বুর্জ খলিফা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অবস্থিত বুর্জ খলিফা বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম ভবন। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। এটি দুবাই টাওয়ার নামেও পরিচিত। নির্মাণকালে এর বহুল প্রচারিত নাম ছিল বুর্জ দুবাই। তবে পরবর্তীতে এর নাম পাল্টে বুর্জ খলিফা রাখা হয়।
উদ্বোধনের সময় আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সম্মানেই ভবনের সঙ্গে খলিফা জুড়ে দেওয়া হয়। কারণটা অবশ্য সবারই জানা। খলিফার একান্ত সহযোগিতা ছাড়া ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হতো না। শেখ খলিফা বিন জায়েদ আবার প্রতিবেশী রাজ্য আবুধাবীরও শাসক। অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও এরকম ব্যয়বহুল উচ্চাভিলাষী নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বিপাকেই পড়ে গিয়েছিল দুবাই আর সেই সময় দুবাইকে বিপুল পরিমাণ অর্থকড়ি দিয়ে সহয়তা করেছেন খলিফা।
সমুদ্রের বুকে বিলাসবহুল কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে এর আগে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিল আরব আমিরাতের লোকজন। আর এরপর ডাঙায় গড়া পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য আরব আমিরাত ও দুবাইকে নিয়ে গেছে অন্যরকম উচ্চতায়। তাদের নির্মিত বুর্জ খলিফা এখন বিশ্বব্যাপী কোটি মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। মজার ব্যাপার হলো বুর্জ খলিফার কাজ যখন চলছিল তখন আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বব্যাপী চলছিল ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা। আর সেই অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যই বুর্জ খলিফার নির্মাণ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় দুবাইয়ের শাসকরা।
বিশ্বব্যাপী আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বুর্জ খলিফার উচ্চতা ৮১৮ মিটার বা ২,৭১৭ ফুট (প্রায় আধা মাইল)। এটি তাইওয়ানের তাইপে ১০১ তলা টাওয়ার থেকে ১,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতর। তাইপে ১০১ তলা ভবনটির উচ্চতা ১,৬৬৭ ফুট। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবীর উচ্চতম স্থাপনা। বুর্জ খলিফা এতই উঁচু একটি ভবন যে, নিচতলা আর সর্বোচ্চ তলার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুর্জ খলিফার নির্মাণ কাজ ২০০৪ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৯ সালে। এটি তৈরিতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। এর বহিরাঙ্গনে অবস্থিত ফোয়ারা নির্মাণেই ব্যয় হয়েছে ১৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড। এই ভবনে এক হাজার ৪৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে; ১৫৮তলায় আছে একটি মসজিদ; ৪৩তম এবং ৭৬তম তলায় আছে দুটি সুইমিং পুল। আরও আছে ১৬০ কক্ষবিশিষ্ট একটি হোটেল। ১২৪তম তলায় দর্শকদের জন্য প্রকৃতি দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ভবনে সংস্থাপিত কোনো কোনো লিফটের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ মাইল। ২০০৪ সালে কাজ শুরুর পর থেকে অতি দ্রুত নির্মাণ কাজ অগ্রসর হয়েছে। এমনও দিন গেছে, যে দিন ১২ হাজার কর্মী একযোগে নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত ছিল। সে সময় প্রতি তিন দিন পর পর একটি ছাদ তৈরি করা হয়েছে। বুর্জ খলিফা নির্মাণের পর এতদিন সর্বোচ্চ ভবন হিসেবে পরিচিত তাইওয়ানের তাইপে-১০১ এর রেকর্ডকে যেমন ভেঙে দিয়েছে তেমনি উচ্চতার দিক থেকে আরও কিছু রেকর্ড ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে এটি। বুর্জ খলিফা নর্থ ডাকোটার কেভিএলওয়াই- টিভি মাস্টের সবচেয়ে উঁচু মনুষ্য নির্মিত কাঠামো এবং টরন্টোর সিএন টাওয়ারের মুক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সবচেয়ে উঁচু স্থাপনার রেকর্ডও ভেঙেছে।
