধলা প্রভৃতি এ জেলার প্রধান নদী। নেত্রকোনার বিভিন্ন জয়গায় ভ্রমণ নিয়ে কড়চার এবারের বেড়ানো।

বিরিসিরি আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি

জেলার দুর্গাপুর থানার বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানান নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। এখানে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদে জনগোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ

১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টঙ্ক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি থেকে কিছুটা সামনে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর এগুলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। বর্ষা মৌসুমে শোমেশ্বরী জলে পূর্ণ থাকলেও শীত মৌসুমে নদীটি পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মনি সিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে তিন দিন ব্যাপী মনি মেলা নামে লোকজ মেলা বসে।

সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি

জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনর্নির্মাণ করেন। এ জমিদার বাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। বড় বাড়ি, মেজ বাড়ি, আবু বাড়ি ও দুই আনি বাড়ি। জানা যায় ১২৮০ মতান্তরে ১৫৯৪ খ্রীস্টাব্দের কোনো এক সময়ে কামরূপ কামাখ্যা থেকে শোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্রাহ্মণ এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যাবার পরিকল্পনা করেন। শোমেশ্বর পাঠক গারো রাজা বৈশ্যকে পরাজিত ও নিহত করে রাজ্য দখল করে নেন। সে সময়ে সুসং রাজ্যের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী ছিল আদিবাসী, যাদের অধিকাংশই আবার গারো। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিনশ বছর তার বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারি করে।

সাধু যোসেফের ধর্মপল্লি

বিরিসিরি থেকে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানীখং গ্রাম। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লি। রানীখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।

রাশমণি স্মৃতিসৌধ

রানীখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাবার পথে বহেরাতলীতে আছে হাজং মাতা রাশমনি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টঙ্ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে রাশমণি স্মৃতিসৌধ।

বিজয়পুর পাহাড়

রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।

নেত্রকোনার হাওর

জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দায় কম বেশি ৫৬ টি হাওর ও বিল আছে। শুস্ক মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। মোহনগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় দিকলাকোনা গিয়ে এখানকার ডিঙ্গাপোতা হাওরে প্রবেশ করা যায়। এখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে হাওরের বিভিন্ন গ্রামে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে হাওরের গ্রামগুলো একেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাবার বাস ছাড়ে। ভাড়া ১৮০-২০০ টাকা। নেত্রকোনা সদর থেকে দুর্গাপুর যাবার বাস সার্ভিস আছে। ঢাকা থেকে সরাসরি মোহনগঞ্জ যায় ঢাকার কমলাপুর থেকে বিআরটিসি ও মহাখালী থেকে নেত্র পরিবহন, রফ রফ পরিবহন, ইকোনো পরিবহনের বাস। ভাড়া ১৭০-১৮০ টাকা। ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেন থাকলেও তা সঠিক সময়ে চলাচল করে না।

কোথায় থাকবেন

দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ূথ মেন খৃষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস। এখানকার তিনজনের কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা এবং একজনের কক্ষের ভাড়া ১৫০। ফোন- ০১৭৩১০৩৯৭৬৯। এছাড়া এখানে ইয়ূথ ওমেন খৃষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইডব্লিউসিএ পরিচালিত আরেকটি রেস্ট হাউস আছে। ফোন- ০১৭১২০৪২৯১৬।

এছাড়া দুর্গাপুরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। উল্লেখযোগ্য দু-একটি হলো- স্বর্ণা গেস্ট হাউস, ফোন- ০১৭২৮৪৩৮৭১২। হোটেল সুসং, ফোন: ০১৯১৪৭৯১২৫৪। হোটেল গুলশান, ফোন- ০১৭১১১৫০৮০৭। এসব হোটেলে ১০০-৫০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে। হাওর অঞ্চলে থাকার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই হাওর ভ্রমণে গেলে মোহনগঞ্জ থানা শহরে থাকতে হবে। এ শহরে থাকার জন্য নিম্নমানের কিছু হোটেল আছে। এরকম দু-একটি হোটেল হলো স্টেশন রোডে হোটেল শাপলা, ফোন: ০১৭১২১৩৭৬৫৯। স্টেশন রোডের আরেকটি হোটেল হলো হোটেল পাঠান, ফোন- ০১৯১৬৮৮৮৪৬০। এসব হোটেলের কক্ষ ভাড়া ৫০-১০০ টাকা।

