Sunday, June 20, 2010

আঁচিল ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ

2 comments
আঁচিল একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। যারা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বয়সে তরুণ। বড়দের এ রোগ কম হয়। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির আঁচিল স্পর্শ করলে এ রোগ হতে পারে। প্রথমে একটি দিয়ে শুরু হলেও বাড়তে বাড়তে তা একসময় অসংখ্যটিতে পরিণত হতে পারে। তাই প্রাথমিক অবস্থায়ই এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

কী দিয়ে হয় : এটিও একটি জীবাণুজনিত রোগ। Papilloma Group-এর ভাইরাস দ্বারা এই রোগটি হয়ে থাকে।
আঁচিলের ধরন : এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- *Common wart *Plane wart * Filiform wart * Planter wart * Venereal Wart.
Common wart : এটি ব্যথাবিহীন, শক্ত এবং উঁচু গোলাকৃতির দানা বা গোটার আকারে দেখা দেয়, যার (দানার) বাইরের দিক অস্বচ্ছ এবং ছোট ছোট কাঁটার মতো দেখতে পাওয়া যায়। কখনো কখনো একাধিক হতে পারে। বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের বেশি হতে দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে সাধারণত একটি অথবা ২টির বেশি হয় না। নখের কোণ, নখের নিচে এবং হাঁটু অথবা কনুই অস্থিসন্ধিতে হতে দেখা যায়।

Filiform warts : এটা সরু লম্বা আকৃতির, যা ১-২ মি. মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এই প্রকৃতির আঁচিল মূলত ঘাড়, মুখমণ্ডল ও মাথায় বেশি হতে দেখা যায়। লম্বা ধরনের হওয়ার কারণে সাধারণত এদের আঁচিল মনে হয় না।

Plan Wart : আকারে ছোট, ত্বক থেকে খুবই সামান্য উঁচুতে উঠে থাকে। উপরের অংশ চ্যাপটা, ত্বকের রঙ ধারণ করে ছোট্ট গুটির আকারে দেখা যায়, যা মুখে এবং হাতে হয় এবং সাধারণত বাচ্চাদের হয়ে থাকে। সাধারণত এ ধরনের আঁচিল একত্রে একস্থানে অনেক থাকে।

Planter Wart : যা সাধারণত পায়ের পাতায় হতে দেখা যায় এবং তালুর অনেক গভীর থেকে শুরু হয়, গোলাকার, তালুর বাইরের অংশ অস্বচ্ছ ও শক্ত। তাই অনেকেই এ রকম আঁচিল নিয়ে চলাফেরার সময় ব্যথা পেয়ে থাকেন বলে ব্লেড দিয়ে কেটে পাতলা করে ফেলেন। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো আবার একাধিক হতে দেখা যায় এবং একটির সঙ্গে আরেকটি মিশে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মাঝখানে একটি বড় এবং তার আশপাশজুড়ে ছোট ছোট অনেক। এগুলোকে দেখতে মোজাইকের মতো মনে হয় বলে এর নাম মোজাইক আঁচিল।

Venereal Wart : একে Condyloma accuminata-ও বলা হয়। অন্য আঁচিলের মতো এগুলো শক্ত নয়। এগুলো নরম থলের মতো ঝুলে থাকে। এ ধরনের আঁচিল সাধারণত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তাই এগুলো পায়ু এবং যৌনাঙ্গ অথবা এর আশপাশে হয়ে থাকে। এ ধরনের আঁচিল অত্যন্ত সংক্রামক এবং যেহেতু যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এগুলো ছড়িয়ে থাকে তাই এ ধরনের আঁচিলে যারা আক্রান্ত হয় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুবক-যুবতী। আঁচিলের সঙ্গে গোলমাল বেধে যায় এমন একটি রোগের নাম মোলাস্কাম কনটাজিওসাম। এটি দেখলে সাধারণত আঁচিল বলে মনে হয়। এটিও একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ এবং এটিও আঁচিলের মতো ছোঁয়াচে। তবে এই ভাইরাস আর আঁচিলের ভাইরাস এক নয়। এই রোগটি সাধারণত পঙ্ গ্রুপের ভাইরাস দিয়ে হয়। এটি দেখতে গোলাকার এবং ২-৫ মিটার ব্যাসার্ধযুক্ত। সাদা এবং গোলাপি রঙবিশিষ্ট শক্ত এবং মোমের মতো স্বচ্ছ আবরণযুক্ত, যার মাঝখানে একটি গর্ত দেখতে পাওয়া যায়। এর দ্বারাও সাধারণত বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। মুখ, হাত, তলপেট এবং যৌনাঙ্গ আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

পায়ের তলার Planter আঁচিলের সঙ্গে Corn-এর গভীর মিল দেখতে পাওয়া যায়। তবে অনেককেই দেখা যায় পায়ের নিচে শক্ত হয়ে যাওয়া Corn-এর কারণে হাঁটতে পারে না। হাঁটলে ব্যথ্যা পায়। এটা কিন্তু আঁচিল নয়, আবার এটা কিন্তু ভাইরাস দিয়েও হয় না। এটা শুধু পায়ে খাওয়া Pressure-এর কারণেই হয়। কাজেই Corn-এর ক্ষেত্রে Pressure যেন না খায় তার ব্যবস্থা করতে পারলেই উপসর্গ কমে যেতে থাকে। আবার আঁচিল বা মোলাস্কাম দুটোই কিন্তু এমনিতেই চলে যেতে পারে। তবে মোলাস্কাম ছড়িয়ে পড়ার আগেই কিউরেট বা চেঁছে ভেতরের জীবাণুসহ তুলে ফেললে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়।

আবার অনেকের ঘাড়ে কিংবা বগলের ভাঁজে ছোট ছোট আঁচিলের মতো হতে দেখা যায়। এটা কিন্তু আঁচিল নয়। এটা ভাইরাসজনিত কোনো রোগ নয়। এটা বড় এবং মোটা মানুষেরই বেশি হয়। একে বলে Skin tag। দেখতে মনে হয় যেন আঁচিল। আঁচিল নিজের থেকেই ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসার প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়ে। তবে কোন ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হবে তা কেবল একজন বিশেষজ্ঞের সিদ্ধান্তই নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে Trichloroacetic acid, Phenol, Salicyslic acid, electro cauteri“ation, curretage, cryotherapy, liquid nitrogam ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ডা. দিদারুল আহসান

এমবিবিএস ডিডিভি, অস্ট্রিয়া

ফেলো, আর.এস.এইচ, এম.ডি, লন্ডন

আল-রাজী হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

2 comments:

Post a Comment