Saturday, September 29, 2012

মহাবীর রুস্তম

0 comments
মহাকবি ফেরদৌসীর বিখ্যাত কাহিনীকাব্য 'শাহনামা'র সবচেয়ে আলোচিত কাহিনী 'সোহরাব-রুস্তম'। রুস্তম ইরানের লোককাহিনীর সবচেয়ে আলোচিত এক চরিত্র। জন্মগতভাবেই রুস্তম অনেক ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন। লোককথায় তিনি চিরকালের কিংবদন্তির মহাবীররূপে উপস্থাপিত হয়েছেন। আর তাকে অমরত্ব দান করেছে দশম শতাব্দীর বিখ্যাত মহাকবি ফেরদৌসীর 'শাহনামা'। ইসলাম-পরবর্তী সময়ে লোককাহিনী ও ইতিহাসে পাওয়া যায় তার বর্ণনা।

মহাবীর রুস্তম ও আরেক বীর সোহরাব। কিন্তু জন্মের পর থেকে সোহরাব জানেন না তার পিতার পরিচয়। রুস্তম যে তারই জন্মদাতা এ কথা মা তাহমিনাও তাকে কখনো বলেননি। একদিন ঘটনাক্রমে সোহরাব যখন জানতে পারলেন তিনি মহাবীর রুস্তমের পুত্র, তখন পিতাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ইরানের বাদশাহ কায়কাউসের গভীর যড়যন্ত্রে পিতা-পুত্রের দেখা হয় না বরং প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য পিতা-পুত্রকে যুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। দুজনে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এক সময় স্তিমিত হয়ে এলো সোহরাবের ক্ষমতা। মহাবীর রুস্তম চড়ে বসলেন সোহরাবের বুকে। বুকের মাঝখানে চালিয়ে দিলেন ধারালো খঞ্জর। মৃত্যুর মুখোমুখি রক্তাক্ত সোহরাব। কিন্তু এমন সময় রুস্তম দেখলেন, সোহরাবের বাহুতে বাঁধা বাজুবন্দ তার খুব চেনা। সন্তান হওয়ার সংবাদে তিনি স্ত্রীর কাছে এ বাজুবন্দই পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রী তাকে কন্যা সন্তান হওয়ার সংবাদ দিয়েছিল। তাহলে এই বাজুবন্দ সোহরাবের হাতে কেন? দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন রুস্তম। এরপর উদ্ঘাটিত হয় আসল সত্য। মহাবীর রুস্তম যাকে খঞ্জরবিদ্ধ করেছেন, সেই সোহরাব আর কেউ নয়, তারই সন্তান। বিশ্বজুড়ে মানুষের মুখে মুখে বছরের পর বছর ধরে এ গল্পটির চর্চা হয়ে আসছে। এই কাহিনী এতই জনপ্রিয় যে, লোকজন একে সত্য হিসেবেই ধরে নিয়েছে। যেন ইতিহাসের কোনো অবিচ্ছেদ্য অংশ। সত্যিকার অর্থে এটি হচ্ছে দশম শতাব্দীতে রচিত মহাকবি ফেরদৌসীর বিখ্যাত কাহিনীকাব্য 'শাহনামা'র সবচেয়ে আলোচিত কাহিনী 'সোহরাব-রুস্তম'। রুস্তম ইরানের লোককাহিনীর সবচেয়ে আলোচিত এক চরিত্র। তার বাবার নাম জাল এবং মায়ের নাম রদুবা। জন্মগতভাবেই রুস্তম অনেক ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন। তার সেই গুণগুলোই তাকে আলাদা ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থান দিয়েছে লোককথায়। লোককথায় তিনি চিরকালের কিংবদন্তির মহাবীররূপে উপস্থাপিত হয়েছেন। ইসলাম-পরবর্তী সময়ে লোককাহিনী ও ইতিহাসেও পাওয়া যায় তার র্বণনা। ফেরদৌসীর শাহনামায় বিচিত্র সব ঘটনা ঘটিয়ে ব্যতিক্রমী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রুস্তম। কৈশরে সে তার রাজা মেনুচির সাদা হাতিকে হত্যা করেছিল শুধু গজা দিয়ে। নারিমানের ছেলে সাম তার দাদা। আর তার কাছ থেকেই রুস্তম উত্তরাধিকার সূত্রে বীরত্বের অধিকারী। পারস্যের লোককাহিনী মতে, মহাবীর রুস্তম বিয়ে করেন রাজকন্যা রদুবাকে। এক সময় রদুবার গর্ভে সন্তান আসে। খুশিতে আত্দহারা হয়ে যান রুস্তম। কিন্তু রদুবা যখন প্রসব বেদনায় কাতর, তখন যুদ্ধে যেতে হয় রুস্তমকে। রাজ তত্ত্বাবধানে থাকে রদুবা। রুস্তম যাওয়ার সময় বলে যায় সন্তান হওয়ার খবর যেন তাকে জানানো হয়। কিন্তু রদুবা কন্যা সন্তান হওয়ার মিথ্যা সংবাদ দেয়। কারণ পুত্র সন্তান হওয়ার সংবাদ দিলে রুস্তম তাকে নিয়ে যাবে, যুদ্ধবিদ্যা শেখাবে এবং হয়তো সে যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা যাবে। এমন আশঙ্কা করেই রদুবা লুকিয়েছিল পুত্র সন্তানের খবর। এমন ঘটনার কারণেই ঘটে গেছে সোহরাব-রুস্তমের সেই ট্র্যাজেডি। রুস্তম তার নায়কোচিত অভিযান চালিয়ে কোহেকাফের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। রুস্তমের আরও একটি বিখ্যাত কৃতিত্ব হচ্ছে পারস্যের অপদেবতা 'অকভান'-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অকভান দেখতে কিছুটা বন্য গাধার মতো, যে দ্রুত ভোল পাল্টে মানুষের সর্বস্ব লুট করত। এ অপদেবতার অত্যাচারে রাজ্যের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। চিন্তিত হয়ে পড়েন রাজা। শেষে এর প্রতিকারের ভার মহাবীর রুস্তমকে দেওয়া হয়। রুস্তম তাকে হত্যা করে প্রজাদের বিপদমুক্ত করেন। এ ছাড়া রুস্তম ড্রাগনের সঙ্গেও যুদ্ধ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। এসব গল্প লোককাহিনী হলেও মানুষের কাছে এর আবেদন চিরন্তন।

উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

অদ্ভুত যত কুসংস্কার

0 comments
বিশ্বের আধুনিকতম দেশ থেকে শুরু করে দরিদ্রতম দেশ পর্যন্ত সর্বত্রই বিচিত্র সব কুসংস্কারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন অঞ্চলে বহু যুক্তিহীন ভ্রান্ত ধারণা বা বিশ্বাসের প্রচলন রয়েছে যেগুলোকে কুসংস্কার বলা যায়। চলুন এরকম আরও কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে জেনে নিই।

*ছোট বাচ্চাদের হাতে লোহা পরালে ভূত-জিনে ধরবে না।

*রুমাল, ছাতা, হাতঘড়ি ইত্যাদি কাউকে ধারস্বরূপ দেওয়া যাবে না।

*হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে দুর্ভোগ আছে।

*হাত থেকে প্লেট পড়ে গেলে মেহমান আসবে।

*নতুন স্ত্রী কোনো ভালো কাজ করলে শুভ লক্ষণ।

*তিন রাস্তার মোড়ে বসতে নেই।

*স্বামীর নাম বলা যাবে না এতে অমঙ্গল হয়।

*বাছুরের গলায় জুতার টুকরা ঝুলালে কারও কুদৃষ্টি থেকে বাঁচা যায়।

*খাবার সময় যদি কারও ঢেঁকুর আসে বা মাথার তালুতে উঠে যায়, তখন একজন আরেকজনকে বলে তোকে যেন কেউ স্মরণ করছে বা বলা হয় তোকে গালি দিচ্ছে।

কাক ডাকলে বিপদ আসবে।

*শুকুন ডাকলে মানুষ মারা যাবে।

*পেঁচা ডাকলে বিপদ আসবে।

*দুজনে ঘরে বসে কোথাও কথা বলতে লাগলে হঠাৎ টিকটিকির আওয়াজ শোনা যায়, তখন একজন অন্যজনকে বলে উঠে 'তোর কথা সত্য, টিকটিকি ঠিক ঠিক বলেছে।'

*একজন অন্যজনের মাথায় টোকা খেলে দ্বিতীয় বার টোকা দিতে হবে, একবার টোকা খাওয়া যাবে না। নতুবা মাথায় ব্যথা হবে/শিং উঠবে।

*ভাত প্লেটে নেওয়ার সময় একবার নিতে নেই।

*নতুন স্ত্রীকে স্বামীর বাড়িতে প্রথম পর্যায়ে আড়াই দিন থাকতে হবে।

*পাতিলের মধ্যে খাবার খেলে মেয়ে সন্তান হবে।

*পোড়া খাবার খেলে সাঁতার শিখবে।


*বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ দিতে হবে।

*হঠাৎ বাম চোখ কাঁপলে দুঃখ আসে।

*খালি ঘরে সন্ধ্যার সময় বাতি দিতে হয়। না হলে ঘরে বিপদ আসে।

*রাতের বেলা কাউকে সুই-সুতা দিতে নেই।

*রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।

*দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নেই।

ঘির থেকে বের হয়ে বিধবা নারী চোখে পড়লে যাত্রা অশুভ হবে।

* গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে নেই।

*গোসলের পর শরীরে তেল মাখার আগে কোনো কিছু খেতে নেই।

মিহিলার পেটে বাচ্চা থাকলে কিছু কাটাকাটি বা জবাই করা যাবে না।

*আশ্বিন মাসে নারী বিধবা হলে আর কোনোদিন বিবাহ হবে না।

*ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে।

*বিধবা নারীকে সাদা কাপড় পরতে হবে।

*ভাঙা আয়না দিয়ে চেহারা দেখা যাবে না। তাতে চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে।

*নতুন বউকে নরম জায়গায় বসতে দিলে মেজাজ নরম থাকবে।

* অনুপস্থিত কাউকে নিয়ে কথা বলার সময় হুট করে চলে আসলে, কেউ কেউ বলে উঠে 'তোর হায়াত আছে।' কারণ একটু আগেই তোর কথা বলছিলাম।

পিরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ডিম খাওয়া যাবে না। তাহলে পরীক্ষায় ডিম (গোল্লা) পাবে।

*বাড়ি থেকে কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে সে সময় বাড়ির কেউ পেছন থেকে ডাকলে অমঙ্গল হয়।