সরকারের আংশিক মালিকানায় থাকা ডেভেলপার কোম্পানি এমার প্রোপার্টিজ বুর্জ খলিফা তৈরি করেছে। শিকাগো ভিত্তিক স্কিডমোর, ওয়িংস অ্যান্ড মেরিল (এসওএম) ভবনটির নকশা করেছে। এককালে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন সিয়ার্স টাওয়ারসহ বিশ্বের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উঁচু ভবনের নকশা করেছে এ প্রতিষ্ঠান। প্রথম দফায় পরিকল্পনা ছিল এটি তাইপে ১০১ এর চেয়ে ১০ মিটার উঁচু করে বানানো হবে। তবে এমার প্রোপার্টিজের তাগাদায় আরও উঁচু করে গড়ে তোলা হয় বুর্জ খলিফা। যেনতেন উঁচু নয়, আগের তাইওয়ানের তাইপে ১০১-এর চেয়ে একহাজার ফুট ছাড়িয়ে গেছে বুর্জ খলিফার চূড়া। বুর্জ খলিফার প্রাথমিক নির্মাতা হলো দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিএন্ডটি। প্রতিষ্ঠানটি তাইপে ১০১ ও পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারও নির্মাণ করেছিল। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বেলজিয়ান দল বেসিঙ্ ও ইউএইর আরবটেক। ভবনটি দাঁড় করাতে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। তবে এরই মধ্যে এ অর্থ উঠে এসেছে। ভবনটি নির্মাণে প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ শ্রম-ঘণ্টা লেগেছে। যে পরিমাণ এ্যালুমিনিয়ম ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে পাঁচটি এয়ারবাস এ-৩৮০ বিমান তৈরি করা যাবে। এতে আছে ৫৭টি এলিভেটর ও আটটি এসকেলেটর। এ প্রকল্পে জড়িত ছিলেন ৩৮০ জন দক্ষ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ।
এক নজরে
নাম : বুর্জ খলিফা
অবস্থান : দুবাই, ইউনাইটেড আরব আমিরাত
নির্মাণ কাজের সূচনা : ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৪
উদ্বোধন : ৪ জানুয়ারি ২০১০
তলা : বাসযোগ্য বা অফিস করার যোগ্য ১৬০টি।
মোট প্রায় ২০০টি বাসস্থান ও অফিস স্পেস : ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ বর্গফুট
নকশাকারী : স্কিডমোর, ওয়িংস এন্ড মেরিল
কন্ট্রাক্টর : স্যামসাং সিএন্ডটি, বেসিঙ্ এন্ড আরবটেক
লিফট কন্ট্রাক্টর : ওটিস
ডেভেলপার : এমার প্রোপার্টিজ
তাইপে ১০১
বুর্জ খলিফার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ভবনটির নাম তাইপে ১০১। তাইওয়ানের জিনই জেলার তাইপে শহরে অবস্থিত এই ভবনটি অবশ্য বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পরিবেশবান্ধব ভবন। এটিও বর্তমান বিশ্বের মানুষের কাছে অন্যতম প্রধান একটি আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। তাইপে ১০১ এর আগের নাম ছিল তাইপে ওয়ার্ল্ড ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন ছিল। তাইপে ১০১ এর নকশা প্রণয়ন করেছে সি ওয়াই লি এন্ড পার্টনার্স এবং নির্মাণ করেছে কেটিআরটি জয়েন্ট ভেঞ্চার। উদ্বোধনের পর থেকে এ ভবনটি আধুনিক তাইওয়ানের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং এটি ২০০৪ সালের 'এম্পোরিস স্কাইস্ক্র্যাপার অ্যাওয়ার্ড' অর্জন করে। তাইপে ১০১ থেকে করা আতশবাজির দৃশ্য ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠানে সারা বিশ্বে সম্প্রচার করা হয়। তাইপে ১০১-এ ভূমির ওপর ১০১টি তলা রয়েছে এবং মাটির নিচে রয়েছে পাঁচটি তলা। দেখতে অনেকটা বাঁশের মতো ভবনটির উচ্চতা ৫০০ মিটারেরও বেশি। তাইওয়ানে ট্যুরিস্টদের এই ভবন ঘুরে দেখতেই হয়।
