Saturday, December 22, 2012

সাংবাদিকতা

0 comments
ভূমিকা:
মিডিয়ার পাঁচটি কাজের মধ্যে একটি হলো মানুষকে শিক্ষিত করা। মানুষ সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রতিদিন হরেক রকম খবর জানার পাশাপাশি ভাষাও শেখে। একটি বিষয়কে ভালোভাবে, স্পষ্ট করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে শুদ্ধ ভাষায় না লিখলে চলবে না। আমরা জানি, বাক্যের গঠনে ভুল হলে, শব্দের প্রয়োগ ভুল হলে কিংবা বানানে ভুল হলে অর্থ বদলে যায়। এতে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাই সংবাদপত্রে শুদ্ধভাবে লেখা উচিত।

সংবাদপত্রের প্রতিটি পর্যায়ের কাজ খুব ব্যস্ততার মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। অনলাইন পত্রিকায় তো বিষয়টি আরো দ্রুত। টেলিভিশনের টিকারের জন্যও শুদ্ধ বানান ও বাক্য প্রয়োজন। এ জন্য সবাইকে সদা সতর্ক থাকতে হয়। মূল কপিতে ভুল থাকলে সেই ভুল শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই সংবাদ রচনার সময় একজন রিপোর্টারকে অন্যসব বিষয়ের পাশাপাশি শুদ্ধ ভাষায় লেখার দিকে সতর্ক ও মনোযোগী থাকতে হয়। অনেক রিপোর্টার ধরে নেন তথ্য ঠিক থাকলেই হলো। বাকি কাজ বার্তা সম্পাদক, শিফট-ইনচার্জ, সিনিয়র সহ-সম্পাদক অথবা সম্পাদনা সহকারী কেউ একজন ঠিক করে দেবেন। এই ধরনের ভাবনা একজন রিপোর্টারকে দু’দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এক. তার লেখা রিপোর্টটি ভুলভাবে ছাপা হতে পারে। দুই. এতে করে রিপোর্টারের যোগ্যতা নিয়ে অফিসে প্রশ্ন উঠতে পারে, যা তার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

ধরুন একজন রিপোর্টার লিখলেন : ‘ধানমন্ডি থানা পুলিশ গতকাল একজন দোকানদারের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা নেয়ার সময় নিউমার্কেট থেকে চুইল্ল্যা আনোয়ার (৩৮) নামের একজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে।’ এ বাক্যে মনে হয় পুলিশই বুঝি দোকানদারকে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছিল। বাক্যটি হতে পারত-‘গতকাল একজন দোকানদারের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা নেয়ার সময় নিউমার্কেট থেকে চুইল্ল্যা আনোয়ার (৩৮) নামের এক সন্ত্রাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’

আমরা কোনো কিছু লিখতে গেলেই শব্দের ব্যবহারের সাধুরূপ নিয়ে আসি। ‘কাছে’ না লিখে ‘নিকটে’ লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এটা ঠিক নয়। সংবাদপত্রের ভাষা মুখের ভাষার যতো কাছাকাছি হয় তত বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত। সংবাদপত্র যেমন উচ্চশিক্ষিত লোকেরা পড়েন, তেমনি স্বল্পশিক্ষিত সাধারণ মানুষও পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষকের বক্তব্য হলো- সংবাদের ভাষা এমন হওয়া উচিত যাতে অষ্টম শ্রেণী পাস একজন ব্যক্তি পড়ে বুঝতে পারে।

বানানের দিকে রিপোর্টাররা মনোযোগ দিতে আগ্রহী কম। কিন্তু বানানের হেরফেরে অর্থ একদম পাল্টে যায়। কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আভাষ অর্থ ভূমিকা। কিন্তু কেউ যদি আভাস লেখেন? আভাস অর্থ ইঙ্গিত। কৃতি অর্থ কার্য; কৃতী মানে কৃতকর্মা। হ্রস্ব ই-কার ও দীর্ঘ-ইকারের কারণে অর্থ বদলে যাচ্ছে। বাধা অর্থ প্রতিবন্ধক, আর ব’র ওপর চন্দ্রবিন্দু দিলে অর্থ দাঁড়ায় বন্ধন করা। সত্ব অর্থ সত্ত্বা, অসিত্ব। আর দন্তস্য’র নিচে ব দিলে অর্থ হয়ে যায় অধিকার।

লেখার ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিককে এই বিষয়গুলো ছাড়াও হাউস স্টাইল অনুকরণ করতে হয়। পত্রিকাগুলোতে কিছু শব্দ ব্যবহারে এবং বানানে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।। পত্রিকাগুলো নিজস্ব বানান ও লেখারীতি অনুসরণ করে। এর জন্য বড় পত্রিকাগুলো নিজস্ব স্টাইল শিট তৈরি করে নেয়।

কিছু পত্রিকা বাড়ি, গুলি, পাখি লিখতে দীর্ঘ-ই-কার ব্যবহার করে। কোনো কোনো পত্রিকা ‘সাংসদ’ লিখলেও এমন পত্রিকাও আছে যারা ভুলেও এটি লিখবে না, লিখবে ‘সংসদ সদস্য’। এমন পত্রিকা আছে যারা, ‘উপাচার্য’ মরে গেলেও লিখবে না। লিখবে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর’। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ক্রিকেট লেখে কৃকেট, ব্রিটেনকে বৃটেন ক্রিজ-এর বানান লেখে কৃজ। এই যে বানান ও শব্দের ভিন্নতা- এগুলোই হলো পত্রিকার নিজস্ব হাউস স্টাইল। একজন রিপোর্টারকে ভাষাবিদ হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু যাতে শুদ্ধ ভাষা লেখা যায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা করতে দোষ কী? এক্ষেত্রে নিজ পত্রিকার স্টাইল শিট বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা রাখে। কাজেই পত্রিকাগুলোর নিজস্ব স্টাইল শিট থাকা উচিত। এটি যেমন পত্রিকাটির মর্যাদা, নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়, তেমনি স্বাতন্ত্র্য প্রকাশেরও প্রতীক হয়ে ওঠে।  
বর্ণনা:
প্রথম অধ্যায়
সাধারন সাংবাদিকতা শিক্ষায় আপনাকে শিখানো হবে যে কোন ঘটনাকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরে সাজাতে হবে। এই প্রচলনের উপর যথেষ্ট সম্মান রেখেই আপনাকে একই জিনিস মনে করিয়ে দিতে চাই। যে কোন ঘটনার উপর প্রতিবেদন করার আগে আপনাকে কি? কোথায়? কিভাবে? কখন? এবং কেন? এই পাচটি প্রশ্নের আলোকে সাজাতে হবে। আশা করি সেটা আপনার জন্য তেমন কঠিন কোন বিষয় নয়।


২য় অধ্যায়

এবারে আপনাকে কিছু গুরুত্ব পুর্ন শব্দ মালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো আপনার সফল সাংবাদিকতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। যেমন, প্রত্যক্ষদর্শি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্ভর যোগ্য সুত্র, এলাকা বাসী, গোপন সুত্র, সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই মনে করেন, এলাকা বাসীর সাথে আলাপ কালে জানাযায়।

উপরোক্ত শব্দমালা গুলো আপনার চলার পথে যখন তখনই প্রয়োজন হবে তাই এগুলোর যথাযথ ব্যবহার রপ্ত করুন।

উদাহরন_ধরুন সাভারে দুই রাজনোইতিক দল সি এন জি এবং জি এম টি দলের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। এখন আপনাকে যদি বলা হয় সি এন জি দলকে ডূবাইতে হবে তাহলে এভাবে খবর লিখুন, গতকাল রাজধানীর সাভারে সি এন জি দলের কর্মিদের সাথে জি এম টি দলের সমর্থকদের ব্যাপক ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। (এবার এটা ওটা যা লেখার লিখুন এবং ক জন আহত হল এবং কজন নিহত হল তা লিখুন, এখানে খেয়াল রাখতে হবে নিহতের সংখ্যা সঠিক রাখতে হবে কিন্তু আহতের সংখ্যা আপনাকে যেন জি এম টি দলের অনুকুলে যায় সে অনুপাতে লিখতে হবে) এবার ঘটনার বর্ননায় আপনাকে এই শব্দমালার সাহায্য নিতে হবে।
উদাহরন - প্রত্যক্ষদর্শিদের সাথে কথা বলে যানা যায় যে জি এম টী দলের কর্মীরা তাদের নিজস্ব টেন্টে বসে আড্ডাদেয়ার সময় হঠাৎ করেই সি এন জি দলের এক কর্মি রাসেল ঐ পথ দিয়ে হেটে যাবার সময় জি এম টি দলের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। এতে জি এম টি দলের সদস্যরা ঐ কর্মিকে আদর করে বুঝাতে গেলে অদুরেই দাঁড়িয়ে থাকা সি এন জি দলের ক্যডার রা জি এম টি দলের কর্মিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
এবার মনে করেন আপনাকে বলা হল সি এন জি দলের প্রধান জমির আলীকে ডুবাইয়া এক খান রিপোর্ট করতে হবে তাইলে আপনেকে উপরের শব্দমালার দারস্থ হইতেই হইবে