Sunday, June 13, 2010

চানখারপুল সিটি করপোরেশন মার্কেট

0 comments
                                                                      ০০ এইচ করিম ০০
চাঁনখারপুলে একতলা ডিসিসি’র মার্কেটটি ১৩০টি দোকান নিয়ে গড়ে উঠেছে। ২০০৩ সালে ডিসিসি মার্কেটটি প্রতিষ্ঠা করে। ডিসিসি ২০০৩ সালে মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে এলোটি আসতে দেরি হওয়ায় প্রতিটি দোকানের সাটার ছিল অরক্ষিত। এই খোলা ঘরের ভিতরে সে সময়ে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য ছিল। দিনে-দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত। সন্ধ্যার পর সাধারণ লোকজন চলাচল করতে ভয় পেত। তখন এখানে হিরোইনসেবীদের উৎপাতে এলাকায় মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারত না। ডিসিসি আস্তে আস্তে দোকান এলোটিদের দোকান বুঝিয়ে দেয়ার পর ক্রমান্বয়ে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থান হিসেবে রূপ লাভ করতে থাকে। তবে এখনও যে, মাদকসেবীদের উৎপাত নেই তা অবশ্য বলা যাবে না; তবে পরিমাণে কিছুটা কম। এ ব্যাপারে কথা হয় চাঁনখারপুল সিটি করপোরেশন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বশনের সাথে। তিনি জানান, মার্কেট যখন বন্ধ ছিল চালু হয়নি, তখন হিরোইনসেবীরা এখানে বেশ আড্ডা দিত। ছিনতাই অহরহ ঘটত। মার্কেট চালু হবার পর এখন আর তারা নেই। দোকানদাররা শান্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তবে আমাদের কিছু সমস্যা নিয়ে চলতে হচ্ছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য- এখানকার দোকানদারদের কাছ থেকে ডিসিসি কর্তৃক যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল। এই ভাড়াকে সহনীয় পর্যায়ে আনার ব্যাপারে ডিসিসির প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, যেহেতু এখানে রাতে ও দিনে মালামাল ওঠা-নামা করে ডিসিসি কর্তৃক সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মধ্যে মালামাল ওঠা-নামা করছে। এখানে সিকিউরিটির ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ডিসিসির প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, এখানে যারা ব্যবসা করছে সবাই নিজস্ব এবং অল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। এদের নিরাপত্তা বিধানে ডিসিসি সচেষ্ট হবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, মার্কেট অবকাঠামো তৈরির পর থেকে ডিসিসি আর কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না। বছরে এই মার্কেট থেকে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হচ্ছে অথচ এই মার্কেটের দিকে ডিসিসির কোনো নজর নেই। এখানে রাতে ডিসিসির কোনো সিকিউরিটির ব্যবস্থা নেই। ব্যবসায়ীদের নিজস্ব লোক দিয়ে সিকিউরিটির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। তাও অপ্রতুল।