তাইপে ১০১ নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পরিবেশবান্ধব ভবন হিসেবে। সঠিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাসের অনেকটাই যে বাঁচানো সম্ভব, তার প্রমাণ এ ভবনটি। তাইপের কাছ থেকে সবচেয়ে উঁচু ভবনের সম্মান কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই নতুন কিছু খুঁজছিলেন ভবন পরিচালনা সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি ইয়াং। ২০০৮ সালে নতুন এক পথে যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। জ্বালানির দাম তখন হু হু করে বেড়েই চলেছে। ক্যাথি জানতে পারলেন, জ্বালানি ও অন্যান্য সম্পদ সাশ্রয়ী ব্যবস্থার জন্য লিডস নামে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে। মালিকরা তাদের ভবনে স্বেচ্ছায় এ ধরনের ব্যবস্থা বসাতে পারে, নির্দিষ্ট পরিবেশবান্ধব মাত্রা মান্য করতে পারে এবং এভাবে পরিবেশ সুরক্ষার সার্টিফিকেট পেতে পারে। সার্টিফিকেটের মেয়াদ পাঁচ বছর। মেয়াদ ফুরালে আবার নতুন করে পরীক্ষা করে দেখা হবে ভবনের সবকিছু পরিবেশ অনুকূল কি-না। সব ধরনের মান রক্ষা করে সবুজ সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দুটি বছর। ১১ হাজার লোক কাজ করেন এই বিশাল ভবনে। পানি আর বিদ্যুতের কম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। আবর্জনার পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হয়। আর এসব কাজের সহায়ক হয় জার্মানির কোম্পানি সিমেন্সের প্রযুক্তি আর কারিগরি জ্ঞান। পুরো ভবনে রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার কাচ। সেই কাচে এসে পড়ছে সূর্যের প্রখর আলো। এতে ঘর হয়ে যায় প্রচণ্ড গরম। ফলে এয়ারকন্ডিশনার ছাড়া গতি নেই। সারাক্ষণ চালিয়ে রাখার ফলে বিদ্যুতের খরচ সাংঘাতিক বেড়ে যায়। সিমেন্স কোম্পানির ইঞ্জিনিয়াররা লাইটিংয়ের জন্য নতুন ব্যবস্থা প্রয়োগ করেন, বসিয়ে দেন সেন্সর। এতে জ্বালানির খরচ কমে যায় প্রায় ২০ শতাংশ। বছরে ৭ লাখ ডলার বেচে যায়। জ্বালানিসাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নিতে ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। তাইওয়ান বিশ্বের বৃহত্তম সোলার সেল উৎপাদক দেশগুলোর একটি হলেও 'তাইপে ওয়ান হানড্রেড ওয়ান' ভবন থেকে শহরের বাড়িঘরের ছাদে কোনো সোলার মডিউল চোখে পড়বে না। একটি মাত্র ভবন নয়, জ্বালানির সাশ্রয় ঘটাতে হবে সর্বক্ষেত্রে, পরিবেশ রক্ষার চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে সবার মধ্যে।
পেট্রোনাস টাওয়ার্স
মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টাওয়ার্স বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ উঁচু ভবন। তবে আরেক দিক দিয়ে এখনো প্রথম স্থান দখল করে আছে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন পেট্রোনাস টাওয়ার্স। আর তা হচ্ছে এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার বা যমজ টাওয়ার। বুর্জ খলিফা ও তাইপে ১০১ নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার। এর মোট উচ্চতা ৪৫২ মিটার (১৪৮৩ ফুট)। কলাম ব্যতীত ৫ লাখ ৬০ হাজার বর্গমিটার অফিস স্পেস বিশিষ্ট এই পেট্রোনাস টাওয়ার্স বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের উচ্চতা ১২০ মিটার। টাওয়ারের উপরের অ্যান্টেনাকে টাওয়ারের অংশ হিসেবে ধরা হয় না। এর চূড়ায় রয়েছে বিশাল সতর্কীকরণ বাতি। কুয়ালালামপুর শহরের কেএলসিসি এলাকায় এক টানা সাত বছর কাজ চলার পর ১৯৯৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় এই টুইন টাওয়ারের। এটি নির্মিত হয়েছে মালয়েশিয়ার মোবাইল কোম্পানি মাঙ্সি ও তেল কোম্পানি পেট্রোনাসের যৌথ উদ্যোগে। নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। ৮৮তলার এই বিল্ডিং দুটি নির্মাণের জন্য পরিশ্রম করেছেন আর্জেন্টিনা, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার দক্ষ ইঞ্জিনিয়াররা।
