Sunday, April 3, 2011

লস্ট ডাচম্যান মাইন

0 comments
পৃথিবীর অন্যতম বিতর্কিত গুপ্তধন হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার The lost Dutchman mine বা [লস্ট ডাচম্যান মাইন]। এটি বিশ্বব্যাপী সুপারস্টিশন বা কুসংস্কার পর্বত হিসেবে পরিচিত। একটি সোনার খনি হিসেবেও এর পরিচিতি ছিল ব্যাপক। এই খনি নিয়ে শোনা যায় ৬০টির মতো গল্প । সবগুলো গল্পই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং রহস্যমণ্ডিত।
১৫৪০ সালে স্পেনের ফ্রান্সিসকো ভাসকুয়েজ Seven cities of Cibola খুঁজতে এসে অ্যারিজোনার সুপারস্টিশন বা কুসংস্কার পর্বতে স্বর্ণখনির গল্প শুনতে পেলেন। কিন্তু সেখানকার অ্যাপাচি ইন্ডিয়ানরা এই পর্বতটিকে পবিত্র হিসেবে মনে করত। তারা ফ্রান্সিসকোকে তাদের পবিত্র পর্বতে যাওয়া থেকে বিরত রাখল। আরও বলল এরপরও যদি সেখানে যায়, তাহলে বজ্র দেবতা রুষ্ট হয়ে শাস্তি দেবেন। হলোও তাই। ফ্রান্সিসকো তাদের কথা না শুনে অভিযান চালালেন সেই পর্বতে। কিন্তু শেষে পুরো দলের সবাই নিখোঁজ হয়ে গেল।

এরপর ১৭৪৮ সালে এক মেক্সিকান পেরেল্টা পরিবার এই সুপারস্টিশন পর্বতের পাশে এসে বসবাস করতে শুরু করল। পাহাড়টি ততদিনে সোনার খনি হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। পেরেল্টা পরিবার ও তাদের কর্মচারীরাও মাঝে মাঝে ওই পাহাড় থেকে সোনার আকর আনতে শুরু করেন। এক বছর পর মেক্সিকোতে যুদ্ধ শুরু হলে পেরেল্টা পরিবারের লোকজন সবাই মেক্সিকোতে চলে যান। কিন্তু একজন রয়ে যান শুধু সোনার লোভে। তিনি আর তার দল অ্যাপাচি ইন্ডিয়ানদের নিষেধ অমান্য করে আবার খনিতে গিয়েছিলেন। তবে ঘোড়া বোঝাই করে সোনার আকর নিয়ে ফেরার পথে ইন্ডিয়ানরা তাদের আক্রমণ করেছিল। ইতিহাসে এই দুর্ধর্ষ আক্রমণের গল্পও লেখা আছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে পেরাল্টা ম্যাসাকার।

মেক্সিকো যুদ্ধের পর আরেকটি গল্প শোনা যায় ডা. আব্রাহাম থ্রোনকে নিয়ে। তিনি এক অ্যাপাচি ক্যাপ্টেনের চোখের চিকিৎসা করেছিলেন। পুরস্কার হিসেবে তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় সোনার খনিতে। চোখের বাঁধন খুলে, অ্যাপাচি চিফ তাকে বলে যত খুশি তুলে নাও। ডা. থ্রোন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে যতটুকু পেরেছিলেন তুলে নিয়েছিলেন। তারপর আবারও তাকে চোখ বেঁধে তার বাসায় পেঁৗছে দেওয়া হয়েছিল। ডা. থ্রোন মনে মনে ঠিক করলেন, তিনি আবারও ওই খনিতে যাবেন। দু'জন সঙ্গীও যোগাড় করলেন। কিন্তু বর্জ্র দেবতার আক্রোশেই হোক কিংবা অজানা কোনো কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত খুন হয়ে গেলেন তিনজনই।

এই খনির নাম যে জার্মান ভদ্রলোকের কারণে উঁঃপযসধহ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তার নাম-জ্যাকব ওয়াল্টজ পেরাল্টা পরিবারের বন্ধু ছিলেন তিনি। ৬০ বছর বয়সে ১৮৭০ সালে তিনি উঁঃপযসধহ খনিতে প্রথম হানা দেন। ব্যর্থ হয়ে ওয়াইজনার নামের আরেক জার্মানকে সঙ্গে নিয়ে আবারও গিয়েছিলেন ওয়াল্টজ্। কিন্ত বিধি বাম। মারা গেলেন ওয়াইজনার। আর এদিকে জ্যাকব ওয়াল্টজও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করলেন। এরপর থেকেই আলোচিত এই খনিটির নাম পাল্টে যায়। The lost Dutchman সরহব এর গল্প এভাবেই চিরদিন চলে আসছে। যে ব্যক্তিই এই গুপ্তধনের পেছনে ছুটেছে, বজ্র দেবতার অভিশাপ যেন তার পেছন পেছন ধাওয়া করেছে।

-নবাব আমিন

0 comments:

Post a Comment