হাতিরঝিল, ঢাকা

0 comments
নগরজীবনকে তুলনা করা হয় যন্ত্রের সঙ্গে। যন্ত্রের যেমন ফুরসত থাকে না; নগর বাসিন্দাদের অবস্থা ঠিক তেমনি। কাজ, আর কাজ। অফিসের কাজ, বাসার কাজ। বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়াসহ নানা কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। আর রাজধানী শহরের জীবনযাপন তো আরও ব্যস্ততায় ভরা। রক্ত-মাংসে গঠিত মানবদেহ যন্ত্রের মতো চলে না। চায় একটু বিশ্রাম। চায় আনন্দ-বিনোদন। মাঝে-মধ্যে খোলামেলা কোথাও ঘুরে আসতে ইচ্ছা করে। কর্মজীবনে চাইলেই তো আর যখন তখন যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না। ঢাকায় যারা বসবাস করেন তাদের খুব কমই ঢাকার বাইরে যাওয়ার সময় হয়। এ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন ঢাকা শহরে ভালো বিনোদনকেন্দ্র। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তন রাজধানী ঢাকার। এখানেই বসবাস সোয়া দুই কোটি লোকের। প্রতিনিয়ত ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে। খালি জায়গা, বাগান, জলাশয়ের পরিমাণ কমছে। দখলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী-খাল-পুকুর-ডোবা। রূপ পরিবর্তন হয়ে পার্ক-খেলার মাঠ হচ্ছে আবাসিক এলাকা। পরিবেশ হয়ে উঠছে বিষাক্ত। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার পরিবেশ পাচ্ছে না মানুষ। নগরবাসীর বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে নগর পরিকল্পনা সংস্থা, রাজধানী উন্নয়ন সংস্থা বা রাজউক বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল খালে একটি মনোরম লেক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৭ সালে গ্রহণ করা প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। হাতিরঝিলের উদ্বোধন হলে ওই লেকে ঢাকাবাসী পালতোলা নৌকায় ভেসে বেড়াতে পারবে। মনোরম লেকের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে দৃৃষ্টিনন্দন ডিজাইনে ব্রিজ। মাত্র কয়েক মিনিটেই রামপুরা থেকে কারওয়ানবাজার বা কারওয়ানবাজার থেকে অল্প সময়ে পেঁৗছে যাবেন গুলশান হয়ে বাড্ডা। একদিকে মানুষের যেমন বিনোদনের জায়গা হবে তেমনি কমবে যানজট। তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি মিলবে। এ প্রকল্পের জন্য সরকার ৩০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাতটি সেতু, ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১৬ কিলোমিটার সড়ক, দুটি ওভারপাস। ফুটপাত ও সড়ক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প এলাকার বিউটিফিকেশনের কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এ প্রকল্প নকশানুসারে কাজ শেষ করতে পারলে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের পানি দূষণমুক্ত হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, রামপুরা, গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার যানজট নিরসনে অসামান্য ভূমিকা রাখবে। এ লেকে জমা হবে বৃষ্টির পানি। পালতোলা নৌকা চলবে এ লেকে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ধানমণ্ডি থেকে টঙ্গী ডাইভারসন সড়ক পর্যন্ত নির্মিত পান্থপথ সড়কের বর্ধিতাংশ হিসেবে রামপুরা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা অনেক আগের। তবে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের পতন হলে সে সময় এ জন্য আহূত দরপত্র বাতিল করা হয়। শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের সময় আবার এ সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিগত বিএনপি সরকারের সময় হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও তা বেশিদূর এগুতে পারেনি। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাতিরঝিল প্রকল্পটিকে বেশ গুরুত্ব দেয়। এরপর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে এ প্রকল্পকে অত্যন্ত কার্যকর করে গড়ে তুলেছেন। যার ফল ভোগ করবে ঢাকাবাসী। স্বপ্নের হাতিরঝিল এখনো স্বপ্নের মতো করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বাকি রয়েছে এখনো কিছু কাজ, যা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। পানি দূষণমুক্ত করার কাজ চলমান। ঢাকা ওয়াসা এ কাজ করছে। এখনো হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালে আশপাশের এলাকার বর্জ্য ও দূষিত পানি এসে পড়ছে। খালে জমা এসব পয়ঃবর্জ্য, গৃহবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য আশপাশ এলাকায় কিছু দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। পরিকল্পনা মতে, নিষ্কাশন কাঠামোতে কিছু বর্জ্য পরিশোধিত হয়ে তা বিশেষ নালায় এসে পড়বে। আর ওই নালার শেষ মাথায় স্থাপন করা হবে দৈনিক ৫ লাখ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র। এর পরিশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর খিজির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিসেম্বরে প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ছোটখাটো যেসব কাজ রয়েছে শীঘ্রই তা শেষ হয়ে যাবে।

মতিন আব্দুল্লাহ

ম্যাসাজ থেরাপি

0 comments

সারা দিনের ক্লান্তি কাটাতে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখতে এবং মনঃসংযোগ বাড়াতে ম্যাসাজের জবাব নেই। তিন রকমের ম্যাসাজ ও তার উপকারিতা জানাচ্ছেন রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিলস্লিমিং ম্যাসাজ

একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ম্যাসাজের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমানো হয়। সাধারণত সপ্তাহে দুইবার এই ম্যাসাজ নিতে হবে। এভাবে চার মাস যদি নিয়মিত ম্যাসাজ করেন, তাহলে ফ্যাট সেলগুলো কমে যাবে। পাশাপাশি ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে। এসবের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম বা সময় করে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। যেকোনো বয়সের মানুষ এই ম্যাসাজ নিতে পারে। এই ম্যাসাজ নিতে চাইলে স্পেশালিস্টের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের ম্যাসাজ তার জন্য কার্যকর, সে অনুযায়ী সেবা দেওয়া হয়।

ফুট রিলাঙ্শেন

অন্যান্য ম্যাসাজের মতো এই ম্যাসাজের উপকারিতা অনেক। একটি বিশেষ হারবাল তেল ব্যবহার করে এই ম্যাসাজ করা হয়। ম্যাসাজ থেরাপি থেকে সৃষ্ট চাপের মাধ্যমে রক্ত পায়ের সংকীর্ণ অংশে প্রবাহিত হতে পারে। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত এই ম্যাসাজ করলে পায়ের যেকোনো ধরনের ব্যথা দূর হয়। পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, পায়ের রুক্ষতা দূর হয় এবং চামড়া কুঁচকে যাওয়া রোধ হয়। যেকোনো বয়সের মানুষ এই ম্যাসাজ নিতে পারে।

থাই ম্যাসাজ

এটি এক ধরনের ফিজিওথেরাপি। এর মূল কাজ শরীরের এনার্জি পয়েন্টে চাপ প্রয়োগ করে ফিটনেস বাড়ানো। এই ম্যাসাজের মাধ্যমে মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়ে।

ম্যাসাজ থেরাপির উপকারিতা
ক্লান্তি দূরীকরণ
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মূল চাবিকাঠি ক্লান্তি দূর করা। এমনকি একটিমাত্র ম্যাসাজ সেশনে হৃৎস্পন্দন, কর্টিসল ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এবং প্রতিদিনকার ক্লান্তি দূর হয়।

চিত্তবিনোদনে উৎসাহ
ম্যাসাজে দেহে প্রশান্তি আনে এবং বিশ্রামে সতেজ হয়ে ওঠে। যা ম্যাসাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও স্থায়ী হয়।

উন্নত দেহভঙ্গি
অন্যান্য বাজে অভ্যাসের মতো খারাপ দেহভঙ্গি অস্বাস্থ্যকর। ম্যাসাজের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গির উন্নতি ঘটে।

রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি
ম্যাসাজ থেরাপির সৃষ্ট চাপে শরীরের সংকীর্ণ অংশে রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে নতুন রক্তপ্রবাহ সঞ্চালিত হয়ে দেহের কার্যক্ষমতা বাড়ে।

রক্তচাপ কমায়
অন্য যেকোনো মেডিক্যাল ব্যবস্থা থেকে কার্যকরভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার স্বাভাবিক উপায় হলো ম্যাসাজ থেরাপি।

মাংসপেশির বিশ্রাম, শারীরিক নমনীয়তার উন্নতি ও গতির বিন্যাস
ঘাড়ে, পেছনে কিংবা পেশিতে ব্যথা আছে? অফিসে সারা দিন বসে থাকাকে এ জন্য দায়ী মনে হয়। ম্যাসাজ ক্রমাগত ব্যথার মূলে গিয়ে পীড়িত পেশিকে আরাম দেয়। যখন বয়স হয়, তখন আমাদের দেহের জয়েন্টগুলো আঁটসাঁট হয়ে যায়, যা দেহের নড়াচড়া সীমিত করে দেয়।

গভীর ও সহজতর শ্বাস নেওয়ার সহায়তা
উদ্বেগ ও ক্লান্তির লক্ষণীয় কারণ হলো সংকীর্ণ শ্বাস-প্রশ্বাস। শ্বাস-প্রশ্বাসের উপশম এবং শরীরকে শিথিল করায় ম্যাসাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মাথাব্যথা উপশম
যারা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনে ভোগেন। তাদের ম্যাসাজে মাথাব্যথা হ্রাস হয়।

প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করে
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ম্যাসাজের দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থা বাড়ায়।

পোস্ট-অপারেটিভ পুনর্বাসন
ম্যাসাজ আমাদের শরীরের টিস্যু ও অত্যাবশ্যক অঙ্গে আরো বেশি পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে। পোস্ট-অপারেটিভ পুনর্বাসনে কাজ করে।

আঘাতের পর পুনর্বাসনের উন্নতি
পুনর্বাসন হতাশাজনক হতে পারে, কিন্তু ম্যাসাজের মাধ্যমে দ্রুত হয়। সেই সঙ্গে প্রেরণা জাগাতে সাহায্য করে।

রাস নৃত্য

0 comments

মণিপুরীদের সবচেয়ে প্রধান উৎসব রাসমেলায় যে নৃত্য পরিবেশন করা হয় সেটাই রাসনৃত্য নামে পরিচিত। প্রতিবছর কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়। রাসনৃত্য মণিপুরী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্রুপদী ধারার এক অনন্য সৃষ্টি। মহারাস, বসন্ত রাস, কুঞ্জরাস, দিব্যরাস ও নিত্যরাস-রাসনৃত্য_এই পাঁচ ভাগে বিভক্ত। রাসনৃত্যে সাধারণত রাধা ও কৃষ্ণের ভূমিকা দেওয়া হয় শিশুদের, যাদের বয়স পাঁচের কম। মণিপুরীদের বিশ্বাস, এ বয়সের পর শিশুদের দৈবশক্তি লোপ পেয়ে যায়। তবে প্রকৃত নাটনৃত্য ও গীত পরিবেশন করে তরুণীরা, যারা রাধার সহচরী হিসেবে মঞ্চে আসে। রাসনৃত্যের মাধ্যমে ভক্ত-শিল্পীরা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে আবেগসূত্রে মিলিত হয়। বাংলা, মৈথিলী, ব্রজবুলি ও মৈতৈ কবিদের পদাবলি থেকে রাসনৃত্যের গীত গাওয়া হয়। মণিপুরী নৃত্যকে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে বেড়াতে এসে এ নাচের কোমল আঙ্গিক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে তিনি তাঁর নৃত্যনাট্যে মণিপুরী নৃত্য ব্যবহার করেন। রাস মণিপুরী আদিবাসীরা প্রতিবছর যথানিয়মে উৎসব ভক্তিসহকারে উদ্যাপন করে। উৎসবের সময় দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের ভিড়ে মণিপুরীদের এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। রাধা-কৃষ্ণের প্রণয় উপজীব্য করে রাসনৃত্য শুধু মণিপুরী সমাজে নয়, পুরো সাংস্কৃতিকজগতেই এটি এখন পছন্দের একটি নৃত্য।

