Friday, June 11, 2010

বংশগত টাক পড়া সমস্যা

0 comments
বংশগত টাককে মেডিক্যাল ভাষায় মেল প্যাটার্ন হেয়ার লস অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মাথার মাঝখানে ও কপালের দুই পাশ থেকে আস্তে আস্তে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং একটা পর্যায়ে চুল পড়ে মাথা খালি হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। এ জাতীয় টাক হওয়ার কারণ, টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন মাথার ত্বকের ওই স্থানগুলোতে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরনে (ডিএইচটি) পরিণত হয় এবং এই ডিএইচটি’র প্রভাবে মোটা চুল প্রথমে পাতলা চুল এবং এক পর্যায়ে হেয়ার ফলিকল (চুলের গোড়া) শুকিয়ে গিয়ে চুল সম্পূর্ণভাবে ঝরে যায়।

টেস্টোস্টেরন হরমোন ডিএইচটিতে পরিণত হতে একটি এনজাইমের প্রয়োজন ছিল। সেই এনজাইমের নাম ৫-আলফা রিডাকটেজ। সুতরাং এই ৫ আলফা রিডাকটেজের কার্যকারিতা যাদের মাথার ত্বকে বেশি তাদেরই এ জাতীয় টাক পড়ে। এ কার্যকারিতা বেশি বা কম হওয়াটা নির্ভর করে জেনেটিকের ওপর অর্থাৎ বংশগত প্রভাবের ওপর। তাই এ জাতীয় টাককে বংশগত টাক বলা হয়, অর্থাৎ বাবার মাথায় টাক থাকলে ছেলের মাথায় টাক পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে নতুন চিকিৎসার ব্যবস্থা এসেছে তা হচ্ছে ৫ আলফা রিডাকটেজ এনজাইমকে কার্যকর হতে না দেয়া। ফলে টেস্টোস্টেরন থেকে ডিএইচটি তৈরি হতে না পারা এবং ডিএইচটি তৈরি হতে না পারলে চুলের গোড়া শুকিয়ে যাবে না এবং টাকও পড়বে না। ওষুধটির বৈজ্ঞানিক নাম ফিনাস্টেরয়েড। এই ফিনাস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ কিন্তু কয়েক বছর আগে থেকেই বাজারে আছে যেমন-প্রোস্টেট গ্ল্রান্ড বড় হয়ে যাওয়ার চিকিৎসায় (তবে ডোজ ভিন্ন ব্যবহৃত হতো)। এত দিন একটি ধারণা ছিল, এ জাতীয় ওষুধ যৌনশক্তি কমাতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, যৌনশক্তি রক্ষার জন্য যে রিসেপ্টর (এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর) রয়েছে তার ওপর এর কোনো প্রভাব নেই। তবে পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এ জাতীয় সমস্যা ১-৩ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে- যা কিনা ওষুধ বন্ধ করে দিয়ে অথবা ওষুধ চালিয়ে গিয়েও কাটিয়ে উঠেছেন অনেকে। রোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা নেয়াই মঙ্গল। কাজেই বংশগত টাক পড়ার আশঙ্কা থাকলে এই ওষুধ সেবনে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা রয়েছে। যত দিন মাথায় চুল প্রয়োজন তত দিন ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। তবে ইতোমধ্যে যাদের টাক পড়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে কি এ ওষুধ কোনো উপকারে আসবে? হ্যাঁ আসবে, তবে সামান্য। অর্থাৎ প্রতিদিন এক মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট অš-ত পক্ষে তিন মাস সেবনের পর থেকে টাক পড়া স্থানে চুল গজাতে শুরু করবে।

মহিলাদের কি কখনো ছেলেদের মতো টাক হতে পারে? হ্যাঁ হতে পারে। মেনোপজ হওয়ার পর অর্থাৎ ৪০-৫০ বছর বয়সের মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে তখন ফিমেল হরমোনের পরিমাণ কমে যায় এবং মেল হরমোন বা টেস্টোস্টেরন/ এন্ড্রোজেনের আধিক্য বেড়ে যায় ও একই নিয়মে ছেলেদের মতো টাক পড়ে। ঠিক একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কি ওই একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কি ওই একই চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয় যাবে? হ্যাঁ, নেয়া যাবে এবং উপকারও পাবে। তবে খুব সাবধান, অর্থাৎ মাসিক হচ্ছে গর্ভধারণ করার ক্ষমতা বা বয়স রয়েছে এমন মহিলারা যেন চুলপড়া রোধে এ জাতীয় ওষুধ সেবন না করেন। তাদের ক্ষেত্রে এটি সেবনে গর্ভের শিশু জন্মগত ক্ষতির ঝুঁকি থাকে এমনকি গর্ভধারণে সক্ষম বয়সের মহিলাদের খালি হাতে এ জাতীয় ওষুধ ধরাই নিষেধ, খাওয়া তো দূরের কথা। ওষুধটি শিশুদের নাগালের বাইরেও রাখতে হবে। সর্বোপরি এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি বিরাট সাফল্য। টাক পড়তে না দেয়া এবং টাক পড়া মাথায় চুল গজানোর এটিই প্রথম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন উন্নতমানের ওষুধ। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যবহার করতে হবে।

ডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, চর্মরোগ ও যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ
কন্স্যালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট
ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান
সহকারী অধ্যাপক
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

0 comments:

Post a Comment