এটি নির্মাণে মূল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল ও পাথর। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়। শুধু স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে। ৮৮তলা দুই বিল্ডিংয়ের মাঝামাঝি একটি ব্রিজ দেওয়া হয়েছে একটি থেকে আরেকটিতে যাওয়ার জন্য। ব্রিজটির নাম স্কাই ব্রিজ। সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এই দুই ঘণ্টা যে কেউ স্কাই ব্রিজ পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে, এ জন্য কোনো টাকা খরচ হয় না। পেট্রোনাস টাওয়ার্সের ডিজাইন করেছেন জে সি গুইন্টোর পরামর্শে আর্জেন্টিনার স্থপতি সিজার পেলি্ল ও ফিলিপিনো-মালয়েশীয় প্রকৌশলী ডিজেই সেরিকো এবং ফিলিপাইনের ডিজাইনার ডোমিনিক মিনিক। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালে এবং সময় লাগে সাত বছর। রাজধানী কুয়ালালামপুরের 'রেইস ট্র্যাক'-এ এটি নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করেন টুইন টাওয়ারের সামনে।
সিয়ার্স টাওয়ার
সিয়ার্স টাওয়ার বর্তমান নাম উইলস টাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অবস্থিত একটি আকাশচুম্বী অফিস ভবন। ১৯৭৩ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়। তখন থেকে শুরু করে নব্বই দশকের শেষভাগ পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম ভবন। এর নকশা ও গঠন কৌশল প্রণয়ন করেন বাঙালি স্থপতি ফজলুর রহমান খান। এটির কাজ শুরু হয় ১৯৭০ সালের আগস্টে। আলোচিত এই ভবনটি এর সর্বোচ্চ উচ্চতায় পেঁৗছায় ১৯৭৩ সালের ৩ মে তারিখে। এর আগে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছিল সর্বোচ্চ ভবন। কিন্তু এটির কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর এটি বিশ্বের উচ্চতম ভবনে পরিণত হয়। ভবনটিতে ১০৮টি তলা রয়েছে (নির্মাতারা অবশ্য ছাদ ও এলিভেটর পেন্টহাউসকে হিসাব করে ১১০ তলা দাবি করেন)। পূর্ব দিকের প্রবেশ পথ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা এক হাজার ৪৫০ ফুট ৭ ইঞ্চি। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর ছাদে দুটি টেলিভিশন এন্টেনা বসানো হয়। এগুলোসহ মোট উচ্চতা দাঁড়ায় এক হাজার ৭০৭ ফুট (৫২০ মিটার)। পশ্চিম দিকের এন্টেনাটিকে পরে ২০০০ সালের জুন ৫ তারিখে বাড়িয়ে দেওয়ায় ভবনের উচ্চতা দাঁড়ায় এক হাজার ৭২৯ ফুট, যা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের প্রথম টাওয়ারের এন্টেনাকে ছাড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ভবনের চেয়ে সিয়ার্স টাওয়ারের মোট এলাকা বেশি। সব ভবন বিচার করলে পেন্টাগনের পরই এর স্থান। ৩০-৩২, ৬৪-৬৫, ৮৮-৮৯, ও ১০৬-১০৭ তলার মধ্যে একতলা উঁচু কালো ব্যান্ড রয়েছে, যা বায়ু চলাচল ও রক্ষণাবেক্ষণের যন্ত্রপাতি রাখার জন্য রাখা হয়েছে। ভবনটির প্রাতিষ্ঠানিক ঠিকানা ২৩৩ দক্ষিণ ওয়াকার ড্রাইভ, শিকাগো, ইলিনর, ৬০৬০৬।
এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং
এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং পৃথিবী তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গগনচুম্বী অট্টালিকা বা সুউচ্চ ভবন। নিউইয়র্কের ফিফথ এভিনিউ ও ওয়েস্ট থার্টিফোর্থ স্ট্রিটের মধ্যস্থলে অবস্থিত এ ভবনটির উচ্চতা ৩৮১ মিটার বা এক হাজার ২৫০ ফুট এবং এতে ১০২টি তলা রয়েছে। ৪১ বছর যাবৎ অট্টালিকাটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ভবনটির নামকরণ হয়েছে নিউইয়র্কের ডাকনাম দ্য এম্পায়ার স্টেট থেকে।