ফোর্ট উইলিয়াম

0 comments
ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের সর্বাধিক বিখ্যাত দুর্গ হলো ফোর্ট উইলিয়াম। ফোর্ট উইলিয়ামের মাধ্যমেই ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের ঘাঁটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিখ্যাত এই দুর্গটি কলকাতায় অবস্থিত। ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের একটি বড় নিদর্শন এই দুর্গ। বাস্তবে দুটি ফোর্ট উইলিয়াম ছিল: একটি পুরনো, অন্যটি নতুন। পুরনো দুর্গটি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির সূচনাকালের সৃষ্টি। স্যার চার্লস আইয়ার এই দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তাঁর উত্তরসূরি জন বিয়ার্ড ১৭০১ সালে ফোর্ট উইলিয়ামের উত্তর-পূর্বাংশের দুর্গপ্রাচীর সংযোজন করেন। ১৭০২ সালে তিনি দুর্গের মধ্যভাগে বাণিজ্যকুঠি বা 'গভর্নমেন্ট হাউস' নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৭০৬ সালে শেষ হয়। এরপর ইংল্যান্ডের রাজার সম্মানে দুর্গটির নামকরণ করা হয় ফোর্ট উইলিয়াম। ১৯৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা আক্রমণ করে ফোর্ট উইলিয়াম দখল করেন এবং ইংরেজদের তাড়িয়ে দেন। পরে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে উপমহাদেশে ইংরেজদের অবস্থান সংহত হতে থাকে। তারা ফোর্ট উইলিয়ামের স্থানে আরেকটি শক্তিশালী দুর্গ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭৮০ সালের মধ্যে দুর্গটি নির্মাণের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়ে যায়। এর প্রায় একশ বছর পরে দুর্গটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। দুর্গটিকে অষ্টভুজাকৃতির রূপ দেওয়া হয়। দুর্গে প্রবেশের জন্য সাতটি প্রবেশদ্বার ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই দুর্গটি অদ্যাবধি পূর্ব ভারতে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Fortwilliam1828
গ্রন্থনা : তৈমুর ফারুক তুষার

Tuesday, September 25, 2012

লেজার ও এসথেটিক সার্জারি

0 comments
বিভিন্ন রোগ, দুর্ঘটনা বা জন্মগত ত্রুটি দূর করতে ব্যবহার হয় কসমেটিক সার্জারি ও লেজার প্রযুক্তি। এসথেটিক সার্জারি নামে পরিচিত। এ চিকিৎসা পদ্ধতি সৌন্দর্যচর্চা ও বডি শেপিংয়ের জন্য বেশ জনপ্রিয়। লেজার ট্রিট-এর ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, 'লেজারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বলিরেখা, ব্রণ সমস্যা, মুখের কালো দাগ, মেছতা, চুল পড়া, শরীরের মেদ কমানো- সব কিছুই এখন লেজার ও এসথেটিক সার্জারির মাধ্যমে সম্ভব।'
সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত এবং কোনো রকম কাটাছেঁড়া ছাড়াই করা যায় এ চিকিৎসা। বিশেষ প্রকারের আলোকরশ্মির মাধ্যমে ত্বকে লেজার চিকিৎসা করা হয়। সূর্যের আলোর একটি নির্দিষ্ট ওয়েভ লেংথকে আলাদা করে তার ক্ষমতা অনেক গুণ বাড়িয়ে মানুষের শরীরে বিশেষ পরিবর্তন আনা সম্ভব।



সেবাসমূহ

অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট

সাধারণত বয়সের কারণে বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে, যাকে বলে রিংকেলস বা বলিরেখা। যেকোনো বয়সী মানুষের মুখে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। কপালে, চোখের কোণে, ঠোঁটের দুই পাশে ও গলায় সাধারণত রিংকেলস পড়ে। বোটক্স, ফিলার এবং মেজেথেরাপির মাধ্যমে রিংকেলস দূর করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে বাঁকা নাকও সোজা করা হয়।

হেয়ার রিমুভাল

সবার শরীরেই কমবেশি পশম থাকে। তবে কখনো কখনো অবাঞ্ছিত পশম সৌন্দর্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হরমোনের কারণে শরীরের বা মুখের কোনো অংশে অনেক বেশি পশম থাকতে পারে, যা সৌন্দর্য হানি করে। লেজারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এ পশমের বৃদ্ধি কমিয়ে একেবারে নির্মূল করা সম্ভব। তবে বেশ কয়েকটি সেশনে লেজার থেরাপি নিতে হয়।

অ্যান্টিমার্কস ট্রিটমেন্ট

মুখে মেছতা, ব্রণ, পক্স অথবা যেকোনো ধরনের দাগ থাকলে অ্যান্টিমার্কস ট্রিটমেন্ট করা হয়। লেজার এবং কসমেটিক সার্জারির সমন্বয়ে এ চিকিৎসা করা হয়। কেমিক্যাল পিলিং, ডায়মন্ড পিল, লেজার রিসারফেসিং, ফিলার, রেড অ্যান্ড ব্লু এলইডিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে অ্যান্টিমার্কস ট্রিটমেন্ট করা হয়। এতেও কয়েকটি সেশনের প্রয়োজন হয়।

ফাটা দাগ

মুটিয়ে যাওয়া বা মাতৃত্বের কারণে অনেক সময় ত্বকে ফাটা দাগের সৃষ্টি হয়। লেজারের মাধ্যমে ত্বকের ফাটা দাগ দূর করা সম্ভব। মেজোথেরাপি, ডায়মন্ড পিল, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, মাইক্রোডারমাব্রেশনসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে ত্বকের ফাটা দাগ দূর করা হয়।

শ্বেতী

শ্বেতী শুধু সৌন্দর্য হানিই করে না; সামাজিকভাগে বিড়ম্বনারও শিকার হতে হয়। অথচ লেজারের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। বিভিন্ন ধরনের লেজার দিয়ে এ চিকিৎসা করা সম্ভব। এতে ফেটোথেরাপি, ফটোডাইনামিক থেরাপি, মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লান্টেশন, গ্রাফটিং উল্লেখযোগ্য।

বডি শেপিং

জন্মগতভাবে সবাই সুগঠিত দেহের অধিকারী হয় না। অনেকে সুঠাম দেহের অধিকারী হয়েও পরে মোটা হয়ে তা নষ্ট করে ফেলে। এসথেটিক সার্জারির মাধ্যমে মেদ কমানো এবং ত্বক টানটান করার মাধ্যমে বডি শেপিং করা হয়। কেভিটেশন, ভেক্যুয়াম, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, লেজার লাইপোসাকশন এবং ডায়েট প্ল্যানের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগীর দেহের দৈনিক ক্যালরির চাহিদা এবং কতটুকু মেদ কমাতে হবে তা নির্ণয় করা হয়। এতে কয়টি সেশনে মেদ কমানো হবে তাও জানানো হয়। সাধারণত প্রতিটি সেশনে আধা ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি মেদ কমানো যায়। এটা সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত এবং কাটাছেঁড়াবিহীন পদ্ধতি।

চিকিৎসার নিয়ম

আমাদের দেশে এ ধরনের চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি সেন্টারে কয়েকজন লেজার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকেন। প্রথমে রোগীর সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা হয়। তারপর তাঁরা সমস্যা অনুযায়ী সমাধান দেন। আর প্রাথমিক কিছু পরীক্ষাও করেন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি, কয়টি সেশন ও ওষুধ সম্পর্কে রোগীকে জানান। কোনো কোনো সমস্যা কেবল ওষুধেই ভালো হয়ে যেতে পারে।

কিছু চিকিৎসাকেন্দ্রের ঠিকানা

লেজার মেডিক্যাল সেন্টার
সীমান্ত স্কয়ারের পেছনে, রোড-২, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন : ৮৬১৩৭৬৭, ০১৭২৭০০১১৯৯

লেজার ট্রিট
বাড়ি-৩২, রোড-১১, ব্লক-জি, বনানী, ঢাকা-১২১৩। ফোন : ০১৭৫০০১০০২০, ০১৭৫০০১০০৩০

লেজার চেইন
হোসাইন প্লাজা, বাড়ি-১, চতুর্থ তলা, রোড-১৫, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন : ৮১২৩৪২৩, ০১১৯০৫৪১৯২৭

লেজার স্কিন কেয়ার
চৌরঙ্গী ভবন, তৃতীয় তলা, ১২৪/এ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
ফোন : ৯৬৬০৬৩৪, ০১৭৩২৩৯৪০০৫।

মারজান ইমু

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী

0 comments
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বরের পাশেই শিশু একাডেমী অবস্থিত। বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে সুলতানুল ইসলামের বানানো একটি ভাস্কর্য রয়েছে যার নাম দুরন্তপনার প্রতীক। ১৯৭৬ সালে যখন শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হলো তখনো কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে শিশুদের জন্য এত কিছু শুরুই হয়নি। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ১৩ বছর পর ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ থেকে শিশু অধিকার আইনের ঘোষণা দেওয়া হয়। শিশু একাডেমী স্বায়ত্তশাসিত বলে মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়। ১৯৮০-৯৭ সালের মধ্যে দেশের ৪৪টি জেলায় এর অফিস বানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক পরের বছর থেকেই 'শিশু' নামের একটি ছোটদের পত্রিকা প্রকাশ করে আসছে শিশু একাডেমী; যেখানে ছোটদের উপযোগী লেখা এবং ছবিও ছাপানো হয়ে থাকে। বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলার একেবারে শুরু থেকেই অংশগ্রহণ করে আসছে শিশু একাডেমী। শিশু একাডেমী নানা বিষয়ের প্রশিক্ষণ এবং এর সঙ্গে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা সম্পর্কিত কার্যক্রমও আয়োজন করে থাকে। শিশু একাডেমী শিশুদের নিয়ে অংশ নেয় নানা আন্তর্জাতিক উৎসবেও। বাংলাদেশের শিশুরা শিশু একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সময়ে চীন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশ ঘুরে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করে। শিশু একাডেমীর শিশুদের দল এরই মধ্যে অনেক স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক, ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে। শিশুদের অংশগ্রহণে শিশু একাডেমী বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসও পালন করে। শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিশু একাডেমী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। ওরা দেশের দরিদ্র পরিবারের ছোট ছোট শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এবং ছোট শিশুদের নিয়ে শিক্ষা সফরের আয়োজন করছে। প্রতিবছর জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় প্রায় তিন লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে।


গ্রন্থনা : সাবরিনা করিম

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি

0 comments
সুপ্রাচীন কাল থেকে টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা তাদের বংশ পরম্পরায় তৈরি করছেন তাঁতের নানা জাতের কাপড়। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং- এর ভ্রমণ কাহিনীতে টাঙ্গাইলের বস্ত্র শিল্প অর্থাৎ তাঁত শিল্পের উল্লেখ রয়েছে। সে দিক থেকে বলা যায় এটি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। বর্তমানে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির জন্যই টাঙ্গাইলের সুনাম বা পরিচিতি দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী।

তাঁত শিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে টাঙ্গাইলের সফট সিল্ক ও কটন শাড়ি। এই শাড়ির বুনন ও ডিজাইন দৃষ্টি কাড়ে। টাঙ্গাইলের শাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো- পাড় বা কিনারের কারু কাজ। বিদেশী বণিক চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মসলিন কাপড় কালের প্রবাহে হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার সার্থক উত্তরাধিকারী হয়ে আজও টিকে রয়েছে টাঙ্গাইলের জামদানী, বেনারসী ও তাঁতের শাড়ি।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বসাক সম্প্রদায়ের তাঁতিরাই হচ্ছে টাঙ্গাইলের আদি তাঁতি অর্থাৎ আদিকাল থেকেই এরা তন্তুবায়ী গোত্রের লোক। শুরুতে এরা সিন্ধু অববাহিকা থেকে পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ হয়ে চলে আসেন বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে। আবহাওয়া অনেকাংশে প্রতিকূল দেখে বসাকরা দু’দলে ভাগ হয়ে একদল চলে আসে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, অন্যদল ঢাকার ধামরাইয়ে। তবে এদের কিছু অংশ সিল্কের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজশাহীতেই থেকে যায়। তবে আরো ভালো জায়গায় খোঁজ করতে করতে অনেক বসাক টাঙ্গাইলে এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানকার আবহাওয়া তাদের জন্য অনকূল হওয়াতে পুরোদমে তাঁত বোনার কাজে লেগে পড়েন। টাঙ্গাইলে বংশানুক্রমে যুগের পর যুগ তারা তাঁত বুনে আসছেন। এক কালে টাঙ্গাইলে বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে বসাক শ্রেণীর বসবাস ছিলো, তারা বসাক সমিতির মাধ্যমে অনভিজ্ঞ তাঁতিদেরকে প্রশিক্ষণ দান ও কাপড়ের মান নিয়ন্ত্রন করতেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অনেক বসাক তাঁতি ভারত চলে যান। এ সময় বসাক ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাঁত শিল্পের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তারা বসাক তাঁতিদের মতোই দক্ষ হয়ে উঠেন।

