Tuesday, July 6, 2010

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

0 comments
বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২৮ কিঃ মিঃ দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিঃ মিঃ উত্তরে সাগরকন্যা কুয়াকাটা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে আধুনিক কৃষিবিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে দক্ষ জনশক্তি গড়ার লক্ষ্যে নিয়ে ২০০০ সালের ৮ জুলাই এই দিনে যাত্রা শুরু করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়। দেখতে দেখতে পার হয়েছে এই ক্যাম্পাসের ১০টি বছর। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজকের অবস্থানে সমাসীন। কিন্তু প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বহুবিধ সমস্যা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অক্টোপাসের মতো ঘিরে রেখেছে। সহিংস ছাত্ররাজনীতি, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তীব্র আবাসন সংকট, পরিবহন সংকট, শ্রেণীকক্ষ সংকট, বাজেট ঘাটতি, স্থায়ী যোগাযোগ সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিপথকে করেছে বার বার রুদ্ধ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজো তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আলতাফ হোসেনের উদ্যোগে ১৯৭২ সালে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলে দিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘জনতা কলেজ’ নামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ। গোল পাতার ছাউনি দেয়া ঘরে শুরু হয় এই কলেজের কার্যক্রম। দুমকির কৃতি সন্তান ও সাবেক মন্ত্রী এম. কেরামত আলী, পটুয়াখালী কৃষি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৯ সালে জনতা কলেজটি ডিগ্রি কলেজে পরিণত হয়। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন সরকার কলেজটিকে জাতীয়করণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় হলো যেভাবেঃ ৯০ এর দশকে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার। এই লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ। ১৯৯৪ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চল সফরকালে লেবুখালী ফেরীঘাটে এক পথসভায় পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেন তৎকালীন কৃষকলীগের কেন্দ ীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর- রশিদ হাওলাদার। ১৯৯৭ সালে হারুন-অর-রশিদকে আহবায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয় । এ কমিটির দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১৫ মার্চ সরকার পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের ঘোষণা প্রদান করেন এবং ২০০০ সালের ৮ জুলাই পটুয়াখালী কৃষি কলেজের অবকাঠামোতেই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পবিপ্রবি আইন পাশ হয়। ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী এক সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাস্তবরূপ লাভ করে।

ক্যাম্পাস পরিচিতিঃ মূল ক্যাম্পাস ৩৮ একর, কৃষি গবেষণা খামার ৩৯ একর ও বহিঃক্যাম্পাস (বাবুগঞ্জ, বরিশাল) ১২.৯৭ একরসহ মোট ৮৯.৯৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল মনোরম ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিমাংশে অত্যাধুনিক ছাত্র-ছাত্রী হল শোভা পায়। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ ীয় মসজিদ। এবং মসজিদের পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ বা হেলথ কেয়ার সেন্টার। এর উল্টো দিকে রয়েছে গ্রন্থাগার ভবন। একটি প্রশস্ত রাস্তা ক্যাম্পাসের উপর দিয়ে পূর্বের পীরতলা থেকে পশ্চিমের পটুয়াখালী-বাউফল মহাসড়কের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এ সড়কের দক্ষিণ দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন। মূল ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে পীরতলা বাজার পেরুলেই ৩৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি গবেষণা খামার। আর এখানে রয়েছে ‘সৃজনী বিদ্যানিকেতন’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।

বর্তমান অবস্থাঃ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বর্তমানে চারটি অনুষদে প্রায় ২০০০ ছাত্র-ছাত্রী, ১৬১ জন শিক্ষক, ৫৮ জন কর্মকর্তা ও ২৫৬ জন কর্মচারী রয়েছে। এখানে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি চালু করায় উচ্চতর শিক্ষার নবদিগন্ত উšে§াচিত হয়েছে। কেবলমাত্র কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা (বিবিএ) এবং কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদ। তাছাড়া বরিশাল ভেটেরিনারি কলেজকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে এ্যানিমাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএনএসভিএম) অনুষদে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং মাৎস্যবিজ্ঞান ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে স্বতন্ত্র বিভাগ খোলা হয়েছে।

অত্যাধুনিক শিক্ষা দান পদ্ধতিঃ অত্যাধুনিক শিক্ষা দান পদ্ধতি হিসেবে খ্যাত আমেরিকার ক্রেডিট কোর্স সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। হাতে-কলমে শিক্ষা দানের জন্য এখানে রয়েছে ১৪ টি সমৃদ্ধ গবেষণাগার বা ল্যাবরেটরি। রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সম্বলিত একটি সুবৃহৎ কেন্দ ীয় গবেষণাগার। এটির মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য রয়েছে প্রদর্শনী খামার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ অর্থাৎ অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৫ দিনের ইন্টার্নীশীপ বাধ্যতামূলক। স্থানীয় কৃষকদের সাথে হাতে-কলমে কাজ করাই এ ইন্টার্নীশীপের প্রধান লক্ষ্য।

আবাসন ব্যবস্থা ও লাইব্রেরীঃ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রদের জন্য শের-ই-বাংলা (ডি ১, ডি ২) ও এম. কেরামত আলী হল ও ছাত্রীদের জন্য কবি বেগম সুফিয়া কামাল নামে ১টি ছাত্রী হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। দু’তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবনে ৪০ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বই, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ভলিউম ও সাময়িকী রয়েছে। লাইব্রেরীটিতে সাইবার সেন্টার খোলার জন্য ভিসির প্রচেষ্টায় সম্প্রতি ৩০ টি কম্পিউটার প্রদান করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।

উন্নয়ন প্রকল্প ও অগ্রযাত্রার ধারাঃ ভিসির নিরলস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।

ছাত্র উপদেষ্টার বক্তব্যঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রবিউল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার ফলে সন্ত্রাস ও সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস উপহার দিতে পেরেছি।

0 comments:

Post a Comment