Wednesday, June 30, 2010

ঢাকার ঐতিহাসিক মোগল ঈদগাহ

0 comments
মোগল সম্রাট আকবর বারো ভূঁইয়াদের দমন করে বাংলা দখল করেন ১৫৭৫ সালে। ভূইয়ারা বশ্যতা স্বীকার না করে মোগল শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সোনারগাঁয়ের ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ, যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য, বাকলার রাজা রামচন্দ্র রায়। পরবর্তী সময় শাসক সুবেদার ইসলাম খান ১৬১২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। শুরু হয় রাজধানী ঢাকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। মোগল আমলের একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্যের নিদর্শন হচ্ছে ধানমণ্ডির আবাসিক এলাকার সাতমসজিদ রোডের ৭/এ-তে অবস্থিত ঈদগাহটি। এটি বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম ১৬৪০ সালে নির্মাণ করেছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার রাজধানীতে পরিণত হওয়ার পর এর মর্যাদা পরবর্তী শতাব্দী পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল। এ সময় প্রশাসনিক সদর দপ্তর ছিল ঢাকায়। এখানে বিদ্যমান ছিল সুবেদারের বাসস্থান এবং অন্যান্য রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয়। এ সময়ের মধ্যে মোগলরা বিভিন্ন মসজিদ, ঈদগাহ এবং সরাইখানা নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের স্থাপত্যরীতি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। একটি দেশের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও কৌশল নির্ভর করে সেখানকার ভৌগলিক অবস্থান, পারিপাশ্বর্িক অবস্থা, সহজলভ্য উপকরণ, স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রভাব এবং বিশেষ করে পৃষ্ঠপোষকতার ওপর। পাথর ও মার্বেলের অভাব এবং প্রচুর পলিমাটি দ্বারা ইট তৈরির সুযোগ থাকায় এ অঞ্চলে ইটের সৃষ্টি স্থাপত্যরীতি বা 'ব্রিক স্টাইল'-এর উদ্ভব হয়। এই ঈদগাহটিতেও অন্যসব মোগল স্থাপত্যের মতো পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ধানমণ্ডির ঈদগাহটি মাটি থেকে চার ফুট উঁচু একটি সমতলভূমিতে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ২৪৫ ফুট প্রস্থ ১৩৭ ফুট। বিস্তৃতি তিন দিকে। পশ্চিমে ১৫ ফুট উঁচু প্রাচীর যেখানে রয়েছে মিহরাব ও মিম্বার। ওই সময় এর পাশ দিয়ে বয়ে যেত পাণ্ডু নদীর একটি শাখা। এই শাখা নদী জাফরাবাদে সাতগম্বুজ মসজিদের কাছে মিলিত হতো বুড়িগঙ্গার সঙ্গে। ওই আমলে ঈদের দিন এই ঈদগাহটিতে শুধু মোগলরাই যেতেন। সাধারণ মানুষের স্থান সেখানে ছিল না। সুবেদার, নাজিম ও অন্য মোগল কর্মকর্তারা ঈদের নামাজ পড়তেন এখানে। ইংরেজ আমলে জরাজীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় ছিল ঈদগাহটি। মুনশী তায়েশের বর্ণনা থেকে জানা যায়, উনিশ শতকের শেষের দিকে শহরের মুসলমানরা এখানে ঈদের নামাজ পড়তেন, সেই সঙ্গে আয়োজন করা হতো মেলার।

0 comments:

Post a Comment