Saturday, June 12, 2010

ক্রীতদাসত্বের সাক্ষী

0 comments
ছবিটা দেড় শ বছরের পুরোনো। অষ্টাদশ শতাব্দীর ষাটের দশকের দিকে তোলা। কিন্তু ছবিটি যেন আরও বহু বছরের কথা বলে। তুলে ধরে আমেরিকার কালো ইতিহাসের নগ্ন অধ্যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের একটি বাড়ির চিলেকোঠা থেকে ছবিটি উদ্ধার করা হয়েছে। ছবির একটি বালকের নাম জন। পায়ে জুতা নেই। গায়ে ছেঁড়া ও তালি দেওয়া জামাকাপড়। খালি একটি ব্যারেলের ওপর বসে আছে সে। পাশেই তার বয়সী আরেকটি বালক। তবে তার পরিচয় অজানা। উষ্কখুষ্ক চেহারা দুজনেরই।
মার্কিন শিল্প-সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি আমেরিকায় গৃহযুদ্ধকালীন ছবি। শিশু দুটি ক্রীতদাস অবস্থায় অথবা ক্রীতদাস থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মুহূর্তের ছবি। এটি আমেরিকার অন্ধকার ইতিহাসের সাক্ষী।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারির আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ উইল স্ট্যাপ বলেছেন, ‘ছবিটি আমেরিকার কালো ইতিহাসের মর্মভেদী চিহ্ন। শিশু দুটি সেই ইতিহাসের শিকার।’
নর্থ ক্যারোলাইনার সবচেয়ে বড় শহর শারলোটের একটি বাড়ি থেকে ছবিটি উদ্ধার করা হয়েছে। এর সঙ্গে কিছু নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। এসব নথি থেকে জানা গেছে, ছবিটির তখনকার মূল্য ছিল এক হাজার ১৫০ ডলার।
নিউইয়র্কের ব্যক্তিগত সংগ্রাহক কেয়া মর্গান বলেন, ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে তিনি ছবির একটি অ্যালবাম কিনেছেন। জন ছাড়াও এই অ্যালবামে আরও কয়েকটি বালক ও পরিবারের ছবি রয়েছে। তিনি বলেন, যে বাড়িতে ছবিটি পাওয়া গেছে তিনি বর্তমানে বেঁচে নেই। তিনি সম্ভবত ক্রীতদাস বালক জনের জ্ঞাতি ছিলেন। মর্গান বলেন, ‘আমি সবসময় এ ধরনের জিনিস কিনে থাকি। তবে এ ছবিটি আমাকে খুবই আহত করেছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ছবিটি উনিশ শতকের বিখ্যাত আলোকচিত্রী ম্যাথিউ ব্রাডির স্টুডিও থেকে তোলা। তবে উইল স্টাপ বলেন, ব্রাডি নিজে হয়তো ছবিটি তোলেননি। তুলেছেন তাঁর শিক্ষানবিশ আলোকচিত্রী টিমোথি ও সুলিভান। সুলিভান গৃহযুদ্ধের সময়কার বহু ছবি তোলেন।
মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের প্রশাসক ও লেখক হ্যারল্ড হোলজার বলেন, ছবিগুলোতে দেখা গেছে, বহু প্রাপ্তবয়স্ক লোকজনকে পেটানো হয়েছে অথবা চাবুক দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে এই ছবিটা হলো খুবই সূক্ষ্ম। তাই এটি দীর্ঘদিন ধরে অপ্রকাশিত ছিল।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত আব্রাহাম লিঙ্কন ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রন সুডাল্টার বলেন, ‘ছবিটি ক্রীতদাসপ্রথার প্রকৃত চিত্র। এ সময়টা ছিল ভয়াবহ। বড়-ছোট সবাই সেই ভয়ানক সময়ের শিকার হয়েছে।’
মর্গান বলেন, ‘জনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। লোকজন তার ব্যাপারে ভুলে গেছে। এমনকি ইতিহাসেও তার স্থান নেই। জনের মতো লাখ লাখ শিশু অন্যায়ের শিকার হয়েছে। এ ছবি সেসব শিশুরই কথা বলে। আমি এ রকম ছবি আর দেখিনি।’ সূত্র: এপি

Friday, June 11, 2010

বংশগত টাক পড়া সমস্যা

0 comments
বংশগত টাককে মেডিক্যাল ভাষায় মেল প্যাটার্ন হেয়ার লস অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মাথার মাঝখানে ও কপালের দুই পাশ থেকে আস্তে আস্তে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং একটা পর্যায়ে চুল পড়ে মাথা খালি হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। এ জাতীয় টাক হওয়ার কারণ, টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন মাথার ত্বকের ওই স্থানগুলোতে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরনে (ডিএইচটি) পরিণত হয় এবং এই ডিএইচটি’র প্রভাবে মোটা চুল প্রথমে পাতলা চুল এবং এক পর্যায়ে হেয়ার ফলিকল (চুলের গোড়া) শুকিয়ে গিয়ে চুল সম্পূর্ণভাবে ঝরে যায়।

টেস্টোস্টেরন হরমোন ডিএইচটিতে পরিণত হতে একটি এনজাইমের প্রয়োজন ছিল। সেই এনজাইমের নাম ৫-আলফা রিডাকটেজ। সুতরাং এই ৫ আলফা রিডাকটেজের কার্যকারিতা যাদের মাথার ত্বকে বেশি তাদেরই এ জাতীয় টাক পড়ে। এ কার্যকারিতা বেশি বা কম হওয়াটা নির্ভর করে জেনেটিকের ওপর অর্থাৎ বংশগত প্রভাবের ওপর। তাই এ জাতীয় টাককে বংশগত টাক বলা হয়, অর্থাৎ বাবার মাথায় টাক থাকলে ছেলের মাথায় টাক পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে নতুন চিকিৎসার ব্যবস্থা এসেছে তা হচ্ছে ৫ আলফা রিডাকটেজ এনজাইমকে কার্যকর হতে না দেয়া। ফলে টেস্টোস্টেরন থেকে ডিএইচটি তৈরি হতে না পারা এবং ডিএইচটি তৈরি হতে না পারলে চুলের গোড়া শুকিয়ে যাবে না এবং টাকও পড়বে না। ওষুধটির বৈজ্ঞানিক নাম ফিনাস্টেরয়েড। এই ফিনাস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ কিন্তু কয়েক বছর আগে থেকেই বাজারে আছে যেমন-প্রোস্টেট গ্ল্রান্ড বড় হয়ে যাওয়ার চিকিৎসায় (তবে ডোজ ভিন্ন ব্যবহৃত হতো)। এত দিন একটি ধারণা ছিল, এ জাতীয় ওষুধ যৌনশক্তি কমাতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, যৌনশক্তি রক্ষার জন্য যে রিসেপ্টর (এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর) রয়েছে তার ওপর এর কোনো প্রভাব নেই। তবে পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এ জাতীয় সমস্যা ১-৩ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে- যা কিনা ওষুধ বন্ধ করে দিয়ে অথবা ওষুধ চালিয়ে গিয়েও কাটিয়ে উঠেছেন অনেকে। রোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা নেয়াই মঙ্গল। কাজেই বংশগত টাক পড়ার আশঙ্কা থাকলে এই ওষুধ সেবনে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা রয়েছে। যত দিন মাথায় চুল প্রয়োজন তত দিন ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। তবে ইতোমধ্যে যাদের টাক পড়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে কি এ ওষুধ কোনো উপকারে আসবে? হ্যাঁ আসবে, তবে সামান্য। অর্থাৎ প্রতিদিন এক মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট অš-ত পক্ষে তিন মাস সেবনের পর থেকে টাক পড়া স্থানে চুল গজাতে শুরু করবে।

