Monday, July 5, 2010

হিন্দু বিবাহ আইন প্রসঙ্গে

0 comments
বাংলাদেশ হিন্দু বিবাহ বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ড দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে। কোনোরকম দালিলিক প্রমাণ ছাড়া এ যাবৎ ভালোই চলছিল। কিন্তু বর্তমানে যান্ত্রিক জটিলতার যুগে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তা নিরসনে দম্পতিদের ভোগান্তি হচ্ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। বাংলাদেশে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ বাধ্যতামূলক করে হিন্দু আইনের সংস্কার করা উচিত। তাহলে বিবাহের প্রমাণপত্রটি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই দালিলিক প্রমাণ হিসেবে সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে অনেক ছেলেমেয়ে বিদেশে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে স্বামী বা স্ত্রীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মৌখিক হিন্দু বিবাহ প্রমাণ অসাধ্য হয়ে পড়ে। এজন্য বিবাহের এফিডেভিট দাখিল অত্যাবশ্যক। যৌতুক নিরোধ আইন, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে প্রতিকার পাওয়ার জন্য বিয়ের প্রমাণপত্র প্রয়োজন পড়ে। স্বামী পরিত্যক্ত রমণী ভরণ-পোষণ আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হলে বিবাহ প্রমাণের জন্য নিবন্ধনপত্র প্রয়োজন। তাছাড়া স্বামী বা স্ত্রী সরকারি কর্মচারী হলে সরকারি পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রেও বিবাহের নিবন্ধনপত্র প্রয়োজন। তাহলে অনেক জটিলতার অবসান হবে। নাবালক সন্তানের অভিভাবক নির্ণয়, পিতৃত্ব নির্ধারণ, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক প্রমাণ ইত্যাদি আইনি জটিলতার ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধনপত্র প্রমাণ হিসেবে খুবই সহায়ক। সাবেক কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থার যুগে মৌখিক হিন্দু বিবাহ কোনো সমস্যা ছিল না। বর্তমানে সমাজ পরিবর্তন ও দ্রুত বিকাশের যুগে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রি সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে ইউনিয়ন বা গ্রামে পঞ্চায়েত এলাকাভিত্তিক একজন করে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিয়েছে। নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে তারা বিবাহ নিবন্ধন করেন। বিবাহ নিবন্ধনপত্রটি একটি আইনি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ও ডিভোর্স ব্যবস্থা ভারতে কার্যকর হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে অবৈতনিক ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ করে হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ হাজার হিন্দু শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান হবে। হিন্দু ধর্মীয় সমাজব্যবস্থা হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রি আইন পাস হলে যুগান্তকারী সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
কালীপদ ভট্টাচার্য,সভাপতি, সংস্কৃত কলেজ,
নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।

0 comments:

Post a Comment