উদাহরন
শিরোনমটা অবশ্যই আকর্ষনীয় হতে হবে যেমন কিছুটা এই রকম “সিলেটের টেন মার্ডারের পেছনে কলকাঠী নেড়েছেন সি এন জি দলের প্রধান”

কৌশল
কেন সি এন জি দলের প্রধানের নাম না লিখে শুধু পদবীর কথা লেখবেন?
কারন হল একঢিলে একাধিক পাখি মারা হবে, এখানে সি এন জি দলের মান ইজ্জত ও ঐ দলের প্রধানের মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি পড়ে যাবে। শিরোনামেই উদ্দেশ্য হাসিলের এই কৌশল ছাড় দিলেই আপনার ক্ষতি।

এবার দেখুন কিভাবে ঐ শব্দগুলো দিয়ে পর্নাঙ্গ একটা রিপোর্ট তৈরি করা যায়। 

ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটের আলোচিত টেন মার্ডারের নেপথ্যের নায়কদের নাম বারিয়ে আসছে। গতমাসে গ্রেফতার হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পাতলা জলিল কে জজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সিলেটের টেন মার্ডারের পেছনে জড়িত আছেন সি এন জি দলের কতিপয় শীর্ষ নেতা। দু সপ্তাহ আগে পাতলা জলিলকে জিজ্ঞাসাবাদে এরকম তথ্য পাওয়া গ্যেছে বলে জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পাতলা জলিলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের একটি গোয়েন্দা দল তৎক্ষনাৎ সিলেটে ছুটে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিবি কর্মকর্তার তরফ থেকে জানা যায় যে তদন্তকারীদল পাতলা জলিলের দেয়া তথ্যের পক্ষে কিছু আলামত পেয়েছেন। গত সপ্তাহের প্রথম দিকের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের আই জি শিমুল কান্তি বলেছিলেন পাতলা জলিলের কাছ থেকে সিলেটের টেন মার্ডারের ব্যপারে কিছু গুরুত্ব পুর্ন তথ্য পাওয়া গেছে। ঐ সংবাদ সম্মেলনের পর গত কাল ডিবি পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদক কে এমন তথ্য দিলেন। ঐ খবরের ভিত্তিতে আমাদের দৈনিক জমকালো পত্রিকার একদল সাংবাদিক সিলেটে যান এবং এলাকা বাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে সি এন জি দলের প্রধান জমীর আলীর সেক্রেটারীর সাথে নিহত দশনেতার সাথে টেন্ডার সংক্রান্ত মতবিরোধ চলছিল। এদিকে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে যে পাতলা জলিলের এমন তথ্য প্রদানের এবং ডিবি পুলিশের এমন অগ্রগতির খবর সি এন জি দলের প্রধান জমির আলি সমমনা পুলিশের কর্মকর্তা ও আইনজীবিদের দারস্থ হচ্ছেন………………………… এভাবে লিখে ফেলুন কয়েক পৃষ্ঠা।

৩য় অধ্যায়
এবার উক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু মেধার পরিচয় দিতে হবে। ধরুন কোন রাজনৈতিক নেতার শাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, শাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে বাংলাদেশ আজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই এই দেশ কে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তৈরীতে মনযোগী হতে হবে”

এখন আপনাকে যদি বলা হয় এই রাজনৈতিক নেতাকে যেভাবেই হোক জনগনের কাছে ঘৃণীত করে তুলতে হবে তাহলে আপনার প্রতিবেদনের শিরোনাম হবে এরকম “বাংলাদেশকে বসবাসের অযোগ্য বললেন অমুক নেতা” এই খবরকে আরও মুখরোচক করতে আরও একটি রিপোর্ট লিখে ফেলতে পারেন এই শিরোনামে “দেশকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলেন অমুক নেতা” আবার অন্যভাবেও লিখতে পারেন যেমন “দেশ দ্রোহী মন্তব্য করলেন অমুক নেতা”

এর পর দেখুন কি হয়, বাঙ্গালী বলে কথা, হুজুগে পড়ে ঘৃনাতো আছেই ফাসীর কাষ্ঠে ঝুলানোর দাবীও উঠবে এই নেতার বিরুদ্ধে। আর আপনার পদবী? দেখুন না লাফিয়ে কোথায় উঠে!!

আবার যদি আপনাকে বলা হয় যে এই নেতাকে জনপ্রিয় করে তুলুন তাহলে শিরোনামটি এভাবে লিখতে পারেন, “নতুন করে দেশ গড়ার আহবান জানালেন অমুক নেতা” আবার এভাবেও শিরোনামটি লিখতে পারেন “সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তৈরীর শপথ ঝরে পড়লো নেতার কন্ঠে”।

লিখেছেন: শামীম শুভ্র

0 comments:

Post a Comment