Monday, July 5, 2010

পাবনা

0 comments
রাজশাহী বিভাগের অন্যতম একটি জেলা পাবনা। এ জেলার উত্তরে নাটোরসিরাজগঞ্জ, দক্ষিণে রাজবাড়ি ও কুষ্টিয়া, পূর্বে মানিকগঞ্জ ও সিরাগজঞ্জ এবং পশ্চিমে পদ্মা নদী, নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলা অবস্থিত। পদ্মা, ইছামতি, গুমানী, হুরাসাগর এ জেলার প্রধান নদী। পাবনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ নিয়ে কড়চার এবারের বেড়ানো।
জোড় বাংলা মন্দির:পাবনা শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে কালাচাঁদ পাড়ায় অবস্থিত ইট নিমির্ত প্রাচীন মন্দির। এর উপরের পাকা ছাদ দোচালা ঘরের মতো। পাশাপাশি সংযুক্ত দুটি দোচালা ঘরের মতো এ মন্দিরটি। মন্দিরটির সামনের দিকে তিনটি প্রবেশপথ আছে। মন্দিরটির সম্মুখভাগের বাইরে সুন্দর কারুকাজ করা। জানা মন্দিরটি বেশ উঁচু একটি ভিটির ওপর নির্মিত হয়েছিল। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে তার অনেকটা দেবে যায়। বর্তমানে এর ভিত্তি মাটি থেকে দুই ফুট উপরে আছে। মুর্শিদাবাদের নবাবের তহ্শিলদার ব্রজমোহন ক্রোরী কর্তৃক মন্দিরটি আঠারো শতকে নির্মিত।
পাবনা আদালত ভবন:শহরের কাচারিপাড়ায় অবস্থিত প্রাচীন আদালত ভবন। ১৮২২ সালে নির্মিত এ ভবনটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত মনোরম।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ : ১৮৮৯ সালে পাবনা ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠিত জেলার প্রাচীনতম কলেজ। তৎকালীন ভারতের সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১৯১১ সালে এর নামকরণ করা হয় এডওয়ার্ড কলেজ।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল : জেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে হেমায়েতপুরে অবস্থিত দেশের অন্যতম মানসিক হাসপাতাল। ১৯৫৭ সালে পাবনার তৎকালীন সিভিল সার্জন শহরের একটি পুরনো জমিদার বাড়িতে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৫৯ সালে এটি হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়।
পাকশী : জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান কার্যালয়। এখানে দেখা যাবে প্রাচীন রেল ইঞ্জিনসহ আরো অনেক কিছু। এছাড়া পাকশীতে আছে ব্রডগেজ রেল স্টেশন।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ : পাকশীতে অবস্থিত পদ্মা নদীর ওপর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। ১৯১০ সালে শুরু করে এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯১২ সালে। ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এ সেতুতে রেল চলে। পরে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ লর্ড হার্ডিঞ্জ সেতুটির উদ্বোধন করেন। প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্পাত নির্মিত এ ব্রিজটি তৈরিতে তৎকালীন প্রায় ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১শত ৬৫ টাকা ব্যয় হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সময় পাক বাহিনীর মর্টারের আঘাতে এর বারোতম স্প্যানটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।
লালনশাহ সেতু : হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশাপাশি প্রায় তিনশ মিটার দূরত্বে পদ্মা নদীর ওপর অবস্থিত লালনশাহ সেতু। প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১ মিটার প্রশস্ত এ সেতুটি ২০০৪ সালে চালু হয়। এ অঞ্চলের বাউল সম্রাট ফকির লালনের নামে এর নামকরণ করা হয়। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে শীতে এ সেতুর নিচে থাকে ধূ-ধূ বালচর। বর্ষায় প্রমত্তা পদ্মা। ফলে এ জায়গাটিতে এ দু সময়েই ভ্রমণে মিলবে ভিন্ন স্বাদ।
হন্ডিয়াল জগন্নাথ মন্দির : চাটমোহর সদর থেকে প্রায় উনিশ কিলোমিটার দূরে হন্ডিয়াল অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির। উঁচু একটি বেদির ওপর ইট নির্মিত এ মন্দিরে একটি প্রবেশপথ আছে। প্রবেশপথের চারপাশ বেশ কারুকার্যমণ্ডিত। মন্দিরটি চারকোণাকোরে ক্রমশ সরু হয়ে উপরে উঠে গেছে। মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৯০ সালে জনৈক ভবানী প্রসাদ কর্তৃক মন্দিরটি সংস্কার করা হয়।
চলনবিল:চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। চলনবিলের প্রধান দুটি অংশ যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুরলিয়া ও দিক্ষি বিল চাটমোহরে অবস্থিত। শীতে এসব বিলের পানি শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় থাকে পরিপূর্ণ।

কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি পাবনা যাওয়া যায় সড়কপথে। প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার বাস চলাচল করে এ পথে। পাবনা এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহন, রাজা বাদশা পরিবহন, কিংস পরিবহন, বাদল গ্র্যান্ড চয়েজ, সরকার ট্রাভেলস । এসব পরিবহনের সাধারণ চেয়ার কোচ চলে এ পথে। ভাড়া ২৫০ টাকা।

এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে কপোতাক্ষ ও মধুমতি এক্সপ্রেস, খুলনা থেকে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস এবং সৈয়দপুর থেকে রূপসা এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী এসে সেখান থেকেও পাবনা আসা যায়।

0 comments:

Post a Comment