টাঙ্গাইল জেলার ১১টি উপজেলা আর ১টি থানার মধ্যে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর, সখীপুর উপজেলা হচ্ছে তাঁতবহুল এলাকা। এছাড়া গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার কিছু কিছু গ্রামে তাঁত শিল্প আছে। এ সকল গ্রামে দিন-রাত শোনা যায় মাকুর মনোমুদ্ধকর খটখট শব্দ। মাকুর খটখটির পাশাপাশি তাঁতিদের ব্যতিব্যস্ত নিরস্তর হাতে নিপুর শাড়ি বোনার দৃশ্য ও সত্যিই মনোমুগ্ধকর।


টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি তৈরি করতে হাতের কাজ করা হয় খুব দরদ দিয়ে, গভীর মনোসংযোগের সাথে অত্যন্ত সুক্ষ্ণ ও সুদৃশ্য ভাবে। পুরুষেরা তাঁত বোনে; আর চরকাকাটা, রঙকরা, জরির কাজে সহযোগিতা করে বাড়ির মহিলারা। তাঁতিরা মনের রঙ মিশিয়ে শাড়ির জমিনে শিল্প সম্মতভাবে নানা ডিজাইন করে বা নকশা আঁকে, ফুল তোলে।

টাঙ্গাইলে তৈরি করা হয় নানা রং ও ডিজাইনের নানা নামের শাড়ি। যেমন- জামদানী বা সফ্ট সিল্ক, হাফ সিল্ক, টাঙ্গাইল বি.টি, বালুচরি, জরিপাড়, হাজারবুটি, সূতিপাড়, কটকি, স্বর্ণচুড়, ইককাত, আনারকলি, দেবদাস, কুমকুম, সানন্দা, নীলাম্বরী, ময়ুরকন্ঠী এবং সাধারণ মানের শাড়ি।

শাড়ির বিভিন্ন নাম ও মান, হাতের কাজ, শাড়ির জমিনের রঙভেদে দাম ও ভিন্ন রকম-সর্বনিম্ন দু’শত টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে জামদানি বা সফ্ট সিল্কের দাম সবচেয়ে বেশি। জামদানি শাড়ি তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ভাবে।

টাঙ্গাইল তাঁতের প্রধান হাট হচ্ছে মূল শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাজিতপুর। বাজিতপুরে সপ্তাহের প্রতি সোম ও শুক্রবার হাট বসে। ভোর রাত হতে হাট শুরু হয়, সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত চলে হাটের ব্যতিব্যস্ততা এবং বেচাকেনা। এ হাটের বেশির ভাগ ক্রেতারাই মহাজন শ্রেণীর। মহাজনরা এই হাট থেকে পাইকারি দরে কাপড় কিনে নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে, শপিং মলে, ফ্যাশন হাউস গুলোতে সাপ্লাই দেন। মহাজনদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্ত্রী-কন্যারাও এ হাট থেকে তাদের পছন্দের শাড়ী কিনে নিয়ে যান। তবে ঢাকা ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ভিত্তিক ফ্যাশন হাউস গুলোই টাঙ্গাইল শাড়ির বড় ক্রেতা ও সরবরাহকারী।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, যেমন- ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, জাপান, সৌদিআরব, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ পশ্চিম বাংলায় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ব্যাপক কদর থাকলেও এ শাড়ি আন্তর্জাতিক বাজারে মার খাচ্ছে নানা কারণে-
(১) দামের জন্য (কাঁচামালের সরবরাহের সহজলভ্যতা না থাকা, কাঁচামালসহ তাঁত মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে টাঙ্গাইল শাড়ি উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যায়)।
(২) ভারতীয় শাড়ির আগ্রাসন (সেখানে কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও সূতার স্বল্প মূল্যের জন্য টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির চেয়ে ভারতের শাড়ি দামে সস্তা হয়ে থাকে বিধায় অনেক ক্রেতাই সে দিকে ঝুকে পড়েছে)।
(৩) টাঙ্গাইল শাড়ি বিপণন ব্যবস্থাটি মহাজনি চক্রের হাতে বন্দি, ফলে বিপণন ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
এ ছাড়া দেশ ভাগ, পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের পর টাঙ্গাইল ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া বসাক তাঁতিরা সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ির কারিকুলামে যে শাড়ি তৈরি করছে তা টাঙ্গাইল শাড়ির নাম ভাঙিয়ে বিশ্ববাজার দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এতো প্রতিকূলতার পরেও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি তার হারানো বাজার পুনরুদ্ধারে সক্ষম হচ্ছে। কারণ টাঙ্গাইল শাড়ি মানেই ভিন্ন সূতায়, আলাদা তাঁতে তৈরি আলাদা বৈশিষ্ট্যের শাড়ি। এর নকশা, বুনন, ও রংয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্রতা। এ শাড়ি নরম, মোলায়েম, পরতে আরাম এবং টেকসই। এছাড়া সময় ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ির আকর্ষণ ও নক্শার ব্যঞ্জনা।

জামদানি শাড়ি

0 comments

যুগ যুগ ধরে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীর কাছে অতি পরিচিত একটি পোশাক। প্রাচীনকালের মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী এই জামদানি শাড়ি মূলত কার্পাস তুলা দিয়ে তৈরি এক ধরনের সূক্ষ্ম বস্ত্র। মসলিনের ওপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয় আর নকশা বোনার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে করোলা, ময়ূর প্যাচপাড়, চন্দ্রপাড়, দুবলা জাল, সাবু দানা ইত্যাদি নামকরণ করা হয়ে থাকে। জামদানির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এ ছাড়া নেপালের আঞ্চলিক পোশাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি ব্যবহৃত হতো। বিগত সময়গুলো জামদানি শিল্প বেশ দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করেছে। মোগল আমলে সম্রাট ও তাঁদের রাজ কর্মচারীদের এই শিল্পের প্রতি অমনোযোগিতা এবং ইংরেজ শাসনামলে শিল্প বিপ্লবের ফলে জামদানি শিল্প তার ঐতিহ্য হারাতে বসে। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহ্যের ধারক জামদানি শিল্প ও শিল্পীদের বাঁচাতে সরকার ঢাকার ডেমরায় জামদানি পল্লীর তাঁতিদের আর্থিক সহায়তা করে এবং ১৯৯২ সালে দক্ষিণ রূপসী গ্রামে জামদানি পল্লী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাকে (বিসিক) দায়িত্ব দেয়। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বর্তমানে জামদানি শিল্প অনেকটাই তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। শাড়ি ছাড়াও সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, ব্যাগ ইত্যাদি হিসেবে বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামদানির ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় এবং বাজারে এর উচ্চমূল্য নতুন করে বাংলাদেশে এই শিল্পের গতি সঞ্চার করেছে।

পঞ্চায়েত প্রথা

0 comments

পঞ্চায়েত বহু বছর ধরে প্রচলিত একটি সমাজ পরিচালনা প্রথা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে এই প্রথার মাধ্যমে সমাজ পরিচালিত হতো। পঞ্চায়েত প্রথায় সাধারণত পাঁচ বা তাঁর চেয়ে অধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি পর্ষদ গঠন করা হয়ে থাকে। পঞ্চায়েতের এই পর্ষদই সমাজের নানা সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। পঞ্চায়েত পর্ষদের সদস্যরা সাধারণত গ্রামের জনগণ বা পঞ্চায়েত রাজাদের দ্বারা নির্বাচিত। পঞ্চায়েতগুলোতে সব শ্রেণী ও বর্ণের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ছিল। পঞ্চায়েত গ্রামের নানা বিবাদ ও সমস্যাদির সমাধান ছাড়াও ভূমি বণ্টন এবং সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব আদায় করতে সহযোগিতা করত। একসময়ে এই পঞ্চায়েত খুবই শক্তিশালী ভূমিকা রাখা একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সমাজে নানা অনুশাসন, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান প্রবর্তন ও সেগুলোর সংরক্ষণে পঞ্চায়েত ব্যাপক প্রভাবশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ধীরে ধীরে সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষা আর মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে গঠিত হওয়া পঞ্চায়েত তার নানা ভূমিকার কারণে বিতর্কিত হতে থাকে। সমাজের ধনিক শ্রেণীর মানুষ গরিব, অশিক্ষিতদের নানা নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে পঞ্চায়েতকে ব্যবহার করতে শুরু করে। নানা কুসংস্কার আর পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে থাকার ফলে বহু মানুষ পঞ্চায়েতের নির্যাতনের শিকার হয়। আধুনিক যুগের সঙ্গে পঞ্চায়েতগুলো তাল মিলিয়ে চলতে না পারার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে পঞ্চায়েতের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। শত শত বছর ধরে চলে আসা প্রথাটির প্রতি মানুষ বিমুখ হয়ে পড়ে। ১৯১৯ সালে 'বেঙ্গল ভিলেজ সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট' পাসের পর বাংলায় পঞ্চায়েত প্রথার আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটে।

প্রধান বিচারপতি

0 comments

একটি দেশের অপরাধমূলক কাজ দমনে সে দেশের বিচারকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকরা কেমন বিচার করেন তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে সে দেশের সমাজের অপরাধের মাত্রা। ফলে প্রতিটি দেশেই যোগ্য ব্যক্তিদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশের এই বিচারকদের মধ্যে সর্বোচ্চ বিচারক হলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রধান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। প্রধান বিচারপতি বিচার ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখেন। তিনি অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে আপিল বিভাগের এজলাসে বসে বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি ও শুনানি করে থাকেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন এএসএম সায়েম। ১৯৭৬ সালে সুপ্রিম কোর্টকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। বিভক্ত সর্বোচ্চ আদালত দুটির নাম হয় সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে একজন এবং হাইকোর্টে একজন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে আদালত দুটিকে আবার একত্রীকরণ করা হয়। ফলে দুই বিভাগে দুজন বিচারপতির স্থলে আবার আগের মতো করে একজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতিই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনার সর্বোচ্চ গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকেন। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার কঠিন কাজটি করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতিরা নানা বাধ্যবাধকতাময় জীবন যাপন করে থাকেন। সাধারণের জীবনযাপন বিসর্জন দিয়ে গাম্ভীর্যপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ব্যক্তিগত জীবন যাপন করেন। দেশের মানুষের কাছে প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত সম্মানের একজন ব্যক্তি।  ছবির উৎসঃ Official Web Site of Supreme Court of Bangladesh