মহিলাদের কি কখনো ছেলেদের মতো টাক হতে পারে? হ্যাঁ হতে পারে। মেনোপজ হওয়ার পর অর্থাৎ ৪০-৫০ বছর বয়সের মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে তখন ফিমেল হরমোনের পরিমাণ কমে যায় এবং মেল হরমোন বা টেস্টোস্টেরন/ এন্ড্রোজেনের আধিক্য বেড়ে যায় ও একই নিয়মে ছেলেদের মতো টাক পড়ে। ঠিক একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কি ওই একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কি ওই একই চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয় যাবে? হ্যাঁ, নেয়া যাবে এবং উপকারও পাবে। তবে খুব সাবধান, অর্থাৎ মাসিক হচ্ছে গর্ভধারণ করার ক্ষমতা বা বয়স রয়েছে এমন মহিলারা যেন চুলপড়া রোধে এ জাতীয় ওষুধ সেবন না করেন। তাদের ক্ষেত্রে এটি সেবনে গর্ভের শিশু জন্মগত ক্ষতির ঝুঁকি থাকে এমনকি গর্ভধারণে সক্ষম বয়সের মহিলাদের খালি হাতে এ জাতীয় ওষুধ ধরাই নিষেধ, খাওয়া তো দূরের কথা। ওষুধটি শিশুদের নাগালের বাইরেও রাখতে হবে। সর্বোপরি এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি বিরাট সাফল্য। টাক পড়তে না দেয়া এবং টাক পড়া মাথায় চুল গজানোর এটিই প্রথম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন উন্নতমানের ওষুধ। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যবহার করতে হবে।

ডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, চর্মরোগ ও যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ
কন্স্যালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট
ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান
সহকারী অধ্যাপক
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Wednesday, June 9, 2010

Seal Hunting

0 comments
The Canadian Government had opened the seal hunting season, allowing hunters to kill up to 275,000 young harp seals on the ice floes off Eastern Canada, 5000 more than 2007 despite their earlier promises of reducing this number.

Once more a gallery from Reuters perfectly describes what's happening:

উমেদার

0 comments
বিভিন্ন সরকারি অফিসে বিশেষত ভূমি অফিসে একশ্রেণীর লোক দেখা যায়, যারা সরকারি কর্মচারী নয়। অথচ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, বালাম অনায়াসে ঘাঁটাঘাঁটি করে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। ভূমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, খতিয়ান বহি, বন্দোবস্তি মামলার নথি, নামজারি জমা খারিজ মামলার নথি, ট্রেসম্যাপ, খাজনার দাখিলা, প্রতিবেদন প্রস্তুত সব ক্ষেত্রেই অবাঞ্ছিত অথচ নিয়োজিত (?) এই ব্যক্তিদের পদচারণা। এদের পরিচয় উমেদার। সরকার বা বিধিবদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠান এদের নিয়োগ করেনি, লাইসেন্স দেয়নি। সরকারি তহবিল থেকে এরা বেতন পায় না। অথচ দিনশেষে পকেট ভর্তি মুঠো মুঠো টাকা নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। এদের হাতে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিরাপদ নয়। অথচ এরা বগলদাবা করে ওইসব ফাইল নথি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কোনো ফাইল বা নথিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাগজ Manipulation হলে খতিয়ান বহির পাতা ছিঁড়ে গায়েব হয়ে গেলে, বন্দোবস্তির ট্রেসম্যাপে ঘষামাজা দেখা গেলে এই উমেদার নামক কর্মচারীকে (?) দায়ী করার উপায় নেই। এদের বৈধ আয়ের কোনো উৎস নেই। আমরা নসর পেয়াদার কথা জানি। অথচ এরা পেয়াদাও নয়। এই বিপজ্জনক উমেদারের হাতে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কৌশলে অর্থ আদায় এদের প্রধান কাজ।

