Sunday, March 10, 2013

সনেট

0 comments
কবিতার একটি বিশেষ ধরনের নাম সনেট। নির্দিষ্ট ছন্দ ও রীতিসহ একটি কবিতাকে সনেট হয়ে উঠতে গেলে এতে অবশ্যই ১৪টি চরণ থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি চরণে অক্ষর সংখ্যাও হয় ১৪। সনেটের উৎপত্তি হয় ইতালিতে। বলা হয়ে থাকে সিসিলিয়ান কবি জিয়াকমো দা লেন্টিনির হাতেই সনেটের জন্ম। ইতালিয়ান সনেটো থেকে ইংরেজি সনেট শব্দটি এসেছে। সনেটো অর্থ ক্ষুদ্র গান। বাংলায় সনেটকে চতুর্দশপদী কবিতা বলা হয়ে থাকে। যাঁরা সনেট লিখে থাকেন ইংরেজিতে তাঁদের সনেটার বলা হয়ে থাকে। সনেটারদের মধ্যে যাঁকে সেরা বলা হয় তিনি হলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। শেক্সপিয়ার ১৫৪টি সনেট রচনা করেছেন। তাঁর লেখা সনেটগুলোকে শেক্সপিয়ারীয় সনেট বলা হয়। সব ইংরেজ কবিই যে সনেট রচনার ক্ষেত্রে একই নিয়ম মেনে চলেছেন তা নয়। বরং বিভিন্ন সময়ে এর রীতি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ইংরেজি কবিদের লেখা সনেটে পার্থক্য সুস্পষ্ট। লেন্টিনি সনেট আবিষ্কার করলেও গিউটনে ডি' অরেজো সনেটের পুনর্জন্ম দেন। তিনি প্রায় ২৫০ সনেট লেখেন। প্রথম দিকে বহু ইতালীয় কবিই সনেট লেখেন। তবে তাঁদের মধ্যে ফ্রান্সেসকো পেট্রেকার লেখা সনেটগুলোই সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি ১১ ছন্দমাত্রা ব্যবহার করে তাঁর সনেটগুলো ফুটিয়ে তোলেন। তিনিই সনেটের ১৪ লাইনকে অকটেভ ও সেসটেভ দুই ভাগে ভাগ করেন। এ ছাড়া জন মিল্টন, এডমন্ড স্পেনসারও সনেটের ইতিহাসে বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার। মিল্টনই পেট্রেকীয় সনেটকে বৈশিষ্ট্যমূলক অবয়ব থেকে মুক্ত করেন। বংলা ভাষায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের হাত ধরেই সনেটের যাত্রা শুরু। পেট্রিকীয় পদ্ধতিতে লেখা মধুসূদনের সনেটগুলোর সঙ্গে মিল্টনের লেখা সনেটের বেশ মিল পাওয়া যায়। মধুসূদনের মৃত্যুর পর বাংলার সনেট যাত্রা প্রায় থেমেই গিয়েছিল। পরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে আবার জেগে ওঠে বাংলা ভাষার সনেটচর্চা। রবীন্দ্রনাথ বহুদিন ১৩ লাইন ব্যবহার করে সনেটচর্চা করেছেন, যা সনেটের গঠনশৈলীর বিচারে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

গ্রন্থনা : নাঈম ফেরদৌস রিতম

0 comments:

Post a Comment