Friday, September 21, 2012

সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভিন্ন যৌক্তিকতাবোধ

0 comments
ক্ষমতায়ন শব্দটি ১৯৯০ থেকে উন্নয়নের মাঠে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, যেখানে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’। যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় নারীর ক্ষমতায়ন মানে কী, তাহলে উত্তরটি নানারকম হতে পারে, বিশেষত যেখানে নারীরা কোনো সমশ্রেণীভুক্ত গোষ্ঠী নয় এবং দেশ, শ্রেণী, জাতি অনুযায়ী তাদের পরিস্থিতি ও অবস্থান ভিন্ন। তারপরও বিশেষজ্ঞরা ক্ষমতায়নের কিছু কাঠামো তৈরি করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়নকে নারীবাদী, সমাজকর্মী, উন্নয়ন কর্মীরা নানা দিক থেকেই ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে, তৃতীয় বিশ্বের নারী আন্দোলনের মূল দিক হলো নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। নারীর ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন বিষয়কে তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ নারী তার পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে কিনা এবং তার ক্ষমতা দিয়ে সম্পদে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে কিনা। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারীর ক্ষমতায়নকে বুঝতে হলে এখানকার সমাজ কাঠামোকে বুঝতে হবে। সাধারণত, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নারীরা পুরুষের তুলনায় অধস্তন অবস্থানে থাকে। এখানকার বৈষম্যমূলক সামাজিক কাঠামোর কারণে একটি মেয়েশিশুর জন্মকে বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীকালে খাদ্য, পুষ্টি, চিকিৎসা, শিক্ষা, আয়, সম্পদে বৈষম্যের শিকার হয়ে পরিবারে, সমাজে একজন নারীর অবস্থান দাঁড়ায় পুরুষের অধস্তন। এই পরিপ্রেক্ষিতে একজন নারীর এই সুবিধাগুলো অর্জনের সংগ্রামকেই ক্ষমতায়ন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সেক্ষেত্রে ধারণা করা যেতে পারে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হলে একজন নারী পরিবারে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাটি চর্চা করতে পারবে।
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন নারী কতখানি তার সিদ্ধান্তকে পরিবারে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে? এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সাথে আরও একটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে তা হচ্ছে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। বহুকাল ধরেই অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতাকে ক্ষমতায়নের প্রধান মানদ- হিসেবে দেখার প্রবণতা রয়েছে। যেহেতু অর্থ উপার্জনের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটি যোগসূত্র রয়েছে, তাই শিক্ষিত চাকরিজীবী নারীর মতামতকে পরিবারে যথেষ্টই মূল্য দেয়া হয়। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বহু গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে উপলব্ধি করেছেনÑ নারীর ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা তাকে এক ধরনের স্বাধীনতা উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়, যার ফলে সে তার পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে থাকে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, অর্থ উপার্জন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে। কিন্তু যেসব নারী বাইরে কাজ করছেন না, তাদের মতামতটি কি তবে মূল্যহীন হবে? তারা কি যৌক্তিক সিদ্ধান্তনিতে পারে না? 
ধরা যাক, একটি পরিবারে মাকে দূরে কোথাও যেতে হবে জরুরী প্রয়োজনে এবং সেই মুহূর্তে পরিবারের শিশু সন্তানটিও ভীষণ অসুস্থ। কিন্তু সেই জায়গায় যাওয়াটাও অত্যন্ত জরুরী। এই পরিস্থিতিতে একজন মা কী করেন? তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালান যাতে না যেতে হয়, তিনি বাচ্চাটার কাছে থাকতে পারেন। এই সিদ্ধান্তটি তিনি কিসের ওপর ভিত্তি করে নেন?
কোন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ও পুরুষের সিদ্ধান্তের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেননা নারীরা ভিন্ন অনুভূতি বা নৈতিক যৌক্তিকতাবোধ ধারণ করে। ঐতিহাসিকভাবে নারীর জীবন গড়ে ওঠে পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে, যার ফলশ্রুতিতে একজন নারী ও একজন পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। আর নারীর এই ভিন্ন অভিজ্ঞতা তার মধ্যে একটি স্বতন্ত্র যৌক্তিকতাবোধ তৈরি করে, যেটা গড়ে ওঠে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে, পরিবারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। নারীরা পরিবারে তাদের দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে পরিবারের সব সদস্যের সাথে এক ধরনের আবেগীয় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, যার ফলস্বরূপ সে যখন পরিবারের কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখন সবার কথা, ভালোমন্দ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। নারীবাদী সাইকোলজিস্ট ক্যারল গিলিগান তার ‘ইন ও ডিফারেন্ট ভয়েস’ বইয়ে নারীর এই ভিন্নধর্মী গুণাবলীর বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলেছেন, যেখানে একজন পুরুষ শুধু নিয়মনীতি, ন্যায়-অন্যায়, অধিকার, নিরপেক্ষতা ইত্যাদির মানদ-ে সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে একজন নারী সবসময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চাহিদার বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যা কিনা অনেক বেশি যৌক্তিক এবং একই সাথে সংবেদনশীল।
পরিবারে নারীর অধস্তন অবস্থা তৈরি হয় নারীর ওপর অর্পিত কাজগুলোর কোনো আর্থিক মূল্যমান না থাকার কারণে। গিলিগান নারীর এই প্রথাগত কাজগুলোকেই নারীর ক্ষমতার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেখান থেকে নারী সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নিতে শিখে। সেক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারীবাদীদের সংজ্ঞার সাথে গিলিগানের এই তত্ত্বের সংঘর্ষ হয়। যেমন, শ্রীলতা বাটলিওয়ালা (১৯৯৪), নায়লা কবির (১৯৯৪, ২০০১), জো রওল্যান্ডস (১৯৯৭, ১৯৯৮) প্রমুখ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার কথা বলেছেন, যেখানে তার জন্য প্রয়োজন বিদ্যমান বৈষম্যমূলক সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন। অর্থাৎ পরিবারে নারীর প্রথাগত দায়িত্ব এবং কাজের পরিবর্তন জরুরি। 
কেননা এগুলোর কোনো আর্থিক স্বীকৃতি নেই এবং এর ফলে পুরুষ নারীর ওপর কর্তৃত্ব খাটায়। কিন্তু গিলিগান মনে করেন, নারীর এই ভিন্নধর্মী পরিবারকেন্দ্রিক গুণাবলি তার নিজ মহিমায় প্রশংসার দাবিদার। সেক্ষেত্রে নারীর এই আলাদা সংবেদনশীল যৌক্তিকতাবোধটাকে উপলব্ধি করে যদি পরিবারের যে কোনো সিদ্ধান্তে নারীর মতামত নেয়া হয় সেক্ষেত্রে সেটি হবে অনেক বেশি ফলপ্রসূ এবং সুদূরপ্রসারী। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন নারীর ঘরের কাজকে মূল্যায়নে করতে শেখা, তার এই স্বতন্ত্র যৌক্তিকতাবোধটাকে উপলব্ধি করে সেটাকে সম্মান করতে জানা।

রওশন আক্তার ঊর্মি

পুরুষের ভাবনায় নারী

0 comments
নারীবাদী, সুশীল সমাজসহ মানবতাবোধসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ নারীর অধিকার আদায়, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিয়ে বহুকাল আগ থেকে চেষ্টা চালিয়ে অনেকটা সফলতার মুখ দেখলেও অনেকক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি অনেক পুরুষই। মুখে জেন্ডার সংবেদনশীলতার কথা আওড়ালেও ব্যক্তি জীবনে নারীর ওপর কর্তৃত্ব ফলানো, নির্যাতন করা, নারীর অধিকার ভূলুণ্ঠিত করার ঘটনা অহরহ প্রতীয়মান হচ্ছে বিশ্বের সর্বত্র। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সরাসরি নারীকে অধিকারবঞ্চিত ও মর্যাদাহানির ঘটনা বেশি হলেও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে নারীকে অবনমন করা হয় পরোক্ষভাবে। এক সময় পুরুষরা পেশী শক্তির মাধ্যমে ও সামাজিক বিভিন্ন নিয়মকানুন আরোপ করার মধ্য দিয়ে নারীদের ওপর নির্যাতনের খড়গ চালাত। পুরুষের নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট নারীরা অনেক সময় মানুষ হিসেবেই বিবেচিত হতো না। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আর রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধের কারণে অনেক পুরুষই ভদ্রতার মুখোশ পরে আছে। নারীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এখন অনেকে পেশী শক্তি প্রদর্শনের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে নারীকে অবদমিত করছে। নারীকে বিভিন্ন লোভের ফাঁদে ফেলে নারীর মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করার চেষ্টা করছে আমাদের সমাজের কিছু ভদ্রবেশী পুরুষ। পুরুষরা যেমন নানা ছলে বলে কৌশলে নারীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করে তেমনি আবার অনেক নারী নিজেদেরকে পুরুষদের অধস্তন হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করে। এই কথা শুনে অনেক নারীবাদী হয়ত রাগ করবেন কিন্তু সেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ নারীই নিজেকে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করে থাকে। গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত নারীরা নিজেদের পুরুষের অধস্তন ভাবে এটা যেমন সত্য তেমনি শহরাঞ্চলের অনেক শিক্ষিত নারীও নিজেদেরকে পুরুষের ওপর সঁপে দিতে পছন্দ করে। এর মূল কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে লালিত আমাদের সমাজ কাঠামো। আমাদের পারিবারিক প্রথা, রীতিগুলোই এমন যে, নারীর সামাজিকীকরণ ঘটে নির্ভরশীল মন মানসিকতা সৃষ্টি করার মধ্যে দিয়ে। তবে এই বিশ্বায়নের যুগে নারীর অধিকার মর্যাদা রক্ষার জন্য বিভিন্ন আইন, চুক্তির কারণে নারীর অবস্থার উন্নতি ঘটছে। বর্তমান সমাজে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে শিক্ষিত মেয়েদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলছে। ফলে নারী সমাজ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন হচ্ছে। এতে পুরুষের পৌরষে কিছুটা আঘাত লাগছে। কিন্তু ভদ্রবেশী পুরুষরা তো আর সরাসরি নারীকে অবদমিত ও অবমূল্যায়ন করতে পারে না। তাই এই সকল পুরুষরা নারীর ওপর নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বেছে নিচ্ছে নিত্য নতুন চিত্তাকর্ষক ও উদ্ভট কৌশল, তৈরি করছে লোভনীয় অফারের ফাঁদ। আর নারীরা পুরুষদের সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পৃথিবীর সর্বত্রই নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। যে কোন পণ্যের বিজ্ঞাপনই হোক না কেন তাতে নারী থাকা চাইই চাই। পুরুষদের সেভিং ক্রিমের বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় নারীর সরব উপস্থিতি। আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনে যদিও নারীকে তুলনামূলক কম আবেদনময়ী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, ভারতের টিভি বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে সত্যি মাথা গরম হয়ে যাবে। সেগুলোতে নারীকে যৌন আবেদনময়ী হিসেবে তুলে ধরার প্রাণান্ত চেষ্টা করা হয়। বিজ্ঞাপন নির্মাতারা চিন্তা করেন হয়ত নারীর এই রকম উপস্থিতি বিজ্ঞাপনকে আর্কষণীয় করে তোলে। এর ফলে বিজ্ঞাপনটির প্রতি মানুষের বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। যে পণ্যটির জন্য এই বিজ্ঞাপন সেই পণ্যটির কাটতিও বেশি হয়। আসলে এখানে পণ্যটির থেকেও নারীর উপস্থিতিই মুখ্য হয়ে ধরা দেয় যা প্রকৃতপক্ষে নারীকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে বাধ্য করে। পুরুষের মানসপটে নারীর আবেদনময়ী ও প্রাণোচ্ছল ভঙ্গিমা এঁকে দিয়ে পণ্যের কাটতি বাড়ানোর যে প্রচেষ্টা তা নারীর মর্যাদাকে লঘু করার অন্যতম উপায়। নারীর সৌন্দর্যকে পুঁজি করে যে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে তা কিন্তু পরোক্ষভাবে হলেও নারীর জন্য মর্যাদা হানিকর। বলিউড, ঢালিউড অথবা টালিউড ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির অধিকাংশ ফিল্মে পুরুষকে উপস্থাপন করা হয় দুর্জয়, দুসাহসী হিসেবে আর নারীকে ফুটিয়ে তোলা হয় প্রেমময়ী ও ছিঁচকাদুনে হিসেবে। বেশিরভাগ সিনেমাতেই দেখা যায় পুরুষরা লড়াই-সংগ্রাম করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, নারীকে ভালবাসে আর ভালবাসা পাওয়ার জন্য নানা হিরোইজম দেখিয়ে নায়িকার মন জয় করে, নারী কোন বিপদে পড়লে বীর বেশে গিয়ে নায়িকাকে বিপদ হতে উদ্ধার করে বুকে টেনে নেয় আর অন্যদিকে নারীরা পিতার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে না পেরে নিজের ভালবাসাকে আত্মাহুতি দেয়, নায়কের ওপর সদা নির্ভরশীল নারীকে উপস্থাপন করা হয় প্রেমময়ী দুর্বলচিত্তের অধিকারিণী হিসেবে। সিনেমাগুলোর এই দৃশ্যপট নারীকে খাটো করে দেখারই নামান্তর। পুরুষরা শার্ট-প্যান্ট পরে পুরো ঢাকা থাকলেও নারীর পোশাক থাকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। বরফের মাঝে শূটিংয়ের সময়ও দেখা যায় নারীর খোলামেলা দেহ। এগুলো করা হয় মূলত সিনেমাগুলোতে একটু বাড়তি মসলা দেয়ার উদ্দেশ্য আর দর্শকদের কাছে সিনেমাকে আর্কষণীয় করে তোলার জন্য। এটাও নারীকে খাটো করে দেখার ও তাদেরকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরার একটা প্রচেষ্টা। প্রকৃত পক্ষে আমাদের ধ্যান-ধারণা এখনও নারীকে পণ্য রূপে চিন্তা করা। তবে হলিউডের কিছু রোমান্টিক ও ঐতিহাসিক সিনেমা ব্যতীত অ্যাকশান ধর্মী মুভিতে নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হিসেবে তুলে ধরা হয়, নারীকে যোদ্ধা, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু এখানকার বিজ্ঞাপনগুলোতেও নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয় নারীর অর্ধনগ্ন বা আবেদনময়ী অঙ্গ-ভঙ্গির চিত্র ধারণ করে। নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করার আরেকটি উপায় হচ্ছে বিভিন্ন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছেদে নারীকে রমণীয় ও চিত্তাকর্ষক হিসেবে ফুটিয়ে তোলা যা পুরুষের মনে কামনার উন্মাদনা সৃষ্টি করে। এগুলোতে নারীকে যত নগ্নভাবে উপস্থাপন করা হয় তত কাটতি বেশি থাকে। নারীরাও উপলব্ধি করতে পারে না যে আসলে তাদের মর্যাদাকে এখানে হেয় করা হচ্ছে। সস্তা জনপ্রিয়তা ও অর্থের কাছে পরাভূত নারীরা নিজেদের পোশাক খুলে পোজ দিতেও দ্বিধা করে না। এবার আসা যাক টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদপাঠিকাদের কথায়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোর অধিকাংশ সংবাদ পাঠিকা সুন্দরী। এর কারণ যারা রূপবতী নয় তাদেরকে সংবাদপাঠের সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেয়া হয় না। এখানেও মূলত নারীকে মনোরঞ্জনের সামগ্রী হিসেবে বিবেচনাই করা হয়। নারীকে শুধু টিভি পর্দায়, সিনেমাতেই পণ্য হিসেবে তুলে ধরা হয় না, পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় করপোরেট অফিসগুলোতেও। এই জন্য দেখা যায় অধিকাংশ অফিসগুলোর রিসেপশনে সুন্দরীদের সরব উপস্থিতি। আবার মোবাইল অপারেটারের ভয়েসের ক্ষেত্রে নারী কণ্ঠকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এর কারণ নারীর সুরালো কন্ঠ হৃদয়ে ঝংকার তুলবে এই চিন্তা হয়তো নিয়োগকর্তাদের মনে খেলা করে। একদিক বিবেচনায় এতে নারীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে। ফলে তারা পরিবারে গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে মানসিকতা থেকে নারীকে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতে নারী বিবেচিত হচ্ছে পণ্য হিসেবে। এটা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বা পুরুষের নারীকে অবমূল্যায়নের এক সূক্ষ্ম কৌশল। নারী সমাজের পুরুষের এই কূটকৌশল সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নারী চাকরি করবে, বিজ্ঞাপনে মডেল হবে, সিনেমা করবে কিন্তু এতে যেন কোন রকম মর্যাদা ক্ষুণœ না হয় সেদিকে নারীকে খেয়াল রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নারীর মর্যাদা রক্ষা করার জন্য পুরুষদের নারীকে পণ্য হিসেবে, চিত্তাকর্ষক হিসেবে ব্যবহার করার মনমানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে এবং নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়ার মানসিকতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে। 