Tuesday, June 8, 2010

চারুকলা শিক্ষা

0 comments
তৎকালীন সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে শিল্পী আনোয়ারুল হক, শিল্পী শফিউদ্দিন আহমেদ, শিল্পী কামরুল হাসান, শিল্পী মোঃ কিবরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পুরাতন ঢাকায় জংশন রোড ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলের একটি পুরাতন জীর্ণ বাড়ীতে প্রথম চারুকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৩ সালে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনষ্টিটিউট নামে পরিচিতি লাভ করে। সে সময় সনাতন পদ্ধতিতে বিএফএ ও মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করা হত। ১৯৯২-৯৩ সালে চারুকলা শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্মানসহ মাস্টার্স চালু হয়। গত বছর থেকে এই চারুকলা ইনষ্টিটিউট চারুকলা অনুষদ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এখানে বর্তমানে ৮টি অনুষদ চালু রয়েছে। যার মধ্যে পেইন্টিং গ্রাফিক ডিজাইন, প্রিন্ট মেকিং, প্রাচ্যকলা, ভাস্কর্য, সিরাসিম, কারুশিল্প ও আর্ট এন্ড হিস্ট্রি। প্রতিটি অনুষদের সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ছাড়াও দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ, অনার্স, মাস্টার্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ অনার্স, মাস্টার্স। সদ্য চালু হওয়া খুলনা চারুকলা ইনষ্টিটিউটে অনার্স, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ রয়েছে। যেখানে ইচ্ছে করলেই চারুকলা অনুরাগী শিক্ষার্থী সম্মানসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করতে পারেন।
চারুকলায় কেন পড়বেন: বিশ্বের সকল দেশেই নন্দনতত্ত্বের বিকাশ ঘটেছে, পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর কমতি নেই। আধুনিককালে শিল্পচর্চার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সফলও হওয়া যায় ক্রিয়েটিভ কাজের মাধ্যমে। শিল্পকর্ম চর্চা ছাড়াও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চাকরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এই চারুকলা ডিগ্রিধারীদের। দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অনেক ভাল সুযোগ রয়েছে যা চারুশিল্পীদের সহজেই অর্থনৈতিক যুক্তি এনে দেয়। এছাড়া ইচ্ছে করলে কেউ নিজেই একটি ক্রিয়েটিভ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারেন। যেখানে গ্রাফিক্সডিজাইন, ফ্যাশন হাউজ, বুটিক শপ এর অনন্য উদাহরণ। তবে সবচেয়ে বড় কথা হল একজন চারুকলা শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য থাকা চাই শিল্পচর্চা করা। দেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা নিজ নিজ কর্মের মাধ্যমে সফল হয়েছেন। শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে দেশকে ভালোবাসা আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং নিজের প্রতিভা দেশ-বিদেশে তুলে ধরা।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই চারুকলা শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চারুকলা শিক্ষার কলেজ গড়ে উঠেছে। এই কলেজগুলোতে ভর্তি হতে হলে এসএসসি পাসের পর কলেজের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি হতে হবে।

একটি কথা জানা প্রয়োজন যে, চারুকলা যারা পড়তে চান তাদের অবশ্যই ড্রইং জানা জরুরি। শিল্পমান থাকলে ছোটবেলা থেকে যারা আর্ট বা আঁকাআঁকি করেন মনের মধ্যে এক ধরনের আর্ট বা শিল্পবোধ কাজ করে তারাই এ লাইনে ভালো করবেন। চারুকলায় একটি সৌখীন বিষয় যা জোর করে মুখস্থ করে সম্ভব নয়।

কোথায় কোথায় চারুকলা বিষয়ক পড়ালেখা করতে পারবেন- ১. ঢাকা বিশ্ববিশ্বদ্যালয় চারুকলা অনুষদ (অনার্স, মাষ্টার্স), ২. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগ (অনার্স, মাষ্টার্স), ৩. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগ (অনার্স, মাষ্টার্স), ৪. কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় (ত্রিশাল) চারুকলা বিভাগ (অনার্স), ৫. খুলনা চারুকলা ইনষ্টিটিউট (অনার্স), ৬. ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (অনার্স, মাষ্টার্স), ৭. শান্তমারিয়ম ক্রিয়েটিভ আর্ট এন্ড ডিজাইন, ৮. নারায়ণগঞ্জ আর্ট কলেজ (অনার্স), ৯. রাজশাহী আর্ট কলেজ, ১০. বগুড়া আর্ট কলেজ (বগুড়া) বিএফএ, ১১. যশোর আর্ট কলেজ বিএফএ, ১২. ময়মনসিংহ আর্ট কলেজ বিএফএ।

