Monday, March 11, 2013

জগদ্দল মহাবিহার, নওগাঁ

0 comments
ভারত সীমান্ত লাগোয়া ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে জগদ্দল পদ্ম মহাবিহার আরো আট কিলোমিটার। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসটার্মিনাল পৌঁছালাম সকাল সাড়ে ৮টায়। বাস ছাড়ল আধঘণ্টা পর। আমরা নামলাম ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কের হরীতকীডাঙ্গার মোড়ে। দুই ঘণ্টা লাগল হরীতকীডাঙ্গার মোড়ে পৌঁছাতে। মোড়ের একটি চায়ের স্টলে বিস্কুট আর চা খেয়ে ভ্যানে চাপলাম। আরো চার কিলোমিটার যেতে হবে। গ্রামের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে পথ। সামনে পড়ল বেণিদুয়ার মিশন। উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মিশন ভবন। সামনে দুটি মোড় পেরোনোর পর গোলাকার লালচে প্রাচীন স্থাপনা নজরে এলো। বুঝতে বাকি রইল না এটাই জগদ্দল পদ্ম মহাবিহার।
ভাড়া মিটিয়ে ভ্যান থেকে নামলাম। বিহারটি শত শত বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। একদল প্রত্নতাত্তি্বকের তত্ত্বাবধানে এখন খননকাজ চলছে।
দ্বাদশ শতকে সম্রাট রামপাল এটি নির্মাণ করান। মূলত জগদ্দল বিহার ছিল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থগুলো এখানে তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করা হতো। বিহারটির অবস্থান নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক ছিল। অবশেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের এ বিহারটিই জগদ্দল বিহার।
বিশাল এলাকাজুড়ে বিহার। বিহারের পশ্চিম বাহু ধরে খননকাজ চলছে। মূল মন্দির, হলঘর ও চারটি বৌদ্ধভিক্ষু কক্ষের কিছু অংশ খননে বেরিয়ে এসেছে। পূর্বমুখী মন্দিরটি প্রায় বর্গাকার। তিন দিকে প্রশস্ত প্রদক্ষিণ পথ। ওই প্রদক্ষিণ পথ হলঘরের সঙ্গে মিশেছে। মন্দিরের প্রবেশপথ ১.১২ মিটার প্রশস্থ ছিল বলে বোঝা যায়। তিনটি ধাপ পেরিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করা যায়। প্রবেশপথে বিশালাকার কালো পাথরের চৌকাঠ (লিনটেল) ব্যবহৃত হয়েছিল। চৌকাঠগুলো মূর্তি ও অন্যান্য অলংকরণে শোভিত। গর্ভগৃহে একটি পাথরের নালাও আবিষ্কৃত হয়েছে। মন্দিরের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো চারটি বেদি পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে ২০ ফুট উঁচু পাথরের স্তম্ভ। কালো পাথরের বৌদ্ধ মূর্তিও পাওয়া গেছে। চৌকাঠের এক সারিতে ৯টি বুদ্ধ ও অন্যান্য মূর্তিখচিত। এগুলোর মধ্যে বৈরোচন, অক্ষোভ, রত্নসম্ভবা ও আমোঘসিদ্ধি ধ্যানী বুদ্ধ শনাক্ত করা গেছে। চৌকাঠের মাঝখানে একটি বড় পদ্মাসন বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে। বিহারের পশ্চিম বাহুর একটি ভিক্ষু কক্ষে পাওয়া গেছে ১৪টি ব্রোঞ্জমূর্তি। দীর্ঘদিন মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকায় এগুলো গায়ে গায়ে লেগে গেছে। মূর্তিগুলো তিন থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা। একত্রে এতগুলো ব্রোঞ্জমূর্তি এই প্রথম কোনো প্রত্নস্থান থেকে পাওয়া গেছে বলে জানালেন খননকাজের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব উল আলম। জগদ্দল মহাবিহারের স্থাপত্য নকশা দেখে তাঁরা নিশ্চিত যে এটি লোটাস মানে পদ্মবিহার। দেশে পদ্মবিহারের সন্ধানও পাওয়া গেল এই প্রথম। বিহারের চার কোনায় পদ্ম ফুলের পাপড়ি নকশা করা হয়েছিল। সেগুলো মেঝে থেকে ২৪ থেকে ২৫ ফুট উঁচু ছিল। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এখানে একটি বিশাল জনপদ ছিল। জগদ্দলের পূর্বে ছিল নিকেশ্বর বা নিকাই শহর ও পশ্চিমে জগৎনগর। বিহারে মোক্ষাকর, দানশীল, শুভাকর ও বিভূতিচন্দ্র নামে চারজন বৌদ্ধ পণ্ডিত থাকতেন। জগদ্দল বিহারের প্রাচীন নিদর্শন ছড়িয়ে আছে ২০ থেকে ৩০ একর জায়গাজুড়ে। ঘুরেফিরে দেখতে দেখতে কখন যে পশ্চিমে হেলে পড়েছে সূর্য টের পাইনি। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। কাছেপিঠে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। অগত্যা ফিরতি পথ ধরলাম।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার কল্যাণপুর বা গাবতলী থেকে শ্যামলী, এসআর, টিআর, হানিফসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে নওগাঁ যাওয়া যায়। ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকা (এসি), ৩৫০-৪৫০ টাকা (নন-এসি)। নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাসটার্মিনাল থেকে হরীতকীডাঙ্গার মোড় পর্যন্ত বাসভাড়া ৫৫ টাকা। হরীতকীডাঙ্গার মোড় থেকে রিকশাভ্যান ভাড়া যাত্রী প্রতি ৫ টাকা।

ফরিদুল করিম

0 comments:

Post a Comment