লেখকঃ  মোঃ আরিফুর রহমান
সূত্রঃ জনকন্ঠ

ক্রিকেট বিশ্বকাপ

0 comments


বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। বিশেষ করে আগে যেসব দেশে ব্রিটিশদের শাসন ছিল সেখানে ক্রিকেট ব্যাপক জনপ্রিয় একটি খেলা। আর ব্যাপক জনপ্রিয় এই খেলাকে নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি আয়োজন করে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। প্রতি চার বছর পরপর বসে ক্রিকেটের এই জনপ্রিয় আসর। ক্রিকেটের জন্মের মতোই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যাত্রাও শুরু হয় ইংল্যান্ডে। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বকাপে মোট আটটি দল অংশগ্রহণ করে। অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সর্বশেষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। এটি ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দশম আসর। এই আসরটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ। মোট ১৪টি দেশ দশম বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। তারা মোট চারবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে মজার ব্যাপার হলো, ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্ম দিলেও তারা এখনো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।

আরোগ্যকুঞ্জ, মৌলভীবাজার

0 comments
মৌলভীবাজারের ১২৫০ হেক্টর আয়তনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দেশের সর্বপ্রথম ভেষজ বাগান আরোগ্যকুঞ্জে ভেষজ উদ্ভিদ চাষাবাদের কার্যক্রম। যে টুকু টিকে রয়েছে তাও পরিচর্যার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

 মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ভেষজ এর গাছপালা থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার আয়ুর্বেদী ঔষধের কাঁচামাল পাওয়া যাবে এবং আমদানীর উপর চাপ কমবে সাশ্রয় হবে বৈদেশীক মুদ্রা। বর্তমানে দেশের মডেল ভেষজ রোডের ৫হাজার বৃক্ষ মানুষের শাররীক রোগ-বিয়োগের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গাছ গুলো কাটার মেয়াদ ৭ বছর আগে পূর্ণ হলেও তা কাটছেননা মালিকরা। কারণ এ ভেষজ গাছপালা আর্য়ুবেদী প্রতিষ্টান এ দিয়ে আয়ূবেদী ঔষধ তৈরী করবে যা লাগবে মানুষের কল্যানে। এ উপজেলার ১২৫০হেক্টর আয়তন জুড়ে লাউয়াছড়া বনের বাঘমারা এলাকায় ২০০২সালে দুই একর ও ২০০৩সালে আড়াই একর বন বিভাগের জমিতে গড়ে তুলা হয় ভেষজ বাগান আরোগ্য কুঞ্জ। তবে আরগ্য কুঞ্জ সৃষ্টির পর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বেশিরভাগ গাছ বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলেও আরোগ্য কুঞ্জের কোন গাছে নাম লেখা না থাকায় পর্যটকরা গাছের পরিচয় জানতে পারেননা কেউ। অন্যদিকে আরগ্য কুঞ্জ রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সরকারের কোন বরাদ্দ না থাকায় বন বিভাগ এর কোন উন্নয়ন কাজ করতে পারছেনা। লোকবলের অভাবে সব সময় দেখাশোনা করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সে সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র কেটে নিয়ে যাচ্ছে এসব ঔষধী গাছ। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ভেষজ গাছ আজ বিলুপ্তির পথে। এখানে রয়েছে আদি অকৃত্রিম ভেষজ চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষকে উৎসাহিক করে তোলার উদ্যেশ্যে সিলেট বন বিভাগ দেশজ ঔষধী বৃক্ষ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে “আরোগ্য কুঞ্জে” (অশোক, অর্জুন, কর্পুর, চালতা, নিম, চালমুগরা, রক্ত চন্দন, খয়ের, নাগেশ্বর সহ) ৩৮ টি প্রজাতির বৃক্ষ (বাসক, আকন্দ, পাখরকুঁচি, ভেরেন্ডা, ঘৃত কুমারী, উলটকমল, তুলসী, ফনিমনসাসহ) ১২ প্রজাতির গুল্ম জাতীয় এবং (ঈশ্বরমুল, কালোমেঘ, গন্ধভাদুলী, গোল মরিচ, থনকুনি, পুদিনা, শথমুলী, সর্পগন্ধা, হাড়মোড়, কুমারিকা সহ) ১৩ প্রজাতীর লতা জাতীয় গাছ-গাছালি সহ “আরোগ্য কুঞ্জে” লাগানো হয়েছিল ৬৯ প্রজাতির ভেষজ।

Sunday, September 16, 2012

সুস্থ দাঁতের জন্য

0 comments
জীবাণুজনিত কারণে দাঁতের গায়ে সৃষ্ট ক্ষত বা গর্তকে দন্তক্ষয় রোগ বা ডেন্টাল ক্যারিজ বলা হয়। পৃথিবীর সব দেশের প্রায় অধিকাংশ লোকেরই এক বা একাধিক দাঁত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের শতকরা ৬০ জনের বেশি লোক এই রোগে আক্রান্ত। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এই রোগকে দাঁতে পোকা লাগা বলে থাকেন, কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিভিন্ন ধরনের অতি ক্ষুদ্র জীবাণু (যা খালি চোখে দেখা যায় না) ছাড়া কোনো পোকার অস্তিত্ব এতে পাওয়া যায়নি। বিশুদ্ধ চিনিজাতীয় খাবারের সঙ্গে এই রোগের একটি বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। শর্করা বা চিনিজাতীয় খাবার গ্রহণ করে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করলে দাঁতে লেগে থাকা ওই সব খাদ্যবস্তুর মধ্যে জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে।
অম্ল বা এসিড প্রস্তুতকারী এসব জীবাণু তাদের সৃষ্ট অম্লের সাহায্য দাঁতের এনামেল ও ডেন্টিন ক্ষয়সাধন করে। দাঁতের ক্যারিজ সাধারণত প্রথমে শুরু হয় দাঁতের গায়ের কতগুলো নাজুক স্থানে অর্থাৎ যেসব স্থানে খাবার অতি সহজেই জমে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত ক্ষতটির এনামেলের ওপরে একটি কালো দাগ বা ফোটার মতো দেখায়। ক্রমান্বয়ে এটি একটি ছোট গর্তে পরিণত হয় এবং ওই গর্তে অতি সহজেই খাবার ও জীবাণু জমে থাকে। এভাবে ক্ষতটি ক্রমশ বড় হয়ে ডেন্টিনে প্রসারিত হয় এবং আক্রান্ত দাঁত গরম, ঠান্ডা কিংবা টক বা মিষ্টিতে শিরশির করে। এ অবস্থায় ক্ষত দাঁতটি চিকিৎসা না করলে এটি ক্রমান্বয়ে আরও গভীর হয়ে দাঁতের মজ্জা অর্থাৎ পাল্পে প্রসারিত হয়। ফলে রোগী তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। অনেক সময় এই ব্যথা আক্রান্ত দাঁতে কি না, কিংবা ঠিক কোন জায়গায় ব্যথা করছে, তা নির্দিষ্ট করে রোগী বলতে পারেন না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ আক্রান্ত দিকের চোয়াল, কান, চোখ, কপাল ও মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। কোনো কোনো দাঁতের ব্যথা ঘাড়, কাঁধ, বুক, হাতের কবজি কিংবা হৎপিণ্ডে অনুভব হতে পারে।
দন্তশাঁসের (মজ্জা) প্রদাহ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা থাকতে পারে। চিকিৎসা না করে এভাবে ব্যথা কয়েক দিন থাকলে দন্তশাঁস পচে নষ্ট হয়ে যায়। দাঁতের শাঁস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ দাঁতের ব্যথা কমে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগ ভালো হয়ে গেছে বলে রোগীর ভ্রান্ত ধারণা জন্মে। অথচ এ অবস্থায় দাঁতটির চিকিৎসা না করালে কালক্রমে রোগাক্রান্ত দাঁতটি যেমন হারাতে হয়, তেমনই মুখ ও চোয়ালের নানাবিধ জটিল রোগের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দাঁতের ক্যারিজের জন্য দাঁত আংশিক ভেঙে যেতে পারে। দাঁতের ভাঙা ধারালো অংশের সঙ্গে জিহ্বা ও গালের মাংসের ঘর্ষণের ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, যা চিকিৎসার অভাবে পরবর্তী সময় ক্যানসার নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, মুখের ক্যানসারের শতকরা ৪০ ভাগ ক্যানসার ধারালো ভাঙা দাঁত থেকেই হয়ে থাকে।