তেজগাঁও কলেজ

0 comments
ঢাকা শহরের অন্যতম একটি ব্যস্ত এলাকা ফার্মগেট। আর ফার্মগেটের পাশেই অবস্থিত তেজগাঁও কলেজ। বর্তমানে এই ক্যাম্পাসে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। ১৯৬১ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তেজগাঁও কলেজের ৫০ বছর পূর্তি হতে আর মাত্র একটি বছর বাকি। অর্ধদশকের পুরনো এই কলেজ ক্রমশ ভাল অবস্থান করে নিয়েছে। সারি সারি নতুন ভবন ও পুরাতন ভবন মিলে কলেজের অতীত ঐতিহ্য এবং বর্তমানের আধুনিকতার ছোঁয়া মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বর্তমানে এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।
এই কলেজের নিজস্ব কোন খেলার মাঠ নেই। তবুও ইনডোর গেমস এর ক্ষেত্রে তারা কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এগিয়ে যাচ্ছে সবার সাথে পাল্লা দিয়ে।

আইইএলটিএস তথ্য

0 comments
আইইএলটিএস কি?
আইইএলটিএস সংক্ষিপ্ত রূপ। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ইংরেজী ভাষাশিক্ষা পরীক্ষা পদ্ধতি। যা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তির একটি পূর্বশর্ত। এই টেস্টিং পদ্ধতির মাধ্যমে যাদের মাতৃভাষা ইংলিশ নয়, তারা ইংরেজী ভাষার উপর কতটুকু দক্ষতা রাখেন তার পরীক্ষা নেয়া হয়। ইউকে (যুক্তরাজ্য) এবং অস্ট্রেলিয়া যৌথ উদ্যোগে এই পদ্ধতি চালু করে।
কেন দরকার?
স্টুডেন্ট ভিসায় যারা বিদেশে (যেসব দেশে ইংরেজী ভাষা প্রচলিত) পড়ালেখা করতে চান তাদের অবশ্যই আইইএলটিএস লাগবে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ ও ইউরোপের অনেক দেশে পড়াশুনা করতে চাইলে আইইএলটিএস স্কোর লাগবে। যারা বিদেশে চাকরি করতে চান বা রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস পেতে চান তাদের ক্ষেত্রেও আইইএলটিএস শর্ত রয়েছে। তাদের ভিসা প্রাপ্তিতে এটি সহায়তা করে। দেশের অভ্যন্তরে যে কোন চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষা দক্ষতা বিচারে এই কোর্সের মূল্যায়ন করা হয়।
আইইএলটিএস পরীক্ষা গ্রহণের অথরিটি
আইইএলটিএস পরীক্ষা হয় সরাসরি বিদেশ থেকে। পরীক্ষা নেয়ার দু’টি অথরিটি আছে- ১. ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ইএসওএল, বাংলাদেশে এর পরীক্ষা কেন্দ্র হচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। ২. দ্বিতীয় অথরিটি হচ্ছে আইডিপি (অস্ট্রেলিয়া)। বাংলাদেশে দুইটি জায়গায় এর পরীক্ষা নেয়া হয়। এক- আইডিপি সেন্টার, সিডব্লিউএন (এ), কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, গুলশান, ২, ঢাকা। দুই- বিইটিএস (ভিকটোরিয়া লিমিটেড), বাড়ী-৫৫, রোড-৪, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
পরীক্ষার ফি ও রেজিস্ট্রেশন
আইইএলটিএস পরীক্ষার ফি ১০,০০০/- (দশ হাজার টাকা মাত্র)। এ টাকা রেজিস্ট্রেশনের সময় পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের সময় পাসপোর্ট এর প্রথম পাঁচ পৃষ্ঠার ফটোকপি ও ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো জমা দিতে হয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় পাসপোর্টে এর মূল কপি অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতি
আইইএলটিএস পরীক্ষা ৪টি সেকশনে বিভক্ত- লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। সবগুলো পরীক্ষা একই দিনে হতে পারে, নাও হতে পারে। তবে লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং একই দিনে পরপর হবে। স্পিকিং পরীক্ষা মূল পরীক্ষার দিন অথবা আগের বা পরের দিন হতে পারে। প্রতিটি মডিউলে ব্র্যান্ড স্কোর হলো ৯। অর্থাৎ প্রতিটি মডিউলের পরীক্ষায় আপনি যত পাবেন, তাই কাউন্ট হবে।
ফলাফল ও মেয়াদ
সাধারণত পরীক্ষার ১২ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। আইইএলটিএস-এর ফলাফলকে ব্যান্ড স্কোর বলে। এই আইইএলটিএস স্কোর-এর মেয়াদ ২ বছর বৈধ থাকে। ২ বছরের মধ্যে কেউ বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারলে তাকে আবার পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষা যতবার ইচ্ছা দেয়া যায়। তবে প্রত্যেবার পরীক্ষার ফি দিতে হবে।
আইইএলটিএস কত ধরনের?
আইইএলটিএস দুই ধরনের হয়: ১. একাডেমিক ও ২. জেনারেল ট্রেইনিং। যারা বিদেশে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে যাবে তাদের জন্য একাডেমিক আইইএলটিএস লাগবে। চাকরি বা মাইগ্রেশনের জন্য জেনারেল ট্রেইনিং আইইএলটিএস লাগে। তবে কোন ক্ষেত্রে একাডেমিক আইইএলটিএস-এর মাধ্যমে এক বছরের মধ্যে মাইগ্রেশন করা যায়।
কারা আইইএলটিএস কোর্স করায়?
যাদের ইংরেজীতে ভালো দখল আছে তাদের দীর্ঘ সময় ধরে পৃথক আইইএলটিএ কোর্স করার প্রয়োজন নেই। শুধু পরীক্ষার বিষয় ও প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে একটু জেনে নিলেই হয়। তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজীতে দুর্বল। তাদের ইংরেজীতে ভাল দখল তৈরি করে আইইএলটিএস পরীক্ষায় কাঙিক্ষত স্কোর করার উপযোগী হিসেবে তৈরি হতে হয়। এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আইইএলটিএস প্রস্তুতিমূলক কোর্স করিয়ে থাকে। এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য ও ঠিকানা দেয়া হলো-

