Tuesday, March 12, 2013

জাতীয় পতাকা অবমাননার শাস্তি

0 comments
লাল-সবুজের আমাদের জাতীয় পতাকা মানেই শুধু এক টুকরা কাপড় নয়, এ পতাকা আমাদের রাষ্ট্রের পরিচয়, আমাদের জাতীয়তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এ পতাকার অবমাননা কোনোভাবেই করা চলবে না। যদি কেউ অবমাননা করে, তাহলে তাকে পেতে হবে শাস্তি। জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে।

ব্যবহারের নিয়ম

সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সব কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কিছু অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেমন: ঈদে মিলাদুন্নবী, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস এবং সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যেকোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ভবন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রাঙ্গণে ও কনস্যুলার কেন্দ্রগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। অর্ধনমিতের নিয়ম হলো, অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের প্রাক্কালে পতাকাটি পুরোপুরি উত্তোলন করে অর্ধনমিত অবস্থানে আনতে হবে এবং নামানোর প্রাক্কালে এটি শীর্ষে উত্তোলন করে নামাতে হবে।
ইচ্ছা করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মোটরগাড়ি, নৌযানে ও বিমানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের অধিকারী। তা ছাড়া আইনানুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, কেবিনেট মন্ত্রী, কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, চিপ হুইপ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন বা কনস্যুলার মিশনের প্রধান তাঁদের মোটরগাড়ি ও নৌযানে পতাকা উত্তোলনের অধিকারী। প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ও উপমন্ত্রী রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে কিংবা বহির্বিশ্বে মোটরগাড়ি অথবা জলযানে পতাকা ব্যবহার করার অধিকারী হবেন। অন্য কোনো দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলিত হবে এবং সবশেষে নামানো হবে। দুই বা ততোধিক দেশের পতাকা হলে ভিন্ন ভিন্ন দণ্ডে উত্তোলন করতে হবে এবং পতাকাগুলোর পরিমাপ প্রায় একই হবে।
বাংলাদেশের পতাকার ওপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা ওড়ানো যাবে না। মিছিলে পতাকা বহনের বিধান হচ্ছে, পতাকা মিছিলের কেন্দ্রে অথবা মিছিলের অগ্রগমন পথের ডান দিকে বহন করতে হবে। জাতীয় পতাকার ওপর কোনো কিছু লেখা বা মুদ্রিত করা যাবে না। অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকাকে ট্রেডমার্ক, ডিজাইন বা প্যাটেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা অপরাধ।
পতাকা এমনভাবে উত্তোলন, প্রদর্শন বা মজুত করা যাবে না, যাতে এটি সহজেই ছিঁড়ে যেতে পারে, মাটি লাগতে পারে বা নষ্ট হতে পারে। জাতীয় পতাকা কোনো অবস্থায়ই সমতল বা সমান্তরালভাবে বহন করা যাবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত গাইতে হবে এবং যখন জাতীয় সংগীত বাজানো ও প্রদর্শিত হয়, তখন উপস্থিত সবাইকে পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। মোটরগাড়ি, নৌযান, উড়োজাহাজ ও বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য সময় পতাকা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উত্তোলিত থাকবে এবং সূর্যাস্তের পর কোনোমতেই পতাকা উড্ডীয়মান অবস্থায় থাকবে না। পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে।

অবমাননার শাস্তি

জাতীয় পতাকা ব্যবহারের এসব বিধি ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কেউ ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তানজিম আল ইসলাম | লেখক: আইনজীবী

0 comments:

Post a Comment