দন্তক্ষয় রোগের প্রতিকার
আমরা জানি, রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। কাজেই যে কারণে দাঁতের ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় রোগ হয়, সে কারণগুলো দূর করতে পারলে এ রোগের হাত থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়।
 প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে, বিশেষ করে, রাতে ঘুমানোর আগে টুথ ব্রাশ, পেস্ট ও নাইলনের সুতা দিয়ে দাঁত এবং দাঁতে লেগে থাকা খাদ্য কণা পরিষ্কার করতে হবে।
 দাঁত পরিষ্কারের অর্থ শুধু দাঁত পরিষ্কারই বোঝায় না, দাঁত, মাড়ি ও জিহ্বা, দুই দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাবারসহ মুখের সর্বত্র লেগে থাকা আঠালো জীবাণুর প্রলেপ দূর করা বোঝায়।
 খাওয়ার পর কেবল কুলকুচি করলে জীবাণু দূর হয় না। যেভাবে যা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করুন না কেন, দাঁত এবং দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাবার যাতে ভালোভাবে পরিষ্কার হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
 ঘন ঘন চিনি-জাতীয় খাদ্য যেমন—চকলেট, বিস্কুট, আইসক্রিম ইত্যাদি মিষ্টি-জাতীয় খাবার কম খাওয়া কিংবা খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে মুখ পরিষ্কার করা জরুরি।
 রাতে ঘুমের মধ্যে শিশুদের বোতলের দুধ কোনোভাবেই খাওয়ানো উচিত নয়। কোনো বিশেষ কারণে যদি খওয়াতেই হয়, তবে সে ক্ষেত্রে শিশুর দাঁত সঙ্গে সঙ্গে ভেজা পাতলা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
 ছয় মাস পর পর অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের উপদেশ ও পরামর্শ নেওয়া উচিত।
 বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দাঁতের ক্যারিজের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। যেমন—খাবার পানিতে পরিমাণমতো ফ্লুরাইডযুক্ত করা, দাঁতের গায়ে ফ্লুরাইডের দ্রবণ বা জেল লাগিয়ে দেওয়া, ফ্লুরাইডের দ্রবণ দিয়ে কুলি করা, ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা, দাঁতের নাজুক স্থানে আগাম ফ্লুরাইডযুক্ত ফিলিং করিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।
 ব্যথার কারণে দাঁত ফিলিং করা সম্ভব না হলে কিংবা ফিলিং করার পর ব্যথা শুরু হলে অথবা দাঁতের শাঁস নষ্ট হয়ে মাড়ি ও চোয়াল ফুলে গেলেও বর্তমানে দাঁতটিকে না তুলে বিশেষ এক আধুনিক চিকিৎসা রুট ক্যানেলের মাধ্যমে দাঁতটি অপারেশন করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
আশার কথা হচ্ছে, অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের মতো দাঁতের ক্যারিজ প্রতিরোধের টিকা পরীক্ষাধীন আছে, যা ব্যবহারে রোগীরা অতি সহজেই দন্তক্ষয় বা ক্যারিজের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
মো. শামসুল আলম
ডিন, ডেন্টাল অনুষদ ও চেয়ারম্যান
কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড এন্ডোডনটিকস বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৬, ২০১০

পুরুষের ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি

0 comments
পুরুষের স্বাস্থ্যের যে বড় ঝুঁকি রয়েছে, এগুলোর সবই প্রতিরোধ করা যায়। দীর্ঘ, সুস্থ জীবনের জন্য জানা চাই:
মাত্র ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি সামলালেই হলো। বিখ্যাত সংস্থা সিডিসি এবং আরও কয়েকটি স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেল।

১. হূদরোগ
পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রধান ঝুঁকি তো বটেই। আর স্বাস্থ্যকর জীবন পছন্দ মানলে হূদস্বাস্থ্য ভালো থাকবে অবশ্যই।
 ধূমপান করা যাবে না। তামাক, জর্দা, গুল চিবানো চলবে না। কেউ ধূমপান যদি করে, তার পাশে থাকা যাবে না। বারণ করতে ব্যর্থ হলে দূরে সরে যেতে হবে।
 স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি, টাটকা ফল, গোটা শস্যদানা, আঁশ ও মাছ। যেসব খাবারে চর্বি বেশি, নুন বেশি সেসব খাবার বর্জন করা ভালো।
 রক্তে যদি থাকে উঁচুমান কোলেস্টেরল, থাকে যদি উচ্চরক্তচাপ তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে।
 প্রতিদিন জীবনযাপনের অংশ হবে শরীরচর্চা।
 স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।
 মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করতে হবে।
 ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে রক্তের সুগার মান বজায় রাখতে হবে।
 মানসিক চাপকে মোকাবিলা করতে হবে।

২. ক্যানসার
পুরুষের মধ্যে ক্যানসারের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির অভিমত: এর কারণ হলো ধূমপান। এরপর রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার ও কোলেস্টেরল ক্যানসার।
ক্যানসার প্রতিরোধ করতে হলে—
 ধূমপান করা যাবে না। তামাকপাতা, জর্দা, গুল চিবানো যাবে না।
 পাশে কেউ ধূমপান করলে দূরে সরে যেতে হবে।
 দৈনন্দিন জীবনে শরীরচর্চা থাকতেই হবে।
 স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।
 ফল ও শাকসবজিসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর আহার। এড়িয়ে যেতে হবে চর্বিবহুল খাবার।
 কড়া রোদে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়। ছাতা ও মাথাল ব্যবহার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
 মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
 নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ও সাহায্য নিতে হবে।
 ক্যানসার জনক বস্তু অর্থাৎ কার্সিনোজেন যেমন, রেড়ন, এসবেসটস বিকিরণ ও বায়ুদূষণের মুখোমুখি যাতে না হতে হয়, সে রকম ব্যবস্থা করা।

৩. আঘাত
সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল সিডিসির মত অনুযায়ী পুরুষের মধ্যে মারাত্মক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো, মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা। ভয়ানক দুর্ঘটনা এড়াতে হলে—
 গাড়িতে সিটবেল্ট পরতে হবে।
 গাড়ি চালানোর সময় গতিসীমা মেনে চলা উচিত।
 মদ বা অন্য কোনো নেশা করে গাড়ি চালানো উচিত নয়।
 ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো ঠিক নয়।
মারাত্মক দুর্ঘটনার অন্যান্য বড় কারণ হলো, পতন, পিছলে পড়ে যাওয়া, বিষক্রিয়া। বায়ু চলাচল হয় এমন স্থানে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা উচিত, স্নানঘরে পিছলে যায় না এমন ম্যাট ব্যবহার করা উচিত।
৪. স্ট্রোক
স্ট্রোকের কিছু ঝুঁক আছে, যা পরিবর্তন করা যায় না যেমন, পারিবারিক ইতিহাস, বয়স ও গোত্র। তবে আরও কিছু ঝুঁকি আছে যেগুলো বেশ বদলানো যায়।
 ধূমপান করা ঠিক নয়।
 রক্তচাপ বেশি হলে বা রক্তে কোলেস্টেরল মান বেশি থাকলে চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
 খাবারে যদদূর সম্ভব স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম থাকা ভালো। ট্রান্সফ্যাট একেবারে বাদ দিলেই মঙ্গল।
 স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।
 প্রতিদিনের দিন যাপনে ব্যায়াম অবশ্যই থাকা উচিত।
 ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে রক্তের সুগার যেন থাকে নিয়ন্ত্রণে।
 মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করা উচিত।

৫. সিওপিডি
শ্বাসযন্ত্রের ক্রনিক রোগ যেমন ব্রংকাইটস এবং এমফাইসেমা-এদের বলে সিওপিডি। পুরো মনে করলে দাঁড়ায় কুনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। এ রোগ ঠেকাতে হলে—
 ধূমপান কখনই নয়। কেউ ধূমপান করলে পাশে, সে ধোঁয়াও গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
 রাসায়নিক বস্তু এবং বায়ু দূষণের মুখোমুখি যত কম হওয়া যায়, ততই মঙ্গল।
৬. ডায়াবেটিস
সবচেয়ে সচরাচর ডায়াবেটিস টাইপ ২ ডায়াবেটিস রক্তে বেড়ে যায় সুগার।
একে নিয়ন্ত্রণ না করলে হয় নানা রকমের জটিলতা, হূদরোগ, অন্ধত্ব, স্নায়ু রোগ, কিডনির রোগ।

একে প্রতিরোধ করতে হলে—
 শরীরে বেশি ওজন থাকলে বাড়তি ওজন ঝরাতে হবে।
 ফল, শাকসবজি ও কম চর্বি খাবারে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
 দৈনন্দিন জীবনযাপনে থাকবে অবশ্যই ব্যায়াম।

৭. ফ্লু
ইনফ্লুয়েঞ্জা হলো সচরাচর একটি ভাইরাস সংক্রমণ। সুস্থ শরীরের মানুষের জন্য ফ্লু এত গুরুতর নয় বটে, তবে ফ্লুর জটিলতা মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে যাদের দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যাদের ক্রনিক রোগ রয়েছে। ফ্লু থেকে রক্ষা পেতে হলে বছরে একবার ফ্লুর টিকা নিতে হবে।

৮. আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা
পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বড় একটি হলো আত্মহত্যা। অনেক দেশে, সমাজে পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার কারণ হলো বিষণ্ন্নতা। মন বিষণ্ন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। চিকিৎসা তো রয়েছেই। নিজের সর্বনাশ করা কেন? যতই প্রতিকূল অবস্থাই হোক, যত বিপদই হোক, একে অতিক্রম করাই তো মানুষের কাজ।

৯. কিডনির রোগ
ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের প্রথম জটিলতা হলো কিডনি বিকল হওয়া। ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ থাকলে চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে হবে।
 স্বাস্থ্যকর আহার। নুন কম খেতে হবে।
 প্রতিদিন ব্যায়াম
 ওজন বেশি থাকলে ওজন ঝরানো।
 ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ।

১০. আলঝাইমারস রোগ
এই রোগ প্রতিরোধ করার কোনো প্রমাণিত উপায় নেই। তবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া যায়—
 হূদযন্ত্রের যত্ন নেওয়া ভালো। উচ্চরক্তচাপ থাকলে হূদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস উঁচুমান কোলেস্টেরল থাকলে আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
 মাথায় যাতে আঘাত না লাগে, দেখা উচিত। মাথায় আঘাত লাগার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলঝাইমার রোগ হওয়ার একটি সম্পর্ক আছে, বলেন অনেকে।
 স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।
 প্রতিদিন ব্যায়াম।
 ধূমপান বর্জন।
 মদ্যপান বর্জন।
 সামাজিক মেলামেশা চালিয়ে যান।
 মানসিক ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। মগজ খেলানোর জন্য চর্চা, ব্যায়াম। নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করা।

