Friday, April 1, 2011

বৈসাবি

0 comments
চৈত্র মাসে আদিবাসীদের এই প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি নিয়ে চাকমা সমপ্রদায়ের একটি গান আছে_ 'টুরু টুরু বাজি র-অ, বাজি বাজেত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেড়েবং বেক্কুন মিলিনেই, ইচ্ছা বিজু, ইচ্ছা বিজু' (টুরু টুরু বাঁশির সুর, বাঁশি বাজছে, পাড়ায় বেড়াব সবাই মিলে আজ বিজু, আজ বিজু)। বৈসাবি আসছে তাই আবারও এই গান বাজবে পাহাড়ে। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী হাতে হাত ধরে পাড়ায় পাড়ায় বেড়াবে। বাড়িতে বাড়িতে চলবে খানাপিনা। বৈসাবিকে বরণ করার জন্য অস্থির হয়ে আছে পাহাড়ের কিশোর-কিশোরীরা। তারা বৈসাবিকে বলছে বৈসাবি তুমি আসবে বলে আমি বাবাকে নতুন জামার কথা বলে রেখেছি। ক্ষণগণনা অব্যাহত রয়েছে তাদের মনে। ভুলে গেলে বড় জনের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করবে বিজু কবে? কোন দিন? কি বার? পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ শান্ত থাকলে এ বছর বৈসাবি জাঁকজমকভাবে পালিত হবে বলে আশা করছেন সংস্কৃতি কর্মীরা। চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাহাড়ে আনন্দ উৎসবের বন্যা। চলবে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত।
আদিবাসীরা মূলত একটি দিনকে ফুল বিজু দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তা হলো চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ। এই দিনে ফুল দিয়ে পুরানো বছরকে বিদায় জানায় আদিবাসীরা। আর এই পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে আদিবাসী কিশোর-কিশোরীরা এগিয়ে। তাদের ফুলে ভরে যায় চেঙ্গি, মাইনী, কর্ণফুলীসহ কাপ্তাই হ্রদের পাড়। বলা যায় ২৮ চৈত্র আদিবাসী কিশোর-কিশোরীর রাত জেগে থাকার দিন। সেদিন ভাসা ভাসা ঘুমে ভোরে পাখি ডাকার আগে ফুল চুরি করতে প্রস্তুত থাকে তারা। সময় এলে ফুল চুরি করতে নেমে পড়ে। ফুল তোলা শেষ হলে দাদিমাকে ডাকে, বলে চলো দাদিমা নদীতে ফুল দিতে যাই। নদীতে ফুল দেওয়ার পর গোসল করানোর প্রলোভন....। এই দিনে কিশোর-কিশোরীরা বুড়ো-বুড়িদের গোসল করায়, গ্রামের খামারগুলোর হাঁস-মুরগিকে খাবার দেয় তারা। ফুল বিজুর পর অর্থাৎ ৩০ চৈত্র বৈসাবির মূল উৎসব। এটি পাহাড়ের আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসব। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে পুরনো বছরের গ্লানি মুছে ফেলে নতুনকে বরণ করে আদিবাসীরা। এই দিনে তাদের কারও মনে কোনো দুঃখ থাকবে না। সারাদিন বাড়িতে বাড়িতে চলে খানাপিনা। রান্না হয় পাচন, বিরিয়ানি, সেমাই, পিঠাসহ নানা ধরনের খাবার। গজ্যাপজ্যা দিন শব্দটি চাকমাদের ভাষা। যার অর্থ নতুন বছরের প্রথম দিন বা পহেলা বৈশাখ। এই দিনে আদিবাসীরা ধর্মীয় পুরোহিত বাড়িতে আনে। তাদের মাধ্যমে এবং নিজেদের পুণ্য কাজের মধ্য দিয়ে আত্মপরিশুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে আদিবাসীরা। বৈসাবির প্রস্তুতি হিসেবে রাঙামাটিতে বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নদীতে ফুল ভাসানো, র‌্যালি, আলোচনা সভা। ৯ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে।

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি

0 comments:

Post a Comment