মহাকবি ফেরদৌসীর বিখ্যাত কাহিনীকাব্য 'শাহনামা'র সবচেয়ে আলোচিত কাহিনী
'সোহরাব-রুস্তম'। রুস্তম ইরানের লোককাহিনীর সবচেয়ে আলোচিত এক চরিত্র।
জন্মগতভাবেই রুস্তম অনেক ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন। লোককথায় তিনি চিরকালের
কিংবদন্তির মহাবীররূপে উপস্থাপিত হয়েছেন। আর তাকে অমরত্ব দান করেছে দশম
শতাব্দীর বিখ্যাত মহাকবি ফেরদৌসীর 'শাহনামা'। ইসলাম-পরবর্তী সময়ে
লোককাহিনী ও ইতিহাসে পাওয়া যায় তার বর্ণনা।
মহাবীর রুস্তম ও আরেক বীর সোহরাব। কিন্তু জন্মের পর থেকে সোহরাব জানেন না
তার পিতার পরিচয়। রুস্তম যে তারই জন্মদাতা এ কথা মা তাহমিনাও তাকে কখনো
বলেননি। একদিন ঘটনাক্রমে সোহরাব যখন জানতে পারলেন তিনি মহাবীর রুস্তমের
পুত্র, তখন পিতাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী
ইরানের বাদশাহ কায়কাউসের গভীর যড়যন্ত্রে পিতা-পুত্রের দেখা হয় না বরং
প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য পিতা-পুত্রকে যুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। দুজনে
সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এক সময় স্তিমিত হয়ে
এলো সোহরাবের ক্ষমতা। মহাবীর রুস্তম চড়ে বসলেন সোহরাবের বুকে। বুকের
মাঝখানে চালিয়ে দিলেন ধারালো খঞ্জর। মৃত্যুর মুখোমুখি রক্তাক্ত সোহরাব।
কিন্তু এমন সময় রুস্তম দেখলেন, সোহরাবের বাহুতে বাঁধা বাজুবন্দ তার খুব
চেনা। সন্তান হওয়ার সংবাদে তিনি স্ত্রীর কাছে এ বাজুবন্দই পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু স্ত্রী তাকে কন্যা সন্তান হওয়ার সংবাদ দিয়েছিল। তাহলে এই বাজুবন্দ
সোহরাবের হাতে কেন? দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন রুস্তম। এরপর উদ্ঘাটিত হয় আসল
সত্য। মহাবীর রুস্তম যাকে খঞ্জরবিদ্ধ করেছেন, সেই সোহরাব আর কেউ নয়, তারই
সন্তান। বিশ্বজুড়ে মানুষের মুখে মুখে বছরের পর বছর ধরে এ গল্পটির চর্চা হয়ে
আসছে। এই কাহিনী এতই জনপ্রিয় যে, লোকজন একে সত্য হিসেবেই ধরে নিয়েছে। যেন
ইতিহাসের কোনো অবিচ্ছেদ্য অংশ। সত্যিকার অর্থে এটি হচ্ছে দশম শতাব্দীতে
রচিত মহাকবি ফেরদৌসীর বিখ্যাত কাহিনীকাব্য 'শাহনামা'র সবচেয়ে আলোচিত
কাহিনী 'সোহরাব-রুস্তম'। রুস্তম ইরানের লোককাহিনীর সবচেয়ে আলোচিত এক
চরিত্র। তার বাবার নাম জাল এবং মায়ের নাম রদুবা। জন্মগতভাবেই রুস্তম অনেক
ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন। তার সেই গুণগুলোই তাকে আলাদা ব্যক্তিত্ব হিসেবে
স্থান দিয়েছে লোককথায়। লোককথায় তিনি চিরকালের কিংবদন্তির মহাবীররূপে
উপস্থাপিত হয়েছেন। ইসলাম-পরবর্তী সময়ে লোককাহিনী ও ইতিহাসেও পাওয়া যায় তার
র্বণনা। ফেরদৌসীর শাহনামায় বিচিত্র সব ঘটনা ঘটিয়ে ব্যতিক্রমী হিসেবে
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রুস্তম। কৈশরে সে তার রাজা মেনুচির সাদা হাতিকে
হত্যা করেছিল শুধু গজা দিয়ে। নারিমানের ছেলে সাম তার দাদা। আর তার কাছ
থেকেই রুস্তম উত্তরাধিকার সূত্রে বীরত্বের অধিকারী। পারস্যের লোককাহিনী
মতে, মহাবীর রুস্তম বিয়ে করেন রাজকন্যা রদুবাকে। এক সময় রদুবার গর্ভে
সন্তান আসে। খুশিতে আত্দহারা হয়ে যান রুস্তম। কিন্তু রদুবা যখন প্রসব
বেদনায় কাতর, তখন যুদ্ধে যেতে হয় রুস্তমকে। রাজ তত্ত্বাবধানে থাকে রদুবা।
রুস্তম যাওয়ার সময় বলে যায় সন্তান হওয়ার খবর যেন তাকে জানানো হয়। কিন্তু
রদুবা কন্যা সন্তান হওয়ার মিথ্যা সংবাদ দেয়। কারণ পুত্র সন্তান হওয়ার সংবাদ
দিলে রুস্তম তাকে নিয়ে যাবে, যুদ্ধবিদ্যা শেখাবে এবং হয়তো সে
যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা যাবে। এমন আশঙ্কা করেই রদুবা লুকিয়েছিল পুত্র সন্তানের
খবর। এমন ঘটনার কারণেই ঘটে গেছে সোহরাব-রুস্তমের সেই ট্র্যাজেডি। রুস্তম
তার নায়কোচিত অভিযান চালিয়ে কোহেকাফের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন।
রুস্তমের আরও একটি বিখ্যাত কৃতিত্ব হচ্ছে পারস্যের অপদেবতা 'অকভান'-এর
বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অকভান দেখতে কিছুটা বন্য গাধার মতো, যে দ্রুত ভোল পাল্টে
মানুষের সর্বস্ব লুট করত। এ অপদেবতার অত্যাচারে রাজ্যের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে
পড়ে। চিন্তিত হয়ে পড়েন রাজা। শেষে এর প্রতিকারের ভার মহাবীর রুস্তমকে দেওয়া
হয়। রুস্তম তাকে হত্যা করে প্রজাদের বিপদমুক্ত করেন। এ ছাড়া রুস্তম
ড্রাগনের সঙ্গেও যুদ্ধ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। এসব গল্প লোককাহিনী
হলেও মানুষের কাছে এর আবেদন চিরন্তন।
উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন