নগরজীবনকে তুলনা করা হয় যন্ত্রের সঙ্গে। যন্ত্রের যেমন ফুরসত থাকে না; নগর বাসিন্দাদের অবস্থা ঠিক তেমনি। কাজ, আর কাজ। অফিসের কাজ, বাসার কাজ। বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়াসহ নানা কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। আর রাজধানী শহরের জীবনযাপন তো আরও ব্যস্ততায় ভরা। রক্ত-মাংসে গঠিত মানবদেহ যন্ত্রের মতো চলে না। চায় একটু বিশ্রাম। চায় আনন্দ-বিনোদন। মাঝে-মধ্যে খোলামেলা কোথাও ঘুরে আসতে ইচ্ছা করে। কর্মজীবনে চাইলেই তো আর যখন তখন যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না। ঢাকায় যারা বসবাস করেন তাদের খুব কমই ঢাকার বাইরে যাওয়ার সময় হয়। এ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন ঢাকা শহরে ভালো বিনোদনকেন্দ্র। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তন রাজধানী ঢাকার। এখানেই বসবাস সোয়া দুই কোটি লোকের। প্রতিনিয়ত ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে। খালি জায়গা, বাগান, জলাশয়ের পরিমাণ কমছে। দখলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী-খাল-পুকুর-ডোবা। রূপ পরিবর্তন হয়ে পার্ক-খেলার মাঠ হচ্ছে আবাসিক এলাকা। পরিবেশ হয়ে উঠছে বিষাক্ত। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার পরিবেশ পাচ্ছে না মানুষ। নগরবাসীর বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে নগর পরিকল্পনা সংস্থা, রাজধানী উন্নয়ন সংস্থা বা রাজউক বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল খালে একটি মনোরম লেক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৭ সালে গ্রহণ করা প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। হাতিরঝিলের উদ্বোধন হলে ওই লেকে ঢাকাবাসী পালতোলা নৌকায় ভেসে বেড়াতে পারবে। মনোরম লেকের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে দৃৃষ্টিনন্দন ডিজাইনে ব্রিজ। মাত্র কয়েক মিনিটেই রামপুরা থেকে কারওয়ানবাজার বা কারওয়ানবাজার থেকে অল্প সময়ে পেঁৗছে যাবেন গুলশান হয়ে বাড্ডা। একদিকে মানুষের যেমন বিনোদনের জায়গা হবে তেমনি কমবে যানজট। তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি মিলবে। এ প্রকল্পের জন্য সরকার ৩০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাতটি সেতু, ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১৬ কিলোমিটার সড়ক, দুটি ওভারপাস। ফুটপাত ও সড়ক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প এলাকার বিউটিফিকেশনের কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এ প্রকল্প নকশানুসারে কাজ শেষ করতে পারলে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের পানি দূষণমুক্ত হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, রামপুরা, গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার যানজট নিরসনে অসামান্য ভূমিকা রাখবে। এ লেকে জমা হবে বৃষ্টির পানি। পালতোলা নৌকা চলবে এ লেকে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ধানমণ্ডি থেকে টঙ্গী ডাইভারসন সড়ক পর্যন্ত নির্মিত পান্থপথ সড়কের বর্ধিতাংশ হিসেবে রামপুরা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা অনেক আগের। তবে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের পতন হলে সে সময় এ জন্য আহূত দরপত্র বাতিল করা হয়। শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের সময় আবার এ সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিগত বিএনপি সরকারের সময় হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও তা বেশিদূর এগুতে পারেনি। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাতিরঝিল প্রকল্পটিকে বেশ গুরুত্ব দেয়। এরপর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে এ প্রকল্পকে অত্যন্ত কার্যকর করে গড়ে তুলেছেন। যার ফল ভোগ করবে ঢাকাবাসী। স্বপ্নের হাতিরঝিল এখনো স্বপ্নের মতো করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বাকি রয়েছে এখনো কিছু কাজ, যা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। পানি দূষণমুক্ত করার কাজ চলমান। ঢাকা ওয়াসা এ কাজ করছে। এখনো হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালে আশপাশের এলাকার বর্জ্য ও দূষিত পানি এসে পড়ছে। খালে জমা এসব পয়ঃবর্জ্য, গৃহবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য আশপাশ এলাকায় কিছু দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। পরিকল্পনা মতে, নিষ্কাশন কাঠামোতে কিছু বর্জ্য পরিশোধিত হয়ে তা বিশেষ নালায় এসে পড়বে। আর ওই নালার শেষ মাথায় স্থাপন করা হবে দৈনিক ৫ লাখ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র। এর পরিশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর খিজির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিসেম্বরে প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ছোটখাটো যেসব কাজ রয়েছে শীঘ্রই তা শেষ হয়ে যাবে।
মতিন আব্দুল্লাহ
0 comments:
Post a Comment