Monday, July 5, 2010

কালজয়ী চেচেন ইটজা

0 comments
মায়ান সভ্যতার এক চমৎকার নিদর্শন চেচেন ইটজা। এটি একটি কালজয়ী স্থাপত্যশৈলী। বিশেষ করে এটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান। মায়ান সংস্কৃতিকে ঘিরে এ স্থাপত্যের জন্ম। মেক্সিকোর মেরিদা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ইউকেটান রাজ্যে এটি অবস্থিত। মায়ান গ্রুপ ছয় এবং চৌদ্দ শতাব্দীর দিকে এ সাইটটির উন্নয়ন করেছিল। শিল্প সংস্কৃতির সমন্বয়ে স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মায়ানদের ভাষা অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয় চেচেন ইটজা। ১১৯৬ থেকে ১৪৪১ সালে এ সময়ের মধ্যে এ সভ্যতাটি চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এ সময় চেচেন ইটজাও আংশিক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৮৪১ সালে জন এল স্টিফেনের নেতৃত্বে এটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এটাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। মায়ানদের কালচারকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চেচেন ইটজার মাধ্যমে যা আধুনিক বিশ্বের যেকোনো মানুষের মনের গভীরে দ্রুত ছাপ ফেলতে সক্ষম। আর এটি এখন পর্যটকদের জন্য দারুণ আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে এটার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী, শিল্প আর অভিনবত্ব মায়ানদের সংস্কৃতিকে কিংবদন্তি করে তুলেছে। যা যেকোনো পর্যটকের সহজে নজর কাড়বে। আর তাদের এ সংস্কৃতি স্থাপত্য, শিল্পকর্ম এবং জ্যোতির্বিদ্যার জন্য বিখ্যাত ছিল। এ কালচার বিশাল অঞ্চলকে প্রভাবিত করে রেখেছিল। একসময় এ অঞ্চলে বিচরণ ঘটেছিল আমেরিকার আবিষ্কারক কলম্বাসের। প্রখর মেধা, সফল জ্যোতিবিদ্যাবিষয়ক জ্ঞান এবং অসাধারণ গুণাবলীর জন্য মায়ানরা প্রসিদ্ধ ছিল। সমকালীন সময়ে তাদের এ সভ্যতা আর আগের মতো বিস্তৃত নয়। এখন কিছু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। মেক্সিকো, তিলকাল, গুয়াতেমালা, আরতুনহা, বেলাইজ কোপান এবং হন্ডুরাসে তাদের এ সংস্কৃতি দেখা যায়। মায়ানদের এ সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছিল মেক্সিকো সহ আশপাশের দেশগুলোর মধ্যদিয়ে। বর্তমানে ইউকেটান পেনিনসুলা এবং ছাইপাস রাজ্যে মায়ানদের সংস্কৃতি বিভিন্ন কালচারের সঙ্গে মিশে আছে। অন্তত চার থেকে ছয় মিলিয়ন মানুষ এ সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। আর ওখানে এখনো ৩০টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে যেখানে সভ্যতার চরম বিকাশ ঘটেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের লাইফ স্টাইলের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, ঠিক এ সময়েও মায়ানরা তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাচীন সংস্কৃতি নিয়ে আপন গতিতে চলছে। কোনো প্রযুক্তি তাদের ছুঁয়ে দিতে পারেনি। নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে চলছে অবিরাম। এমনকি তারা স্পেনিশ ভাষার পরিবর্তে আঞ্চলিক উপভাষার মাধ্যমে ভাব বিনিময় করে। তাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হলে তারা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিবর্তে হারবালের মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকে। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগকে বাদ দিয়ে তারা এখনো প্রাচীন সংস্কৃতিকে ধারণ করে অন্ধ বিশ্বাসে। তারা যেন তাদের এ সংস্কৃতির মধ্যে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে। এ সংস্কৃতিকে ঘিরে তাদের যতসব গর্ব ও অহংকার। তবে তাদের সংস্কৃতি যতই প্রাচীন হোক শিল্প-সংস্কৃতি, জ্ঞান, বুদ্ধি আর দক্ষতার দিক দিয়ে দুনিয়া বিখ্যাত। বিশেষ করে জোতির্বিদ্যায় ছিল তাদের অসাধারণ দক্ষতা। চেচেন ইটজার মাধ্যমে তাদের অসাধারণ সৃষ্টিশীল কাজগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

0 comments:

Post a Comment