শেষ কথা
স্বাস্থ্যের ঝুঁকিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
ঝুঁকিগুলোকে মনে হবে ভয়ের কিছু, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য যা কিছু দরকার করা উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, দৈহিকভাবে সক্রিয় থাকা, ধূমপান করে থাকলে ছেড়ে দেওয়া, নিয়মিত চেকআপ এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ও চলাফেরায় সতর্ক থাকা, সবই করা ভালো। প্রতিরোধমূলক এসব কাজকর্ম চালিয়ে গেলে দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৫, ২০১০

Saturday, September 15, 2012

আমেরিকা

0 comments
বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মাত্র ২০০ বছর আগে এর ইতিহাসের শুরু। উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকা দুটি স্বতন্ত্র মহাদেশ হলেও আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাস। কিন্তু কলম্বাসের নামে মহাদেশ দুটোর একটারও নাম হলো না কেন? আমেরিকার নামকরণ এক মজার কাহিনী। কলম্বাস ছিলেন সে আমলের একজন বিখ্যাত ইতালীয় নাবিক। ভারতবর্ষের ঐশ্বর্যের কথা ইউরোপে কিংবদন্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলেই অনেকেই চাইছিল স্থলপথ ছাড়াও সমুদ্রপথের সন্ধান করতে। তাই কলম্বাস জাহাজ নিয়ে ভারতবর্ষের খোঁজে বের হয়ে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর একটা দ্বীপে গিয়ে পেঁৗছান। দ্বীপটা বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত, আগে নাম ছিল সান সালভেদর। বর্তমান নাম ওয়াটলিং আইল্যান্ড। কলম্বাস স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার সম্মানে এই দ্বীপের নাম রাখেন সান সালভেদর। কলম্বাস এই দ্বীপকে ভারত বলে ভেবেছিলেন। বর্তমানে আটলান্টিক মহাসাগরের এই তাবৎ দ্বীপপুঞ্জকে বলা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর কলম্বাস জাপানের পথে পাড়ি দিতে গিয়ে সান সালভেদরের দক্ষিণে হিসপানিয়োলা আর তারপর কিউবায় গিয়ে পেঁৗছান। ভারতবর্ষ জলপথে আবিষ্কার করতে না পেরে ব্যর্থ মনোরথে কলম্বাস ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ আবার স্পেনে পৌঁছেছিলেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর আরম্ভ হলো কলম্বাসের দ্বিতীয় নৌযাত্রা। সেবারও তিনি ভারতবর্ষ খুঁজে পাননি, আবিষ্কার করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জের পুয়ের্তো রিকো ও জ্যামাইকা। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় নৌযাত্রায় তিনি প্রথমে ত্রিনিদাদ আর তারপর গিয়ে পৌঁছান দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বর্তমান ভেনিজুয়েলায়।
এদিকে সমুদ্রপথে ভারতবর্ষ আবিষ্কারের যখন এতসব কাণ্ড চলছিল তখন এক স্পেনীয় নাবিক ঘোষণা করলেন যে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ড তিনি ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন আবিষ্কার করে এসেছেন। নাবিকটির নাম আমেরিগো ভেসপুচ্চি এবং বিশেষজ্ঞদের মত হলো_ তিনি ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দের আগে সমুদ্রযাত্রাই করেননি। কারণ সে বছরই আলন্সো দে ওখেদা ও ভেসপুচ্চি দক্ষিণ আমেরিকায় যান। কলম্বাস যেমন স্পেনের রাজার সাহায্যে সমুদ্রযাত্রা করেন, আমেরিগো ভেসপুচ্চিও তেমনি পর্তুগালের পতাকার নিচে ১৫০১ এবং ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে যাত্রা করে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে গিয়ে উপস্থিত হন। ভেসপুচ্চি এটা ঠিকই বুঝেছিলেন যে কলম্বাস যাকে ভারতবর্ষ ভেবে ভুল করেছিলেন সেটা আসলে একটা অনাবিষ্কৃত নতুন মহাদেশ। ভেসপুচ্চির নিজের সমুদ্রযাত্রার বিষয়ে লেখা এতই প্রসিদ্ধি লাভ করে যে, তাকেই দক্ষিণ আমেরিকার আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জার্মানির ভূগোলবিদ ভাল্ডয়ে মুলার এমন চমৎকৃত হয়ে পড়েন যে ব্রাজিলকে তিনি ভেসপুচ্চির সম্মানার্থে আমেরিকা আখ্যা দেন। 'আমেরিকা' বলার কারণ হলো_ লাতিন ধরনে আমেরিগো ভেসপুচ্চি হয়ে যায় আমেরিকুস ভেসপুকিউস। নামটা এতই প্রচলিত হয়ে পড়ে যে, ব্রাজিল থেকে উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকা দুই মহাদেশেরই নামকরণ হয় আমেরিকা।

The Bangladesh Pratidin

পেরিস্কোপ

0 comments
পেরিস্কোপ হলো এমন একটি যন্ত্র, যা দৃষ্টির আড়ালে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে দেখতে সাহায্য করে। যন্ত্রটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় স্থল এবং জলযুদ্ধে। ডুবোজাহাজে এর ব্যবহার অপরিহার্য। এসব ক্ষেত্রে এটি চর্মে বা আচ্ছাদনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পর্যবেক্ষককে তার চারপাশের অবস্থা দেখতে এবং ডুবোজাহাজের নাবিকদের জলতলে থাকার সময় উপরিভাগের দৃশ্য দেখতে সাহায্য করে। দুটি সমান্তরাল আয়না থেকে আলোর প্রতিফলনের প্রতিটি নির্ভর করে পেরিস্কোপ যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এটি সমকোণে দুবার বাঁকানো একটি লম্বা টিউব বা নল দিয়ে তৈরি। উপর এবং নিচের বাঁকানো অংশে দুটি আয়না পরস্পর সমান্তরালে স্থাপন করা হয়েছে। আয়না দুটির প্রতিফলন 'তল' এমনভাবে সংস্থাপিত যাতে টিউবটির অক্ষের সঙ্গে তা ৪৫ ডিগ্রি কোণ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস

0 comments
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। বাংলাদেশ মেডিকেল জার্নাল ২০১১ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০০৮-এর জানুয়ারি থেকে ২০০৯-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে ময়না তদন্ত হয়েছে ৫১১৪টি লাশের। এর মধ্যে আত্মহত্যার লাশ ছিল ৯৭০। অর্থাৎ মোট লাশের ১৯%আত্মহত্যা কৃত লাশ। ধর্মীয় ও আইনের চোখে ও আত্মহত্যাকারী একজন অপরাধী। এ অপরাধ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন-শামছুল হক রাসেল
আত্মহত্যার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে, সুইসাইড মানে আইন লঙ্ঘন করা, অপরাধ করা। সুইসাইড মানে ধর্মীয় অনুশাসন অবজ্ঞা করা। সুইডসাইড মানে সমাজে পচনশীল ক্ষত বাড়িয়ে দেওয়া, সমাজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। সুইসাইড কখনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাপুরুষতা।

                                                                                              - ডা. মোহিত কামাল



আইনের চোখেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী একজন অপরাধী। আত্মহত্যার পর যেমন থানায় খবর দিতে হয়, তেমনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও থানায় জানাতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে বা তার প্ররোচনায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, তাহলে প্ররোচনাকারীকে সর্বনিম্ন ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

                                                                                      - ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন করে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য �Suicide Prevention across the Globe : Strengthening Protective Factors and Instilling Hope� প্রতি বছর বিশ্বে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। ৪০ লাখ টিনএজার প্রতি বছর আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে এক লাখ সফল হয়ে চলে যায় পরপারে। যুদ্ধ, টেরোরিস্ট বা সন্ত্রাসী আক্রমণ কিংবা খুনের শিকার হয়েও আত্দহত্যার সমতুল্য এত মানুষ মারা যায় না পৃথিবীতে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন আত্মহত্যা করে প্রায় তিন হাজার মানুষ। প্রিয়জনের আত্মহত্যার যন্ত্রণার পেরেক বুকে ঠুঁকে নিয়ে ৬০ লাখেরও বেশি স্বজন ধুঁকে ধুঁকে পার করছে জীবন। জীবিত থেকেও মৃত তারা। সুই (sui) অর্থ নিজেকে, সিডস (caeds) অর্থ হত্যা। অর্থাৎ আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে খুন করা।

সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে আত্মহত্যা কারীর সংখ্যা। সাধারণত দুভাবে আত্মহত্যা সংঘটিত হয়ে থাকে-অধিকাংশই পরিকল্পনার মাধ্যমে আত্মহত্যা করে। আর একটি হলো তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা তাড়নায় ইমপালসিভ আত্মহত্যা। পরিকল্পনাকারীদের মনে প্রথমে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে, ইচ্ছার পর পরিকল্পনা করে সে, তার পর আত্মহত্যার জন্য অ্যাটেমপ্ট গ্রহণ করে। বড় ধরনের বিষণ্নতা রোগের শেষ পরিণতি হচ্ছে পরিকল্পনার মাধ্যমে আত্মহত্যা। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এক মৌলিক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়,আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারীদের ৬৫.৪ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগেছিল। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল গুরুতর বিষণ্ন রোগী। ২৫ বছরের নিচের তরুণ বয়সীদের হার ছিল সর্বোচ্চ। পুরুষের তুলনায় মহিলার হার ছিল বেশি (৫৪.৪%), বিবাহিত মহিলা ৫৫.৯%। পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%)। পরীক্ষায় খারাপ করা, ভালোবাসার ব্যর্থতা ও জটিলতা, বৈবাহিক অশান্তি, অবৈধ প্রেগন্যান্সি ইত্যাদি বিষয়ও ছিল গুরুত্বপূর্ণ (আলী এম'০৫)।

বাংলাদেশে সুইসাইডের হার প্রতিবছর লাখে ৮-১০ জন। পক্ষান্তরে বিশ্বজনীন এই হার প্রতিবছর লাখে ১৪.৫। বাংলাদেশে ঝিনাইদহ ও যশোর জেলাকে আত্মহত্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- গড়ে এই হার ২৯-৩৩ জন। ঝিনাইদহে আত্মহত্যাকারীদের ৬৭.২৮% ছিল গৃহবধূ, ৭৩.৪৫% মহিলা, ৬৯.৫৬% অশিক্ষিত, ৭৪.৬১ শতাংশের বয়স ছিল ১১-২৫ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে প্রকাশিত এ গবেষণাপত্র থেকে আরও দেখা যায়, ৩৭-৫৯% সুইসাইড ঘটেছে পারিবারিক সমস্যার কারণে (আলম এম এফ'০৪)।

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মরণপ্রবৃত্তির অন্তর্মুখিতা সুইসাইড ঘটায়। সহিংসতা অন্তর্মুখী হলে নিজেকে নিঃশেষ করার প্রবৃত্তি জোরাল হয়ে ওঠে। নিজেকে খুন করে মানুষ। আইনের চোখেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী একজন অপরাধী।আত্মহত্যার পর যেমন থানায় খবর দিতে হয়, তেমনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও থানায় খবর জানানোর কথা বলা হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আত্মহত্যাপ্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচলিত কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সুইসাইড প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবার যেন আইনের অপব্যবহারের কারণে ভোগান্তির শিকার না হয়, সচেতন হতে হবে। কীটনাশক প্রস্তুতকারী ও বিপণনকারীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। ঘুমের বড়ি বিক্রির ব্যবহারে কঠোরতা আরোপ করতে হবে।