১৯৩১ সালে নির্মাণের পর থেকেই ভবনটি এর ঐতিহ্য ও গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় স্থাপনা ও মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত হয়। ১৯৭১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ার নির্মাণের পরপরই এটি তার গৌরব হারায়। কিন্তু এরপরও জনপ্রিয়তার বিচারে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং ঠিকই নিজের আসনে সমাসীন রয়েছে। ৯/১১ হামলায় টুইন টাওয়ার বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের পর এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং পুনরায় নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় ভবন হিসেবে নিজ স্থানে ফিরে যায়। কিন্তু ২০১৩ সালের মধ্যে নতুন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা ফ্রিডম টাওয়ার নির্মাণ শেষ হলে আবারো গ্যেরব হারাবে এটি। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর নকশা প্রণয়ণ করেন ম্রিভ ল্যাম্ব এন্ড হার্মন এসোসিয়েটস। এটি এমন এক সময় তৈরি হয়েছিল যখন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে উঁচু আকাশচুম্বী অট্টালিকা তৈরিতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংই পৃথিবীর সর্বোচ্চ অট্টালিকার মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিল। ৪১০ দিনে এর নির্মাণ কার্য সমাপ্ত হয়েছিল। ১ মে, ১৯৩১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার বিল্ডিংটির উদ্বোধন করেছিলেন।
১০২তলা শেষে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের উচ্চতা দাঁড়ায় এক হাজার ২৫০ ফুট (৩৮১ মিটার) এবং শৃঙ্গ বা চূড়ার দৈর্ঘ্য ছিল এক হাজার ৪৫৪ ফুট (৪৪৩.২ মিটার)। ৮৫ তলায় ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অফিস পরিচালনায় ২১ লাখ ৫৮ হাজার স্কয়ার ফুট (২ লাখ ৫০০ বর্গ মিটার) ব্যবহৃত হয়। ৮৬তম তলায় অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে। বাদ-বাকি ১৬তলায় আর্ট ডেকোর টাওয়ার রয়েছে। ১০২তলা থেকে চতুর্দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় একুশ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। এর ফলে আমেরিকায় বিল্ডিংটি পেন্টাগনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অফিস কমপ্লেঙ্ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সম্পূর্ণ ভবনটি নির্মাণে এক বছর ও ৪৫ দিন সময় ব্যয় হয়। ৬৪টি লিফট কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। বর্তমানে সেবার লক্ষ্যে লিফটসহ ৭৩টি লিফট রয়েছে। ৮০তম তলা পর্যন্ত লিফটের মাধ্যমে উঠতে এক মিনিটেরও কম সময় লাগে। সেখান থেকে ৮৬তম তলায় যাওয়ার জন্য অন্য আরেকটি লিফট ব্যবহার করতে হয়। বিশালাকারের এই ভবনটিতে ৭০ মাইল (১১৩ কি.মি.) পাইপসহ বৈদ্যুতিক তার রয়েছে ২৫ লাখ ফুট।
কিংকি প্লাজা
কিংকি। চীনের অন্যতম আকাশচুম্বী বিল্ডিং। ১০০ তলার এ বিল্ডিংটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেনজেন প্রদেশে। ২০০৭ সালে বিল্ডিংটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ২০১১-এর সেপ্টেম্বরে। ওই বছরের শেষে খুব ঘটা করে বিল্ডিংটির উদ্বোধন করে এর স্বত্বাধিকারী কিংকি গ্রুপ। ১০০ তলার এ বিল্ডিংয়ের মোট জায়গার পরিমাণ ২,৩৬৮,০৬০ স্কয়ার ফিট এবং বিল্ডিংটির নিচ থেকে উপর পর্যন্ত বিভিন্ন পরিসরে ৬৬টি লিফট রয়েছে। এর বিভিন্ন ফ্লোরে বাণিজ্যিক অফিসের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্ট। বিল্ডিংটির ৭৫ থেকে ৯৮ তলা পর্যন্ত কারুকার্য ও বৈশিষ্ট্যে স্বাতন্ত্র্য লক্ষ্য করা যায়। এ কয়েকটি তলা বিল্ডিংয়ের অন্যান্য তলা থেকে একটু ব্যতিক্রম ও আকর্ষণীয়। হোটেলের পাশাপাশি বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য রয়েছে পার্ক, ফুডকোর্ট ও বেশ কয়েকটি সিনেপ্লেঙ্। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চীনের অন্যান্য প্রদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ বিনোদনের জন্য ছুটে আসে এ বিল্ডিংয়ে।
এছাড়া এর পঞ্চম থেকে দশম তলা পর্যন্ত রয়েছে নামিদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুপার শপ।
বিশ্বের নবম উচ্চতম বিল্ডিংয়ের স্থানটি দখল করে আছে এই কিংকি ফিন্যান্স সেন্টার প্লাজা।
Similar Post: 1
0 comments:
Post a Comment