ব্রিটিশ কাউন্সিল: কোর্স ফি ১১৫০০ টাকা। কোর্সের মেয়াদ: আড়াই থেকে ৩ মাস। প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে সপ্তাহে ৩দিন ক্লাস হয়। ব্রিটিশদের দ্বারা এখানে ক্লাস নেয়া হয়। এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিল আইইএলটিএস ওয়ানডে ওয়ার্কশপ চালু করেছে। টোকেন ফি ৬০০ টাকা।

যারা উচ্চ শিক্ষিত ও ইংরেজীতে দক্ষ, যাদের আইইএলটিএস করার দরকার নেই তারা এই কোর্স করতে পারেন। এতে পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন ও ভালো স্কোর করার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়ে থাকে। যোগাযোগ: ৫, ফুলার রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাইফুর’স: কোর্স ফি ৮৫০০ টাকা। তবে বিশেষ ছাড়ে এখন ৫৫০০ টাকায় ভর্তি হওয়া যাচ্ছে। কোর্সের মেয়াদ: ১ মাস থেকে বিভিন্ন মেয়াদী কোর্স রয়েছে। যোগাযোগ: প্রধান শাখা- ৬৯/১, সুবাস্তু টাওয়ার (৪র্থ তলা), গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবা: ০১১৯৮০১৩১১২, ০১৭১৩২০৪৭৮৯।

ডেমেক্রেসিওয়াচ এডুকেশন: ঢাকা- ৭, সার্কিট হাউজ রোড, রমনা, ঢাকা-১০০০। ফোন: ৯৩৪৪২২৫-৬, ০১৮১৪০৯৯৯০৯।

এফএম মেথড: বিশেষ ছাড়ে বর্তমানে কোর্স ফি ৫০০০ টাকা। কোর্সের মেয়াদ ১ মাস থেকে ৩ মাস। যোগাযোগ: এফএম টাওয়ার, ১/১ পূর্ব রাজাবাজার, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। ফোন: ৯১৪৪৩৩৪, মোবা: ০১৭৩০০৫০২০০। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় এর শাখা রয়েছে।

মেন্টরস: যোগাযোগ: প্রধান কার্যালয়-১৬৬/১ মিরপুর রোড (ডলফিন গলির পাশে), কলাবাগান, ঢাকা। ফোন: ৯১৩১৮২৮, মোবা: ০১৭১৩২৪৩৪০১। এছাড়া মৌচাক ও উত্তরাতে শাখা রয়েছে।

সেন্টজোনস: কোর্স ফি ১০৫০০ টাকা। কোর্সের মেয়াদ ৩ মাস, সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস, প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে। তবে কেউ আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভাল স্কোর করতে না পারলে তাকে ভর্তি অবস্থায় রাখা হয়। যোগাযোগ: ৫/৪, ডি-ব্লক, লালমাটিয়া। মোবা: ০১৭৩৩৭১৮২৮৭।

জেনিথ: কোর্স ফি ৭০০০ টাকা। কোর্সের মেয়াদ ৩ মাস, সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস। যোগাযোগ: ৩১, মালেক টাওয়ার (নীচ তলা), ফার্মগেট, ঢাকা (আল-রাজী হাসপাতালের পাশে)। মোবা: ০১৯১২০২৯৬৪৪।

গ্লোবাল: ভর্তি ফি ৬৫০০ টাকা। কোর্সের মেয়াদ ৩মাস, সপ্তাহে ৩দিন ক্লাস। যোগাযোগ: প্রধান শাখা- ১৮, ইন্দিরা রোড, তেজগাঁও কলেজের পাশে, ফার্মগেট। ফোন: ৮১১২০৬৫, মোবা: ০১১৯০৯৮৪৯৬৯। এছাড়া গ্রীনরোড, মৌচাক, যাত্রবাড়ী, বাড্ডা, উত্তরাতে শাখা রয়েছে।

গেটওয়ে: কোর্স ফি ৫৬০০টাকা। যোগাযোগ: ৬২/এ, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা। মোবা: ০১৭১১৫৬০২৮৫।

অবজার্ভ: প্রধান শাখা- কনকর্ড টাওয়ার (৪র্থ তলা), সেন্টার পয়েন্ট, ফার্মগেট। এছাড়া শান্তিনগর, লালমাটিয়া, বাড্ডা ও বারিধারায় শাখা রয়েছে। যোগাযোগ:০১৯১৩১১০৪১১।

ওয়ার্ল্ড ভিশন: কোর্স ফি ৭০০০ টাকা। কোর্সের মেয়াদ ৩মাস, সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস। যোগাযোগ: ১৩১/বি, গ্রীনরোড, জাহানারা গার্ডেন, ফার্মগেট। ফোন: ০১৭২৭৭৭৭১৩৩।

টোফেল: টোফেল সংক্ষিপ্ত রূপ। পূর্ণরূপ হচ্ছে টেস্ট অব ইংিলশ এ্যাজ এ ফরিন ল্যাংগুয়েজ। আমেরিকা ও কানাডাসহ মাত্র কয়েকটি দেশে পড়তে গেলে টোফেল দরকার পড়ে। তবে এসব দেশে এখন টোফেল স্কোরকেও গ্রহণ করা হয়। তাই টোফেল করার প্রতি গুরুত্ব অনেক কমে গেছে।

ইটিএস (এডুকেশন টেস্টিং সিস্টেম) কর্তৃপক্ষ টোফেল আইবিটি (ইন্টারনেট বেইজড টেস্ট) নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। টোফেলের পরীক্ষার জন্য ইন্টরেনেটের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। পরীক্ষার ফি হিসেবে ১৫০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১১ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হয়। ঢাকাস্থ আমেরিকান সেন্টারে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত তথ্য ও এ ব্যাপারে সহযোগিতা পাওয়া যাবে। ঠিকানা: আমেরিকান অ্যাম্বাসি, বাড়ী-১১০, রোড-২৭, বনানী, ঢাকা। ফোন: (৮৮০) (২) ৮৮৩৭১৫০-৪, ফ্যাক্স: (৮৮০) (২) ৯৮৮১৬৭৭।

পরীক্ষা কেন্দ্র: বাংলাদেশের দুটি কেন্দ্রে টোফেলের ইন্টারনেট বেইজড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্র দুটি হলো: ১. আমেরিকান এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাড়ী-১৪৫, রোড-১৩বি, বনানী, ঢাকা, ফোন: +৮৮০২৯৮৮১৬৬৯। ২. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন সেন্টার, ৫৯/বি, পান্থপথ, ঢাকা। পরীক্ষা হয় ৪টি বিষয়ের উপর- লিসেনিং, স্পিকিং, রিডিং ও রাইটিং। প্রতিটি বিষয়ের সর্বোচ্চ স্কোন ৩০। ৪টি বিষয়ে ১২০ স্কোরের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড স্কোর ধরা হয় ৮০। এই স্কোরের মেয়াদও থাকে ২ বছর।

এছাড়া ফাস্ট ফরওয়ার্ড, ফিউচার লিমিটেড, নীডাসি, মতিন’স, লিয়াকত’স, সুগন্ধা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে প্রস্তুতিমূলক কোর্স করিয়ে থাকে।