Saturday, June 12, 2010

ক্রীতদাসত্বের সাক্ষী

0 comments
ছবিটা দেড় শ বছরের পুরোনো। অষ্টাদশ শতাব্দীর ষাটের দশকের দিকে তোলা। কিন্তু ছবিটি যেন আরও বহু বছরের কথা বলে। তুলে ধরে আমেরিকার কালো ইতিহাসের নগ্ন অধ্যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের একটি বাড়ির চিলেকোঠা থেকে ছবিটি উদ্ধার করা হয়েছে। ছবির একটি বালকের নাম জন। পায়ে জুতা নেই। গায়ে ছেঁড়া ও তালি দেওয়া জামাকাপড়। খালি একটি ব্যারেলের ওপর বসে আছে সে। পাশেই তার বয়সী আরেকটি বালক। তবে তার পরিচয় অজানা। উষ্কখুষ্ক চেহারা দুজনেরই।
মার্কিন শিল্প-সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি আমেরিকায় গৃহযুদ্ধকালীন ছবি। শিশু দুটি ক্রীতদাস অবস্থায় অথবা ক্রীতদাস থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মুহূর্তের ছবি। এটি আমেরিকার অন্ধকার ইতিহাসের সাক্ষী।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারির আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ উইল স্ট্যাপ বলেছেন, ‘ছবিটি আমেরিকার কালো ইতিহাসের মর্মভেদী চিহ্ন। শিশু দুটি সেই ইতিহাসের শিকার।’
নর্থ ক্যারোলাইনার সবচেয়ে বড় শহর শারলোটের একটি বাড়ি থেকে ছবিটি উদ্ধার করা হয়েছে। এর সঙ্গে কিছু নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। এসব নথি থেকে জানা গেছে, ছবিটির তখনকার মূল্য ছিল এক হাজার ১৫০ ডলার।
নিউইয়র্কের ব্যক্তিগত সংগ্রাহক কেয়া মর্গান বলেন, ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে তিনি ছবির একটি অ্যালবাম কিনেছেন। জন ছাড়াও এই অ্যালবামে আরও কয়েকটি বালক ও পরিবারের ছবি রয়েছে। তিনি বলেন, যে বাড়িতে ছবিটি পাওয়া গেছে তিনি বর্তমানে বেঁচে নেই। তিনি সম্ভবত ক্রীতদাস বালক জনের জ্ঞাতি ছিলেন। মর্গান বলেন, ‘আমি সবসময় এ ধরনের জিনিস কিনে থাকি। তবে এ ছবিটি আমাকে খুবই আহত করেছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ছবিটি উনিশ শতকের বিখ্যাত আলোকচিত্রী ম্যাথিউ ব্রাডির স্টুডিও থেকে তোলা। তবে উইল স্টাপ বলেন, ব্রাডি নিজে হয়তো ছবিটি তোলেননি। তুলেছেন তাঁর শিক্ষানবিশ আলোকচিত্রী টিমোথি ও সুলিভান। সুলিভান গৃহযুদ্ধের সময়কার বহু ছবি তোলেন।
মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের প্রশাসক ও লেখক হ্যারল্ড হোলজার বলেন, ছবিগুলোতে দেখা গেছে, বহু প্রাপ্তবয়স্ক লোকজনকে পেটানো হয়েছে অথবা চাবুক দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে এই ছবিটা হলো খুবই সূক্ষ্ম। তাই এটি দীর্ঘদিন ধরে অপ্রকাশিত ছিল।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত আব্রাহাম লিঙ্কন ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রন সুডাল্টার বলেন, ‘ছবিটি ক্রীতদাসপ্রথার প্রকৃত চিত্র। এ সময়টা ছিল ভয়াবহ। বড়-ছোট সবাই সেই ভয়ানক সময়ের শিকার হয়েছে।’
মর্গান বলেন, ‘জনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। লোকজন তার ব্যাপারে ভুলে গেছে। এমনকি ইতিহাসেও তার স্থান নেই। জনের মতো লাখ লাখ শিশু অন্যায়ের শিকার হয়েছে। এ ছবি সেসব শিশুরই কথা বলে। আমি এ রকম ছবি আর দেখিনি।’ সূত্র: এপি

0 comments:

Post a Comment