বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিমি দূরে সাগর
কোলের এক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য চরকুকরি মুকরি। বঙ্গোপসাগরের তীরে মেঘনা ও
তেতুঁলিয়া নদীর মেহানায় জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি এ
অভয়ারণ্যে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল।
জনশ্রুতি আছে প্রায় কয়েক শ
বছর আগে এ দ্বীপের জন্ম। সে সময়ের জনমানবহীন এ জায়গাটিতে কুকুর আর ইঁদুর
ছাড়া আর তেমন কিছুই দেখা যেত না। এ অঞ্চলে ইঁদুরের আরেক নাম মেকুর, নির্জন এ
দ্বীপটি তাই পরিচিতি পায় চরকুকরি মুকরি নামে। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে চরকুকরি
মুকরি এলাকায় বনায়নের কাজ শুরু হয়। মূলত এ চরাঞ্চলে শ্বাসমূলীয় গাছের চারা
রোপণ করে বন তৈরি করা হয়। ঢালচর, পাতিলা এবং কুকরি মুকরি এ তিনটি বিটে
বিভক্ত চরকুকরি মুকরি রেঞ্জ। বিটগুলো ১৮টি বিচ্ছিন্ন জঙ্গলের মধ্যে মূল
কুকরি মুকরি বিটের অধীনে সাতটি জঙ্গল হলো—হলো চরদিঘল, চরজমির, চরসফি,
চরপোটকা, চরপাতিলা, চরনিরালা, চরবদনা। এ চরের প্রধান আকর্ষণ এখানকার
ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল আর প্রায় জনশূন্য পরিচ্ছন্ন সমুদ্র
সৈকত। প্রায় ২০১৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত চরকুকরি মুকরি বন্যপ্রাণী
অভয়ারণ্য। পুরো অভয়ারণ্যে কেওড়া গাছের আধিক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ
বনের একাংশে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছ রোপণ করা হয়। এ ছাড়া
অভয়ারণ্যের আশপাশের এলাকায় প্রচুর নারিকেল গাছ, বাঁশ আর বেত বনও দেখা যায়। এ
বনে দেখা যায় চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি। ১৯৭৯ সালে
চরকুকরি মুকরি বনে সর্বপ্রথম হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়।
পাখির মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির বক উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য পাখির মধ্যে রয়েছে
বন মোরগ-মুরগি, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল ইত্যাদি। এ ছাড়া সারা
বছর এখানে কমবেশি নানা সামুদ্রিক পাখির আনাগোনা থাকলেও শীতে পুরো দ্বীপ
পরিণত হয় পাখির অভয়ারণ্যে। চরকুকরি মুকরি অভয়ারণ্যে আছে নানা জাতের সরীসৃপ।
এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুঁইসাপ, বেজি, কচ্ছপ ও বিভিন্ন রকম সাপ।
অভয়ারণ্য এলাকার পাশেই আছে জেলে পল্লী। মূলত ইলিশের মৌসুমে এ এলাকায়
প্রচুর জেলে আসেন। এ ছাড়াও শীত মৌসুমেও অনেক জেলে আসেন এখানে।
কীভাবে
যাবেন :চরকুকরি মুকরি যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে ভোলা সদরে। ঢাকা থেকে
ভোলা যাওয়ার জন্য প্রধান যোগাযোগ নদীপথ। ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলা যায়
এমভি ফ্লোটিলা (০৪৯১-৬১২৩৬), এমভি সম্পদ (০৪৯১-৬১২৩৬), এমভি শ্রীনগর
(০৪৯১-৫২৫২৩), এমভি বালীয়া (০১৭১১৯০৫৪৭১), এমভি লালী (০১৭১১৯০৫৪৭১), এমভি
কর্ণফুলী (০৪৯১-৫১৩৫৪)। এসব লঞ্চে প্রথম শ্রেণীর দ্বৈত কেবিনের ভাড়া
৮০০-১০০০ টাকা, প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৫০০-৭৫০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর
ডেকে ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা।
ঢাকা থেকে প্রতিদিন বিকেলে ছেড়ে লঞ্চগুলো
পরদিন সকালে ভোলা পৌঁছে দেয়। লঞ্চঘাট থেকে রিকশায় শহরের উপকণ্ঠে
বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে সকাল ৭টা থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায়
চরফ্যাশনের বাস ছাড়ে। নামতে হবে চর আইচাতে। সময় লাগে ৪০ মিনিট।
এরপর রিকশায় কচ্ছপিয়া উপজেলা ট্রলার ঘাটে। সেখান থেকে ইঞ্জিন বোটে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে চরকুকরি মুকরি।
কোথায়
থাকবেন :চরকুকরি মুকরিতে পর্যটকদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বন
বিভাগের বিশ্রামাগার, কোস্ট গার্ডের অতিথিশালা আর কিছু সাইক্লোন শেল্টার
আছে। এসব জায়গায় থাকতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এর বাইরে লোকালয়ে
নিরাপদ কোনো স্থানে তাঁবু করে থাকতে পারেন। সে জন্য অবশ্যই বহনযোগ্য
তাঁবুসহ ক্যাম্পিংয়ের যাবতীয় দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
লেখা মুস্তাফিজ মামুন আলোকচিত্র রিদওয়ান আক্রাম
0 comments:
Post a Comment